
১ দীর্ঘদিন লেখা না আসা বিকেলের মতো থেমে যাচ্ছে মাঝরাতের আলো। যে ইশারায় বাঁচে চোখ, তার ভাষা আগুন রঙের। ভাসা ভাসা কাব্যি জমে। তর্কে মশগুল যুবক-যুবতীরা রান্নাঘরে পৌঁছানোর আগেই চুমু খেতে আসে। আর প্রেশার কুকারের সিটি খেলে যায় অকস্মাৎ। সহসা যাতায়াতে সোমত্ত রাতের চিৎকারে মেতে উঠি আমি, ছায়া নামক একটা ক্ষীণকায় শরীর। ২ এই যুদ্ধের কোনো অস্ত্র নেই৷ নিয়মমাফিক অথচ প্রথাবিরুদ্ধ একটা খেলা। যুদ্ধের বিরতিতে স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসাব কষেন। প্রিয়ের সঙ্গে খানিক পোশাক বিনিময়। আহতদের চিহ্নিত করে ডাক পাঠাতে হবে মিয়াঁসাহেবকে। যুদ্ধের ময়দানে তিনি ধরবেন রাগ ভীমপলাশি। সেই সুরে প্রত্যেকে একা, অসহায়, নিঃস্ব। নিঃশব্দে কত কথা রয়ে যায়। অথচ অস্ত্র থেকে রক্ত ঝরে না বহুদিন। ৩ তোমার ইতিহাস বড়োই দুর্বল। যেন, তেন আর প্রকারেণকে আলাদা করে ভেবে নাও স্বপ্নে দেখা ভ্যাটিকান সিটির স্থাপত্য। মুখস্থ করো রোম সাম্রাজ্যের পতন। অথচ ইতিহাস তোমায় টানে না৷ যেভাবে আমাকে টানেনি কোনোদিন। কদাচিৎ সেই স্বপ্নে আসে রোম শহর৷ বাসিলিকা ক্যাথেড্রায় বসে আমরা স্মরণ করছি নিজেদের অস্তিত্ব। পায়রার মুখে তখন লাল সংকেত। ত্রাজিমিন হ্রদের যুদ্ধে রোমানদের পরাজিত করা এক নাবিক চলেছেন মহাসমারোহে। আমি তখন তোমার পাহারায় ত্রেভি ফোয়ারার সামনে কুলকুচি করছি। তোমার ইতিহাস এত যুদ্ধ শেখায় কেন কমরেড? ৪ টাইবার নদীর পাশে একটা ছোট্ট বাড়িতে গিয়েই মনে হয়, আমিই সেই আদিম এট্রুসকান। ল্যাটিনদের চেয়ে অনেক এগিয়ে৷ আমিই স্বয়ং ইতালিয়ান জীব। তোমার ভাষায় বহিরাগত। অথচ ২১ ডিসেম্বর আমাদের প্রেম হয় খানিক নিঃশব্দে। সেই ওড়া স্বভাব নিয়ে আমরা পড়ে ফেলছিলাম ইতিহাসের একের পর এক পৃষ্ঠা। আওড়ে যাচ্ছিলাম, রোম সাম্রাজ্যের পতনের মূল কারণগুলি। অথচ কেউ কারোর দিকে তাকাচ্ছিলাম না। ইতিহাস পাঁজর বের করে হাসছিল, দেখেছ কি তা? ৫ অধ্যায়ের মাঝখানে জ্বর আসে। জ্বরের অস্তিত্ব সোম থেকে শনি — রোববার ছুটির দিন। সে আসে না, যন্ত্রণা আসে। গালে, ঠোঁটে, বুকে, নাভিতে। জ্বরের ঘোরে শুনি পাড়ার ট্যাপ কল খুলে যাওয়ার চিৎকার। একদিন জল থেমে যায়, ফোঁটা ফোঁটা কপালে পড়ে। অথচ জ্বর — আসছে তো আসছেই — ৬ পাহাড়ের রাত কঠিন হলে নেশা চড়ে বসে। এগারোটা থেকে তিনটে। বার পাঁচেক সিগারেট-সহ নেশাকে চড়াই মধ্যগগনে। নেশাদের ঘুম ভাঙে, জানলা থেকে আলতো পর্দা সরালে বাইরে ভোর। শিশুর মতো সরল উৎপাতে চেপে বসে কবিস্বভাব। বন্ধুদের ঘনঘন ফোন। অ্যালার্ম। হায় ঘুম! হায় অনভিজ্ঞ নেশা! ৭ ঘরে ছাই উড়ছে। অথচ চোখ থেকে কিছুতেই তোমাকে ঝেড়ে ফেলতে পারছি না। পলক থেকে ঝরে পড়ছে পালক৷ উড়ে উড়ে তোমার গায়ে গিয়ে বসছে। যেকোনো শ্মশান যাত্রা আমার কাছে ভয়ের। অথচ করুণ শীতের রাতে হঠাৎ দেখা হয়ে যাওয়াটা প্রতিদিন মনে পড়ছে কেন? চোখের পাতা কেন পড়ছে না? নিশ্বাসের দম নেই কেন? এতশত ভাবতে ভাবতে তুমি মরে যাও। এতকিছুর পরেও মানুষ মানুষকে মনে রাখে। যেমন তোমাকে আমি। ৮ আনন্দের কথা বলতে গিয়ে দেখি আমার কাছে এসে পড়ে বেড়ালটির চোখ। দীর্ঘ সময় ধরে রাখার জন্য একটা লেখা এবং সেই থেকে শুরু হবে বিবমিষা। পিতৃহীন ক্ষোভের চাতালে বসে থাকব আমি। নদীগর্ভে বারোটি বছর পার। অতএব এই তো আর নেই বলে মনে-মনে সময় চলে যায়। তুমি কি খুব একটা ভালো নেই? বাঁশি থেকে রক্ত ঝরে। আর মরে যায় অফুরন্ত জেদ। চোখে নেশা আসে। ঘুম পায়। ৯ কী নিরুপদ্রব কর্মমুখর জীবন আমাদের। অথচ দ্যাখো, কে কাহার! বিশদে পড়ার জন্য অপেক্ষা করে একা ঠায়। যেন একটা সময় ধরে রাখার জন্য মানুষ মানুষের কাছে ঋণী। ইদানীং কথা বলতে ইচ্ছা করে। অথচ মুখোমুখি হলেই কথা থাকে না আর। মানুষ এভাবে শব্দহীন হয়ে পড়ে। মোবাইলের ইমোজি শিখিয়ে দেয় একটু স্মাইল প্লিজ, এবার কাঁদো, এবার চোখ মারো, জিভ বের করে অট্টহাসো — ভিতরের কাকুতি বেরিয়ে আসুক, তবু কথা বোলো না। ১০ কমরেডের আজ দারুণ জ্বর ইতিহাসের পৃষ্ঠা ওল্টাতে ওল্টাতে দুপুর গড়িয়ে যায় একটা আলুর খোসা ছাড়িয়ে চারটুকরো করা গেল পাশে কাঁহাতক পেঁয়াজের ঝাঁঝ জ্বরের শরীরে হার্ট চলে দ্রুত গতিতে আর দুপুরের অবশ্যম্ভাবী মাস্টারবেশনের পর একটা সিগারেট ধোঁয়া উড়িয়ে বিদ্যুৎ চমকে ওঠে স্নায়ুতে এতকিছু দেখার পর বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবি কমরেডকে আমি সমর্থন করি না ঘৃণা করি না বরং পরখ করি, যাচাই করি যেভাবে দুই আর দুইয়ের বিয়োগে নির্মিত হয় অদ্ভুত গোলাকার তাকে তীব্রভাবে শূন্যতার দিকে ঠেলে দিই

সুমন সাধু
একজন কবি, গদ্যকার এবং সাংবাদিক। বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পর বর্তমানে পেশাদার সাংবাদিক ও লেখক। প্রথম কবিতা প্রকাশ ২০১১ সালে ‘জিজ্ঞাসা’ পত্রিকায়। এযাবৎকাল অবধি তাঁর প্রকাশিত কবিতা ও গদ্যের বই পাঁচটি। সম্পাদনা করেন সমাজ-সংস্কৃতি ও প্রকৃতি বিষয়ক নানাবিধ পত্র-পত্রিকা।
Facebook Comments Box