
পরিবর্তনের ডাকনামই কি দখল? কতকিছুই তো বদলে গেছে বিগত পঁচিশ-ত্রিশ বছরের তথ্যনির্মিত,তথ্যনির্ভর ‘একবিশ্ব’ সমাজে : রাষ্ট্র,রাষ্ট্রের ভূমিকা, সর্বসাধারণের আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিকতার লাগোয়া সাংস্কৃতিক যৌথতা।
‘বিকেলের নক্ষত্র’ নয়, নখের ডগায় আজ ‘সুচেতনা’-র যাবতীয় পরিসংখ্যান: ‘মানুষের যা হল, যা হবে মানুষের যা হবার নয়’। তবুও, পরম সূর্যকরোজ্জ্বল এই নতুন-বিশ্বের প্রধান পরিচয় হয়ে উঠতে পারেনি যুক্তিবাদিতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, অবিমিশ্র গণতান্ত্রিকতা। “এন্ড অব হিস্ট্রি” থেকে কীরকম সহজেই দ্রুতপায়ে এগিয়ে চলেছি বাজারবিশ্বের ‘দখলদারি’ ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশন’-এর ধনবাদী বলয়বৃত্তে: কী অনায়াসে ঘটে চলেছে নিধনযজ্ঞের মহোৎসব,হরওয়ক্ত—পূর্বনির্ধারিত সমান্তরাল / সমপার্শ্বিক জীবনহানি: প্রাণবন্ত একটি অর্থনীতির জন্য কিছু মানুষের প্রাণোৎসর্গকেও মেনে নেওয়া যেতে পারে বলেই একুশশতকীয় রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই মনে করেন। কর্পোরেট রাজতন্ত্রের সীমান্তহীন কব্জায় চলে এসেছে সবকিছু, এমনকি আ-বিশ্ব মানুষের শরীরও। কালাচারাল রেভ্যুলুশনের ব্যানারে বিক্ষোভে ফেটে পড়ল লাখদশেক। তাহরির স্কোয়ার, ইউরোপের মতো সিভিল সোসাইটি নয়, স্বয়ং সরকারই স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে বাজার অর্থনীতিকে বরণ করে নিল মহাচীন: মুরগির পিজিয়নহোলে চোখ পাকলানো রক্তপিপাসু শেয়াল: নিরানব্বুই বনাম এক—থুড়ি, দেওয়ালে-দেওয়ালে সাঁটা একটি ক্যাপশন: ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রীট’।
বেশ কিছু তাত্ত্বিক হেঁকেছিলেন দখল = পুনর্বাসন!!! পোস্ট-কম্যুনিস্ট পূর্ব ও মধ্য ইউরোপে নিখুঁত গণতান্ত্রিক বাস্তবতা অথচ তিরিশ বছর পরেও অধরা।(দমতোড় প্রচেষ্টা সত্ত্বেও) পোক্ত ধনবাদী হয়ে উঠতে পারেনি তারা! এমনকি, বেশ কয়েকটি য়ুরোপীয় প্রাক্তন কম্যুনিস্ট রাষ্ট্রে নতুন গুটিকয়েক কার্বঙ্কল লক্ষ করা গেছে: গণতন্ত্রের বদলে স্বৈরাচারের সোচ্চার বোলবালা! ওরা বলছেন—সময় ইক্যুয়ালস টু জীবিত অভিজ্ঞতার অংশ। না বুঝেই টুকে রাখি, সমীকরণ চিহ্নটি আঁকি লহমায় — সময় একটি উপলব্ধি-বিশেষ বা নিছকই অন্তর্দৃষ্টি। ফুকো বলছেন ‘বায়োপাওয়ার: অর্থাৎ, ছলে–বলে-কৌশলে, ভিন্ন-বিভিন্ন উপায়ে নাগরিকের শরীরের ওপর কর্তৃত্ব হাসিল করা এবং সেইসূত্রে জনগণেশের ‘নিয়ন্ত্রণ’। অর্থাৎ —দখল। অর্থাৎ, আন-কোশ্চেনেবল ‘রাষ্ট্রিক’ অকুপেশন= গোষ্ঠীভুক্ত বিশাল জনসমাজকে বশংবদ রাখার একটি পন্থা। ফুকোর ব্যাখ্যায়—এই ধরনের রাজনৈতিক কৌশলের বিশেষত্ব হল সমগ্র জনসংখ্যার নিয়ন্ত্রণ; নাগরিকের শরীর ও স্বাস্থ্যের ওপর রাষ্ট্রিক নিয়ন্ত্রণ: “diverse techniques for achieving the subjugations of bodies and the control of populations“. (সূত্র উইকিপিডিয়া)। এইসূত্রেই আধুনিক জাতিরাষ্ট্রগুলো বা ধনবাদের বিকাশ সম্ভবপর হয়েছে। পক্ষান্তরে, ফ্রিডরিশ নীৎসের নজরে (সূত্রঃ ইউজ অ্যান্ড আবিউজ অব হিস্ট্রি) অন্তরের গভীর,গভীরতম প্রদেশে,অতীতের নিতল গহ্বরে নিহিত রয়েছে বর্তমানতা : “ History is necessary to the living man in three ways: in relation to his action and struggle, his conservatism and reverence, his suffering and his desire for deliverance.” বিষয়টি ভাবায়।
মেনুতে কি আছে জানা থাকলে মনোমত ভোজন-প্রস্তুতি নেওয়া যায়। পসন্দ আপনি-আপনি সূত্রানুসারে তাই নিজেই ঠিক করে নিন কন্টিনেন্টাল নাকি মোগলাই অথবা স্বাস্থ্যসম্মত চীনা কিংবা নিছকই দেশি? বিবর্তনবাদের আরো উন্নততর চিলেকোঠায় পৌঁছানর কথা ছিল আমাদের। তার বদলে আমরা কেমন যেন প্রি-নিওলিথিক! ফুকিয়ামা লিখলেন—‘processes of globalization bring us not to one relatively homogeneous world but rather to a “clash of civilizations”। ইস! যুদ্ধ-হত্যা-রক্তক্ষয় কীভাবে মানুষী প্রগতির অর্থ হয় ? তারই খোঁজে,নীৎসের ঢঙ্গে হাতড়াই –‘দখল’-এর কয়েককুচি টুকরো-টাকরা ইতিহাস:
১. তিয়ানানমেন ১৯৮৯ বনাম অকুপাই ওয়াল স্ট্রীট ২০১১ ! ওর্ফে কুড়ি / কুড়ি বছরের পার।
২. তথ্যবিলুপ্তি ও বিষবিশের কাশ্মীর ।
৩. দখলের রাজনৈতিকতা ও তার ‘সাবপ্রাইম’ অর্থনৈতিকতা (২০০৮)বনাম ‘সমাজবাদী’ ধনবাদ।
৪. একরপিছু পাঁচ ডলারের বিনিময়ে জাতীয় জমিতে খনন চালিয়ে তোলা যাবে রত্নসম্ভার। এন্তার। নজরে পড়ল-জল / কয়লা / হাওয়া / গ্যাস / সোলার পাওয়ার / ইলেক্ট্রিসিটি / ২ জি,৩-জি
৬. অফশোর বিজনেস। আউটসোর্সিং। মহাচীনের উত্থান ওর্ফে ‘ক্যাপিটালিজম–‘আন-সোশ্যাল’। স্বাস্থ্যসম্মত নাকি চীনা কম্যুনিজম ? এ পথেই কি পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে ?
*******
২৬শে মে,২০১৯। রয়টারের সূত্রে কেট ক্যাডেল (সূত্র-গুগল) লিখলেন—‘তিয়ানানমেন স্কোয়ার ছাত্রবিক্ষোভের বার্ষিকী উদযাপনের সময় এগিয়ে আসছে, তাই চীনের রোবোট সেন্সরগুলোর মাত্রা বাড়ানো হচ্ছে ।’ তিয়ানানমেন স্কোয়ারে ট্যাঙ্ক ও গুলি চালিয়ে মানুষ মারার বিষয়টি একটি ট্যাবু ঃ নিষিদ্ধ বিষয়। অতএব, প্রেসিডেন্ট জাই জিনপিং-য়ের নেতৃত্বে চীনের ‘সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ দপ্তর খোলা হয়।আইন মোতাবেক,মহাচীনে সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টগুলো প্রকৃত নাম আর জাতীয় আইডি নাম্বারের সঙ্গে সংযুক্ত। আই-টি কোম্পানিগুলো সরকারের কাছে তথ্যাদি সেন্সর বা বিবাচনের জন্য দিতে বাধ্য ।চারটি বিবাচন কোম্পানি দিনে ৫০০০ থেকে ১০০০০ তথ্যাদির ছানবিন চালায় ।গত নভেম্বরে (২০১৮)নতুন নিয়ম লাগু হওয়ার পর ‘সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব চায়না ‘ বা CAC সংস্থাটি আন্তর্জালে ‘কম্যুনিস্ট পার্টির বিকৃত ইতিহাস’ পরিবেশনের ঘটনাটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে ঘোষণা করে দেয়।এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি ও সাইটটিও বিচারযোগ্য বিবেচিত হয় । অর্থ হয়,অত্যাধুনিক তখ্যবিশ্বও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণযোগ্য। স্বাধীন নয়। দুনিয়ার যে কোনো দেশে ও কালে শাসকের চেতনবিশ্ব,বস্তুত, বিচিত্রবর্ণময়।
পোয়েট্রি পত্রিকার মে, ২০১১-য় প্রথিতযশা মার্কিন কবি-প্রাবন্ধিক ক্যারোলাইনা ফর্শে লেখেন যে তিরিশ বছর আগে চূড়ান্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের কেন্দ্রস্থলটি ঘুরে দেখার জন্য তিনি এল্ সালভাদোর গিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু প্রকৃতপ্রস্তাবে, ১৯৮০-তে তিনি দেশে ফিরে আসেননি।বরং কবিতার দেশে ঘুরতে গিয়েছিলেন।আর লিখেও ফেলেন সাতটি কবিতা,একটি প্রবন্ধ – যার একটি পংক্তি ছিল এরকমঃ ‘ইট ইজ মাই ফিলিং দ্যাট দ্য টোয়েনটিয়েথ সেঞ্চুরি হিউম্যান কন্ডিশন ডিম্যান্ডস এ পোয়েট্রি অফ উইটনেস।’ তিনি মনে করেন লেখালেখি হবে একটি পরিপূর্ণ সাক্ষ্য-পদাবলি,নিছক প্রতিনিধিত্বমূলক বিবরণী নয় । তাঁর নিজের ভাষায় ঃ ‘অ্যাজ এভিডেন্সিয়ারি,ইন ফ্যাক্ট,অ্যাজ স্পিল্ড্ ব্লাড’। লেপ্টে থাকা রক্তের মতো সাক্ষ্য- সম্পৃক্ত ।
২০১৬। খবরের শিরোনাম হল একটি কবিতা।ভারতীয় পার্লামেন্টে আলোচিত হল কবি আগা শাহিদ আলির কবিতা-শীর্ষক ঃ ‘কাশ্মীর উইদাউট এ পোস্টাপিস।‘ নব্বইয়ের দশকে সন্ত্রাস,রক্তক্ষয় আর আইনের শাসনহীনতার বিরুদ্ধে কাশ্মীরিরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল।১৯৮৯ নাগাদ পুরো কাশ্মীর উপত্যকাটি সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের আখড়ায় পরিণত হয়। রাজনৈতিক অচলাবস্থা-অস্থিরতার দৈনন্দিনতা,এমনকি দীর্ঘ সাতমাস যাবৎ পোস্টাপিস বন্ধ থাকে। আমেরিকা-প্রবাসী কবি আগা শাহিদ আলি সেই অচলাবস্থার পটভূমিকায় উপরিল্লিখিত কবিতাটি লেখেন। কবিতাটির একদুটি পংক্তি ছিল এরকমঃ “ রয়েছি আগুনের মাঝে /খুঁজে পেয়েছি আঁধার’… “এটাই তোমার ব্যথা । অনুভব করতেই হবে তোমাকে / বুঝে নিও ,হে হৃদয়।’ অথবা ‘কোনোই প্রার্থনা নেই,কেবলই এক অন্তর্গত চিৎকার’। অতীত ও বর্তমানকে একত্রে জড়ো করে লেখেন ‘সোনা দিয়ে মোড়া, তারপর সব ছাই’। পরবর্তীকালে,বইপ্রকাশের সময়ে কাশ্মীর’-এর পরিবর্তে শাহিদ আলি ‘এ কান্ট্রি’ অভিধাটি ব্যবহার করেছিলেন।
প্রথিতযশা মার্কিন কবি-প্রাবন্ধিক–আলোচক ক্যারোলাইনা ফর্শের ‘এগেনেস্ট ফরগেটিং’ (১৯৯৩) বইটার কেন্দ্রীয় চর্চাবস্তু ছিল ‘সাক্ষ্য’ হিসাবে কবিতার গ্রহণযোগ্যতা, তথ্য-তত্ত্বের গুরুত্ব প্রতিস্থাপনে কবিতার উৎকর্ষ ।যুদ্ধ-রাষ্ট্রীয় অত্যাচার-মানসিক আঘাত জনিত দুর্দশা-দুর্ভোগের কারণেই কি দুনিয়াজুড়ে অগুণতি গ্রেগর সামসা মৌখিক প্রতিবেদনের বদলে অত্যাচার-অবিচার-দুর্বিষহ কদাচারের “আঁখো দেখা হাল’-টিকে লিখিত ভাষ্যে চিরস্থায়িত্ব দিতে উদ্যোগী হন? লেখা হয় ফর্শের ‘পোয়েট্রি অব উইটনেস’ কিংবা ফাদি যৌওদা, মারিও সুস্কো ,আনা আখমাতোভা, মাহমুদ দারউইশ, পাওলো সেলান, উঈস্লাভা সিম্বর্স্কা,ফয়েজ আহমদ ফয়েজ ,আগা শাহিদ আলির কবিতা?
Trauma আমাদের পূর্বস্মৃতিকে জাগিয়ে তোলে,অতীত-ভাবনায় ভাবিত করে। আর স্মৃতি তখন নিজের মতন করে ভবিষ্যৎ-কে খাড়া করে।ঠিক যেভাবে নীৎসে লেখেন ইতিহাস থেকে পাঠ নেওয়ার কথা ঃঃবর্তমান পরিস্থিতির কাছে ইতিহাসের অধীনতার বিষয় । ““[W]e need it [history] for life and action”।ত্রিধাবিভক্ত কাশ্মীর। কোথাও থাবা গেড়ে বসে পড়েছে চীন,পশ্চিক ও উত্তর- পশ্চিমের বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড কব্জা করেছে পাকিস্তান।শাহিদ আলির বইয়ের শিরোনামগুলোও কেমন পালটে যেতে থাকে । উইটনেস থেকে এভিডেন্সিয়ারি যেন ঃ নিজের অজান্তেই কয়েকগুছি পোস্ট-মেমরি কালেকশন, নস্টালজিক থেকে সাক্ষ্যসাবুদী ঃ ‘আই সী কাশ্মীর ফ্রম নিউ দিল্লী অ্যাট মিডনাইট’, ‘ভ্যাকেটিং অ্যান অ্যাপার্টমেন্ট,’ ‘রুমস আর নেভার ফিনিশড্’ ইত্যাদি-প্রভৃতি। আমরা লক্ষ করি ডি-কলোনাইজড্ তৃতীয় বিশ্ব রি-কলোনাইজেশনের দখলযুক্ত হচ্ছে।
৪ঠা অগাস্ট,২০১৯—কাশ্মীরে নিষিদ্ধ হয় আন্তর্জাল, তথ্যের আদান প্রদান। ঘনঘোর গণতান্ত্রিক আঁধার-আঘাত । কণ্ঠরুদ্ধ,তথ্যবিলুপ্ত কাশ্মীরে যেন শাহিদ আলির কবিতার রিপিট টেলিকাস্ট ঃ
“আমি পড়তেই থাকি—প্রেমিকের পত্রগুচ্ছ, পাগলামিতে ভরা
তাকে লেখা আমার চিঠি, যেগুলোর প্রত্যুত্তর আসেনি কোনোও…
আমায় পাঠিও তোমার আর্তনাদ, পারো যদি,কেবল এইভাবে :
ভালবাসার মানুষকে পাঠানো এক বন্দির চিঠিগুলো
পেয়েছি খুঁজে : যার একটির শুরুতে রয়েছে
“এই লেখা হয়তো কখনোই পৌঁছবে না তোমার কাছে।‘ ….
উপস্! আধুনিকতা কি তবে এত্তো ক্ষণজীবি?আশির দশকের টেলিভিশন, ভি-সি-আর, টেপরেকরডার, এস-টি-ডি বুথ নামক দোদুল্যমান সাঁকো ফলানা ফলানা এখনই বেজায় তামাদি। আধুনিকতার ইন্ত্কাল ঘটেছে নাকি বহু আগেই, বুলেটগতিতে—মরে ভূত এই সেদিনের তত্ত্বতাবিজ! চাঁদের গ্রহণদৃশ্য দেখার চেয়ে বরং আমরা নির্বিবাদে দেখে নিতে পারি আ-বিশ্ব চৈতন্যের দখলদারিত্ব, বলয়গ্রস্ত অস্তিত্ব আমাদের—আইডেন্টিটি যার গালভরা নাম। দুনিয়াজুড়ে খুলে দেওয়া হচ্ছে সরকারি সম্পত্তির এজমালি শিডিউল, তথ্যবিশ্বের বেড়া তিরক্ষা, ব্যক্তি-নিরাপত্তা-স্বাস্থ্য ও পরিবেশের নৈতিক মাণদণ্ড,আগল। কমার্শিয়ালাইজেশনের তোড়ে কবে থেকে ডুবুডুবু সবকিছুই চলে গেছে বহুজাতিকের দখলে।
অক্টোবর ৩,২০০৮ > নাভিশ্বাস উঠতে থাকা আমেরিকান ব্যাঙ্কগুলোর জন্য আটশো বিলিয়ন ডলারের বেল-আউট প্যাকেজ ঘোষণা করল ইউ এস কংগ্রেস।সাবপ্রাইম খেয়ে নিয়েছে ফ্রি-মার্কেটের মজ্জা। হিমালয়ের ররফ গলে গেলে তো পিথিবী ডুবে যাবে। তা কি খনো হতে দেওয়া যায় । নাকে খত দিয়ে অ্যান্টি-ক্লকওয়াইজ হাঁটতে শুরু ক্রল খোলাবাজারের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি,ন্যু ইয়র্ক। ব্রিটেন আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইস্টাইলে ফাইন্যান্সিয়াল সল্ভেন্সি রক্ষা পেল ।রাষ্ট্র এগিয়ে আসছে ফ্রি-মার্কেট রক্ষা করার জন্য ঃ থ্যালাসেমিয়ায় ভুগছে বাজার। রাষ্ট্রীয় রক্ত চাই !তবে কি সমাজবাদী হয়ে উঠল ক্যাপিট্যালিজম?যে সরকার একসময় ডি-রেগুলেশনেরর কথা বলেছিল, তারাই এবার শেয়ারবাজার রক্ষার্থে অগ্রণী হল। কবরে পাশ ফিরে শুলেন মার্ক্সসাহেব।
দখল এর উল্টোপিঠের বাসিন্দা তো দান / দয়া/ ত্যাগ/ তিতিক্ষা। বে-খেয়ালেই নাহয় সে বিষয়ে কিছু কথা ভাবা যাক; ভগবানকে বঞ্চিতের দলভুক্ত করা যাক। যা কিছু ভালো, যা কিছু সুন্দর যা কিছু বিত্ত- অর্থময়—ভগবান কেমন সহজে সেসবের সঙ্গে মিলেমিশে যান। ওইসব কিছুর ওপর নিজের প্রভুত্ব খাটান।আর তারই পূজাপাঠে মগ্ন চ্যালাচামুণ্ডারা সন্ত্রাস খুঁজে পান, যত্রতত্র, ভুলত্রুটি—নিরর্থক খুনসুটি: ধনবাদ–সমাজবাদ। ওহো !গরিবগুরবো বর্তমানতায় বন্দি বানালে ভগবান কি একটি ঘন্টাও গন্ধী নালির পাশে থাকবেন—ধারাভির করোনা-কানাগলিতে,পল দো পল—অ্যা্টলিস্ট?
“ They hang the man and flog the woman
That steal the goose from off the common,
But let the greater villain loose
That steals the common from the goose. …”
English folk poem, circa 1764
গচ্ছিত স্ত্রী-ধন ভেঙ্গে খাওয়ার মতো খনিজ ভাণ্ডার,বন-উপবন, বনসম্পদ, কাবেরী বেসিন গ্যাস, পেট্রল, বম্বে হাই–য়েরহাতবদল হল। বে-দখল হল আদিবাসী কাঠকুঠোর উপচার, নিরালা জীবন। আর এই পথে খানিক এগিয়ে পেশ হল নতুন কৃষিবিল। পথে এসে বসল সমাজ। তাদের আশঙ্কা অবাধে চলবে নাকি লুঠতরাজ এবার। অর্থাৎ, দখল হল একটি অবস্থা/পরিণতি/পরিবর্তিত হাল। কাঁচামালই শুধু নয়, শ্রম কেনা যায় এবং কেনা হচ্ছেও। চিন ম্যানুফাকচারিং পাওয়ারহাউস হয়ে উঠেছে অথবা তথ্যপ্রযুক্তিতে শ্রমের যোগান দিচ্ছে ভারত। এও তো দখল । প্রথম আন্তর্জাতিকতার সঙ্গে তফাত এখানেই । মাল তৈরি হত ভারতীয় নুক্কড়ে। মাল কিনে ্নিতে হাজির হত এশিয়া-ইওরোপ। দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকতায় পণ্যের বদলে শ্রম কেনে পশ্চিমী কর্পোরেট। পাক্কা ধরি মাছ না ছুঁই পানি হাল–হালাত। প্রত্যক্ষ লাঠিঘোরানো নয়, উড়ে এসে জুড়ে বসাও নয় ,শাসন করবে তাদের প্রতিভূ কতকগুলো প্রতিষ্ঠান বা গ্লোবাল মাল্টিন্যাশানাল—তদারকির জন্য খুলে নেবে অফশোর লোকাল হেডঅফিস।ভাড়া গুনে কব্জায় নেবে হাজার কয়েক বিদেশি স্কোয়ার ফিট।পান থেকে চুনটি খসিলেই বাঁশি রাজাবে আই-এম-এফ/ বিশ্বব্যাংক/ইউ-এন-ও ইত্যাদি প্রাতিষ্ঠানিক রেফারি বা তিনজন (স্থানীয়) লাইন্সম্যান কিংবা থার্ড আম্পায়ার। শ্রমজীবি নয়,আমরা এখন উপভোক্তার দল।আমাদের ঘিরে রয়েছে মাল্টিপ্লেক্স- মাল্টিন্যাশানালের বর্ডারেলস ওয়ার্ল্ড !অসুখ-বিসুখও কেমন আন্তর্জাতিক এখন । একাসনে বসছে য়ুহান,লণ্ডন ও বোস্টন ।
১৯০১ সালে, মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণ দেওয়ার সময় আমেরিকার নদীগুলোর প্রবহমানতা ও জলসম্পদ ব্যবহারের বিষয়ে যুগান্তকারী পরিবর্তনের অভিমুখ রচনা করেন তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি থিয়োডোর রুজভেল্ট। জলসেচ-বন্যা নিয়ন্ত্রণ-জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও পরিমিত জলের যোগানের লক্ষ্যমাত্রাটি সামনে রেখেই পরবর্তীকালে কলোরাডো নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন হয়। প্রয়ুক্তিবিদরা একের পর এক নদীর বুকে বসিয়ে দেন ভারী ভারী যন্ত্র ।চলতে থাকে ড্রেজিংয়ের কাজ,নদীর পাড় বাঁধানোর কাজ ।নদীর জলসম্পদই হয়ে ওঠে মার্কিন অর্থনীতির প্রধানতম যোগানদার ।আমেরিকার দেখাদেখি আরো অনেক দেশ তাদের অনুসরণ করে।ভারত তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য। নির্মীয়মাণ বাঁধগুলোকে ‘মন্দির’ বলে উল্লেখ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত নেহরু। টেনেসি ভ্যালির আদলে পশ্চিমবাংলাতে গড়ে ওঠে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন।বাঁধ বসে দামোদরের বুকের ওপর।
রুজভেল্টিয় ঘোষণার একশো বছর না পুরোতেই রিপাব্লিকান পার্টির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট-পদপ্রার্থী ব্যারি গোল্ডওয়াটার নদীতে বাঁধ দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করে বলেন ‘নদীতে বাঁধ দিলে কিছু ক্ষয়ক্ষতি তো হবেই।’ তাঁর মতে সেই লোকসানের পরিমাণ ও পরিণাম অবশ্যই অতি মারাত্মক ।যেন পাম্প চালিয়ে ফ্ল্যাটবাড়ির জল তোলার কাজ চলছে। নদীগুলোর নাব্যতা নেই। ড্রেজিং অবধারিত হয়ে পড়েছে ।পৃথিবীর বড়ো বড়ো নদীগুলো, বিশেষত ,এশিয়া মহাদেশেরই প্রধান পাঁচটি নদী যেমন গঙ্গা-সিন্ধু-হলুদ নদী-আমু ও সির দরিয়া এখন আর সাগরে গিয়ে উপচে পড়ে না।পণ্য পরিবহণের টারগেট মাথায় রেখে জারমানির রাইনকেও বেঁধে ফেলা হয়েছে ।পৃথিবী জুড়ে ২২৭-টি বড়ো নদীর ষাট শতাংশকে বাঁধ নির্মাণ বা নদীর গতিপথ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সংকুচিত ভগ্নাংশ বানানো হয়েছে । ‘জল’-কে নতুন খনিজ তেল বলা তো ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে! আশঙ্কা হয় যে অদূর ভবিষ্যতে কি আমরা জল কিনেই খাবো?
জল নেই তাই, অনতিবিলম্বে, জলসম্পদ খুইয়ে ফেলা প্রথম ব্যর্থ রাষ্ট্র হতে চলেছে ইয়েমেন । পাকিস্তানের কোয়েটা শহর অথবা মধ্যপ্রাচ্যের আবুধাবিতে আর মাত্র দু-একদশকের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে মিঠেজলের ভান্ডার। সর্বাধুনিক পারমাণবিক চুল্লিগুলোর জলের প্রয়োজন অত্যন্ত বেশি হওয়ার কারণে সমুদ্রতীরবর্তী এলাকাগুলোকে বেছে নেওয়া হচ্ছে। যেমন, কল্পক্কম। জীবনহানির আশঙ্কায় সেখানে বিরোধও দানা বেঁধেছে; যেহেতু, ফুকুশিমার স্মৃতি মন থেকে মুছে যাওয়ার নয় । বিপরীতক্রমে, স্রেফ জল বিপণনের জন্য অস্ট্রেলিয়া-চিলি-পশ্চিম আমেরিকায় জল-বাজার খোলা হয়েছে।অর্থ হয়, জলাভাব আরো ঘনীভূত হয়ে উঠলে বড়ো বড়ো জালা-জেরিক্যান-ড্রাম বা মটকা-মশকে ভরে জল বিক্রি করবে ভিস্তি।কাঠ-কয়লা-বনজ বা নানাবিধ খনিজ সম্পদ এ্মনকি এযুগের দতথ্য-স্পেক্ট্রামঃ ২-জি-৩জি-৪জি-৫জি নিষয়েও একই কথা বলা চলে।
‘অকুপাই ওয়াল স্ত্রিট’ সম্বন্ধে মন্তব্যসূত্রে জিজেক লিখলেন ‘we are called losers, but the true losers are on Wall Street. …we are not destroying anything . we are only witnessing how the system is destroying itself’. তিরিশ বছর হল বার্লিন প্রাচীর ধস্ত হয়েছে ।পূর্ব ও মধ্য ইওরোপের পোল্যাণ্ড-হাঙ্গেরি-রুমানিয়া ইত্যাদি দেশগুলো এখনো অর্থনৈতিকতা কিংবা গণতান্ত্রিক আদর্শের রাজনৈতিকতার দিক থেকে পশ্চিম ইওরোপীয় সঙ্গীদেশগুলোর সমকক্ষ হয়ে উঠতে পারেনি। তাত্ত্বিক অগাস্টিন স্তোইকা মনে করেন যে এইসব দেশগুলোয় রাজনৈতিকতার ওপর যুগযুগ ধরে চলে আসা গাদাগুচ্ছের ‘করাপ্ট’ প্রভাব রয়েছে। স্তোইকা পলিটিক্যাল ক্যাপিটালিজম বা রাজনৈতিক ধনবাদ-এর কথা পেড়েছেন।পোস্ট–কম্যুনিস্ট রুমানিয়া সন্দর্ভে লিখেছেন যে এদেশে জারি রয়েছে এমন এক অর্থব্যবস্থা যেখানে রাজনৈতিক কর্তৃত্বের নজরদারিতে এবং/কিংবা অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে তাৎপর্যপূর্ণ মুনাফা ‘আয়” করা সম্ভব। এমন এক অর্থব্যবস্থা যা রাজনৈতিক ‘করাপ্ট’ কাজকারবারের দ্বারা প্রভাবিত। আর এইসব দেশের কয়েকটিতে গণতান্ত্রিকতার অভ্যাস সম্বন্ধে বিশেষজ্ঞজন মনে করেন যে “ democracy is being undermined by authoritarianism’ …আর গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারগুলোকেও ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।
পূর্ব ও মধ্য ইওরোপীয় অঞ্চলটি ,বস্তুত, কোনোকালেই ইওরোপের অন্যান্য এলাকার সঙ্গে একাসনে বসার উপযোগী ছিল না। এক- দেড়শো বছরের বেশি সময় ধরে সামাজিক –রাজনৈতিক ভিন্নতা রয়ে গেছে । ১৯৮৯-এর অর্থনৈতিক সূচকে পৌঁছতেই তাদের বিশ বছরের বেশি সময় লেগে গেছে। শিক্ষাদীক্ষার মান খুবই নিম্নমানের।মধ্যবিংশে হাইস্কুল গ্রাজুয়েটের সংখ্যা ছিল মাত্র ৮ শতাংশ । সুতরাং, ১৯৮৯-৯০ –এর ‘ব্যাক টু ইওরোপ’ শ্লোগান মনোগ্রাহী হলেও শতাব্দীপ্রাচীন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অবস্থার কারণে বাস্তবস্মমত বলা চলে না । এইসব দেশগুলো ইওরোপের প্রত্যন্ত দেশ ছিল এবং বার্লিন দেওয়াল ধ্বসে পড়ার তিরিশ বছর পরেও তেমনই রয়ে গেছে । পোস্ট-কম্যুনিস্ট দেশগুলোকে যদিও নব্য-উদারবাদী ‘ওয়াশিংটন কনসেনসাস’ অর্থাৎ, উদার অর্থনীতি, বেসরকারীকরণ ও আর্থিক কঠোরতা /ব্যয়সংকোচের নীতি অনুসরণ করতে বলা হয়েছিল। ফল হয়েছিল মারাত্মক। কৃষি –উৎপাদন কমে যায় প্রায় ৫০ শতাংশ, জিডিপি কমে যায় ২০ থেকে ২৫ ভাগ। দারিদ্র্যের কবলে পড়ে ২০-৩০ % মানুষ।ভিনদেশে চলে যান প্রায় ৮ লাখ পোলিশ, ৫ লাখ শ্লোভাক আর প্রায় ৪ লাখ হাঙ্গেরীর অধিবাসী ।
এই অঞ্চলের অর্থনীতির বৃদ্ধি ঘটেছে কেবল পশ্চিম ইওরোপের অধীনস্ত ব্যাক-ইয়ার্ড হিসাবে। এই অঞ্চলের নিজস্ব ব্যাংক ব্যবস্থা নেই । ইওরোপের বড়ো বড়ো বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দখলে রয়েছে এদের ৮৭ শতাংশ শেয়ার । ইন্সিওরেনস্ সম্বন্ধেও একই কথা প্রযোজ্য । বস্তুত, বিদেশি বহুজাতিক সংস্থাগুলোর দখলে রয়েছে এ অঞ্চলের অর্থনীতি । মধ্য ১৯৯০ থেকে পশ্চিমা মূলধন খাটানো হয়েছে বছরে ১৫-৩০ বিলিয়ন ডলার। হাঙ্গেরির ৮২ প্রতিশত ইনভেস্টমেন্ট , ৭৩ প্রতিশত বিক্রিবাট্টা আর ৮৯ প্রতিশত শিল্পসম্ভারের রপ্তানি করা হয়েছে বিদেশি কোম্পানিগুলোর খাতে। নামজাদা জার্মান খুচরা ব্যবসায়ী কোম্পানি মেট্রো, বা ব্রিটিশ টেসকো কিংবা ফরাসি ক্যারিফোর কোম্পানিগুলো মধ্যো পূর্ব ইওরোপের বাজার জাঁকিয়ে বসেছে। প্রকৃতপ্রস্তাবে, হাজার কয়েক বহুজাতিক সংস্থার নেটওয়ার্ক স্থাপিত হয়েছে এইসব অঞ্চল জুড়ে। মিয়ামিতে নয় ,আমেরিকান জিনিস উৎপাদিত হয় চীন-সাগরের উপকূলে।কত্তো ঘোস্ট সিটি গজিয়ে উঠেছে মহাচীনে। অর্থশাস্ত্রীরা বলছেন মধ্য-পূর্ব ইওরোপে এক অনুজীবি বা পরনির্ভরশীল ধনবাদী বাজার ব্যবস্থা চালু রয়েছে বরং ।অর্থাৎ, প্রথম আন্তর্জাতিকতার ভিন্ন পরিণাম ঃ পোস্ট-কম্যুনিস্ট বোতলে কলোনিসিস্টেমের ওল্ড ওয়াইন। দখলনামার এও এক ধুরন্ধর রূপ।
ফিরে যাই স্লাভোজ জিজেক আর ফুকুয়ামার “এণ্ড’-য়ে । জিজেক লিখছেন ২০১১-র ওরা বিকল্প স্বপ্নের সন্ধান করেছিল মহাচীনে। চীনা সরকার টিভিতে-সিনেমায়–গল্পে-উপন্যাসে বিকল্প বাস্তবতার সম্প্রচার রুখে দিলেন ।“ we are not communist s if communism means a system which collapsed in 1990. … In China today, we have a capitalism which is even more dynamic than your American Capitalism’.আর ফুকুয়ামা লিখেছেন – গণতন্ত্র সেসব দেশে কীভাবে দেখা দেবে যদি না জাত্যাভিমান থাকে,জাতীয়তাবোধ থাকে ।জাতীয় একতা তাই গণতন্ত্রের পক্ষে সবচেয়ে জরুরি (পৃ- ২১৬)। তবে কি আ-বিশ্ব করপোরেট রাজতন্ত্রের জন্যই এই বাজার-দখল,ধনবাদী রদ-বদল?
পরের পাতাতেই ফুকুয়ামা লিখেছেন যে— ‘the third constraint on the emergence of stable democracy has to do with the existence of a highly unequal social structure ‘( পৃ- ২১৭)।সুতরাং, আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের কারণেই CEE দেশগুলোতে’ইললিবেরাল ডেমোক্রাসি” বা ‘ডেমোক্রাটিক রিগ্রেসন’ দেখা দিচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।মার্কিনী রাষ্ট্রদূত জন শ্যাটুকের উচ্চারণ দিয়ে ইতি টানি ঃ শ্যাটুক লিখেছেন—‘সীমান্ত বিলোপই হল একীভবনের সবচেয়ে বড়ো ক্যারিশ্মা ঃ দেশগুলো আর দেশবাসীদের মধ্যে মুছে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় সীমান্ত,অর্থনৈতিক ঘেরাটোপ।আর্থিক লেনদেনভিত্তিক ‘বর্ডারলেস’ বিশ্ব,পুব আর পশ্চিমের মধ্যে আদান-প্রদান,মুক্তবাজার ব্যবস্থা,মূলধনের ‘এফ-ডি-আই বিনিয়োগ,বিশ্বব্যাপী শ্রমের বাজার…আর রাষ্ট্রভিত্তিক উন্নয়নের জায়গা নেবে এখন গ্লোবাল উন্নয়ন।রাষ্ট্রিক গণ্ডি বহির্ভূত অনেক আর্থিক সংগঠন গড়ে উঠেছে—বিশ্বব্যাঙ্ক,আইএম এফ,ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার…যোগাযোগের কল্যাণে আমরা পরস্পরের আরো কাছে পৌঁছে যাচ্ছি,যাবোও। আমাদের অর্থব্যবস্থাগুলো পরস্পরের আরো কাছে আসবে।শ্যাটুক নিশ্চিতই ঠিক। কিন্তু চাঁদের উল্টোপিঠেও কি ধামাভর্তি জোছোনা দেখা যায়?