তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলেছিল,স্মৃতি আর বিস্মৃতির মাঝে যে অস্পষ্ট অথচ মৃদু আলোকিত অঞ্চল,যেখানে মিহি সুরে বেজে চলেছে ওই মহাসিন্ধুর ওপার থেকে কোন সঙ্গীত ভেসে আসে,সেখানেই বোকাদের বাস। আর, বোকার রাজ্যে পৃথিবী কাব্যময়।
সে বলেছিল ‘চাঁদ ও খোঁড়া বেলুনওয়ালা’র কথা। শুধুমাত্র লাল শাক মেখে ভাত খাবার পর লাল উচ্ছিষ্টময় গোটা কাসার থালাটাকে উদিত সূর্য জ্ঞানে,কি প্রবল তার উচ্ছাস,সব্বাই কে জানাচ্ছেন তার আনন্দ অভিজ্ঞানের কথা,অথচ লোকটার কিচ্ছুটি নেই। না ব্যাংক ব্যালান্স,না পরদিন কি খাবে তার ভবিষ্যৎ অনুমান। মুহুর্ত বর্তমান তার আনন্দ যাপন! হ্যাঁ,তিনি কবি। এবং বোকা। মাত্র ৫৬তেই চলে গিয়ে প্রমাণ করেছিলেন,তিনি আসলেই বোকা। শ্যামল সিংহ।
সে বলছিল,দিল্লির সেই পড়ন্ত বিকেলের কথা। লোকটা ডেকে পাঠালেন তার দুই বিশ্বস্ত অনুচরকে। জানালেন,টাকা ফেরত করতেই হবে। এই ৫৫কোটি সদ্য স্বাধীন পাকিস্তানের হকের পাওনা। সম্মত,নেহরু আর প্যাটেল দুজনেই। কেবল অনুরোধ, তিনি যেন অনশন ভঙ্গ করেন। তিনি বললেন পিসি যোশীকে ডাকো,আর হ্যাঁ গোলগাঁওকরকেও। ওরাও বলুক দাঙ্গা বন্ধে তারা উদ্যোগ নেবে। প্রেস কনফারেন্স করে বলুক। তারা সম্মত হলেন। তিনি বললেন,জিন্নাকে বলো আমি অমৃতসর হয়ে লাহোর যাবো,দাঙ্গা যেন বন্ধ হয়। কারণ,পাকিস্তানিরাও আমার স্বজন। জিন্নাহ সম্মত হলেন। সাল ১৯৪৮,জানুয়ারি মাস। প্রবল শীতে দিল্লি জবুথবু। তিনি অনশন তুলে নিলেন। সে রাতেই দাঙ্গায় মারা যায় ১৬৮ জন। আর তিনি মারা যান কয়েকদিন পরেই। মানে হত্যা। লোকটা কি বোকাই না ছিলেন,ছিলেন না?
মহাত্মা গান্ধী!
সে বলছিল মহামতি আকবর দ গ্রেট এর রাজসভার কথা। পারিষদ বীরবলকে একবার সম্রাট আকবর আদেশ করেছিলেন,দেশের সব থেকে চার বোকাকে তার সামনে হাজির করতে। বীরবল পড়লেন মহা সমস্যায়। পথে বের হতেই চোখে পড়ল একজন মানুষ কাঁসার থালায় করে কাপড় চোপড়,ফল মুল কলাটা মুলোটা নিয়ে যাচ্ছে। বীরবল তাকে জিজ্ঞেস করলেন,ভাই এসব নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন,লোকটি বিন্দুমাত্র দ্বিধায় না ভুগে জানালেন,তার প্রাক্তন স্ত্রী আবার গর্ভবতী। আর,তার জন্যই এ সমস্ত আয়োজন!
ক’দিন পর,আবার বীরবল রাস্তায়,দেখলেন এক মহিষ পালক,মহিষের পিঠেই,কিন্তু পালকের মাথায় ঘাসের বোঝা। বীরবল জিজ্ঞেস করায়,মহিষ পালক জানালেন,মহিষ গর্ভবতী, তাই তার ঘাস উনিই নিয়ে যান মাথায় করেই।
বীরবল যথাসময়ে এই দুই বোকাকে নিয়ে হাজির হলেন সম্রাট দরবারে। সম্রাট বীরবলকে জিজ্ঞেস করলেন,আর দুজন কই?
বীরবল সহাস্যে উত্তর করলেন,আমি আর আপনি।
সে বলছিল,এনট্রপি থিওরি বলে,এ ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি মহাবিশ্বের বোকামিতেই। আর,ঈশ্বরের বোকামিতেই সৃষ্টি মানুষ! আর,মানুষের বোকামিতেই একদিন প্যাণ্ডোরার বাক্স থেকে বেরিয়ে এসেছিল ‘ষড় রিপু’! যার ফল কেউ খায়,কেউ খাওয়ায়। কেউ শাসন করে,কেউ শাসিত হয়। যারা শাসিত হন,তারাই সংখ্যাধিক্য,তবু রাষ্ট্র,সমাজ,পরিবার বিন্যাস অক্ষুণ্ণ রাখতেই এই সংখ্যাধিক্য বোকারা,তাদের নৈমিত্তিক বোকামি করে চলেন। তাতেই জগৎ সংসারের শান্তি(!) বিরাজমান!
‘সে’ কে? জনৈক বোকা। যে শুনছিলো সেও বোকা।
আইনস্টাইন প্রায়ই বলতেন,একই কাজ একরকম ভাবে যারা বারংবার করেন,তারা পাগল। আর,যারা একই কাজ ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে করেন,তারা জিনিয়াস। যে কথা আইনস্টাইন যা বলেননি,তা হল পাগল আর জিনিয়াস উভয়েই বোকা।
যেমন,তথাগত,শ্রীচৈতন্য,গ্যালিলিও,প্লেটো,লালন সাঁই,বিদ্যাসাগর আপনি,আমি সবাই বোকা।
তাই,বোকা দিবস উদযাপনে,জগতের সকল বোকা মানুষদের প্রেম-অপ্রেম-যাপন আর প্রতিরোধের গল্প নিয়েই নির্মিত। এবং উৎসর্গীকৃত হল।
ভাগ্যিস বোকারা আছে,তাই এ মনুষ্য পৃথিব এখনও নিজের কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান।
বিষয়ভিত্তিক সংখ্যার সাথে নিয়মিত বিভাগে প্রকাশিত হল,বন্ধুদের কবিতাও।
হে পাঠক সহায় হোন।