—-এক বোকা রাতে সে চলে যায়…
—-কি করে ?
—-অনেকগুলো ঘুমের পিল
—-বোকামো করেছিল…
—-হ্যাঁ , হয়তো বুঝতে পেরেছিল নিজের বোকামি। একটা কথা জানো কি, বোকা নিজের বোকামি যেদিন বুঝতে পারে , তার পরের দিন সে মরে যায়। অথবা পাগল হয়ে যায়। না , ফিজিক্যাল মরার কথা হচ্ছে না এখানে। হয়তো বেঁচে থাকে। কিন্তু মরে যায়। এ এক অদ্ভতুড়ে ব্যাপার। লোকটা হয়তো ঘুমের বড়ি খেয়েছিল। সবাই খায় না। খেতে পারে না।
—-অথচ দেখো, তারপরও তো পৃথিবী দাঁড়াল না কোথাও। লাভ কিছুই তো হলো না।
—-লাভ ক্ষতি নিয়ে সবাই পড়ে থাকে না।
—-কি বলছো ? লাভ ক্ষতি ছাড়া মানুষের থাকে কি ? সাদা কালো , পাপ পুণ্য , আলো অন্ধকার , ন্যায় অন্যায় , ধর্ম অধর্ম পৃথিবী এসব নিয়েই তো !
—-ঠিক । বরাবরই ঠিক তা । তবে তার বাইরেও আরও কিছু থাকে
—-যেমন ?
—-ইচ্ছে । যে কোনও রকম । ধরো , এই মুহূর্তে ভেবে নিলে তুমি পাখি
—-পাখি নই । খামোখা ভাবতে যাবো কেন ?
—-বোকারা ভাবে। জানে উড়তে পারবে না। তবু চেষ্টাটুকু করে ।
—- চেষ্টা করে ! সাধে কি মূর্খ বলি !
—-মূর্খ নয়, বোকা । দুটো এক নয়। গুলিয়ে ফেল না। মূর্খ অর্থে অশিক্ষিত । আর অশিক্ষিত মাত্রেই বোকা , এরকম সরলীকরণ করো না । শিক্ষিত লোকও বোকা হতে পারে । হচ্ছেও । অহরহ ।
—-শিক্ষিত অথচ বোকা ! কি যা তা বলছো ? কিভাবে ?
—-প্রোপাগেণ্ডা মারফত । বিশ্বাস মারফত । ধরো , কোথাও কিছু নেই , তোমায় বলা হলো আছে , একজন লোকের কথায় তুমি কি বিশ্বাস করবে ?
—-কেন করবো ?
—-একদম । করবে না । কিন্তু এই কথাই যদি একশো জন লোক বলে ? হাজার জন ? কিংবা তারও বেশী ? যদিও তাদের কাছে কোনও প্রমাণ নেই, তোমার কি কৌতূহল হবে না ? মনে হবে না হলে হতেও তো পারে ? এতো মানুষ তো আর ভুল হতে পারে না ?
—-তা মনে হবে নিশ্চয় ।
—-এই হলো প্রোপাগেণ্ডা । এখন , এই প্রোপাগেণ্ডার বিপরীতেও কিছু মানুষ থাকে। যারা বিষয়টা বুঝতে পারে । কিন্তু আশ্চর্যের কথা হলো , তাদের কথা জনগণ সে সময় শুনতে চায় না । কারণ individual thinking এর চেয়ে প্রোপাগেণ্ডার শক্তি সর্বযুগে সর্বকালে বেশী হয় । কারণ তার পেছনে ধর্ম, সমাজ ও রাষ্ট্রের মদত থাকে। কিছু মানুষের স্বার্থসিদ্ধি থাকে। তার বিপরীতে কেউ অন্য কথা বললে লোকে সেসময় তাদের বোকা বলে । অথচ উল্টোটাই সত্যি । যেমন গ্যালিলিও , ব্রুনো , সক্রেটিস । আরও অনেকেই । অথচ পরবর্তীতে প্রমাণ হয়েছে তাঁরা বোকা ছিলেন না। আসলে মানুষের এক স্বাভাবিক প্রবণতা থাকে নিজেকে বুদ্ধিমান ভাবার । কেউ নিজেকে বোকা ভাবতে পছন্দ করে না । যেন “ বোকা “ এক্ নিকৃষ্ট শব্দ ।অন্তত যতোক্ষণ না সে নিজের বোকামি বুঝতে পারছে । তবে অন্যের বোকামি সে খুব এনজয় করে। বোকাদের নিয়ে বিভিন্ন জোকস , চুটকি এই কারণেই জনপ্রিয় । আচ্ছা, অন্য কথায় আসি । জন্মের পর থেকে তোমার কানের কাছে যদি বাড়ীর বড়রা বারবার কোনও আচার নিয়ম পালন করেন , তোমায় বলেন তুমিও সেসব বহন করো , তুমি করো না কি ?
—-করি তো
—-এই হলো সংস্কার । যা তুমি তোমার পূর্বপুরুষদের থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে বহন করো । তুমি কি পুজো করো ? মন্দিরে যাও ?
—-যাই তো
—-কোনওদিন ভেবে দেখেছো কেন ?
—না ভাবিনি । সবাই বলে এতে সুখ শান্তি পাওয়া যায় ।
—-তুমি পেয়েছো ? ভগবানের কাছে চেয়েছিলে ?
—-চেয়েছি
—-পেয়েছো কি ?
—-সুখ কাকে বলে বুঝতে পারিনি । ভেবেছিলাম , অনেক টাকা হবে । অনেক ভালভাবে থাকবো ।
—-তা থাকছো কি ?
—-খারাপ থাকছি , বলতে পারবো না । টাকাকড়ির অভাব নেই ।.তবে ভালো থাকার অন্য ফর্মুলা তো জানা নেই ।
—-তাহলেই দেখো , যে নেই , যা নেই , যাকে তুমি দেখোই নি কখনও , লোকের কথায় বিশ্বাস করে তার কাছে সুখ শান্তি চাইছো ?
—-ভগবান নেই ? বিশ্বাস করি না ।
—- ঠিক আছে । ধরলাম আছেন । তাহলে দেখাও । অন্তত প্রমাণ দাও ।
—- ঐ যে মন্দিরে
—-মন্দিরে ? সে তো মূর্তি মাত্র । ঈশ্বরের অবয়বের এক ধারণা । ঈশ্বর দেখতে অবিকল ঐ মূর্তির মতো , তুমি সিওর ?
—-না , মানে এবিষয়ে জানা নেই কিছু । তবে ওরা বলে তো ।
—-ওরা মানে পূজারীরা ? দর্শনার্থীরা ? লোকজন ? তার মানে তুমি সেই প্রোপাগেণ্ডার ভেতর ঢুকে পড়লে । আচ্ছা , বুঝলাম , তুমি আস্তিক । তোমায় আর বিব্রত করবো না । অন্য প্রসঙ্গে আসি । বোকাদের নিয়ে কথা হচ্ছিল আমাদের । মনে করো , আজ থেকে নবছর আগের কথা । ভোট হয়েছিল সেবার ।
—-হ্যাঁ , মনে আছে ।
—-একজন লোক বলেছিল ,বিদেশ থেকে কালো টাকা নিয়ে আসা হবে। প্রত্যেকের এ্যাকাউন্টে পনেরো লাখ টাকা ঢোকানো হবে । তখন ধরো , ভারতের জনসংখ্যা একশো তিরিশ কোটি । একশো তিরিশ * পনেরো কতো কোটি টাকা ? ভাবো
—-তা অনেক টাকা
—-ভোট দিয়েছিলে কি ? লোকটাকে ?
—-হ্যাঁ দিয়েছিলাম তো । ভালো দিনের আশায়
—-পনেরো লাখ পেয়ে গেছো মনে হয়
—-যাঃ , কোথায় পনেরো লাখ ? পনেরো টাকাও ঢোকেনি
—-ভোটের আগে মনে হয়নি , একথা ?
—-না, মনে হয়নি । আসলে সবাই এমন করে বলছিল , আশপাশের মানুষজন , টিভি মিডিয়া , খবরের কাগজ। পরে জানা গেল, ওটা সত্য নয় । কথার কথা ।
—-শিক্ষিত বোকার বিষয়টা বোঝা গেল আশাকরি । আচ্ছা , তারপরও তোমাদের শিক্ষা হলো না । হটাৎ করে পাঁচশো আর হাজারের নোট বাতিল হয়ে গেল । লোকটা বললো , কালো টাকা শেষ হয়ে যাবে । সীমান্তের সন্ত্রাসবাদের কোমর ভেঙে যাবে । চরম ভোগান্তি হলো মানুষের । তবু তোমরা দুহাত তুলে লাফালাফি করলে । তা , এইসব কি আদৌ হয়েছে ?
—-না , মানে সেসময় ওরকম মনে হয়েছিল , আর আমাকেই টার্গেট করছো কেন ? সবাই তো তাই ভেবেছিল
—-তবে ? লোকটার ক্ষমতা দেখো । বারবার দেশসুদ্ধ লোককে বোকা বানাচ্ছে । এর পরের নির্বাচনেও তোমরা হাত উপুড় করে লোকটাকে ভোট দিলে ।
—- মনে হয়েছিল , আবার একটা সুযোগ দিয়ে দেখি ।
—-একটা কেন , পরের নির্বাচনেও তোমরা তাই করবে , আর প্রশ্ন করলেই এই এক জবাবই দেবে ।আমি নিশ্চিত । দেখো , মানুষ বোকা হতেই পারে । বোকা হওয়া কোনও অপরাধ নয় । কিন্তু যখন একটা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ বোকা হয় , বা হতে পছন্দ করে , তখন তাদের দুর্ভাগ্যের পরিণতি কেউ রুখতে পারে না । YOU PEOPLE DESERVE TO BE SUFFERER . আচ্ছা , শেষ প্রশ্ন , করোনার সময় লকডাউন মনে আছে ? গৃহবন্দীর সে সব দিন ? নোটবন্দীর ক্ষেত্রে নাহয় বলা যায় , দেশের বেশীরভাগ লোকের অর্থনীতি ও flow of money র বিষয়ে কোনও ধারণা নেই। কিন্তু রোগভোগ তো মানুষ সেই আদ্যিকাল থেকেই করে এসেছে। ফলে , একদিন লোকটা যখন বলল , থালা বাটি শঙ্খ বাজাতে হবে ঘরের বারান্দা থেকে, তাহলেই করোনা পালিয়ে যাবে , তোমরা মেনে নিয়েছিলে তো ? করোনা কি হাতি ? পটকার আওয়াজে পালিয়ে যাবে ? ভাইরাস এভাবে পালায় ? ভাইরাসের পা কেউ কখনও দেখেছে ? আবার একদিন বলল , আলো নিভিয়ে রাখলে ভাইরাস ঘরে ঢুকতে পারবে না । ভাইরাসের চোখ থাকে ? অন্ধকারে দেখতে পায় না ? তোমরা হাস্যকর ভাবে সেসব মেনে নিলে ?
—-বুঝেছি , কিন্তু সবাই যে …।।
—- জানো কি, তোমরা আসলে ঝাঁকের কই । এক কাঁটা ছাড়া আর কিচ্ছু নেই তোমাদের । যাই হোক , সামনেই এপ্রিল ফুল আসছে । এপ্রিল ফুলের শুভেচ্ছা তোমাদের । শুভেচ্ছা তোমাদের মতো সমস্ত দেশবাসীকে । বোকাদের জয় হোক ।