রতিসুখসারে তিলান্নের ভোর থেকে বহুদূর জলে ছায়া পড়ে মন খুলে ফেলে এসে দেখে শূন্য স্বপ্নরেখাজাল মৃদু ক্ষতলোভী তার দিগন্তের শিকারি দোসরে খায় ঘুমে মৃতবৎ, নেভা আঁচে জ্বলে না সকাল লাস্যময় ভাতে ওঠো ফুটে ওঠো নরক দক্ষিণ রতিসুখসারে যার মধুনাম তুলসী শীতল লিখে রাখছে হাত শোনো থৈ থৈ দেহকোষে এত ঋণ বেলপাতাখানি তবু সখাসনে বড় অবিচল অজন্মা পেয়েছে কোল কার সারিগানে আনবঁধু ? এত মিল দিলো কোন জনে তার সে আঙিনা ভ’রে ধরি, ছানি কী উপায়ে ডুবোজল, উথলানো মধু কলসির মুখ থেকে গ্রাসো দেখি অঝোরে অঝোরে ... হেমন্তসখা ১ হেমন্তের দিনে ছায়ারা দ্রুত হতে থাকে ছুঁচের ওষুধের মতো সামান্য অপমান গায়ে এসে বেঁধে মিলিয়ে যায় অজানা সব জ্বরের ভেতর বিকেলের ছাইয়ের দিকে গড়িয়ে যেতে যেতে হেমন্তের দিন, বলো কতকিছু অকারণ মনে পড়ে যায়? ২ হেমন্তসখা, শুকনো পাতার চাদরে ঢেকে দিই এসো চুম্বননত হও আহা কত শান্তি শান্তি। অমন শান্তিজল নিতে ডাক দিও আবার স্বমেহনে কেঁপে কেঁপে ওঠে চরাচর আমি যেন এত মেঘ এত মেঘ দিতে পারি এত! ঘর আমাদের যদি একটা ঘর হত, ঘরের সামনে একটা বাগান হত, আমি ফুল ফোটাতাম, মাটি কুপিয়ে জল দিতাম, তোমার ভালো লাগত না, বলো? আমি যদি সেই ঘরের চারদিকে অগণন অগণন প্রদীপ জ্বালিয়ে বাতাসকে থামিয়ে রাখতাম কিছুকাল, তোমার কি খুব খারাপ লাগত? আমি একটা আসন বুনতাম, পাহাড়, নদী আর পাইন বন। সেই আসনে আসনপিঁড়ি করে তুমি এসে বসতে আর দু'একটা গল্প শোনাতে মুড়ি খেতে খেতে। তোমার বুঝি এতই খারাপ লাগত, আমি যদি আস্ত একটা চাঁদ নামিয়ে জোয়ারের স্রোতে উথলে ওঠাতাম সেইসব মায়াজল, তবু তোমার কাছে এইসব ধ্বস্ত হাড়মজ্জামাংসরক্ত, সবটুকু তা-ই? সবটুকু তা-ই বুঝি? পাহাড় চুড়োটিতে কোন পাহাড় চুড়োর খুঁটিতে বেঁধে রেখেছ প্রাণ জানো না গো একচুল নড়ার সাধ্য নেই আমার দূর থেকে শহরের আলোগুলো জ্বলে উঠতে দেখি, নিভে যেতে দেখি দেখি শান্ত উপত্যকায় রাখাল গাছের নীচে ঘুমিয়ে রয়েছে। পাহাড়ি বধূরা ফুল গাছের টবে ফুল আঁকছে আমি ওদের সবার কাছে যেতে চাইছি অথচ তুমি বেঁধে রেখেছ সবচেয়ে উঁচু দুর্গম চুড়োটিতে তারপর নিজেই ভুলে গেছ। ঘুমন্ত কুয়োর নীচে ঘাসে ঢাকা শিরা উপশিরা দিনান্ত প্রস্তুতিপর্বে ঢালু কাজলের শুষ্ক পরাভব, দর্পণকোটরে আলুথালু জরতী পাঁজর ভেঙে ভেঙে দরশশ্রবণে দেহ স্থির দু’ধারে আঁধার ঘন অরক্ষিত নষ্ট দোপাটির। ভুলে গেছি জল আর জলের বিস্ময়ে তার ভুল অতীত সর্বস্ব মেঘে অবসন্ন হাতের আঙুল পিঠ চুইয়ে ব্যথা ঝরে, ব্যথার কুহকে অবলীন ঘুমন্ত কুয়োর নীচে জলে ডোবা বিষণ্ণ হরিণ ! তুমিময় তোমার গা বেয়ে আমি বুনো ধুন্দুলের লতা দেখেছ তো চাষবাস? কঞ্চি পোঁতা, বাঁশ দিয়ে মাচা করা— তুমি বাঁশ আর আমি কিনা খুঁজি আড়বাঁশি ! যাবার যে জায়গা নেই কোনও তোমাকে ঘিরে ঘিরেই ফুল ফোটাই হলুদ রঙের... তুমি জানো না লক্ষ্মীটি কাঁটালে পোকা এসে যখন তখন, উফ মাগো ! লতাফুলপাতার নিয়তি সব খেয়ে যায়। মারোয়া বাজছে এখনো মাটি আলগা হয়ে এলো... নিঝুম গাছেদের ঘুমঘোরে মারোয়া বাজছে এখনও । পায়ে পিষে মরে যাওয়া আনন্দেই নেমে আসেন স্বয়ং করুণাময় ! তুমি তাকে শ্বাস দিও চোখের পাতায় জ্বালো সন্ধের সলতে সোনার সংসারে গা ভাসিয়ে গান এলে ঠোঁটে চলকে উঠুক শ্যাম-বুকের গন্ধ ফ্যাকাসে মলাটের বই ১ কয়েকটা কবিতা, দু'টো ছেঁড়া পাতা, তিন চারটে ফ্যাকাসে মলাটের বই এই নিয়ে কি সংসার চলে, বলো? চৌকোনা বাক্সে বাঁধা মন ভেতরে ফড়িঙের ওড়াউড়ি অভাবের ঘরে কোথাও বিনিদ্রা নেই আমার তোমার বুকের ওপর শুয়ে থাকি ঘুমে কাদা হয়ে পেন্সিলের আঁকিবুঁকিরা ম্লান হয়ে আসে এয়োস্ত্রী চিহ্নগুলি ২ একটা লেখা হারিয়ে গেলে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে যেন সন্তান হারিয়েছে আমাদের তোমার লেখা গুছিয়ে তুলে রাখা আর ছুঁয়ে দেখা শুধু এ কাগজ ও কাগজ নতুন নতুন সংখ্যা এত সামলাতে সামলাতে হাঁফ ধরে আজকাল বয়স বেড়ে যাচ্ছে, টের পাই। হারিয়ে ফেলি, খুঁজে আনি, ধুলো ঝাড়ি এত লেখা জমিয়েছি তোমার! যেন আমি মরে গেলে ওরাই করবে মুখাগ্নি।

দীপান্বিতা সরকার
শূন্য দশকের কবি। জন্ম ও বসবাস দক্ষিণ কলকাতায়। পড়াশোনা ইংরাজি সাহিত্য নিয়ে। পেশা কন্টেন্ট রাইটিং এবং শিক্ষকতা। সঙ্গীতে বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। গান শোনা, নাটক দেখা, গান করা অন্যতম শখ। ছোটবেলা থেকেই কবিতায় আগ্রহ, ২০ বছর বয়স থেকে লেখালেখি শুরু। ২০১১ সালে প্রথম বই ‘ঝিমরাতের মনোলগ’ প্রকাশিত হয়। তারপরের প্রকাশিত বইগুলি হলঃ ‘একান্ন থানের নাও’ (২০১৩), ‘পাশের উপগ্রহ থেকে’ (২০১৫), ‘ইতি গন্ধপুষ্পে’ (২০১৬), ‘হিমঝুরি’ (২০১৭) এবং ‘কুশের আংটি’ (২০১৮)।
Facebook Comments Box