=========================================================
=========================================================
মিল্লাতের মুখে বিপ্লবের কথা শুনে আমরা মুচকি হাসি দিই। আমরা মানে, আমি, ইব্রাহিম, তুষার আর পাপ্পু। মিল্লাত অন্যদের দিকে তাকায় না, আমার দিকে তাকিয়ে পাল্টা হাসে। ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে বুঝতে পারি, ও আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে না, চের দিকে তাকিয়ে হাসছে।
আমার পরনে ইয়েলোর গেঞ্জি। সাদা গেঞ্জিতে লাল রঙের অ্যাম্বুশে চের গম্ভীর মুখের ছাপ বসানো। আর চের মুখের ঠিক নিচেই প্যাঁচানো ফন্টে ‘লা চে’ লেখা। আমাকে গেঞ্জিটা পরতে দেখলেই মিল্লাত সজোরে বলে, ‘এর্নেস্তো গেভারা দে লা সের্না…আপনাকে স্বাগত জানাই!’ আমাদের মধ্যে একমাত্র মিল্লাতই চের পুরো নাম বলতে পারে। আমি মাঝেমধ্যে সঙ্গোপনে এক মাইল দৈর্ঘ্যের নামটা আওড়ানোর চেষ্টা করি, কিন্তু ‘এর্নেস্তো গেভারা’ পর্যন্ত এসেই আটকে যাই। চে কে বুকে রাখার পূর্ব শর্ত হিসেবে তার পুরো নাম মনে রাখতে হবে এই কথা মিল্লাত আমাকে পুনঃপুন বোঝাতে চাইলেও আমি মানতে রাজি হই না। আমরা কেউই রাজি হই না। আমরা মানে, আমি, ইব্রাহিম, তুষার আর পাপ্পু।
মিল্লাতের মুখ থেকে এখনো হাসি মুছে যায়নি। আমি ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকাই। মিল্লাতের চেহারা ঠিক কিশোর ফিদেল ক্যাস্ত্রোর মতো। লম্বাটে চিবুক, পাতলা ঠোঁট, খাড়া নাক, ছোট ছোট চোখ অথচ অন্তর্ভেদী দৃষ্টি। কিশোরসুলভ চেহারার অধিকারী মিল্লাত আমাদের চেয়ে একেবারে আলাদা। এই বয়সেই ও বিপ্লব-টিপ্লব করে বেড়ায়। অর্থ উপার্জন করে। ক্লাস শেষে একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে ওয়েটার হিসেবে কাজ করতে যায়। এর আগে মিল্লাত একটা বাংলা হোটেলে কাজ করতো। আয় রোজকার নেহায়েৎ মন্দ না ওর। নিজের টাকায় চলে। আমাদের বয়সী কেউ নিজের টাকায় সিগারেট খাচ্ছে দেখলে ঠোঁট চাপা সিগারেট কেমন যেন তেতো লাগে।
এইমাত্র তেতো মুখে টয়লেট থেকে বেরিয়ে ক্লাসে ঢুকেছি। ক্লাস ব্রেক চলছে। প্রতিদিন ক্লাসের ব্রেকে আমাদের চমকে দিয়ে মিল্লাত স্বভাবজাত জ্ঞান জাহির করতে থাকে। আজও এর্নেস্তো গেভারা দে লা সের্নাকে নিয়ে প্রায় ত্রিশ মিনিট বলে যাওয়ার পর আমার দিকে তর্জনী তুলে জানতে চায়, ‘সুনীলের কবিতাটা পড়েছিস?’
আমাকে প্রশ্ন করলেও উত্তরটা মিল্লাতের জানা বলে আমি চুপচাপ বসে থাকি। মিল্লাত ওর কণ্ঠস্বর যথাসম্ভব ভারি করে আবৃত্তি করে, ‘চে তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়/আমার ঠোঁট শুকনো হয়ে আসে, বুকের ভেতরটা ফাঁকা/আত্মায় অবিশ্রান্ত বৃষ্টি পতনের শব্দ/শৈশব থেকে বিষণ্ন দীর্ঘশ্বাস/চে তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়-/বোলিভিয়ার জঙ্গলে নীল প্যান্টালুন পরা/তোমার ছিন্ন ভিন্ন শরীর/তোমার খোলা বুকের মধ্যখান দিয়ে/নেমে গেছে/শুকনো রক্তের রেখা…’
শুধু কবিতা না, মিল্লাত বিপ্লবী শ্লোগান-ট্লোগানও বেশ দৃপ্ত স্বরে উচ্চারণ করতে পারে। দুদিন আগেও ও ধড় ফুলিয়ে ফেস্টুন নিয়ে কলেজের সামনের রাস্তা দিয়ে ‘আমাদের দাবী মানতে হবে…শিক্ষানীতি পাল্টাতে হবে…’ শ্লোগান দিতে দিতে দৌড়েছে। আমরা মানে আমি, ইব্রাহিম, তুষার আর পাপ্পু দোতলার ক্লাসরুমের জানালা দিয়ে খাপছাড়া মিছিলটা যেতে দেখেছি। দেখে ইব্রাহিম ঠোঁট চোখা করতে করতে হেসেছে, ‘ছালার বিপ্লব…দায়, ক্লাস না কইরা শিক্ষানীতি মাড়াইতাছে ছালা…কোনদিন দিবেনে চৌদ্দ শিকের ভিতরে ঢুকাইয়া! তারপর এদিক দিয়াও ঢুকাইব, ওইদিক দিয়াও ঢুকাইব।’ ইব্রাহিমের মুখে গালিগালাজ শুনতে আমাদের বেশ লাগে। আমরা ওকে উস্কে দিতে দিতে চ বর্গীয় সব গালি শুনতে থাকি। ওদিকে মিল্লাতকে সঙ্গে নিয়ে শ্লোগানরত মিছিলটা রোদ মাথায় করে দূর থেকে দূরে সরতে থাকে।
‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’ ছাড়া কোনো বিপ্লবী শ্লোগানই আমাদের মুখস্ত থাকে না। প্রতিবছর শ্রমিক দিবসে দশ বারোজন ভাঙাচোরা লোক কাস্তে, লাঠি হাতে যেসব শ্লোগান দিতে দিতে যায় তার মধ্যে এই শ্লোগানটাই কানে জোরেসোরে আঘাত করে। তাই ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’ আমরা ভুলতে পারি না।
মিল্লাত অবশ্য কবিতার মতো অজস্র শ্লোগান আওড়াতে জানে। মা বলে, বাবা বলে, আমাদের এখন শ্লোগান দেওয়ার বয়স না। ক্যারিয়ারের ভিত গড়ার বয়স। সত্যিই তো, আমাদের বয়স এখন কত আর, এই কেটেছেঁটে ঊনিশ-বিশ। কারও কারও বাবা-মা বলে, ‘প্লে-নার্সারিতে পড়েনি আমার বাপি, সামনের আগস্টে সবে আঠারোতে পড়বে।’ আসলে আঠারো, উনিশ, বিশ সবাই মিলে আমরা তখন এখন একই। আমরা সবাই বাবা-মায়ের আদরের ছেলে, ভালো ছেলে। আমরা মিল্লাতের মতো কথায় কথায় মার্কসবাদ, পুঁজিবাদ, আগ্রাসনবাদ, বুর্জোয়া, লুম্পেন প্রলেতারিয়েত-এসব শব্দ আওড়াই না। চে কিংবা ফিদেল ক্যাস্ত্রোর পুরো নাম আত্মস্থ করি না। আমরা বিতর্ক, বিপ্লব কিছুই করি না। বাবা-মা যা কিছু করতে বারণ করে, প্রকাশ্যে আমরা সেসবের কিছুই করি না।
বাবা-মায়ের বারণ বলে আমরা কখনো বাড়িতে বসে সিগারেট খাই না। মহল্লার পথে-ঘাটে এর ওর সাথে মারামারি করি না। মারামারি দেখলে এগিয়েও যাই না। এমনকি আমরা কখনো মিছিলেও যাই না। আমরা মানে, আমি, ইব্রাহিম, তুষার আর পাপ্পু। আমরা শুনেছি এই কলেজের ক্যাম্পাসেও ঝটিকা মিছিল, মিটিং হয়। ভর্তি হওয়ার পর থেকে আট-দশ জনের বিচ্ছিন্ন দুএকটা মিছিল ছাড়া তেমন কোনো মিছিলও চোখে পড়েনি। পড়বেই বা কী করে! দিনভর আমাদের চোখ তো মোবাইলের স্ক্রিনেই আটকে থাকে। তুষারের মতো আমার চোখেও চশমা উঠেছে। একেবারে মাল্টিফোকাল চশমা। ইব্রাহিম বলে, ‘ধ্যাত, চশমা পরে ওসব ভাল দেখা যায় নাকি!’ ইব্রাহিম আরও আগ থেকেই ওসব দ্যাখে। ওসব আমিও দেখি। তবে ইব্রাহিমের মতো এতো না। রোজ রোজ ওসব দেখতে ভাল নাকি, তার চেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে-বসে জ্যান্ত সব মানুষ দেখা ভালো।
আমাদের কলেজ থেকে মাত্র দুশ গজ দূরে কাচারি বাজার। কাচারি বাজার পার হলেই মহিলা কলেজ। এই কলেজের নাম মহিলা কলেজ কেন কে জানে! মেয়েরা মহিলা হয়ে উঠলে আমার খুব বিচ্ছিরি লাগে দেখতে। এদের শরীর তখন কেমন ভারি আর থলথলে হয়ে যায়। আমি তাই খুব বেছে বেছে মেয়ে দেখি। শুধু আমি না, আমরা সবাই দেখি। আমরা মানে, আমি, ইব্রাহিম, তুষার আর পাপ্পু।
কাচারি বাজার পেরিয়ে একটু এগোলেই একটা বিরাট পাকুড় গাছ। সেই গাছের নিচে বাঁধানো বেদীতে বসে বসে আমরা মেয়ে দেখি। কলেজের মেয়েরা হেঁটে, রিকশায় করে এই পথ দিয়ে যাতায়াত করে। ‘এই কলেজের মেয়েদের চেহারায় সব থাকলেও ফিগারে কী যেন একটা মিসিং থাকে’ বলতে বলতে আমরা জয়া আহসানের বয়স আর ফিগার নিয়ে আলাপ করি। পাপ্পু বলে, ‘জয়ার বয়স নির্ঘাৎ পঞ্চাশ। কপাল আর থুতনি দেখলেই মেয়েদের বয়স বোঝা যায়। কিন্তু জয়ার অবস্থা দ্যাখ, একেবারে কচি মাল, বয়সটা একেবারে কামড়ে খেয়েছে।’ শুনে মিল্লাত অসন্তুষ্ট হয়। ভারি স্বরে বলে, ‘জয়ার বয়স নিয়ে গবেষণা না করে ও কীভাবে বয়সটা ধরে রেখেছে সেটা নিয়ে গবেষণা কর।’ এরপর আড্ডায় এক বালতি পানি ঢেলে মিল্লাত চলে যায়। ও চলে যাওয়ার পর জয়া হাসান, দীপিকা পাড়ুকোন বিষয়ক আলোচনা জমে উঠলে ‘পাঠান’ মুভির ‘বেশরম রাঙ…’ গানের লিংকটা ফেসবুকে অনলি মি পোস্ট দিয়ে রাখি। আমার মা আবার সারাদিনই ফেসবুকে অ্যাকটিভ থাকে। মায়ের চোখে পড়বে বলেই আমাকে প্রায় সব পোস্টই এভাবে দিতে হয়। অনেকবার ভেবেছি মায়ের আইডি রেস্ট্রিকটেড রাখবো কিন্তু মা কীভাবে যেন টের পেয়ে যায় আমি লুকিয়ে চুরিয়ে ফেসবুকে এটা-সেটা করছি।
মা সেদিন পাপ্পুর মায়ের কাছে বলছিল, ‘আজকালকার ছেলেমেয়েরা মোবাইলে কী মধু পায় কে জানে। আমার বাপি তো আমার পায়ের আওয়াজ পেলেই স্ক্রিন কালো করে বসে থাকে।’ উৎকণ্ঠিত চাচী বলেছিল, ‘আমার পাপ্পুও।’ মা আর চাচীর আড্ডায় ঢুকে পড়া বাবা দুজনকে সান্ত্বনা দিয়েছিল, ‘এই বয়সে সবাই ওসব করে, চিন্তার কিছু নেই। আমাদের যুগে ফেসবুক ছিল না তো কী, আমরাও তো কত কী করেছি!’ বাবার কথা শুনে মা কিংবা চাচী কারও মুখের চিন্তার রেখা সরেনি। বরং আমার ওপরে মায়ের খবরদারি বেড়েছিল।
মিল্লাতের জীবনে এখন খবরদারি, নজরদারির বালাই নেই। অনেক আগে ওর মা মারা গেছে। মা বেঁচে থাকলে ওকেও আমাদের মতো মাম্মাস বয় হয়ে থাকতে হতো। আর এখন মিল্লাতের বাবা নতুন বউ এনেছে বলে ওর বাড়ি ফেরার ঝামেলাও নেই। মিল্লাতের স্বাধীনতাকে আজকাল আমরা অনেকটা ঈর্ষার চোখে দেখি। আজও ও কেমন উঠে চলে গেল। গেল ঠিকই তবে মিল্লাত বাড়ি ফিরবে না জানি। রেস্টুরেন্টের কাজ সেরে মাঝরাত পর্যন্ত কোথায় কোথায় যে ঘোট পাকাবে। আর আমরা, বাবা মায়ের লক্ষ্মী ছেলেরা সোজা বাড়ি চলে যাবো।
পরের দিন রাস্তায় পাপ্পুর সঙ্গে দেখা হলে খবরটা পেয়ে আমরা আর কলেজের ভেতরে ঢুকি না, যে যার মতো বাড়িতে ফিরে আসি। বাড়ি ফিরে পাপ্পুকে ফোন করি। ওর সঙ্গে তখন ভালো করে কথা বলা হয়নি। নেটফ্লিক্সে একটা রগরগে সিরিজ দেখতে দেখতে পাপ্পু শেষরাতে ঘুমিয়েছিল। রাস্তায় বেরিয়েই ও খবরটা পেয়েছে। উত্তেজিত ভঙ্গিতে পাপ্পু জানায়, গতকাল বিকালে মিছিলের ওপরে গুলি চালিয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, এক তরুণ মারা গেছে। ঐ মিছিলে নাকি মিল্লাতও ছিল। এরপর শহরে দফায় দফায় মিছিল, মিটিং হয়েছে। এদিকে কারা যেন রাতের আঁধারে কলেজের আশেপাশের অফিস ঘরগুলোর দেয়াল, আবাসিক এলাকার বাড়িঘরের সীমানা প্রাচীর, এমনকি কলেজের গেটেও পোস্টার সেঁটে গেছে। শুধু কলেজ আর কাচারি মোড়েই না, এক রাতের মধ্যে পোস্টারে পোস্টারে ছয়লাব হয়ে গেছে শহর। কারা যেন রাতের আঁধারে বিপ্লব করে গেছে, দেয়ালে দেয়ালে চারকোলে লিখে রেখে গেছে…দিতে হবে…করতে হবে…আমাদের দাবী মানতে হবে…মানতে হবে। ভোর রাত থেকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাড়িতে বাড়িতে তল্লাসি চালাচ্ছে।
দুপুরে ভাত খেতে বসে বুঝলাম এসব খবর মায়ের কান অব্দি পৌঁছেছে। কণ্ঠস্বরে কৃত্রিম গাম্ভীর্য এনে তখনই মা আমার বাসা থেকে বের হওয়ার ওপর ১৪৪ ধারা জারি করে দিলো। সারাদিন ঘরে শুয়ে বসে একঘেঁয়ে উঠছিল সব, ওদেরকে ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বলে ছাদে উঠলাম। আমাকে অবাক করে পাপ্পুর বাইকে চেপে মিল্লাতও এলো। তর্জনি আর মধ্যমার ফাঁকে ডারবির শলা আটকে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল, ‘সবাইকে নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। আর সেই কাজ করতে হলে জনগণের মগজে ঘাই মারতে হবে। প্রয়োজনে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় ঘা মেরে জনগনকে জাগাতে হবে। চেতনাকে ঘুমন্ত রাখলে চলবে না। মানুষকে বোঝাতে হবে, মানুষে মানুষে সাম্য চাই। সংগ্রামী ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দিবো না…।’
অনেকক্ষণ ধরে আমরা মিল্লাতের আঁতলামি সহ্য করছি। ইব্রাহিম আর সহ্য করতে পারে না, মুখ খারাপ করে বলে, ‘শ্লা বিপ্লবীর বাচ্চা, তোর…দিয়ে সাম্যবাদ ঢুকাইয়া দিমু শ্লা। ইয়েলোর গেঞ্জি গায়ে চাইপ্পা সাম্যবাদ মাড়াইতে আসছো!’ ইব্রাহিমের ব চ মার্কা গালি শুনে আমাদের চোখ মিল্লাতের পরনের গেঞ্জির দিকে ঝুঁকে যায়। দেখি ওর পরনের লাল রঙের গেঞ্জির বুকে সবুজ রঙে দেশের মানচিত্র আঁকা। আমাদের দৃষ্টি অনুসরণ করে মিল্লাত হাওয়া কাঁপিয়ে হাসে। বলে, ‘আমি তোদের মতো বাপের টাকায় ইয়েলো অ্যাডিডাস কিনি না। এই গেঞ্জিটা কলেজের সামনের ভ্যান থেকে একশ টাকায় কিনেছি।’ এরপর আমাদের আড্ডায় ফের এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে ভ্যানওয়ালার মতো ‘যা কিছু লিবেন একশ টাকা…যা কিছু লিবেন একশ টাকা…’ হাঁক দিতে দিতে মিল্লাত চলে যায়।
ঐ রাতেই মিল্লাতকে কারা যেন বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। আমাকে ফোন দিয়ে পাপ্পু খবরটা জানায়। আমরা ছাপার পত্রিকা না পড়লেও খবর রাখি, সাদা পোশাকের মানুষেরা মাঝেমাঝে মাইক্রোবাসে করে এসে সন্দিগ্ধ ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যায়। পরে কারও খোঁজ পাওয়া যায় কারও খোঁজ পাওয়া যায় না। ফেসবুকের পাতায় বিশেষ সব পেইজ ফলো করলেও আমাদের নিউজফিডে মাঝেমধ্যে এমন নিউজ চলে আসে। মিল্লাতকে নিয়ে হওয়া নিউজও আমার নিউজফিডে চলে আসে। কিন্তু অমন লিংক আমি বা আমরা কেউই নিজেদের টাইমলাইনে শেয়ার করি না। কিন্তু শেয়ার হতে হতে মিল্লাতের নিখোঁজ হওয়ার খবরটা ভাইরাল হয়ে যায়। লোকে ওকে নিয়ে নামে বেনামে অসংখ্য পোস্ট দিতে থাকে। দেখে আমরা মানে আমি, ইব্রাহিম, তুষার আর পাপ্পু বিমর্ষ মনে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বেরিয়ে আসি।
পরের দিন সকালে লা চে কে বুকে নিয়ে কলেজের সামনের রাস্তার উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে দেখি দোতলার ক্লাসরুমের খোলা জানালার গ্রিল গলে রোদের অযুত নিযুত ক্রিস্টাল টুকরো হুড়মুড়িয়ে ঢুকছে। পায়ে থাকা অ্যাডিডাসের কেডস জোড়া আর এগোতে চায় না। কেডসের অগ্রভাগ মাটিতে গেড়ে মাথা উঁচু করে তাকালে আরও ভালো করে দেখতে পাই, শুধু রোদ না, আমাদেরকে নিচে রেখে মিল্লাতের ঋজু শরীরটাও রোদের মতো ধারালো হয়ে জানালার গ্রিলের ফাঁকফোকর গলে ভেতরে ঢুকে পড়ছে।