শাকিলা নাসিরের কবিতাগুচ্ছ
শপথ একটি
শপথ করছি আমি যাযাবরদের
অস্থির প্রাণের প্রতি
গৃহহীনদের দুঃখ দুর্দশার প্রতি
দরিদ্রদের তিক্ততা ও যন্ত্রণার প্রতি
শোকার্ত মায়ের হতাশ হৃদয়ের প্রতি,
শপথ করছি আমি জন্মভূমির জন্যে নিবেদিত
বীর সৈনিকের মরদেহের কাছে্,
ও আমার প্রিয় জন্মভূমি, তোমার সবুজ উপত্যকা
উঁচু পর্বত, চির নীল আকাশের কাছে,
শপথ করছি আমি তোমার বীর পুত্র-কন্যার কাছে
যারা তোমার পাশে দাঁড়িয়েছে আজ,
পবিত্র গ্রন্থের কাছে শপথ করছি আমি,
সর্বশক্তিময় ঈশ্বরের কাছে,
যে তোমার মৃত্তিকা
এক কণাও দেবো না আমি,
সমগ্র পৃথিবীর পরিবর্তেও।
ও আমার প্রিয় জন্মভূমি!
তৃষ্ণা
আমি সুদূরে, নির্জন তীরে
পড়ে থাকা মাছ একটি
আশাহীন, ইচ্ছেবিহীন।
হে গর্জিত ঢেউ,
আমাকে উদ্ধারে না আসো যদি
আমি মরে যাবো তৃষ্ণার্ত।
পারউঈন পাঝওয়াকের কবিতাগুচ্ছ
উড়ান
স্বপ্নে আমার, উড়ি আর নিজের দিকে তাকাই
অবিশ্বাসে, পাখির মতো
কোনও হ্রদের ওপর দিয়ে উড়ে যেতে যেতে,
বন্দী পাখীরা
স্বপ্ন দেখে যেমন?
আফগান রমণী
যে ফুলটি
পাথরে রূপান্তরিত হয়েছে
সে আমি।
ফুলের চেয়েও
কমনীয় আরও
ভয় পাই হতে,
যদি পাথরের চেয়েও
শক্ত হয়ে যাই!
কবি-পরিচিতি
শাকিলা নাসির, একজন আফগান কবি। ১৯৪৯ সালের জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮১ সালে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে। সেখানেই ১৯৯২ সাল অবধি লেকচারার ছিলেন। ১৯৯৪ সালে তাঁকে দেশত্যাগ করতে হয়, তিনি অস্ট্রেলিয়া চলে যান। ১৯৯৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়ার ইস্টার্ন কলেজ অব টাফে থেকে সমাজ-বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা করেন। ১৯৯৮ সাল থেকে ভিক্টোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য রাজ্যে দোভাষীর কাজ করেন। তাঁর চার পুত্র।
শাকিলা দশ বছর বয়স থেকে কবিতা পড়া শুরু করেন তাঁর মায়ের উৎসাহে। তাঁর মতে তাঁর সেই বয়স থেকেই কবিতার ভাব ও গঠন-পদ্ধতি বোঝা শুরু হয়ে গিয়েছিল, এবং নারী হওয়ার কারণে তাঁকে বিভন্ন বিধি-নিষেধের সম্মুখীন হতে হয়েছে, এবং তিনি স্বাধীন এবং স্বচ্ছন্দ যাপন করতে পারেন নি, তাই তাঁর মনের ভাবনা কবিতা আকারে এসেছে। তিনি যখন লিখতে আরম্ভ করেন, তখন তাঁর এক শিক্ষককে তিনি দেখিয়েছিলেন। সেই শিক্ষক শাকিলার কবিতা পড়ে অভিভূত হয়েছিলেন, এবং আরও লিখতে উৎসাহ দিয়েছিলেন। একটি খাতায় শাকিলার অনেক কবিতা লেখা ছিল, সেটি তাঁর এক সহপাঠিকে পড়তে তিনি দেন। সেই কবিতার খাতা আর তিনি ফেরৎ পান নি, এইভাবে অনেক কবিতা তাঁর হারিয়ে গেছে।
পারউঈন পাঝওয়াক, আফগানিস্তানের একজন বিশিষ্ট শিল্পী, লেখক এবং কবি হিসেবে পরিচিত। ১৯৬৭ সালে আফগানের কাবুল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বিখ্যাত কবি আবদুর রাহমান পাঝওয়াকের পৌত্রী পারউঈন মালালাই হাই স্কুলে লেখাপড়া করেন এবং আবু আলিস সিনা এ বালখি মেডিকাল ইন্সটিটিউটে মেডিসিন নিয়ে পড়েন। কিন্তু আফগানিস্তানের যুদ্ধের জন্যে ডাক্তারী প্র্যাক্টিস করতে পারেননি। অনেকের মত পারউঈনের পরিবারকেও নিরাপত্তার জন্যে দেশত্যাগ করতে হয়েছিল। পারউঈন পাঝওয়াকের সাহিত্যকর্মের মধ্যে মডার্ণ ফার্সি কবিতা, উপন্যাস এবং ছোটগল্প রয়েছে। তিনি শিশুদের জন্যেও অনেক বই লিখেছেন। অনুবাদও করেন তিনি, এবং ছবি আঁকেন। তাঁর বই ইংরেজি এবং ফরাসী ভাষায় অনূদিত হয়েছে। পারউঈন পাঝওয়াকের বিখ্যাত বইগুলির মধ্যে রিভার ইন ডিউ, নেগিনা অ্যান্ড দ্য স্টারস, দ্য ডেথ অব সান, এবং সালাম মারজান। তিনি এখন সপরিবারে কানাডার অন্টারিওতে থাকেন।
ইংরেজি অনুবাদ থেকে কবিতাগুলো বাংলায় অনুবাদ করেছেন, ঈশিতা ভাদুড়ী।