================================================================

================================================================
১
অম্বিকা কালনা রেল স্টেশনে অপেক্ষা করছি। কোলকাতা ফিরব। আমার সঙ্গিনীর শরীরে পুরনো দেবালয়ের দেবলা মত লেপ্টে আছে ক্লান্তি। চোখে মুখে নিদারুণ শঙ্কা আর বিরক্তি। আমি যে ধারণার বাইরে অতি চঞ্চল এটা সে বুঝতে পারেনি। দুদিন ধরে কড়া মাষ্টারনির মতো সারাক্ষণ আমাকে আগলে রাখছিল। সুস্পষ্ট বিদ্রোহ করায় রক্ষণশীল মানসিকতা পাল্টে এখন কিছুটা একা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
কড়া শাসনের স্নেহ প্রেম আদরে আমার দম ফুরিয়ে আসে। আমি এসেছি ঘুরে ফিরে দেখতে। কোন কিছু দেখার নিজস্ব চোখ রয়েছে আমার। রয়েছে আজন্মের অভ্যাস শাসনের বিপরীতে পাশ থেকে হঠাৎ হঠাৎ নিরুত্তর হারিয়ে যাওয়ার । নিজেও জানি, আমাকে ম্যানেজ করা তেমন সহজ নয়।
গেল সন্ধ্যায়, একজন মুসলিম দীনহীনকে একজন জটা চুলের সাধুর সংগে কথা বলতে দেখে ছুটন্ত মোটর সাইকেলের ধাক্কায় উড়ে গিয়ে পড়েছিলাম অম্বিকা মিষ্টান্ন ভান্ডারের সামনের রাস্তায়। কনুই ছিলে রক্তিম ছাপচিত্র হয়ে গেছে। মাথায় গজিয়েছে দুটি ছোট বড় আলু। পথচারীদের সাহায্যে ঝেড়েঝুড়ে উঠে দেখি, এরমধ্যে হারিয়ে গেছে আমার হিন্দু মুসলিম দুই সাবজেক্ট।
এই স্বভাবগত দোষগুলো আমার। আর এসবে আমি সদা অভ্যস্ত। আমার সঙ্গিনী যে বাবু কম্যুনিষ্ট ঘরানার মহাবিপ্লবী, এটা বুঝে চেপে গেছি।
সূর্য যাই যাই করে জ্বলন্ত রোদ্দুরগুলোকে অন্ধকারের ব্যাগে পুরে নিচ্ছে আর ঘষা মুক্তোর মত নরম আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে ধরিত্রীতে। এই নিমগ্ন আলোতে আবার হারানোর ইচ্ছে পেয়ে বসেছে। সঙ্গিনীকে রেখে আস্তে আস্তে সরে যেতে থাকি। এ জীবনে আর কখনও এখানে আসা হবে না। কিন্তু যাদের খুঁজছি ষ্টেশনের এই হালকা পাতলা ভিড়ে তাদের কি পাবো না ?
মন বলছে, পেতেও পার, যদি উড়াইয়া দাও ছাই !
২
এক পা দু’পা করে যেদিক থেকে ট্রেন আসবে সেদিকে সরে যেতে থাকি। কি কারণে যেন আজ কাটোয়া থেকে ট্রেন আসতে দেরি হচ্ছে। কাটোয়ার মাটিতে রয়েছে বাংলার শেষ নবাব সিরাজদ্দৌলার বিরুদ্ধে ইংরেজ আর দেশীয় বিশ্বাসঘাতকদের যড়যন্ত্রের কুৎসিত ইতিহাস। রয়েছে শ্রীচৈতন্যের পদস্পর্শ ধন্য পুণ্যভূমি। উইলিয়াম কেরির কর্ম সাধণক্ষেত্র এবং তার সমাধি। ষ্টেশনকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাই। ছোট্ট দোকানে চা বিক্রি করছে শ্যামলরঙ একজন নারী।কয়েকজন তরুণ আর বয়স্কতরুণ বর্তমান সাহিত্য, বিভিন্ন পত্রিকা এবং সম্পাদকদের সম্পর্কে আলোচনা করছে আর চা খাচ্ছে। এই প্রথম এদেশে রাজনীতিমুক্ত কোন সাহিত্য আলোচনা শুনে দুটি কান পেতে রাখলাম।
চা দাও দিদি—
দশটাকার সুদর্শন চাকতিটি এগিয়ে দেই। আমার অনার্য চেহারা। পড়ন্ত সূর্যের নীলরং ময়ূরচ্ছটায় রাঙিয়ে দিয়েছে কালোমুখ। ভাঙ্গা দাঁতে আদিগন্ত বিস্তৃত হাসি। চা বউটির সস্তা কমলাশাড়ি, লালটিপে কাঁপছে নীলাভ প্রতিচ্ছবি। হেসে চা এগিয়ে দেয়। এ হাসির কোথায় যেন পুববাংলার বাসনা ভেসে এলো। মুহূর্তে ভেবে নিলাম, কথা বলব। সাহিত্যপ্রেমিরা আলোচনামগ্ন। ওরাও কলকাতা ফিরবে। ঠিক করলাম। ওদের পেছনে ছুটে আমিও ট্রেন ধরে ফেলব।
৩
যা ভেবেছিলাম। বাংলাদেশ থেকে ৯৮ সালের শেষদিকে জ্ঞাতিদের কাছে সম্পদ বিক্রি করে চা বউটির পরিবার চলে এসেছে এদেশে।
গতকাল বিকেলে কালনার বাজারে একজন ফরসা সতেজ লাল টুকটুকে বুড়োকে দেখেছিলাম। দারুণ সপ্রতিভ। আলুপটলের দোকানে বসা এক নবদম্পতির সাথে ঝুমে গল্প করছিল। আমি সব্জি কাটলেট কেনার ভান দেখিয়ে বাজারে গিয়েছিলাম। বুড়োর উচ্চারণে ছিটকে বেরিয়ে আসছিল আমার জন্ম শহরের কয়েকটি শব্দ। কাছে গিয়ে হুক ফেলেছিলাম, কাগা কি গোপালগঞ্জের ? একটু থমকে অদৃশ্য কিছু সরিয়ে টুকটুক বুড়ো জানালেন, আরে নাহ। আমি খুলনার। এইযে এগের বাড়ি গোপালগঞ্জ।
দুজন তরুণ ছেলেমেয়ে সব্জিপট্টির দোকান সামলাচ্ছে। মেয়েটির কপালে ডগমগ করছে সিঁদুরের টিপ। বাঙ্গাল গন্ধ লেগে আছে ওদের চোখে মুখে গায়ে।
আমার মুখে গোপালি হাসি, নতুনবউ আমিও কিন্তু গোপালগঞ্জের।
বউটি এবার কথা বলে, আপ্নেরা কবে আইছেন দিদি ?
অনেক বছর। তোমরা ?
স্বামির মুখের দিকে তাকায়। স্বামিটি উত্তর দেয়, আমি আসা যাওয়ার মধ্যেই আছি দিদি। এবার বিয়ে করে ওকে নিয়ে আসলাম।
কেমন আছে ওদিকের সবাই। শুনলাম অনেক উন্নতি হয়েছে।
স্বামিটি কিছু বলার আগেই অনেকে বলে ওঠে, আর উন্নতি ! হলেই কি আর না হলেই কি। দেশটা ত আর আমাদের নেই। ওটা এখন মোচলমানদের দেশ।
বুড়ো কাকা দুহাতে মুখ ঘষে, মোচলমানের সাথে থাকার চে এখানে আসি না খায়ি থাকা অনেক ভাল। কি বল মা !
সম্মতির মাথা নাড়ি, কিন্তু কাকা এদেশেও ত ধর্মের রাজনীতি এসে গেল।
কাকার ফর্সা মুখ লাল হয়ে যায়। নতুন বরটি মুখতোড় গালি দেয়, চুদিরভাই মোদি এন আর সি চোদাচ্ছে ! আচ্ছা দেখা যাবেনে—
আমি হেসে গড়িয়ে পড়ি। চ বর্গের এই বিশুদ্ধ গালিগুলো একেবারে আমার জন্ম শহরের। খুব ডানপিটে মেয়েরাও ঝগড়ার সময় বলে বসে, তোর মারে চু–। তাই নিয়ে হাসির হল্লা ওঠে, ও মেয়ে তোর কি ইয়ে আছে যে—-
কেউ একজন বকে দেয়, অই ক্ষিতিশ মুখ সামলে–
৪
বউটা স্বজন ভেবে আমাকে দেখে। গড়িয়াহাট থেকে কেনা সস্তা পালাজ্জো ফতুয়ায় আমাকে এদেশিয়দের মত লাগে। আমার উচ্চারণে বাঙ্গাল ভাব কম। অনেকের মতো ভেবে নেয়, আমিও এদেশে ওদের আগে আসা স্বদেশত্যাগীদের একজনা।
বউটিকে বলি, কেন এলে তোমরা ? মোছলমানের ধাওয়া খেয়ে ?
তরুণ স্বামিটি জানায়, না দিদি এখন আর তেমন ধাওয়া দেয় না। বাংলাদেশে হিন্দুরা সরকারি বেসরকারি সব ক্ষেত্রে বড় বড় পোষ্টে চাকরি করে। তয় দেশভাগের ধাওয়া ত ছিলই। বাঙ্গালী হিন্দুরা মোছলমানের সাথে থাকবে না বলে হিন্দুস্তানের পক্ষে ভোট দিয়েছিল। তাই আসতেই হত। কাকা জ্যাঠারা আগেই চলে এসে জায়গা কিনে রেখেছিল। এবার সবকিছু বিক্রি করে একবারে চলে এসেছে। আসলে দিদি গুষ্টির বেশীরভাগ আত্মীয়স্বজন চলে এসেছে। এদের ছেড়ে পূজোপার্বণ বিয়ে শাদিতে কি একা একা আনন্দ করা যায়, না থাকা যায় বল !
তবু ভালো, বলেনি যে মোছলমানরা ধাওয়া দিয়েছিল। মেয়ে কেড়ে নেওয়ার ধান্ধা করছিল। মালাউন বলে গালি দিয়েছিল। টুকটুকে বুড়ো জানায়, দেশভাগের আগে জমিজমাসহ অনেক জায়গা মোছলমানদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল তার বাবা। একই পুকুরের এপারে এরা স্নান করে, থালাবাটি হাড়িকুড়ি, পূজার বাসনকোসন ধোয়। ওপারে মোছলমানরাও গোসল করে, থালাবাটি ধোয়। ছিঃ ছিঃ কি ঘেন্না। আর কি থাকা যায় ! পানসুপারি খাওয়া একদলা থুথু ছুঁড়ে ফেলে কাকা। আমি চমকে সরে যাই।
দূরে দেখি গাইড আমাকে খুঁজছে। চলে আসার আগে বলি, কাকা আপনারা ত নমঃশূদ্র। ব্রাম্মণরা যদি আগের মত আপনাদের অচ্ছুত বলে ঘেন্না করে ? বেদ কেড়ে নেয়। মন্দিরে নিষিদ্ধ করে ?
উত্তর চাইনি। নতুন বউটার চিবুক ছুঁয়ে অঞ্চলভিত্তিক প্রথা মেনে পঞ্চাশটি টাকা দিয়ে বলি, চা খেও বুন্ডি। এরপর ধরা দিই গাইডের নজরে। এবার আমি শান্ত হয়েছি। মন কাঁদছে। যেন স্বজন ফেলে যাচ্ছি। কেন যে আমার এমন হয় !
৫
দু হাজার সাল। কলকাতার এক এসিযুক্ত শপিংমলে শাড়ি দেখছি। আমার বাচ্চা ছেলেটা খুব জমিয়ে নিয়েছে সেলসদিদি এবং দাদাদের সাথে। ওরা অশেষ অশেষ করে খুব আদর দিচ্ছে গোল্লা গোপাল্লা শিশুটিকে। এরমধ্যে অশেষ ছুটে আসে, আম্মু পানি খাবো।
প্রায় ছিটকে গেল দুজন সেলসগার্ল। একজন সেলসদাদা টিপ্পনি কাটল, শিবানী তোর কৃষ্ণকানহাইয়া দেখি মোছলমান ! অবাঙালি ক্ষত্রিয় পদবীর মালিকের কাছ থেকে শাড়িগুলো নিয়ে শিবানীকে বললাম, পদবী ত দাস। কোন দাস ?
আমার হাজবেন্ড তার দীর্ঘ বাহু দিয়ে টেনে নিয়ে এলো বাইরে। হাবিকে জানালাম, ওদেরও জানা দরকার পূর্ব বাংলায় কেন এত মুস্লিম জনগণ। সবাইকে জোর করে ধরে, নির্যাতন অত্যাচার ধর্ষণ করে মুস্লিম বানানো হয়নি। জাতপাতের অত্যাচার, নির্যাতন, নিগ্রহ থেকে বাঁচতে অনেকেই স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহন করেছিল এটাও ইতিহাসের সত্য ঘটনা। আমরা আমাদের পুর্বপুরুষের ইতিহাস জানি। ওরাও জানুক। জানা দরকার।
কলকাতা বইমেলা ঘুরে বেড়িয়েছি যাদের সাথে তাদের কারও কারও ভেতর মোছলমানদের প্রতি তীব্র ঘৃণা দেখতে পেয়েছি। অনেকেই সরাসরি অনুযোগ করেছে, তোমাদের যাপিত জীবন থেকে বাংলাদেশের শিল্প সাহিত্য পর্যায়ে অনেক বেশি আরবি শব্দের ব্যবহার হয়।
আলবৎ হয়। হতেই পারে। বাংলা ত মিশ্র ভাষা। অথচ আমার বন্ধুরা এ ব্যাপারটা ভুলে গিয়ে সংস্কৃত শব্দ পানিকে পর্যন্ত আরবি শব্দ ভেবে নেয়। আরও ভুলে যায় বাংলা ভাষার জন্যে বুকের রক্ত দিতে দ্বিধা করেনি বাঙ্গালী। যারা খুন হয়েছিল একুশে ফেব্রুয়ারির মিছিলে, তাদের কারও নাম বাংলা নয়। বাংলা ছিল তাদের অন্তর জুড়ে। কয়েক বছর আগে এই বন্ধুদের কেউ কেউ কলকাতার কোন এক ঘটনায় ফেসবুকে সরাসরি ডাক দিয়েছিল মোছলমানদের আক্রমণ করার। বন্ধুত্বের সুরে ভ্রান্তি এসে ভ্রষ্ট করে দিয়েছিল এতদিনের ভরভরন্ত সখ্যতাকে !
৬
অন্যদিকে কলকাতার ফ্ল্যাটে বান্ধবী বুঝিয়ে দিয়েছিল, যখন থাকব না নিজে রান্না করে খেতে হবে বুঝলি। আঁতকে উঠি, আমি তোর কিচেনে ঢুকব ? রাম রাম। ভুলে গেছিস আমি মুসলিম ? জিরো ফিগারের লিটল হিড়িম্বার মত চোখ পাকিয়ে বান্ধবী আমাকে ধুয়ে দিয়েছিল। সল্টলেকএর বাড়িতেও একই সমাদর পেয়েছি। ১৯৩১এর আদমশুমারিতে দেখা গিয়েছিল, ভারতের অন্যান্য প্রদেশের চাইতে বাংলায় অস্পৃশ্যতার সমস্যা তেমন উগ্র নয়। অস্পৃশ্য ? আমার তৃতীয় বোনের নমঃশূদ্র শাশুড়ি, মধ্যমগ্রামের বাড়িতে ঘেন্নায় মুখ বাঁকিয়ে বলেছিল, যতই ভাল মানুষের মেয়ে হও না কেন মোছলমান মোছলমানই। বউ হয়ে এসেছ। দয়া করে রান্নাঘর আর পুজোর ঘরে যেও না বাপু।
কিছুদিন আগে বাল্যবান্ধবীর সাথে মুঠোফোনে কথা হল– খিচুড়ি খাচ্ছি রে। মাসিমাদের কি যেন পুজো ছিল। সবজি খিচুড়ি দিয়ে গেছে। যা টেষ্ট !
শুনে আমার নোলা উপচে লোভ গড়িয়ে পড়ে। আমি কল্পনার পাখায় উড়তে উড়তে দুশো ত্রিশ মাইল পেরিয়ে পৌঁছে যাই আমার জন্ম শহরে। যেখানে সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের সাথে সঙ্গত করে বেজে উঠত সন্ধ্যা আরতি আর শঙ্খধ্বনি। কীর্তনিয়াদের লাগাতার কীর্তন। মনসা মঙ্গলপাঠ। দুর্গা পুজোর ঢাকের বাজনা আর কালি পুজোর মেলা। আর সেই ওড়াকান্দির মতুয়াদের বিশাল মিছিল ! ত্রিশূল হাতে ছুটছে গোঁসাই পেছনে করঙ্গের মালা পরে লালসাদা নিশান হাতে অনুসারী মতুয়ারা গাইছে, ‘হরি ধ্যান হরি জ্ঞান হরি নাম সার। প্রেমেতে মাতোয়ারা মতুয়া নাম যার। জীবে দয়া নামে রুচি মানুষেতে নিষ্ঠা, ইহা ছাড়া আর যত কাজ সবকিছু ভ্রষ্টা। কুকুরের উচ্ছিষ্ট প্রসাদ পেলে খাই। বেদ-বিধি শৌচাচার নাহি মানি তাই— ‘’
আমার রক্তে স্মৃতির মাতম ওঠে, ‘সেথায় যায় ছত্রিশ জাতে, প্রসাদ খাচ্ছে এক পাতে’– এখন হয় রে ?
কিছু কিছু হয়। একঘর দুঘর করে মতুয়ারাও হিন্দুদের মত চলে গেছে। চলে যাচ্ছে। জানিস, ওদেশে গিয়ে হরিঠাকুরের আদর্শ ভুলে মতুয়ারা পলিটিক্যালি মারামারি করছে এখন। ঠাকুরনগর থেকে মনোদাদা এসেছিল। বলে গেল, আমরা চাটার দল হয়ে গেছিরে বুন্ডি। নাগরিকতা না পেলে ওদেশে থাকতে পারব না। তাই ক্ষমতা চাটছে হরি ঠাকুরের উত্তরাধিকাররা।
ওরা কেন যাচ্ছে কখনও ভেবে দেখেছিস ? বাংলাদেশের সরকারী বেসরকারি, শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রকৌশল, আইটি, ব্যবসা সব ক্ষেত্রে হিন্দুদের সমান অংশ গ্রহন। তারপরেও কেন চলে যাচ্ছে ?
যাবে না ? ওরা ত এদেশে নিরাপদ নয়। মাঝে মাঝে—
সে ত ভারতেও হয়। মুসলিম আর দলিতরা মার খাচ্ছে, খুন হয়ে যাচ্ছে, চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্য, ইচ্ছাকৃত নামের বানান বিভ্রাট, পড়াশুনা বা বসবাসের জন্যে বাড়ি ভাড়া না পাওয়ার মত শত শত মার অপমান খেয়েও মুসলমানরা কিন্তু ইন্ডিয়াতেই থাকে। এদেশে আসে না !
ইতিহাসে লেটার পাওয়া বান্ধবী মুচমুচ করে হাসে, কারণটা ঐতিহাসিক দোস্ত। বাঙালী হিন্দুরা মনে করে তাদের জন্য ইন্ডিয়া হচ্ছে হিন্দুর স্থান। তাছাড়া বাংলাদেশ কবেই মুসলিম সরণীতে ঢুকে পড়েছে। জানের ত ভয় আছে। ভারতের অন্য অঞ্চলের মুসলিমরা কিন্তু কেউ কেউ দেশ ছাড়ছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা সেভাবে ছাড়েনি। অন্তত রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যতদিন বাম ধারার সুবাস থাকবে ততোদিন হয়ত স্বদেশেই থাকতে পারবে তারা। সামনের নির্বাচনে কি হয় কে জানে !
আমি ভাবি, সামনে বাংলাদেশেরও জাতীয় নির্বাচন। দেশের রাজনীতিতে শক্তিশালী কোন বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই। বাম বলতে কিছু পকেট দল। খাম পেলেই তাদের প্রতিবাদে আপোষের কাওয়ালী শোনা যায়। বিচারহীনতা, জবাবদিহির দায়হীন রাজনীতি, পর্যুদস্ত সমাজজীবন, চুরিচোট্টাজাত অর্থনীতিতে গরীব যত গরীব হচ্ছে, দেশের এক শ্রেণীর ধনসম্পদ তত বেড়ে যাচ্ছে। এদেশের গণতন্ত্র ব্যবসায়ীদের হাতে রুদ্ধ কতিপয়তন্ত্র। রাষ্ট্রের শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেছে । হাঁসফাঁস করছে দেশের জনগণ। প্রায় স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতাসীন দলের বিপক্ষে কে বা কারা আসবে নির্বাচনে লড়তে ? শঙ্কা জাগে। তবে কি প্রগতিশীলতার বিপক্ষে ধর্মীয়দলগুলো ফণা তুলে বিষিয়ে দেবে বাংলাদেশ ?