We do not understand fully the mechanism of destruction.
That may be the essence of the tragedy: Elie Wiesel
বেবী(থুড়ি,শিশু বিশ্বায়ন)রোস্টেড-টোস্টেড হয়ে উড়ে গিয়ে জুড়ে বসেছে আকাশের প্লেটে। ‘অভাগীর স্বর্গে,’ ঝলসে-টলসে ছাইঃ উদারবাদ,উদারনৈতিকতা,উপযোগিতা…উনিশ-বিশ শতক-টতক।উপ্স্!‘উ’-গুলোকে যেন বেছে বেছে কোতল করা হয়েছে একুশের ভরদুপুরে ঃ তারা ট্রাম্পড্,তারা ব্রেক্সিটেড্।সীমান্তহীন পৃথিবীর সেই পর্বটিকে মাথায় রেখেই এ প্রবন্ধের আবাহন ঃ ১৯৮৯-য়ের বৈশ্বিক পটভূমিতে ওয়ারশ প্যাক্টভূক্ত দেশগুলো কেন মার্কেট সোশ্যালিজমের চর্চিত-পরিচিত-অভ্যস্ত আবহ পরিত্যাগ করে ধনবাদী অর্থনৈতিকতার আদর্শ-বরণ করেছিল? কেউ কথা রাখেনি।বরুণা তো না বটেই; সুলেমান বা নাদের আলিও না। আ-বিশ্ব প্রচলিত ধনবাদী রূপকথার অতি অন্তরঙ্গতম বিশ্বাস হল যে— সমাজবাদ,বস্তুত,শতপ্রতিশত অবাস্তবতা।অর্থবিজ্ঞানীরা যদিও মনে করেন যে সমাজবাদী রাষ্ট্রের মূল সমস্যাটি অর্থনৈতিক নয়।সমাজতাত্ত্বিক বরং। সমস্যাটি আমলাতন্ত্রের।১৮৪০-এর জন স্টুয়ার্ট মিল ধনবাদের চেয়ে সমাজতান্ত্রিক ধাঁচার দিকে ঝুঁকেছিলেন।১৯৪০-এর দশকে প্রায় আধেক ইওরোপ ফ্যাসীবাদী ছিল(ইতালি-জার্মানি-স্পেন-পর্তুগাল-ক্রোয়েশিয়া)।কিন্তু,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে ইওরোপের পূর্ব-মধ্য অংশ,বিশেষত,সাম্যবাদী।তারও ৫০ বছর পরে ধনবাদ একচ্ছত্র।ম্যাসকট বিশ্বায়ন।লাবডুব-ডুব ছন্দে ফরাসি বিপ্লবের দেওয়াল-লিখনে পোস্টার সাঁটানো হয়েছিলঃ সাম্য-স্বাধীনতা-সৌভাত্র।২৩৩ বছরের পথ চলার হিসাবটাও যে জরুরি।
রোগের নাম “ডেথস অব ডেস্পায়ার’।বইটির একটি সাব-টাইটেলও আছে “অ্যান্ড দি ফিউচার অব ক্যাপিটালিজম”।রোগনির্ণয়কারী লেখকদ্বয় হলেন নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ অ্যান কেস আর অ্যাঙ্গাস ডিটন।৩১২ পাতা ব্যাপী প্রেস্ক্রিপশনে জানিয়েছেন যে ফাংগাস ঢুকে পড়েছে নাকি ধনবাদের ফুসফুসেঃ অল ইজ নট ওয়েল ইন আমেরিকা ঃ মার্কিনী জনতার সম্ভাব্য আয়ুষ্কাল নাকি তিন বছর ধরে লাগাতার নীচে নামছে।বিশেষত,অল্পশিক্ষিত সাদাচামড়ার মার্কিনি জনগণের মধ্যে দেখ-না-দেখ ইচ্ছামৃত্যু (ওর্ফে আত্মহত্যা),ড্রাগ ওভারডোজ আর সুরাপান,অর্থাৎ মদ্য-আসক্তির মদালসা যাপনযাত্রা একটি মহামারীর আকার ধারণ করেছে।এবং আর্থ-সামাজিক দুর্দশার কারণে ক্রমশ ক্রমবর্ধমান ও ব্যাপকতর হয়ে উঠছে।লেখকদ্বয়-য়ের ভাষায়—“ they demonstrate why, for those who used to prosper in America ,Capitalism is no longer delivering …destroying the lives of blue-collar America.” লক্ষণীয় যে লেখকেরা হোয়াইট-কলার বা ‘বাবু’মার্কিনির বদলে সংখ্যাগরিষ্ঠ blue-collar ‘বা কায়িক-শ্রমজীবীদের কথা পেড়েছেন।টাকার পাহাড়ে তলিয়ে যাচ্ছে,ডুবে যাচ্ছে অগুণতি শংকর।তবে কি—ধনবাদ আর সেই প্যানাসিয়া (সর্বরোগহর) মলহম নয়,যা লাগালেই (অ-কারান্ত)সুখেরা গায়েব হবে?ইস!মাত্র তিরিশ বছরেই এই হাল!হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমেরিটাস,বুদাপেস্ট কলেজিয়ামের আজীবন এমেরিটাস সদস্য এবং হাঙ্গারির সেন্ট্রাল ইউরোপিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথিতযশা রিসার্চ-স্কলার যানুস কর্ণাই(János Kornai)লিখিত বিবরণীতে জানিয়েছেন যে ঘটনাটির এমন দ্রুততা তিনি [মনের নিতল-বিতলে সিঁটিয়ে থাকা বুনো]স্বপ্নেও আশা করেননি।‘I must say the acceleration of events exceeded my wildest dreams’। তো ঘটনাটি কি?
“একসূত্রে গাঁথিয়াছি সহস্র জীবন”।কিন্তু যা আমাদের(স্বাভাবিক)মনুষ্য-স্বভাব ঃ দ্বিত্ব-দ্বৈবিধ্য রেখেছি নানারকম। সত্য-এর পাশে মিথ্যা। এক-বিশ্বঃদুই বাসিন্দা।জাতীয়তাবাদের সিমেন্টে মিশিয়েছি জেণ্ডারের নদ-নদী।অসাম্য-বৈষম্যের গাদাগুচ্ছের টিলা-টিলা বালি। চলছে (অ)-বাধ ড্রেজিং।আরে,এ তো পানি নয়! ভুল হল কি? আ-ভুবন তরঙ্গ-তনুতে লেপা চিকচিকে ভাবটির চাহিদা শতগুণ; তাই আদিষ্ট সে—খামতি থাকে না যেন বিক্রিবাট্টায় অথবা বাণিজ্যকরণে—এযাবৎ দখলিকৃত তিনভাগ জল ও একভাগ স্থলের সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠীর নব্য-উপনিবেশে—চোখই তো বেলাভুমি মনের, কত ঢেউ আছড়ে পড়ছে,সম-তালে…পানি লাও ,মিশাও—ভাগের অনুপাত ১ঃ৪।গড়ে উঠুক খোলাবাজারের ঢেরগুচ্ছের স্কাইস্ক্র্যাপার।দু- দুটো ড্রাগন=রাষ্ট্র আর বাজার। বিশ্ব একটাই,কিন্তু গড়ন দুরকমঃ উচ্চ-নিম্ন,যুদ্ধ-শান্তি।কান্না আঁধারপন্থী বটে;যদিও ফোঁটাগুলো উজ্জ্বল।প্রশ্ন জাগে ঃ “অ্যায়সি পকড় কাহাসে শিখি”?
হাঙ্গেরি’,১৯৫৩।‘রিফর্ম ইকনমিস্ট’ বা সংস্কারবাদী একদল অর্থনীতিবিদ জোরালোভাবে বাজারব্যবস্থার খোলনলচে বদলে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন।গতশতকের ছয়ের দশকে সোভিয়েত/ ওয়ারশ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলোতে অর্থনীতির কার্যকারিতা,সারবত্তা প্রচণ্ড বিক্ষোভের মুখে পড়ে। বাজারের ভূমিকার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন চেয়ে এই বিক্ষোভ, বস্তুত, ১৯৫৬-৭র পোল্যাণ্ডে সর্বপ্রথম দৃষ্টিগোচর হয়—১৯৬৮-র প্রাগ বসন্তে যা চূড়ান্ত রূপ পেয়েছিল।১৯৬৮-তেই হাঙ্গারিতে (NEM) বা নিউ ইকনমিক মেকানিজম-য়ের ব্যানারে ‘অর্থনৈতিক’ সংস্কারবাদ শুরু হয়েছিল।এই প্রয়াসই মার্কেট সোশ্যালিজম’আখ্যা পায়।বলা বাহুল্য যে আরো কুড়ি বছর আগে যুগোশ্লাভিয়াতে শুরু হয়েছিল সংস্কার। সমাজতন্ত্রের বাজারস্পৃহা তখন এমনই এক বিষয় যার মাহাত্ম্য সযত্নলালিত ‘আয়রন কার্টেন’-কেও ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছিল। সুতরাং, অপরিসীম গুরুত্বের তো বটেই ‘মার্কেট সোশ্যালিজম’ এবং ৫০০০ শব্দের সীমা ছাড়িয়ে বহুদূর বিস্তৃতিযোগ্য ; তাই সংক্ষেপেঃ—চেকশ্লোভাকিয়ায় ১৯৫৮-য়, জার্মান প্রজাতন্ত্রে ১৯৬৩, কোসিগিন-য়ের নেতৃত্বে ১৯৬৫-র সংযুক্ত রাশিয়ায়, বুলগারিয়াতেও সেই নীতির অনুসরণে বাজারের ভূমিকা ক্রমশ ডালপালা ছড়াতে থাকে।কিন্তু,১৯৮০-র দশকে শুধুমাত্র হাঙ্গেরি ছাড়া বাকি সবকটি জায়গায় স্তিমিত হয়ে পড়ে। বস্তুত, নিওক্লাসিকাল অর্থনীতিবিদদের সৌজন্যে এই ‘মার্কেট সোশ্যালিজম’ ক্রমে ভিন্নতর রূপে ফুটে ওঠে । তারা মনে করেন যে এই সমাজবাদী বাজারব্যবস্থা আদতে একটি সংমিশ্রিত অর্থনৈতিকতা = কিছুটা ধনবাদ,কিছুটা সমাজবাদের সম্মিলিত রূপ মাত্র।
১৯৭৮-য়ে, কার্ল মার্ক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পোদ্যোগ সংক্রান্ত গবেষণা শাখার প্রধান তিবর লিস্কা মনে করতেন যে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বাজার সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন আকারের উদ্যোগ অতি অপরিহার্যঃ যে অবস্থায় প্রতিটি নাগরিক সামাজিক উত্তরাধিকার পাবে, যা নতুন ব্যবসা বা ইজারা (leasing –এর ) জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। সম্পত্তিটির মালিক মারা গেলে উত্তরাধিকার সূত্রে বংশধরদের কাছে তা হস্তান্তর যোগ্য হবে না; বরং মালিকের মৃত্যুর সাথে সাথে সমাজের কাছে ফেরত দিতে হবে।অর্থাৎ,কেবলমাত্র লিজিং ব্যবসা; সম্পত্তির মালিক হওয়া নয়। আদতে এই সমস্ত অর্থনীতিবিদরা উদ্যোগকে রাষ্ট্রের দায়রা থেকে ছাড়িয়ে নিতে চেয়েছিলেন। অথচ,সোশ্যালিজম সর্বদাই উৎপাদনকে রাষ্ট্রীয় মালিকানার অঙ্গ হিসাবে ভেবে এসেছে।একটা ভাবনা কেবলই উঁকি দেয় যে এমনতর চিন্তাধারাই কি বিশ্বায়নের পূর্বসুরি।
সমাজবাদী বাজার ব্যবস্থা বা ‘মার্কেট সোশ্যালিজম’হল তেমন এক পন্থা—যেখানে, যুগোস্লাভিয়ার থেকে ভিন্নতর উপায়ে,সমাজতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে বাজারী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যোগ দেবে। বাজার বনাম পরিকল্পনা নয়। বরং বিকেন্দ্রিত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে কাজ করবে।সম্ভবত এই কারণেই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ যোসেফ স্টিগলিজ-য়ের অভিমত ছিল ১৯৮৯ নয়,’পরিবর্তন’ শুরু হয়েছিল ১৯৮০-র প্রথমদিকেই।
‘মার্কেটস্ ইন দি নেম অব সোশ্যালিজম’ বইতে জে. বকম্যান মন্তব্য করেছেন যে ১৯৮৯-তে পৌঁছেও নব্য-ধ্রুপদী অর্থনীতিবিদ্রা মনে করতেন যে মার্কেট সোশ্যালিজম’ হয়তো এবার সম্ভব হলেও হতে পারে। নাওমি ক্লেইনের মতো অর্থনীতিবিদরা তেমনতর আশাই পোষণ করতেন।পূর্ব ইওরোপবাসীরা,বস্তুত, সেই বছরটিকে ‘ইয়ার অব পসিবিলিটি’ হিসাবে গণ্য করা শুরু করেছিলেন । রালফ ডাহরেনর্ডফের ভাষায়—‘ the countries which have shed really existing socialism have not embraced another system such as capitalism instead, they have chosen the open society in which there were a hundred different ways forward to freedom”. হাঙ্গেরীয় উদ্যোগের জগতে‘ NEM বা new economic mechanism,বস্তুত,প্রত্যক্ষ’ রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের সমাপ্তি ঘটিয়ে সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূত্রে গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের পথকে আহ্বান জানিয়েছিল,রাষ্ট্রীয় উদ্যোগগুলিকে (বাধ্যতামূলকভাবে) পরিকল্পনা রূপায়ণের দায়িত্ব থেকে মুক্ত করেছিল,লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন ও যোগানের বণ্টনব্যবস্থার বিলোপ ঘটিয়েছিল; তবুও উল্লেখ্য যে আর্থিক কর্মপদ্ধতির মধ্য দিয়ে NEM আসলে পরোক্ষ হস্তক্ষেপের জায়গাটিও খোলা রেখেছিল।Brus Wlodzimierz ও Kazimierz Laski-র মন্তব্য অনুসারে NEM রিফর্মের মূল উদ্দেশ্য সমাজতন্ত্র পরিত্যাগ নয়, বরং কেন্দ্রীয় পরিকল্পনাকে আরো বেশি সফল ও প্রভাবী করে তোলার প্রয়াস ছিল (‘the general proposition of the reform was not to renounce but , on the contrary, to improve central planning and render it more effective)।সংক্ষেপে, NEM-এর মূল লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক দক্ষতাকে বাড়িয়ে তোলা।আধুনিক ধনবাদী অর্থব্যবস্থাকে, বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে, রাষ্ট্রিক/আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের উপযুক্ত মনে করা হলেও,আদতে,বাজার নিয়ন্ত্রিত অর্থব্যবস্থা বলা যায়।ঠিক সেরকমই,প্রধানত আমলাতান্ত্রিক হলেও(সোভিয়েত-ধাঁচের) সমাজতান্ত্রিকতার কিয়দংশে বাজার-ব্যবস্থার লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায়।সুতরাং, সিদ্ধান্তে আসা যেতেই পারে যে সমাজতন্ত্র থেকে ধনবাদে পরিবর্তনের ব্যাপারটি বড়ো আকস্মিকতার সঙ্গে হাজির হয়েছিল ঃ যে কারণে যোসাফ কর্ণাইয়ের মতো দক্ষ অর্থনীতিবিদও ঘটনার ‘অতর্কিত’ অভাবনীয়তায় হতচকিত হয়ে গিয়েছিলেন।
১৯৮৫। রুশ কম্যুনিস্ট প্সার্টির সাধারণ সম্পাদকের পদে বসলেন মিখাইল গর্বাচভ।বৃত হয়েই সমাজতন্ত্রের পুনর্বীকরণের জন্য পেরেস্ত্রৈকা(পুনর্গঠন)আর গ্লাসনস্ত (বিমুক্তির)প্রবর্তন করেন।গর্বাচভ অনুযায়ী পেরেস্ত্রৈকা-র অর্থ ছিল টোটালিটারিয়ান বন্দোবস্তের সমাপ্তি ও গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা/সংস্কারের সূত্রে বহুত্ববাদী অর্থনীতি অর্থাৎ খোলাবাজার, অবাধ উদ্যোগ, শেয়ারব্যবস্থা আর সম্পত্তির অধিকারের স্বীকৃতি।এমনই এক পরিস্থিতিতে যোসেফ কর্ণাই যদিও মন্তব্য করেছিলেন যে (১৯৯০) “ In Hungary, and also in a number of other socialist countries , the principle of ‘market socialism’ has become a guiding idea of the reform process’ . We witness a very strange revival of market socialist ideas in ‘Eastern Europe’. বস্তুত, হাঙ্গারির অর্থনীতিবিদ Bela Csikos Nagy মন্তব্য করেছেন যে সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতির সঙ্গে আধুনিক বাজার অর্থনীতির কোনোই ভিন্নতা নেই।পূর্ব ইওরোপীয় ইকনমিস্টদের কাছে বাজার(ধনবাদী অথবা সমাজবাদী—সে যাই হোক না কেন) চিরকালই গুরুত্বপূর্ণই বটে।
মজার বিষয় হল, আলোচক নীল রাইটস্ জানিয়েছেন যে ১৯৬৮-র প্রাগ-বসন্তের পূজারীরাও কিন্তু did not call for capitalism, but rather, “socialism with a human face.”সমানাধিকারবাদ অনুযায়ী শক্তি এমনভাবে সংগঠিত হওয়া উচি্ত,যাতে কেউ অন্যকে শোষণ বা তার ওপর আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম না হয় ।রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হওয়া প্রয়োজন। নীল আরো জানিয়েছেন যে ক্ষমতার এজাতীয় অবস্থানগুলোর ভারসাম্যের প্রয়োজনে সম্পদের সুষম বণ্টনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্পদের একত্রীকরণের বাধাগুলো নির্মূল করে সামাজিক নিয়মকানুন প্রতিষ্ঠা করা দরকার।এমনকি ১৯৯৪-য়ে, দুজন অর্থনীতবিদ Shleifer ও VIshny – মন্তব্য করেন যে “One of the most enduring proposals in modern economics is market socialism….These events seem to have given hope to the market socialists” ।পুঁজি ২৫০০ শব্দ। তাই,মার্কেট সোশ্যালিজম পর্বের এখানেই ইতি টানি ।
ঘড়ির সেদিন আর নেই। টিক্টিক্ শব্দে চিনিয়ে দেয় না ঠিক-বেঠিক।সময় কথা বলে না এখন।মণিবন্ধে নয়,পকেটস্থ এখন আমাদের আদি ও অনন্ত সময়।পকেটেই বসবাস।ঘড়ি এখন ডিজিটাল।
প্রশ্ন জাগে।এবং জাগে বলেই তো মানুষীসভ্যতা বিবর্তনের ফল,ফসল।পূর্বোত্তরগামী পৃথিবী কি দক্ষিণ-পশ্চিমমুখী চলতে শুরু করেছে হঠাৎ? অ্যান্টি-ক্লকওয়াইজ হাঁটছে কি সময়? ঘড়ির-ই সামনে এসে বসি।দুটি কর্মক্ষম হাত আমাকে এগিয়ে নিয়ে চলে সামনের দিকে।হাঁটাহাটি হল বিস্তর।কয়েক হাজার লক্ষ অনুভব-মাইল। লক্ষ করি কোনোই সংখ্যা ব্যবহৃত হয়নি মাইলফলকগুলোয়।বদলে, তার বদলে কিছু আস্তিত্বিক অভিব্যক্তি-পরিচয়-বস্তুনাম ঃ ওই যেমন—বাজারবিশ্ব-গোলকায়ন-কনসেনট্রেশন ক্যাম্প-যুদ্ধ-গণহত্যা-নেক্রোইকনমি-নেক্রোপিলিটিক্স…ফলানা, ফলানা। প্রশ্ন জাগে। এবং জাগে বলেই তো আমরা জেনেছি যে মিথ্যারই প্রয়োজন হয় কেবল (হরওয়ক্ত)রূপ-পরিবর্তনের। নানারকম ভাবনার উদ্রেক হয়।
১৭৮৯।উন্নয়নব্রতী মানুষেরই চাহিদা ছিল একদিন ‘ লিবার্টি-ইক্যুয়ালিটি-ফ্রেটারনিটি(স্বাধীনতা-সাম্য-সৌভাত্র)।পেরিয়ে আসা বিবর্তনের ধাপগুলো হল ১. কৃষি-প্রগতি ২. প্রথম আন্তর্জাতিকতা। ৩. শিল্প-বিপ্লব ওর্ফে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকতা,মানবিক বিজ্ঞানের শাখাবিস্তার।স্টীম ইঞ্জিনের আবিষ্কার ৪. ১৯৮৯ = আ-বিশ্ব বাজারবিস্তার। ব্যক্তিগত মালিকানা / সম্পত্তির অধিকার বনাম রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব/ দেখরেখ। পুলিশি ব্যবস্থা।এবং সীমাহীন দুর্নীতি,তা সে কলকাতা হোক বা কোলন কিংবা ক্যালিফোর্ণিয়া!কিংবা পাশাপাশি এও ভাবি কেন এতো অস্ত্রের আয়োজন। একবিশ্বের এক মোড়ল,তবু কেন এত যুদ্ধাস্ত্র? কেন যুদ্ধ আজ রাষ্ট্রীয় বা বহুরাষ্ট্রিক সম্মিলিত প্রয়োজনে? ২০২২-১৯৮৯ = তেত্রিশ বছর হয়ে গেল তবুও সীমান্তমুক্ত পৃথিবীতে এতো সীমান্ত দ্বন্দ্ব। কেন? যোগ্যতমের উদ্বর্তন সুত্রানুসারে ধনবাদের বিবর্তনই তো এখন সর্বত্র ঘটমান। কত ভিন্ন ভিন্ন ধরণে প্রকাশ হয়ে চলেছে ধনবাদ। পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্রীয় ধনবাদ।পশ্চিম ইওরোপীয় সামাজিক ধনবাদ।আমেরিকায় লেসে ফেয়ার উদারবাদী ধনবাদ। অথচ বাড়ছে লাগামহীন বৈষম্য। কেস–ডিটন একটি অধ্যায়ের শিরোনাম দেন ঃ” হোয়াই ইজ ক্যাপিটালিজম ফেলিং সো মেনি?’ অন্যান্য ধনী দেশের তুলনায় হতাশাজনিত মৃত্যুর হার আমেরিকায় সর্বাধিক।আর এমনতর অসাম্যের জন্য বিশ্বায়নকে দায়ী করে বলা হচ্ছে যে বিশ্বায়নের কারণে, কাজের বাজারে, অশিক্ষিত শ্রমিকের চাহিদা ভীষণভাবে কমে গেছে। সেই জায়গায় বিদেশ থেকে সস্তার মজদুর বা মেশিন এনে সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ‘After 2000 , this downward ratchet was more severe for men with less education.; good jobs for less educated men were disappearing. ..There is a second story : that the faults of contemporary capitalism are widespread and America is simply the leader of a more general disaster that is already taking root elsewhere and will spread further in the future. (p-186).
আমার ‘উচ্ছেদ-উদ্বাসন’ বইয়ের প্রথম লাইনটি এরকম ঃ ‘তিলমাত্র পরিবর্তন্টুকু ছাড়া,উপনিশবাদের আদৌ রূপান্তর নেই কোনোও—‘ডি’-র স্থলাভিষিক্ত হয়েছে কেবল ‘রি’। তৃতীয় বিস্বের কিয়দংশ জুড়েই তো চতুর্থ বিশ্ব। যেমন ধরা যাক, সাব-সাহারার দেশগুলো বা সোমালিয়া কিংবা আফগানিস্তান। গ্লোবালাইজেশন সম্বন্ধে প্রখ্যাত আলোচক পেট্রাস আর ভেটমেয়ার মন্তব্য করেছেন যে বিশ্বায়ন আদতে সাম্রাজ্যবাদের মতো শ্রুতিকটু শব্দের পরিবর্তে ব্যবহৃত নরম-গোছের ব্র্যাণ্ডিং । তাঁদের মতে ‘ globalization legitimates the domination and exploitation by imperial states and multinational corporations and banks of less developed states and laboring classes” global capitalism has transformed whole areas of Asia, Africa and Latin America into labour intensive manufacturing bases ‘controlled by an elite of high-paid executives in the imperial centres. ‘ডিস-আর্মামেন্ট’ চলছে আর তারই লাগোয়া অ-বাধ “রি-আর্মামেন্ট’;(তৃতীয় বিশ্বেই প্রধানত)কেন এই প্রস্তরযুগীয় দোগলাপন-দ্বিচারিতা? কেন এত যুদ্ধাস্ত্রলঙ্কা্র? পোশাকি পরিবর্তনটুকু ছাড়া উপনিবেশবাদের আদৌ রূপান্তর হয়েছে কি কোনো? চীন ফুঁসছে–আমেরিকা ট্যারিফ লাগিয়েছে,ব্যবসা গোটাতে হুকুম দিয়েছে ট্রাম্প।ব্রেক্সিট করছে ব্রিটেন।জাতিবাদ ফের মাথা তুলছে ইওরোপে। চারিদিকে ট্যারিফ কন্ট্রোল!কমলেকামিনীরা সর্বত্র বর্তমান। পণ্ডিতগণ একবাক্যে একমত যে এমন দুরবস্থার স্থিতি ছিল না সোশ্যালিস্ট শাসনকালে ; পূর্ব-মধ্য ইউরোপীয় দেশগুলোতে আয়ের বৈষম্য বরং অনেক কম ছিল; অথচ, এসময়েই দুনিয়াদারির আ-বিশ্ব খোলাবাজারে হঠাৎই অনভিপ্রেত হয়ে উঠছে—’বর্ডারলেস বিশ্ব’-ধারণা। হাঃ হাঃ, ৩/১০/২০০৮ঃ সাবপ্রাইম। বড়ো বড়ো মার্কিনি ব্যাঙ্কগুলো ডুবতে বসেছে।আটশো বিলিয়ন ডলারের ‘বেল-আউট’ প্যাকেজ ঘোষণা করল ইউ.এস কংগ্রেস। জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসন মেনে নিল যে ন’খানা বিশালকায় মার্কিনি ব্যাঙ্কের শেয়ার কেনার জন্য আড়াইশো মিলিয়ন ইউ.এস ডলার ইঞ্জেক্ট করা প্রয়োজন, অতি সত্বর।রিপাব্লিকানরা বললেন এই পদক্ষেপ আদতে ‘ slippery slope to socialism’. মার্কিন জনতাকে আশ্বস্ত করে বুশ বললেন যে এটা একটা সাময়িক পদক্ষেপ। এই কাজটি তাঁরা খোলাবাজার-কাম-মুক্ত অর্থনীতিকে বাঁচাবার জন্যই করেছেন। গোল্ডম্যান সাচ-এর প্রাক্তন সি-ই-ও হেনরি পলসেন বললেন ঃ ‘ the government owning a stake in any private enterprise is objectionable to most Americans, myself included’.
পেট্রাস আর ভেটমেয়ার আরো জানিয়েছেন যে এ তো তৃতীয় বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা খনিশ্রমিক,কৃষিকর্মী,কারখানা আর সেবামূলক সংস্থায় শ্রমদানকারী মানুষের সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রিত উনিশ-বিশ শতকীয় বৈশ্বিক শ্রমবিভাগের ডিট্টো কপি।মিলেনিয়াম জগতের সবচেয়ে বড়ো সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হল আমেরিকা। বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো ৫০০টি কোম্পানির মধ্যে ২৪৪টি আমেরিকার।তুলনায় জাপান ৪৬টি আর জার্মানি ২৩টি। ছিয়াশি বিলিয়ন ডলারের অধিক সবচেয়ে বড়ো ২৫টি সংস্থার মধ্যে ৭০ শতাংশের মুখ্য কার্যালয় মার্কিন-মুলুকে। মনীষ-মণীষার প্রেমকাহিনীর বদলে সামগ্রিক জীবনের এই চূড়ান্ত ও চরম ব্যর্থতা,লাপরবাহী মানসিকতার সারসত্যগুলো পাঁজরে গরাদের ঝনঝন হুংকার তোলে। একশোটা নামীদামি কোম্পানির ষাটটি আমেরিকায়।সারা তৃতীয় বিশ্বে মাত্র ২৬টি বৃহদায়তন সংস্থা। ড্রাই স্ট্যাটিসটিক্স ? কিন্তু এই সংখ্যাতত্ত্বের হিসাব তুলেই তো ওয়ারশ প্যাক্টের দেশগুলোকে গিলে নিয়েছিল নিও-কলোনিয়াস্টরা । আজকের বিশ্বে একদা মহাপরাক্রমশালী রাশিয়া কেবল পা’টুকু রাখার একটা জায়গা খুঁজে পেতে চাইছে। অস্তিত্বের চারিপাশে ন্যাটো। ওয়ারশপ্যাক্ট গরহাজির।কিন্তু ন্যাটো বরকরার—রাশিয়ার চারপাশে। এমন অবস্থা কি পুটিন-য়ের মনে ভয়ের উদ্রেক করছে ? আমেরিকা ও তার সহযোগী ইওরোপীয় দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে পুর্ব য়ুরোপ, বিশেষত বাল্টিক দেশগুলোর একটিকেও তারা ন্যাটো-র সদস্য হিসাবে স্বীকার করবে না।কিন্তু আজ ইউক্রেন ন্যাটো-তে অন্তর্ভুক্তি পেতে চায়। অতএব,রাষ্ট্র তো বহাল তবিয়তে বর্তমান। কিন্তু বিশ্বায়ন?
তাত্ত্বিক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘জাতীয়তাবাদের সত্যি মিথ্যে,চার্বাক উবাচ” (অনুষ্টুপ)শীর্ষক অতুলনীয় গভীরতাময় একটি বই পড়ছিলাম। ঋষি চার্বাকের পরিচয় দিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় চার্বাকের জবানবন্দিতে লিখেছেন— “আমি সংশয়বাদী। আমি প্রচলিত সত্যকে মুখের কথায় মেনে নিই না’…তথ্য থেকে অনুমানের দ্বারা কোনও বৈধ জ্ঞানে পৌঁছানো অসম্ভব।…সেই জ্ঞান নির্ভর করে কোন প্রত্যক্ষ নিরীক্ষার ভিত্তিতে সত্যটা দাবি করা হচ্ছে তার ওপর।’পড়ি, থমকে দাঁড়াই।মধ্য-পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর সামাজিক-রাজনৈতিক টানাপোড়নের সন্দর্ভে গর্বাচভের পেরেস্ত্রৈকার মধ্যে কি রাজনৈতিক প্রিজমের মধ্য দিয়ে দেখা উদগ্র জাতীয়তাবাদের ইশারাটিও মজুত ছিল ?
মধ্য বিশশতকেই কয়েকটা দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ব্যাহত হয়।শোষণমুক্ত সমাজ,প্রাচুর্যের সীমাহীনতা, সব পেয়েছির কল্পলোকে পার্মানেন্ট নাগরিকত্বের বদলে আমরা পেলাম তন্ত্র ও তান্ত্রিকের নানারণের অত্যাচার, কেন্দ্রীভূতশাসনব্যবস্থা,স্বাধীনতার অপহরণ, তিয়ানানমেন, থমকে যাওয়া প্রগতি।তাকে হটিয়ে এল খোলাবাজার,মুক্ত অর্থনীতি,নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান আর ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার।কিন্তু তা তো চূড়ান্ত দুর্নীতিগ্রস্ততায় পর্যবসিত। প্রায় সবদেশেই শাসক ক্রমশ স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠছে।ফ্যাসীবাদ মাথাচাড়া দিচ্ছে ইতিউতি।দ্রব্যমূল্য আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছে প্রায়।ধনবাদী সমাজে অসাম্য–বৈষম্য সীমাহীনতার চূড়ান্ত মাত্রা ছাড়াতে চলেছে। প্রতিদিনের বেঁচে থাকাই এখন এক যুদ্ধ। বহু যুবক এখন ভোগবাদের জাহান্নম থেকে ( স্রেফ )ভালোভাবে বেঁচে থাকার উপায়ঃ কম্পিটিশন-কোঅপারেশনের বদলে লিবার্টি-ইক্যুয়ালিটির সন্ধানরত।প্রকৃতপ্রস্তাবে,মাঝরাতেই তো দিনের বিষয়ে ভাবা সম্ভব।ধনবাদের দ্বিপ্রহরে কবরিত রাষ্ট্রীয় সামাজিকতার স্বপ্ন-টপ্নগুলোকে ফিরে দেখা সমীচিন।কেননা, সমস্যা অন্তহীনঃ রোহিঙ্গা /বলকান /সিরীয় দেশান্তর । দেউলিয়া গ্রিস/জাতিবাদী সন্ত্রাস।দিকে-দিকে উদবাস্ত-উদ্বাসন ইত্যাদি–প্রভৃতি। দিকে দিকে জাতীয়তাবাদী হুল্লোড়। কিন্তু ১৯৮৯-র রাজনৈতিক জাতিবাদ নিয়ে বারান্তরে ফিরে আসা যাবে। এখন বরং অর্থনৈতিকতায় ফিরে যাই ফের—
ধনবাদের স্বর্গ মার্কিনমুলুকে আর্থিক অসাম্যের ছবি তুলে ধরেছেন কেস–ডিটন।লিখছেন ঃ—
‘ living in a more unequal society is something that sickens everyone.’. তাঁরা মনে করেন ১৯৭০-এর পরবর্তী সময়ে অসাম্য ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে।বেকারত্বের মাত্রাও,২০০৮-এর পরে, দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।ব্যাঙ্কগুলো ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। কয়েক মিলিয়ন ব্যবসা বন্ধ হয়।কারণ,সাবপ্রাইম। ব্লু-কলার শ্রমিকেরা নির্বিচারে কাজ হারাতে শুরু করে। ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে কাজ কমতে থাকে। এই সমস্ত কাজ খোয়ানো মানুষগুলোর পরিবর্ত হিসাবে আমদানি বাড়ানো হয় বা রোবোটের নিযুক্তি হতে থাকে।
ইতিহাস আবার সোচ্চার ঃ সপাটে জানিয়ে দেয় যে ফ্রি-মার্কেট ব্যবস্থা বেঁচে রয়েছে কেবল রাষ্ট্রের দয়াতেই। রাষ্ট্র এগিয়ে এসেছিল বলেই ১৮৭৩-৭৬ এর নিদারুণ মন্দার সময়ে কিংবা ১৯৩০-এর গ্রেট ডিপ্রেশন বা এই সেদিন ২০০৮-এর সাবপ্রাইম-এর ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রের ভুমিকা ছিল অনিবার্য পরিত্রাতার। ১৯৮৭ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত মার্কিনি ফেডেরাল রিজার্ভের সর্বোচ্চ পদাধিকারী নামজাদা অর্থনীতিবিদ অ্যালান গ্রীন্সপ্যান-য়ের কথায় : ‘মার্কেট কোনোকালেই মুক্ত ছিল না … না কখনো মুক্ত হবে। হয় আইনি, নয়তো রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক-ধর্মের বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল, চিরকালই।এবং থাকবেও।পুরোমাত্রায় লেসে ফেয়ার অর্থনৈতিকতায় কেবলমাত্র অবাধ বাজার-ব্যবস্থার অস্তিত্ব রয়েছে…মুক্তবাজার টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা সনাতনী।এবং ব্যাপক।এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এই ব্যবস্থা বজায় রয়েছে।’ ( সূত্র ;- জে,রেস্টাকিস (২০১০) হিউম্যানাইজিং দি ইকনমি)। চতুর্দিকে “অ-বিশ্বায়নী’ রমরমা।আস্তাকুঁড়ে স্থান পেতে চলেছে সীমান্তবিহীন মুক্তাঞ্চল।সর্বত্র হাজির জাতীয়তাবাদী আপনাপন।অনর্থ-নৈতিকতা।কিন্তু ভয় কীসের—ধরিত্রী তো এখন ইউনিপোলার।

কবি, প্রাবন্ধিক
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মী