অনন্যার কথায় চমকে ওঠে ঋতু। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে নেয় কেউ শুনে ফেললো কিনা। না, কেউ শোনেনি। কারো খেয়ালই নেই ওদের দিকে । উনিশের উচ্ছলতায় সবুজ মাঠ জুড়ে সাদা ইউনিফর্ম ঝলমল করছে।
বাপরে! এই বয়সের এত সাহস মেয়ের!
‘এই বলনা, তোদের সবকিছু হয়ে গেছে?‘
অনন্য সেই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ফুল স্লিভ কামিজের হাতা কিছুটা গুটিয়ে হাত দেখিয়ে বলে,
’পড়ে দ্যাখ।’
কালচে রঙের সরু দাগের কয়েকটা অক্ষর। ঋতু একটা একটা করে অক্ষর পড়ে পুরো শব্দ উচ্চারণ করে, ‘ফয়েজ‘ ।
‘কিরে ফয়েজ তোর প্রেমিকের নাম? কিন্তু ছ্যাকা পার্টির মত এভাবে হাতে নাম লিখে রেখেছিস কেন? মুছে ফেল। কেউ দেখতে পেলে খুব ক্ষেপাবে দেখিস।’
‘না রে এই নাম মোছা যাবে না।’
‘কেনরে, ভোট দিয়েছিলি নাকি? অমোচনীয় কালি যে মুছবেনা ? হিহিহি…’
ঋতুর হাসিটা ঝর্নার মত ছড়িয়ে পড়ছে করিডোর থেকে করিডোরে। এমনকি মাঠ পর্যন্ত। কিন্তু অনন্যা বিব্রত হয় না। ও ঋতুর হাত ধরে টানতে টানতে বারান্দার এক কোণে নিয়ে যায়।
‘হাসছিস কেন গাধী? ভালো করে দ্যাখ লেখাটা।’
ঋতুর এবার অবাক হবার পালা । লেখাটা আসলে কালির নয়। বোতলের পানিতে রুমাল ভিজিয়ে ঘষে ঘষে লেখাটা তোলার চেষ্টা করে ঋতু কিন্তু কালো কালো হরফগুলো মলিন না হয়ে বরং আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। ঋতুর কাণ্ড দেখে অনন্যা হেসে ভেঙে পড়ে।
‘ছাড়! এগুলো পুড়িয়ে লেখা।’
‘উফ! মাগো, পুড়িয়ে লিখেছিস? কেমনে করলি রে? ব্যথা লাগেনি?’
‘নাহ, একদম ব্যথা লাগেনি তখন। মোমের আগুনে সূচ গরম করে ফুটিয়েছি। এই ধর পিঁপড়ের কামড়ের মত একটু জ্বলে ওঠে, ব্যস।’
ঋতুর বিস্ময় কাটছেই না।
‘এই যামানায় এসেও কোন স্টুপিড শখ করে এভাবে হাত পোড়ায় ?”
‘যখন লিখেছিলাম কি যে ভালো লাগছিল। কিন্তু এখন খুব যন্ত্রণা দেয়। মনে হয় খামচে তুলে ফেলতে পারতাম!’
আগের কথার সূত্র ধরে অন্যমনস্ক হয়ে অনন্যা বলে যায়।
‘মুছবি কেন? ব্রেকাপ হয়ে গেছে নাকি? নাকি প্রেমের শখ মিটে গেছে?’
কেনর উত্তর অনন্যা দিতেই যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই ঘন্টার ঢংঢং শব্দ। ভূগোল ক্লাস। সায়েন্স বিল্ডিঙে দৌড়াতে হবে। অনন্যার ভূগোল নেই। ওকে ফেলে ঋতু ভোঁ দৌড় লাগায়। বিভিন্ন জায়গায় জটলা করে কলকল করছিল যারা ওরাও হুড়মুড় করে এগুচ্ছে। ইশ! আজ সামনে সিট পাওয়া যাবে না। আহমেদ আলী স্যার ভীষণ কড়া। এক মিনিট দেরি হলেই দাঁড় করিয়ে বলবে,
‘এই মেয়ে, পড়তে এসেছ নাকি ফিল্ডিং মারতে?’
ফিল্ডিং কী? এই শব্দটা শুধু স্যারের মুখেই শোনা। ভর্তির আগে কলেজ নিয়ে বড়াপার কাছে অনেক গল্প শুনেছে ঋতু । এই কলেজেই পড়ত। আপা বলেছিল,
‘শোন ঋতু, কলেজ মানেই মজা। এই ধর ফাঁকে ফাঁকে দুই একটা ক্লাস করবি। বাকি সময় কমনরুম, ক্যান্টিন, লাইব্রেরী, করিডোর, হর জায়গায় আডডা আর আড্ডা।’
একদম বাজেকথা সব! ভর্তির প্রায় একমাস হতে চলল, এক দুইবার কমনরুম ছাড়া ক্যান্টিনের মুখ দেখেনি ঋতু। দেখেনি বা ভয়ে ওদিকে পা মাড়ায়নি। নতুন বন্ধুরা যদি ট্রিট চায়? খাওয়াতে গেলে মায়ের দেওয়া টাকায় টান পড়ে যাবে! বড়াপা এমনভাবে বলেছিল যেনো আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে ক্লাস! আর এখন দেখা যাচ্ছে একটার পর একটা ক্লাসে নাভিশ্বাস। হতে পারে ঋতু যে সাবজেক্ট নিয়েছে সেসবের রুটিনই এমন । গায়ের সাথে গা।
বিশাল হলরুমের মত ক্লাসরুম, তাতেও কিছু মেয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। একেক বেঞ্চে চার পাঁচজন গাদাগাদি করে বসতে গিয়ে হাত দুখানা দুপাশে স্ট্যাচু হয়ে আছে। কলম বের করে যে নোট নেবে সে উপায় নেই। ক্লাসরুমের মাঝের দিকে বসেছে ঋতু। আশেপাশে কেউ পরিচিত নয়। আহমেদ আলী স্যার রোল কল করছেন। চাপা ফিসফিসের মধ্যে স্যারের স্বর হারিয়ে যাচ্ছে। ঘাড় লম্বু মিলা বসেছে ঋতুর সামনে। স্যারের মুখ ঠিকমত দেখতে পায় না ঋতু। এরমধ্যেই পিছন থেকে কে যেন এত জোরে চিমটি দিল! ঋতু ‘উঁ মাগো’ বলে চিৎকার করে ওঠে। সাথে সাথে স্যারের গমগমে হুংকার, ‘কে? কে? হু? স্ট্যান্ডআপ। আই সে স্ট্যান্ড আপ!’ দুপাশ থেকে ক্রমাগত চাপ আসছে। ‘এই ছেমড়ি দাঁড়া।’ ঋতু ঘাড় গুঁজে বসে থাকে । ইশ! এত তাড়াতাড়ি ব্ল্যাক লিস্টেড হতে পারবে না। কিন্তু পেছন থেকে খামচি দিল কে সেটা বুঝতে পারছে না। ক্লাস শেষ হোক দেখাচ্ছি মজা। রাগে গরগর করতে থাকে ঋতু। এমনকি স্যার ওর রোল ধরে ডাকলেও দাঁড়িয়ে প্রেজেন্ট দেয় না। যদি কন্ঠ চিনে ফেলে! আজ শালা উপস্থিত থেকেও জরিমানা গুণতে হবে। প্রতি ক্লাসে পনের টাকা জরিমানা। কম নয়! আহ্নিক গতি, বার্ষিক গতির কারণ ফলাফল পড়াচ্ছেন স্যার। ব্ল্যাক বোর্ডে ছবি এঁকে এঁকে ব্যাখ্যা করছেন। ঋতু সেদিকে মন দেয় না। এই বিষয়ে স্কুলে যা পড়েছে তার থেকে তেমন আলাদা কিছু নয়। ওর কাছে এসব ডালভাত। এমনিতে বোর্ডে প্লেস করেনি সে! ঋতু ফিসফিস করে পাশের মেয়েটিকে জিজ্ঞেসে করে, ‘নাম কি?’
মেয়েটেও ফিসফিসিয়ে বলে, ‘মিতা।’
‘হোস্টেল নাকি বাসা?’
‘হোস্টেল ।’
‘হোস্টেল?’ চিৎকার করতে গিয়েও দম সামলে গল্প জুড়ে দেয় দুজনে।
‘কত নম্বর রুমে ? আমার ১০৫।’
‘রিয়েলি ? আমি তো ১০৭ এ।’
‘তাহলে ডাইনিং এ দেখি না যে?’
‘গতকালই এসেছি । আর ডাইনিং এর খাবার খেলে বমি পায়। যাইনি।’
‘তাহলে কি খাচ্ছ?’
‘বাসা থেকে মা রোস্ট রান্না করে সাথে দিয়ে দিয়েছিল।’
‘বাপরে! ভালো । আজ বিকেলে রুমে এসো।’
‘এই মেয়ে? ইউ? শুনতে পাচ্ছ না?’
বেঞ্চের পাশে স্বয়ং যম! স্যার মিতাকে বলছেন। তিনি কখন বোর্ড ছেড়ে এখানে এসেছেন দুজনের কেউ টের পায়নি। মিতা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে উঠে দাঁড়ায়।
‘একটু আগে কি প্রশ্ন করেছি বল।’
‘সরি স্যার।’
আহমেদ আলী সারের মুখ রাগে গণগণে। ওদিকে ঋতুর বুকের মধ্যে হাতুড়ি পেটানোর শব্দ । মনে হচ্ছে একদল মহিলা বসে কোরাস গাইছে আর ছাদ পেটাচ্ছে ।
‘স্টুপিড, দাঁড়িয়ে থাকো ।’
স্যার গটগট করে নিজের জায়গায় ফিরে যাচ্ছেন । ঋতু আহত চোখে মিতাকে দেখে। সে দাঁড়িয়ে এক হাতে ব্যাগের কোনা মুচড়াচ্ছে।’
ক্লাসের পুরো সময়টা মিতাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো । স্যার ক্লাস শেষ করে যখন বেরিয়ে যান। মিতা কোন কথা না বলে দ্রুত বের হয়ে যায়। ওর সাথে আর আলাপ করা হয় না।
ঋতু অনন্যার খোঁজে কমন রুমের দিকে হাঁটতে শুরু করে। ওই সময় অনন্যার শেষের কথাগুলো বুঝতে পারেনি। এখন কেন ‘ফয়েজ’ নাম দেখে এত যন্ত্রণা হয়? মুছে ফেলতে ইচ্ছে করে। নামটা তো বেশ সুন্দর। আর নামটা অনন্যার জীবনের সঙ্গে আজীবনের মত জড়িয়ে গেছে। অনন্যার কাছে ফয়েজের পুরো কাহিনি শুনতে না পেলে শান্তি নেই। ঋতু একটু দ্রুতই হাঁটছিল। কিন্তু কী যে হলো! সায়েন্স বিল্ডিং আর কমনরুমের মাঝখানের দুরত্বটুকুর মধ্যে কিছু একটা ঘটে । ঋতুর ভেতরের কলহাস্য থেমে যায়। একটু বিষণ্ণ হয়ে পড়ে। চাপা বেদনা অনুভব করে। হুট করেই যেনো ‘কিছুই ভালো লাগছে না’ রোগে আক্রান্ত হয়ে কলেজ ক্যাম্পাসটাকে কারাগার মনে হতে থাকে।
প্রগাঢ় শূন্যতা ওকে চারপাশের কোলাহল থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। এর আগে কখনো এই অনুভব ঋতুকে আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরেনি। ঋতু হাঁসফাঁস করতে থাকে।
এর কিনারা খুঁজতে গিয়ে সে আরো বেশি মুষড়ে পড়ে। আগে তো কখনো ভাবেনি অন্য মেয়েদের মত তার জীবনেও কিছু গোপন সুখ বা বেদনা থাকতে হবে? একজন গোপন মানুষ থাকতে হবে। আজ কেন এই ভাবনা এলো? অনন্যার গল্প শুনে? নাকি কালো হরফে ‘ফয়েজ’ নামক কারো অস্তিত্ব অনুভব করে? যে কিনা ওর জীবনের কেউ নয়।
উনিশ বছর বেশি কিছু বয়স নয়। সামনে পুরো জীবন পড়ে আছে। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে অনন্যা, রিনা, ফাল্গুনী এদের মত ওর জীবনে কেউ আসতে পারতো। ও ভালোবেসে কোন পুরুষের নাম হাত কেটে লিখতে পারতো বা অভিমান অথবা যন্ত্রণায় ছটফট করে সেটা মুছে ফেলার জন্য অস্থির হয়ে যেতে পারতো।
ঋতুর মনে প্রেম আসেনি সেটা নয়। মনে মনে অনেকের প্রেমেই পড়েছে সে। রাত জেগে কল্পনার ফানুস উড়িয়েছে টালমাটাল। কিন্তু একসময় সেসব ফানুস পুড়ে ভস্ম হয়ে গেছে। কোথাও তার অবশেষ রেখে যায়নি।
ঋতুর সেসব স্বপ্নই একতরফা। কখনো দ্বিতীয় পক্ষের অংশগ্রহণ ছিল না। ঋতুকে আজ পর্যন্ত কোন পুরুষ ভালো লাগার কথা বলেনি! বরং বন্ধু স্থানীয় ছেলেরা আড়ালে আবডালে ওকে ‘বাচ্চা হাতি’ ডাকে। কিছুদিন আগেও ঝগড়ার এক পর্যায়ে পুতুল ওকে ‘কালি’ বলে গালাগাল করেছিল। বয়সের তুলনায় ঋতুর ওজন অনেক বেশি। উচ্চতাও আর দশজন সাধারণ মেয়ের তুলনায় কম। গায়ের রঙ মোটা দাগে কালো। মানুষ সৌন্দর্য্যের কাঙাল। দাদী বলেন, আগে দেখনদারী পরে গুণ বিচারী।’ তবুও ঋতু নিজের চেহারা বা রঙ নিয়ে কখনো মন খারাপ করেনি। কিন্তু আজ মনে হলো কালো চেহারার জন্য ও নিজে দায়ী। লজ্জায় ঋতু মরমে মরে যেতে থাকে।
ঋতু পথ পরিবর্তন করে। অনন্যাকে না খুঁজে সরাসরি ক্লাসে চলে যায়। পরের পিরিয়ডে জুবাইদা ম্যাডামের বাংলা ক্লাস। খুব সাজধাজ করে ক্লাসে আসেন ম্যাডাম। হেসে হেসে গল্প করেন বেশি, পড়ান কম। আজ এসেই পুরনো কাসুন্দি ঘাটতে বসলেন।। ‘দেখো মেয়েরা, সারাদিন পড়ালেখার চিন্তা করে শরীর নষ্ট করবে না। মেয়েদের জীবনে ক্যারিয়ারের চাইতে সৌন্দর্য্যের গুরুত্ব বেশি। জানো তো, সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র। দিনে দুই ঘন্টা পড়ালেখার পেছনে ব্যয় করলে একঘন্টা রূপচর্চ্চা করবে বুঝেছ?’
ম্যাডামের কথায় ক্লাসের সুন্দর মেয়েগুলোর চোখ-মুখ থেকে অহংকারের আগুনের ফুলকি ঠিকরে বের হয়। সেই আগুনে. ঋতুর মত মোটা কালো কথিত অসুন্দর মেয়েগুলোর মুখ পুড়ে আরো কালি বর্ণ ধারণ করে। প্রচণ্ড ঈর্ষা হচ্ছে ঋতুর। সুন্দর মুখগুলোর প্রতি বিতৃষ্ণা জাগছে। আগপিছ না ভেবেই উঠে দাঁড়ায় সে। চিৎকার করে বলে,
‘ম্যাম, প্লিজ স্টপ দিজ টপিকস। আমরা যারা আপনাদের দৃষ্টিতে কুৎসিত তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী? কী ধরণের রূপচর্চ্চা করলে আমরা আপনাদের মত সুন্দর হয়ে পৃথিবী জয় করতে পারব?’
ক্লাস জুড়ে পিন পতন নিরবতা। জুবাইদা ম্যাডাম সম্ভবত এখনো ঠাওর করতে পারছেন না আসলে তিনি কী শুনছেন? তাঁর চোখ মুখ গলা এমনভাবে স্ফীত হয়ে উঠেছে যে মুহূর্তে ফেটে যেতে পারে। ঋতুর পাশে শীনা। ও ঋতুর হাত ধরে টেনে বসানোর চেষ্টা করছে । কিন্তু ঋতু গ্রীবা বাঁকা করে দাঁড়িয়ে থাকে।
সকল নিরবতা ভেংগে ক্লাসে যেনো বজ্রপাত হলো। জুবাইদা ম্যাডাম ঝাড়া তিন মিনিট ঋতুকে লক্ষ্য করে মুখ থেকে বুলেট সদৃশ যা যা ছুঁড়লেন তারমধ্যে ‘ফাজিল, অসভ্য মেয়ে’ ছাড়া একটিও শব্দও মেয়েরা উদ্ধার করতে পারলো না। অত্যধিক উত্তেজনা বশত মুখের মধ্যেই সবকথা জট বাঁধিয়ে ফেলেছেন ম্যাডাম। ক্লাস থেকে বেরোনোর সময় তিনি হুমকি দিয়ে গেলেন, ‘তোমাকে টিসি দিয়ে কলেজ থেকে বের করছি। ওয়েট। পাজী মেয়ে কোথাকার!’
এই ঘটনা অতি দ্রুত কলেজে ছড়িয়ে পড়লো। হাঁটা চলার সময়, ক্লাসে বসে বা ক্যান্টিনে ঋতু বুঝতে পারে মেয়েরা তার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে মুচকি হাসছে, অনুচ্চ স্বরে তার ফিগার, গায়ের রঙ নিয়ে মজা লুটছে। কিন্তু ঋতু নির্বিকার। এসবের পাত্তাই দেয় না। তবে যে জিনিসটা ঘটলো সেটি হলো, সুন্দর অসুন্দরের মধ্যে একটা অদৃশ্য প্রতিযোগিতা জমে উঠলো, রেষারেষিও। কালো রঙের মেয়েগুলো যেচে এসে ঋতুর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইলো। যেনো সে তাদের মসিহ, ত্রাতা!
টিসির হুমকিতে প্রায় দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ঋতু টেনশনে ঠিকমত ঘুমাতে পারেনি। বহুবার ভেবেছে ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করে দরকার হলে পা ধরে মাফ চেয়ে নেবে, কিন্তু সেই সাহসও হারিয়ে ফেলেছে। তবে টিসি দেবার কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা গেল না বরং জুবাইদা ম্যাডাম মনে হল ঋতুকে একটু বেশিই মমতা দেখাতে লাগলেন। সময়ে প্রলেপ পড়ে। সুন্দর অসুন্দরের প্রতিযোগিতাও শেষ হয়। অনন্যাদের বাড়ি খড়কিতে। কলেজের খুব কাছে। হাঁটা পথে তিন/চার মিনিট দূরত্ব। ঋতুর সঙ্গে অনন্যার মাখামাখি ওর বাসা পর্যন্ত গড়িয়ে গেলো। হোস্টেল আর কলেজ একই ক্যাম্পাসে। এমনিতে গেটের বাইরে যেতে হলে হোস্টেলের মেয়েদেরকে অনেক বেড়াজাল টপকাতে হয়। হল সুপারের পারমিশন নাও, গেটে যাবার সময় লেখো, ফেরার সময় নাম এন্ট্রি কর তার ওপর আছে দারোয়ান আমির মামার হুমকি ধামকি। ক্লাস অফ টাইমে মাঝেমধ্যেই ঋতু হিজাবটা দিয়ে মুখ ঢেকে অনন্যার সঙ্গে বেরিয়ে যায়। ওর বাসায় কিছু সময় কাটিয়ে কলেজ ছুটির আগেই ফিরে আসে। মামার শুকুন চোখও ঋতুর চালাকি ধরতে পারে না।
অনন্যার বাবা-মা দুজনেই ব্যাংকার। তাঁরা সারাদিন কেউ বাসায় থাকেন না। ফাঁকা বাসায় অনন্যা আর ঋতুর অপার স্বাধীনতা। খুব যত্ন করে অনন্যা ওর প্রেমের গল্প শোনায়। কখনো আরক্ত মুখে, কখনো উজ্জ্বলতায় আবার কখনো বিমর্ষ ম্রিয়মাণ শব্দে। ওর প্রেম সংক্রান্ত প্রতিটি শব্দের উচ্চারণ, এক্সপ্রেশন ঋতু বুভুক্ষের মত গেলে। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় থেকে অনন্যা প্রেম করে, ভাবা যায়? ফয়েজ তখন ক্লাস টেনের ছাত্র। অনন্যাদের বাড়িতে ভাড়া থাকতো ফয়েজের পরিবার। একই বিল্ডিঙে থাকার কারণে ওদের মধ্যে যোগাযোগটা বেশি ছিল। নাইনেই ভার্জিনিটি খুইয়েছে অনন্যা। কিন্তু তাতে ওর কোন দুঃখ নেই। ওর দুঃখ, ফয়েজ এখন ওর জীবনে নেই। ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর থেকে অনন্যার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। কেন সে অনন্যাকে ত্যাগ করেছে সেটা অনন্যা জানে না। তবে শুনেছে সেখানে সে বিন্দাস প্রেম করছে। অনন্যা সেই শোকে ডিপ্রেশনে ভুগে ভুগে ম্যাট্রিকের রেজাল্ট গুবলেট করে ফেলেছে। সায়েন্সের ছাত্রী এখন আর্টসে ভর্তি হয়ে ফয়েজের নামেই দিন যাপন করছে। আগের কোন সময় হলে ঋতু অনন্যাকে বোকা গাধা বলে তিরস্কার করতো। কিন্তু এখন সেটি না করে ওর দুঃখে দুঃখী হয়। শোক প্রকাশ করে। গভীর রাতে অনন্যার অচেনা গল্পগুলো ঋতুর নিজের হয়ে ওঠে। ফয়েজের পাশ থেকে অনন্যাকে সরিয়ে ঋতু বসে। অনাস্বাদিত যা কিছু ছিল তার আস্বাদ নিতে তৎপর হয়।
খুব বেশিদিন নয়। ঋতু অচিরেই অনন্যার গল্প থেকে একদম নিজস্ব গল্পে প্রবেশ করে। তার একক জীবনে দ্বিতীয় পক্ষের আবির্ভাব ঘটে। দ্বিতীয় পক্ষ শায়ন। অনন্যার বড় ভাই। দেখতে একটু উস্কো খুস্কো তবে ড্যাম স্মার্ট। রাজশাহী ভার্সিটির মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ে। ছুটিতে বাড়ি এসেছে। ঋতু আর অনন্যার স্বাধীন সময়ে সে অনধিকার প্রবেশ করলেও ঋতু তাতে খুশি হয়। ঈশ্বরই হয়ত শায়নের সঙ্গে এই সংযোগ ঘটিয়ে দিয়েছেন।
শায়নের সঙ্গে পরিচয়ের পর এক কথা, দুইকথা, দশ কথা বলতে বলতে অনর্গল কথার সরগম নিশিরাত বেজেই চলে। সঙ্গে সংযোগ ঘটে তালের তাধিন তাধিন। আমনে সামনে, ভার্চুয়ালে। শায়নের কথা ঋতুর কানে অমৃত সুধার বর্ষণ। তার হাঁটা চলা তাকানো প্রতিটি পদক্ষেপে নতুন নতুন স্বপ্নের বেড়াজাল। উনিশের ভাবাবেগ ভেসে চলে পঁচিশের তুমুল তারুণ্যের উদ্দামতায়।
ঋতু ব্যাপকভাবে বদলে যায়। মাঝে যে আত্মবিশ্বাস সে হারিয়ে ফেলেছিল সেটি কয়েক গুণে ফিরে আসে। ওর চোখ মুখে এখন রোদের কপাটহীন জানালা। দিনের সূর্য, রাতের চাঁদ, আর দমকা হাওয়া যুগপৎ খেলছে। ঋতু পদভারে গরবিনী অহংকারী। কাউকে নিজের করে পাবার অহংকার বা কারো জীবনের অপরিহার্য্য অংশ হতে পারার গর্ব।
ইদানিং ঋতুর কাছে জুবাইদা ম্যাম প্রিয় হয়ে উঠেছে। শায়নের মুগ্ধতা কিনতে ঋতু গাছ-গাছড়া এনে রুপচর্চ্চা করে, পার্লারে ফেসিয়াল স্পা করতে মায়ের টাকার অনেকটাই খরচ করে ফেলে। ’মা প্রাইভেট একটা বাড়িয়ে দিয়েছি।’ এই ফি লাগবে সেই ফি লাগবে বলে মায়ের কাছে ফের টাকা চায়। মা বিকাশে টাকা পাঠায়, ঋতু নতুন কুর্তি জিন্স কেন।
আজকাল ঋতু নিয়মিত ব্যায়াম, যোগাসন করছে। খাওয়া দাওয়া একদম কমিয়ে দিয়েছে। শায়নের মত লম্বা হ্যান্ডসাম, স্মার্ট ছেলের পাশে বেটে-খাটো, মোটা-কালো ঋতুকে বেমানান লাগে। দুজন পাশাপাশি হাঁটার সময় ঋতু নিজের কাছে খুব ছোট হয়ে থাকে। এই বুঝি ওর বন্ধুদের কেউ দেখে গেয়ে উঠলো, ‘এক্কেবারে মানাইছে না রে।’
ঋতু অনন্যাকে উপেক্ষা করে লুকিয়ে তার বাড়িতে চলে যায়। শায়নের তীরের ফলার মত শরীরে গন্ডারের শক্তি। ঋতুর কষ্ট হয়। কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে চুপ করে থাকে। সুন্দর শায়নের জন্য অসুন্দর ঋতু সবকিছু করতে পারে! এটাই তো নিয়ম! প্রথমদিন ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল প্রায়। বিছানায় রক্তের বন্যা। রক্তাক্ত চাঁদরটা ঋতুই পলিথিনে পেঁচিয়ে এনে রাস্তায় ফেলে দিয়েছিল।
ঋতুর খুব ইচ্ছে হয় ওর প্রেমের গল্প তারায় তারায় রটিয়ে দেবে। সুন্দর সুন্দর ফর্সা অহংকারী মেয়েগুলো জানুক ঋতুর মত অসুন্দর মেয়েরাও শায়নের মত ছেলেদের মন জয় করতে পারে। সুন্দর মন আর গুণ থাকলেই দুনিয়া জয় করা সম্ভব তারজন্য রূপের খুব একটা দরকার হয় না। কিন্তু শায়নের কড়া নিষেধ, কাউকেই বলা যাবে না। অনন্যা যদি কোনভাবে টের পায় বাবা-মাকে বলে দেবে। ঋতুর বাসায় আসা বন্ধ হয়ে যাবে। সময় এলে শায়নই সবাইকে বলবে।
ঋতু অনন্যাকে তার প্রেমের খবর জানায় না। দিনের পর দিন ঠিক দুপুরে সবার অলক্ষ্যে এক কামরার মধ্যে ঋতুর শরীর মনে ধুন্ধুমার প্রেম জারি থাকে।
অনন্যার সঙ্গে কথা বলার সময় ঋতু প্রায়ই প্রাসঙ্গিক বা অপ্রাসঙ্গিকভাবে অবচেতনভাবে শায়নের নাম টেনে আনে। তেমনই এক গল্পের ফাঁকে একদিন মোবাইলে একটি মেয়ের ছবি দেখায় অনন্যা। রূপসী বললে কম হবে। অসম্ভব সুন্দর মেয়েটি। ঋতু জিজ্ঞেস করতেই যাচ্ছিল মেয়েটি কে? তার আগেই অনন্যা খুব আগ্রহ নিয়ে বলে, ‘দ্যাখ আমার ভাবী। সুন্দর না?’
ঋতুর কালো মুখ থেকে রক্ত সরে যায়। তাতে কালোভাব না কমে আরো বেড়ে মুখটাতে কালশিটে পড়ে। হাঁসফাঁস করে বলে,
‘তোর ভাবী মানে?’
‘মানে শায়ন ভাইয়ার বউ।’
‘তোর ভাইয়া বিয়ে করেছে?’
ঋতু সমস্ত অন্তঃকরণ দিয়ে অনন্যার জবাব শোনার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে।
‘এখনোও বিয়ে করেনি, তবে করবে। ও রুমকি আপু। ভাইয়ার প্রেমিকা। ওদের প্রেমের কাছে রোমিও জুলিয়েট ফেইল। প্রায় সাত বছর ধরে প্রেম করছে। আম্মা বলেছে ভাইয়া একটা চাকরীতে ঢুকলেই ওদের বিয়ে দিয়ে দেবে ।’
কিচ্ছু জানে না ঋতু। বহুবার বহুভাবে জিজ্ঞেস করেছে শায়নকে, তার জীবনে কোন নারী আছে কি না। শায়ন তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে। ‘আরে ধুর, এসব ফর্সা সুন্দর মেয়েরা ভেতরে ফাঁপা, গবেট। ওরা কি তোমার মত ব্রিলিয়ান্ট? ’
‘দেখো যদি কোনদিন শুনি তোমার জীবনে অন্য মেয়ে আছে তোমাকে খুন করে ফেলব কিন্তু।’
‘নাও নাও, গর্দান পেতে দিলাম প্রিয় বিদুষী। হাহাহা। শোন, তোমার মত বোর্ডে প্লেস করা মেয়ে সবার ভাগ্যে জোটে? এসব নিয়ে ভেবো না তো। তুমি ছাড়া কোথাও কেউ নেই সোনা।’
শায়নের কথায় ঋতুর মন ছলাৎ ছলাৎ নেচে ওঠে। জুবাইদা ম্যাডামের সব যুক্তি মিথ্যে হয়ে যায়।
ঋতু এতটা ঘোরের মধ্যে ছিল যে এর বাইরে কোন সত্যি থাকতে পারে চিন্তাতেই আসেনি। একটুও সন্দেহ হয়নি ঋতুর মত অসুন্দর একটা মেয়েকে কোন পুরুষ কেন ভালোবাসবে? শায়ন কী দেবতা? আর দশজন পুরুষের মত তার তো সুন্দরের প্রতি আকর্ষণ থাকবে এটাই বাস্তব। তার বেছে নেবার সুযোগ ছিল।
অনন্যার কাছ থেকে সে কীভাবে বিদায় নিয়েছে মনে নেই। ঋতুর বুকের ভেতর হাজার মাইল বেগের তুফানে সবকিছু লণ্ডভন্ড। শিরা উপশিরা বেয়ে রক্তদল ছুটোছুটো করছে। চারপাশে অক্সিজেনের বড় অভাব! ও প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে অনন্যার বাসায় যায়।
শায়ন বাসাতেই ছিল। ঋতু শায়নের শরীর খামচে রক্তাক্ত করে ফেলে। হড়বড় করে সব বৃত্তান্ত বলে। ঋতুর দুই চোখ দিয়ে ঝর্নাধারা বইছে। হেঁচকি উঠছে। কিন্তু শায়নের চোখে মুখে তেমন কোন অভিব্যক্তি নেই। সে বারবার একই কথা বলে,
‘ ছাড়ো, এত পাগলামী করছ কেন? কী এমন ঘটেছে?’
‘ রুমকি কে?’
‘কেন অনন্যার কাছে শোনোনি? রুমকিকে আমি ভালোবাসি। সো হোয়াট?’
‘তো আমি কে? আমার সঙ্গে এই খেলা খেললে কেন। কেন মিথ্যা বলেছিলে?’
‘তুমি কে নিজের দিকে তাকিয়ে বুঝ না? এত বোকা কেন তুমি ঋতু? তোমার মত হাতিকে আমি ভালোবাসব? আমার রুচি এত খারাপ? ফাক!’
শায়নের মুখভঙ্গী, কথার টোন, চোখের হিংস্রতা সবকিছু ঋতুর কাছে একদম নতুন আনকোরা! অবিশ্বাস্য রকমের ঘৃণ্য। ঋতুর মনে হলো ওর গা বেয়ে গুবরে পোকা হেঁটে বেড়াচ্ছে। ঋতু আর একটা কথাও ব্যয় না করে শায়নের মুখে এক খাবলা থুথু ফেলে বেরিয়ে আসে।
দুমাস হলো শায়নের সঙ্গে যোগাযোগ নেই ঋতুর। দুইটা পিরিয়ড মিস করেছে সে। জানে কী ঘটতে চলেছে। প্রেগন্যন্সি টেস্ট কিটে দুটো দাগ। শায়নকে এই বিষয়ে কিছু বলেনি। বা সেইদিনের পর আর কোনভাবে যোগাযোগের চেষ্টাও করেনি। কিন্তু অনন্যাকে সব খুলে বলে। অনন্যাও ওর ভাইয়ের মত বলেছিল, ‘এত বোকা কেন রে তুই ঋতু? কোথায় রুমকি আপা, আর কোথায় তুই? তাছাড়া আব্বা-আম্মা কী ছেলের বউ হিসেবে তোকে পছন্দ করবে বল? সকল বাবা মা তো চায় তাদের ছেলের বউ সুন্দর হোক।’
অনন্যার কথায় আর মন খারাপ হয় না ঋতুর। মনে হয় এটাই স্বাভাবিক। অনন্যা হেলথ এসিস্ট্যান্টের মতই ঋতুকে সাহায্য করে। কলেজ শেষে অনন্যা চুপি চুপি ওষুধের প্যাকেটটা ধরিয়ে দিয়ে বলে, ‘নিয়মগুলো ভালো করে পড়ে নিস, খাবার তিন/চার ঘন্টা পরে সবকিছু ক্লিয়ার হয়ে যাবে দেখিস। সাথে একটা পেইন কিলার খাস নইলে প্রচণ্ড পেইন হবে। সন্তান জন্মের সময় যে পেইন হয় তেমন।’ অনন্যা কীভাবে এতকিছু জানে ঋতু সে বিষয়ে কোন প্রশ্ন করে না। ওর শরীরটা ঝাঁকি দিয়ে কেঁপে ওঠে। ঠোঁট দুটো তিরতির করে কিন্তু কোন শব্দ বের হয় না।
নতুন হোষ্টেলের ১০৫ নম্বর রুমের সকলে তখন ঘুমে অচেতন। রুমার হালকা নাক ডাকার অভ্যাস আছে। বিপাশা ঘুমের মধ্যে অনর্গল কথা বলে আর নীনা ঘুমে কাদার দলার মত পড়ে থাকে। কোন সাড়া শব্দ, নড়াচড়া নেই।
ঋতু ওষুধ খেয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। বিপাশা বকবক করছে। ঋতু ওর কথাগুলো গভীর মনোযোগের সঙ্গে শোনার চেষ্টা করে কিন্তু কিছুই বোধগম্য হয় না। অর্থহীন কথা সব। ঘুমের ঘোর হোক আর মনের ঘোর, ঘোরাক্রান্ত মানুষ অর্থহীন কাজই বেশি করে হয়তবা।
রাতের শেষ প্রহরে পেইন শুরু হলো। তলপেট থেকে কোমরের নীচ পর্যন্ত প্রচণ্ড যন্ত্রণায় ভেঙ্গে চুরে আসছে। ঋতু দাঁতে দাঁত চেপে পড়ে থাকে। গলার মধ্য থেকে দলা দলা কান্না গিলতে গিলতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তবুও একটা উঃ শব্দ করে না। ঋতুর একসময় মনে হলো তার শরীরের কোন একটা রুদ্ধ কপাট খুলে গেছে। তলপেট থেকে নোংরা রক্ত, মাংসের দলা ছিঁড়ে ছিঁড়ে সেই খোলা দরোজা দিয়ে তীব্র বেগে নিচের দিকে ছুটছে। অবশেষে ঋতু জেনেছে শুধুমাত্র যোনি পথেই শায়ন তার জীবনে প্রবেশ করেছিল, আজ সেই যোনি পথ বেয়ে আবর্জনা রূপে বেরিয়ে যাচ্ছে।
প্রচণ্ড আক্রোশ নিয়ে জেগে থাকে ঋতু। একজন মানুষকে দূষিত রক্তদলার সঙ্গে মিশে যেতে দেখে পৈশাচিক উল্লাস হয়। এরপর কখন যে চোখ দুটোতে প্রশান্তির নির্জনতা নামে টেরই পায় না।