================================================================
![](https://aihik.in/new/wp-content/uploads/2023/09/samarjit_aug_23.jpg)
================================================================
এজাজ আহমেদ, এক সাক্ষাৎকারে, আমাদের জানাচ্ছেন, ‘ফ্যাসিজম’ ‘আল্ট্রান্যাশনেলিজম’-এর হাত ধরে আসে । এটা আমরা দেখেছি হিটলারের জার্মানিতে । আমাদের দেশেও এই আল্ট্রান্যাশনেলিজম, গত কয়েক বছর ধরে, ভূতের মত আমাদের কাঁধে কি চেপে বসেনি ? অথবা, আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়নি ?
এই ভূত তাড়ানোর দায়িত্ব ছিল আমাদের । অর্থাৎ, আমরা যারা লেখালেখি করি, শিল্পসাহিত্য করি, চিন্তা করি, ভাবি, এই আমরা, যারা নিজেদের সাংস্কৃতিক জগতের মানুষ, বলে, মনে করি, কতখানি দায়িত্ব পালন করেছি ?
হ্যাঁ, কেউ কেউ বলতেই পারেন, এই দায়িত্ব সামাজিক আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন বা ছাত্র আন্দোলনের ভেতর দিয়ে উঠে আসা মানুষের । এই ধরনের আন্দোলন, একমাত্র পাঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষক আন্দোলন ব্যতীত, এই কয়েক বছরে, উল্লেখযোগ্য বা মনে পড়ার মত, এই দেশে হয়নি ।
কেন হয়নি ? এর উত্তরে, খুব সংক্ষেপে, বলা যায়, পুঁজি । পুঁজির কোপে পড়ে তা আর হয়ে ওঠেনি । প্রশ্ন উঠতেই পারে, যে, এই একুশ শতাব্দীতে এসে, পুঁজির ভূমিকা কি ?
আমরা, প্রতিনিয়ত, একটা কথা শুনি, তা হল, এই যুগ গ্লোবালাইজেশনের যুগ । এই গ্লোবালাইজেশন কার ? এটা যদি একটু তলিয়ে ভাবি, আমাদের খানিকটা সুবিধে হতে পারে । আমরা, রোজ, যে ওষুধ খাই, যে সকল ব্রাণ্ডেড পণ্য ব্যবহার করি, খুব সহজেই বলি, তার প্রায় সব মালটিন্যাশনাল । অর্থাৎ পুঁজির এই মালটিন্যাশনাল রূপ নিতে হয়েছে উপনিবেশিবাদের পরবর্তী পরিস্থিতির ফলে । আমরা যেন ভুলে না যাই, এই মালটিন্যাশনাল রূপ আসলে উপনিবেশিবাদের এক মুখোশ । World Bank, IMF, GATT ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলির নাম আমরা সকলে, কমবেশি, জানি । এই প্রতিষ্ঠানগুলি সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, এবং তাদের স্বার্থে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির অর্থনৈতিক পলিসি কী হবে, ঠিক করে দিচ্ছে । এখানেই তাদের কাজ থেমে নেই । তারা পুঁজিবাদের উৎপাদিত পণ্য, এই তৃতীয় বিশ্বে, যাতে বিক্রি হয়, তার সুপারিশ করছে ।
এই পুঁজি, তার বিকাশের স্বার্থে, জন্ম দিয়েছে কনজিউমারিজমকে । অর্থাৎ ভোগবাদ । যার থাবা থেকে নিস্তার পাবার কোনো পথ যেন আর খোলা নেই আমাদের সামনে । কনজিউমারিজম এসে পুঁজিকে এতটাই সুযোগ করে দিয়েছে, যে, আমরা দেখি, পুঁজি, প্রতিনিয়ত, নতুন নতুন ভোগ্যপণ্য উৎপাদন করে, টেকনোলজির বিপ্লব ঘটিয়ে । আর্নেস্ট ম্যাণ্ডেল এই পরিবর্তন সুন্দরভাবে দেখিয়েছেন আমাদের । স্টীম টেকনোলজির উদ্ভাবন হয়েছিল জাতীয় পুঁজির স্বার্থে । বিদ্যুৎ ও কয়লার ইঞ্জিন উপনিবেশিবাদের প্রয়োজনে । পরমাণু এনার্জি, সাইবারনেটিক টেকনোলজি, সব এই মালটিন্যাশনাল ও গ্লোবালাইজেশনের স্বার্থে । কেউ কেউ একে পোস্ট মডার্নিটি বলে থাকেন । সে আর এক বিষয় । এই ধাপটিই ভয়ঙ্কর । টেলিকমিনিউকেশনের বিপ্লবের পরিণাম কি, এখন হাড়ে হাড়ে অনুভব করছি আমরা । এর ফলে, কনজিউমারিজমের ভূত আমাদের ঘরে ঘরে । যে বিপ্লব সাধন করার কথা ছিল এই পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে, অথচ হল তার উলটোটাই । পুঁজি, আমরা লক্ষ করছি, তার স্বার্থে, উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়ে যাবতীয় পুঁজিবিরোধী আন্দোলনকে পথে বসিয়ে দিয়েছে ।
এই পুঁজির বাজার চাই । শীতল যুদ্ধের পর, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাবার পর, ভারত, পুঁজির কাছে, এক বিশাল বাজার । এই বাজার দখল করার জন্য পুঁজির চাই বিশ্বস্ত মনসবদার । আর, সেই মনসবদার হল বিজেপি । কংগ্রেস করপোরেটলালিত হলেও, পুঁজির কাছে বিশ্বস্ত হয়ে উঠতে পারেনি, তাদের গোপন সোশ্যালিস্ট মনোভাবের জন্য, যা জওহরলাল নেহেরু হয়ে পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত বিদ্যমান । পুঁজি এই মনোভাবকে ভয় পায়, বা, পছন্দ করে না ।
আমরা দেখলাম, বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে, সবচেয়ে বেশি আঘাত এসেছে এই সোশ্যালিস্ট মুভমেন্টের উপর । কৃষক আন্দোলন ছাড়া, এই দেশে, আগেই বলেছি, তেমন উল্লেখযোগ্য আন্দোলন গড়ে উঠেনি, বা, গড়ে উঠতে দেওয়া হয়নি । বিজেপির অপকর্মগুলির প্রতিরোধ, ফলে, হয়নি । ডিমনিটাইজেশন থেকে শুরু করে কাশ্মীরকে রাজ্য মর্যাদা থেকে নামিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা, রাজ্যের অধিকার খর্ব করে, এককেন্দ্রিক শাসন কায়েম করার অপপ্রয়াস, ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি করে ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষ অবস্থানকে নিশ্চিহ্ন করার হীনচেষ্টা, কোনোটারই প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি ।
এই না-পারার ইতিহাস দীর্ঘ । এবং বেদনাদায়ক । এর পরিণাম ভুগছি এখন । আসামে বাঙালিদের অস্তিত্ব এখন সংকটে । সংখ্যালঘুরা ঘোর বিপদে । কিছু বলতে গেলেই তকমা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে দেশদ্রোহীর । সোশ্যালিস্ট মুভমেন্টের বহু নেতা জেলে । কেউ কেউ প্রাণ দিয়েছেন এই আল্ট্রান্যাশনেলিস্টদের হাতে । এসবের ঊর্ধে, এখন, একটাই প্রশ্ন, যে, আমাদের সংবিধান আমরা আদৌ রক্ষা করতে পারব কি ? আমরা তাও জানি না ।
এই ঘোর সংকটের মধ্যে, আমরা দেখছি, মনিপুর জ্বলছে । মেইতেই ও কুকিদের আত্মঘাতী দাঙ্গা থামার লক্ষণ নেই । এর পেছনেও বিজেপির হাত । এখানেও পুঁজির খেলা । মনিপুর ভৌগোলিক ভাবে স্পর্শকাতর এক রাজ্য । এর একদিকে মায়ানমার, আর একদিকে চীন । পুঁজির বৃহত্তর মালিক হিসেবে এখনও যাদের পরিগণিত করা হয়, তাদের মধ্যে আমেরিকা, চীন, জাপান রয়েছে । প্রত্যেকের নজর ভারতের দিকে । মনিপুর, নাগাল্যাণ্ড প্রভৃতি রাজ্যে যে পরিমাণ বিদেশি অস্ত্র আসে, তা বিস্ময়কর । এইসব অস্ত্রকারবারীদের মধ্যে আমেরিকা ও চীন অন্যতম ।
আমাদের দেশ, বলতে লজ্জা নেই, পুঁজির এই নব উপনিবেশিক চেহারার কাছে অসহায়, এবং এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বিজেপি সরকার । জাতীয় পুঁজিও গাঁটছড়া বেঁধেছে এর সাথে । জাতীয় পুঁজির ক্ষেত্রে, বিজেপি সরকারের ভূমিকা লুটেরার দোসর হিসেবে । জাতীয় পুঁজির বেশির ভাগ এখন ক্রোনি করপোরেটদের দখলে । এই ক্রোনি করপোরেটগণ ফুলেফেঁপে উঠেছেন এই সরকারের সৌজন্যে । অস্বীকার করার উপায় নেই, যেভাবে দেশের সব সম্পদ আম্বানি আদানিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে, তা অতি বিপজ্জনক । রেল, বিমান বন্দর, সমুদ্র বন্দর থেকে শুরু করে সব তুলে দেওয়া হচ্ছে এই ক্রোনি করপোরেটদের কাছে । এর পরিণাম সুখকর নয় । বলতে দ্বিধা থাকা উচিত নয়, যে, দেশের রাজনীতিও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে এই পুঁজির দ্বারা ।
এই পরিপ্রেক্ষিত আর এক বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে আমাদের । সে বিপদের অনেক মুখ । প্রথমত, আমাদের দেশের সরকার আর জনকল্যাণমুখী থাকছে না । আমাদের সংবিধানে দেশের সরকারকে ওয়েলফেয়ার স্ট্যাট বলা হয়েছে । এখন যদি সরকার জনকল্যাণমুখি হিসেবে স্বীকৃত না হয়, তার একটাই মানে, আমাদের সংবিধান বিপন্ন । কেন না, এই সংবিধান যদি থাকে, ক্ষমতাসীন সরকারকে জনকল্যাণের কাজ করতেই হবে । পুঁজি তা হতে দেবে কেন ? এয়ারপোর্ট, রেলওয়ে স্টেশন থেকে সব আদানি প্রমুখ করপোরেটদের হাতে তুলে দেওয়ার মূলে ঐ পুঁজির কাছে আত্মসমর্পণ, এবং কেন্দ্র সরকার, বেপরোয়া ভাবে, তাই করে চলেছে । এটাকে বৈধতা দিতে সংবিধান পালটে দেবার প্রয়োজন রয়েছে ।
বিজেপির এতে আর এক দীর্ঘদিনের উদ্দেশ্য রয়েছে, তা হল, এই দেশকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা । যার কাজ শুরু হয়ে গেছে অনেকদিন ধরে । পুঁজির তাতে আপত্তি থাকার কথা নয়, তাদের শুধু দরকার পুঁজির সম্প্রসারণ । আমাদের দেশ হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে, পালটাতে হবে সংবিধান । এই সরকারের হাতে, ফলে, আজ, সংবিধান বিপন্ন । স্বৈরাচারী সরকারের প্রথম কাজ হল, সংবিধান না মানা, বা, সংবিধানকে নিজের মত করে সাজিয়ে নেওয়া । এই সরকার ঠিক তাই করে চলেছে, যার প্রতিরোধ যদি না করা যায়, তা হলে, খুব বেশিদিন নেই, ভারতবর্ষ, ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র থেকে এক হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে দেখা দেবে ।
দ্বিতীয়ত, হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নিতে চাইবে না দেশের অধিকাংশ রাজ্য । মানার কথাও নয় । সম্প্রতি, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আমেরিকা সফর ঘিরে, আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বরাক ওবামা, সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, স্পষ্ট বলেছেন, যদি ভারত সরকার সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈমাত্রেয় সুলভ আচরণ বন্ধ না করে, একদিন, ভারত ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে ।
এই বক্তব্যকে গুরুত্ব না দেওয়া আমাদের ভুল হবে । মনিপুরের ঘটনা উদ্বেগজনক । সিকিম ও অরুণাচলের দিকে চীনের আগ্রাসন, মনিপুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাগাল্যাণ্ড, মিজোরাম, ভূটানের সাথে চীনের সখ্য ইঙ্গিত দেয়, এই উত্তরপূর্ব অঞ্চলকে নিয়ে আলাদা রাষ্ট্র গড়ে ওঠার । গোর্খাল্যাণ্ডকে পৃথক রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করার দাবিও অনেকদিনের । রাজ্য থেকে রাষ্ট্রের দাবি আরও রোমাঞ্চকর তখন মনে হতে পারে সেখানকার অধিবাসীদের । বাইরের ইন্ধনের কথা নাই বা বললাম । খালিস্তানিদের দীর্ঘদিনের দাবি, আলাদা রাষ্ট্রের । এভাবে, এক এক অঞ্চল যদি নিজেদের পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়, তার পরিণাম কি দাঁড়াবে ?
তৃতীয়ত, এই দেশের মানুষ নিজভূমে পরবাসী হয়ে যাবে, যদি এই সরকারের পরিকল্পনাগুলি সফল হয়ে ওঠে । এনআরসি, সিএএ ইত্যাদি চালু হলে, এ দেশের বৃহত্তর অংশের মানুষ অনাগরিক হয়ে পড়বে । আসাম এই উদ্যোগের পরীক্ষাগার, এবং এখন পর্যন্ত অনেকটাই সফল এ ব্যাপারে । আমরা সেভাবে প্রতিরোধ করতে পারিনি তা । অথবা, এই সমস্যার গভীরে ঢুকতে চাইছি না ।
কেন বিজেপি সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে ? এই প্রশ্ন উঠতেই পারে । এর পেছনেও কি পুঁজির হাত ? এক কথায়, এর জবাব হল, হ্যাঁ, পুঁজির হাত রয়েছে, এবং এই সরকার পুঁজিবান্ধব, বলেই, এই উদ্যোগ নিয়েছে । আমাদের দেশের মাটির নিচে অফুরন্ত সম্পদ । সেই সম্পদের দিকে করপোরেটদের দীর্ঘদিনের লোভ ।
একটা উদাহরণ দিই । ঝাড়খণ্ড, বিহার, উড়িষ্যা, ছত্রিশগড় প্রভৃতি রাজ্যে মাওবাদীদের কথা ফলাও করে খবরে ছাপা হয়, বা, নিউজ চ্যানেলে দেখানো হয় । প্রায়শ শোনা যায়, সেনাবাহিনীর সাথে তাদের সংঘর্ষের কথা । এর আড়ালে রয়েছে সেই পুঁজির খেলা । এই এলাকাগুলির মাটির নিচে রয়েছে খনিজ সম্পদ, যা দখল করতে চাইছে এই পুঁজি, মানে আদানিরা । মুশকিল হল, এইসব বনভূমিতে থাকে আদিবাসীরা, যাদের উচ্ছেদ না করলে, আদানিরা তা দখল করতে পারছে না । এই আদিবাসীদের দারিদ্র অবর্ণনীয়, উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া নেই এসব আদিবাসী এলাকায় । শিক্ষার প্রসার হয়নি এখানে । যাদের মাওবাদী আখ্যা দেওয়া হচ্ছে, তারা এই উচ্ছেদ ঠেকাতে হাতে তুলে নিয়েছে অস্ত্র । ফলে, অনিবার্য হয়ে পড়েছে সংঘর্ষ । এটা সমর্থনযোগ্য কি না, সে নিয়ে অনন্ত বিতর্ক হতেই পারে । কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে করপোরেটদের আগ্রাসনের কথাও । সরকার, প্রশাসন, পুলিশ, মিলিটারি, বিচারব্যবস্থা সব তাদের হাতে । অপরদিকে এই অসহায় আদিবাসীরা, যারা জঙ্গলের অধিকারের দাবিতে অনড় । পুঁজির লোভের কাছে তারা হেরে যাবে কি না, সময় বলবে । আপাতত লড়াই জারি রয়েছে । তা অসম হলেও ।
পুঁজি তার বিকাশের স্বার্থে আগ্রাসী। এই আগ্রাসনের পথ সুগম করে তুলতে যা যা পদক্ষেপ গ্রহন করা দরকার, এই কেন্দ্র সরকার তা করে যাচ্ছে । যারা প্রশ্ন তুলতে পারত, সেই মিডিয়াও পুঁজির হাতে । ফলে, নিরঙ্কুশ ক্ষমতা হাতে চলে এসেছে শাসক দলের । সংসদীয় রাজনীতি অনুসারেও, এই শাসক দল, পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী । তাদের হাতে আজ বিপন্ন দেশের গণতন্ত্র । সংবিধানের কথা আগেই উল্লেখ করেছি । এখন পালটে দেওয়া হচ্ছে দেশের ইতিহাসও । শিক্ষা ব্যবস্থাতেও এবার কোপ পড়েছে । সারা দেশে তৈরি করা হয়েছে ঘৃণার বাতাবরণ । এই লেখা যখন লিখছি, তখন উত্তরাখণ্ডে ‘মুসলমান খেদাও’ শ্লোগান দিয়ে জনসভা হচ্ছে রাস্তায় রাস্তায় ।
এই ভারত তো আমাদের ভারত নয় । এই ভারতের জন্য নেতাজি, গান্ধিজি, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, মাস্টারদা, মাতঙ্গিনী হাজরা ভগৎ সিং ইংরেজের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন কি ? এই ভারত কি আমরা চাইছি ?
বলতে দ্বিধা নেই, দেশে যে কয়টি রাজনৈতিক দল রয়েছে, কংগ্রেস সহ, তাদের ভূমিকাও সন্দেহের ঊর্ধে নয় । আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, সোশ্যাল মুভমেন্ট ঝিমিয়ে গেছে, অথচ এই মুভমেন্টগুলিতে এই রাজনৈতিক দলগুলির এক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা থাকার কথা ছিল ! হা হতোস্মি ! এসব দলগুলি ব্যস্ত ভোতের অংক মেলাতে ।
ফলে, আজ অসহায় দেশের মানুষ । তাদের চেতনা বিকাশের দায়িত্ব যাদের হাতে, তারা যদি নিজেরাই পুঁজির কাছে সমর্পিত প্রাণ হয়ে পড়ে, তাহলে, শাসক দলের পোয়া বারো । তারা তাদের হিন্দুদেশ গঠন করবে, এটা করতে গিয়ে ধর্মীয় বিভাজন থেকে শুরু করে যা যা করা দরকার, তা করবেই ।
আমরা কেউ হিন্দু হয়ে থাকব, কেউ মুসলমান হয়ে থাকব, কেউ কেউ বৌদ্ধ বা খ্রীস্টান । তবু নাগরিক হিসেবে, স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে মুখ খুলব না, বা লড়াইয়ে অংশ গ্রহন করব না ।
এর চাইতে লজ্জার আর কিছু নেই ।