অপরগুচ্ছ ১. – বলিহারি, কী দুঃসাহস গা! দিনের পর দিন কুটকুটে অন্ধকার এক কোটরের ভিতর মুণ্ডুটি সিঁধাইয়া বসিয়া আছে। এ কোন্ ছিরির তপিস্যে, সাতজন্মে দেখি নাই – তপিস্যেই বটে! ইদিকে ধড়টি দিব্যি বহাল তবিয়তে বিদ্যমান – হুঁঃ, অমন বহাল তবিয়তের মুয়ে আগুন। যেখানে মুণ্ডুরই কোনও হদিশ নাই, হাত-পা বাঁচিল কি মরিল, কী আসে যায়? – বুঝিলে না, এ হইল এক খেলা – কী বলিলে ? খেলা? – হ্যাঁ, মানুষ যেমন জিভের ডগায় সাপের কামড় বুলাইয়া নেশা করে, স্রেফ মজার জন্য। এও তেমনই, মৃত্যুর করতল ছুঁইয়া ছুমছাম বসিয়া থাকার এক খেলা। খেলা ভাঙিলেই সব কিছু পূর্ববৎ – ধুস, তাই কি হয় নাকি! – হয় না, কেন? মুখের চামড়া ঝলসাইয়া, হনু বাহির করিয়া, পাহাড়ের টঙে চড়িয়া মহল্লায় ফিরিয়া আসে না ছেলেমেয়ের দল? – বাঃ রে, শুধু ফিরত-আসাদের কথাই বলিলে! বাকিরা, কার্যকারণের এট্টুস ইদিক-সিদিকে যাহাদের পা ফসকায়? বছরের পর বছর বরফের খাঁজে চিপকাইয়া থাকে যাহাদের টাটকা লাশ? – তবেই বুঝো। ভুল কিছু বলিতেছি না। থিয়েটারি করিয়া বাঘের মুখের ভিতর মুণ্ডু ঢুকাইয়া খেলিতেছ, খেলো। মনে রাখিয়ো, গর্দানের উপর যেকোনও মুহূর্তে নামিয়া আসিবে ধারালো দাঁতের সারি। তখন অবশ্য ধড়টিও পড়িয়া থাকিবে না... ২. খুব বিশ্রী একটি মুহূর্তকেও হয়তো কায়দা করিয়া পাশ কাটাইয়া চলিয়া যাওয়া যায়। তেল-কালি ঝুল-ময়লার ছাপছোপ যাহা কিছু লাগিল, চেষ্টা করিয়া ধুইয়া মুছিয়া ফেলা যায়। কিন্তু তাহাকে কি আর সুসময় বলা চলে? সুসময় বলিয়া আসলেই কিছু নাই – ইহাও অবশ্য একটা জনপ্রিয় মত। মানুষকে বশে রাখিবার জন্য উহা নাকি কর্তাদের একপ্রকার কৌশলী প্রকল্প। হইবেও বা! পরিশ্রম না করিতে চাহিলে হতাশার চেয়ে বড় আশ্রয় আর কিছু নাই। কিন্তু মানুষ যে এখনও আকাশের দিকে তাকায়, তাহার এক এক কোণে এক এক সময় এক এক রকম রং দেখিয়া, খুব গোপনে সেই রং ঢকঢক করিয়া পান করে, এই ঘটনা কি চাপা দেওয়া যাইবে? ক্ষণস্থায়ী পরের মুহূর্তগুলির কোনও নামকরণ না-হয় না-ই বা হইল … ৩. ঈশান কোণের বটগাছের নিচে বসিয়া বেটা খুব কান্নাকাটি করিতেছিল। কেন যে, সেকথা নিজেই বুঝিতে পারিতেছিল না। এদিকে কান্নার দমক আর থামিতেই চায় না। সন্ধ্যাও কখন পার হইয়া গিয়াছে। এইরকম পরিস্থিতিতে অতিপ্রাকৃত কিছু একটা না-ঘটিলেই নয়। কোথা হইতে একফালি দমবন্ধ বাতাস না কি হিলহিলে এক তালগাছ-সমান ছায়া আসিয়া তাহার দুই হাতে শীতল স্রোতের মতো কী যেন কী একটা রাখিয়া দিল। ঠাণ্ডা ছোঁয়ায় পুড়িয়া যাইতে লাগিল তাহার দুই করতল। সেদিকে চোখ পড়িতেই বুক ছাঁৎ করিয়া উঠিল। তারার আলোয় ঝকঝক করিতেছে, এ যে একটি তলোয়ার! এটি লইয়া কী করিবে সে? ইতিমধ্যে তাহার দিকে একটি ক্ষিপ্র ভল্লুক জ্বলজ্বলে চোখে ছুটিয়া আসিতেছে দেখিয়া আর কিছু বলিয়া দিতে হইল না। মুহূর্তে, তাহার মুঠিতে ধরা তলোয়ারে ঘায়ে ভল্লুকটির বুক বিদীর্ণ। সেও তবে এক নিপুণ হত্যাকারী! এতক্ষণে সে তাহার কান্নার অর্থ কিছু বুঝিল …
Facebook Comments Box