ছিলে জেগে ১ মৃত্যুর আগে কেন যেন অনেক টক খেয়েছি মেছতার টক , আমডাল , টমেটোর টক, যখন যা পেয়েছি। শুনেছি টকে শুদ্ধ হয় দেহ , বিলম্বে আত্মা থেকে থেকে মনে পড়ে, কবিতাই ছিল জীবনযাত্রা । বেমিল অংকে মনে বিষন্নতা, রক্তে মিষ্টির উচ্ছ্বাস , তেতোগুলোও গিলেছি অক্লান্ত, তেতোতেই বিশ্বাস। অন্যায় রয়ে গেছে না দেখার ভাণে , শেষগলিতে দোয়াত উলটে ভিজে গেল সাদা মায়া কালো কালিতে। তুমি পালিত হয়েছো হে, রাজাধীরাজ আমি পতিত। জীবনে তুমি আমি এক তো ছিলাম না মরণও আলাদাই হবে , কারণ খুঁজলাম না। একদলা থুথু ছিটানো দরকার ছিল , তাও ভুলে গেছি ভুলে গেছি পাওনা ছিল কত ! দেনাও ছিল নাকি ! ভুলে গেছি নাকের মুসরডাল কে কখন খুলে দিলো কোল থেকে টুক নেমে গেল ছেলে, কেউ তার নাম নিলো। আমার সামনে শোয়ানো আমারই ভবিষ্যৎ কবে , আমিই দেখলাম না কিছু। কবির চোখও ঘোলা তবে। মুখে ভেজা আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দিলো মা। আমার মা। চুপচাপ মায়ের বুকে লুকিয়ে যাবো , কেউ আর টেনে হিচড়ে অপমান করবে না। হাতের লেখাটা রেখে দিও । নীল কালির প্রমাণ, আমি শুধু ভুলের ভয়ে ভীত মৃত্যুর আগে আমি ভুলে গেছি , আমি জীবিত না মৃত । ২ পশ্চিমের দীর্ঘ অনুবাদ উত্তুরে হাওয়ায় থমকেছে। এখানে প্রেমগুলো ম্লান, টুকরো। চড়ুইপাখিগুলো পাতায় বসতে এসেছিলো কি না খুঁজছে না কেউ আর। । টগর গাছটা কেটে ফেলেছে শুধু শুধু। সাদা টগরে ডিপ্রেশন কাটে বারান্দার। কেউ হেঁটে হেঁটে নদী খোঁজে , ভুলে যায় চশমা চোখে নয়, হাতে ঘুরছে । ইচ্ছে করেই পেছনে তাকায় না। বাঁক ঘুরে যায়। এত ভেবে ভালোবাসা কঠিন। ভালোবাসা মানে উলবোনা। একঘর উলটো একঘর সোজা , একঘর উলটো একঘর সোজা। ফিরে যাও ,রয়ে যাবে মেঘের ম্লান , বৃষ্টির ধোঁয়াশা আর ঝিকঝিক। একটুখানি জানালার পাশে উড়ে আসা সেই চড়ুই ! ওই যে ঘুম আধারাত আসে না বলে কানে বৃষ্টির ঝাপ্টা বাজে। জেগে থাকার মোমালো ফুঁ করে নিভানো। অন্ধকারই এক আলো। টার্কিশমেয়ের সোনালী কোঁকড়া চুলের মতো বেপরোয়া ভালোবাসি । সে মুঠো ভরে ধরে আনে মেঘ। নিজের গান নিজেই লেখে, নিজেই সুর বসিয়ে গেয়ে ওঠে হুহু করা আচ্ছন্নতায়। তুমি বার বার ফিরে যাও। আমি হেরে যাই। কুয়াশার ঘোর লাগে আছড়ে পড়া ঢেউয়ে ঢেউ গুনে গান লিখি একদা রোদে পোড়া রাবার পাতায় ।বিলম্বে জমা করি কন্ঠের অতল সাঁতার। ফিরে যাবার পর তোমাকে সবাই খুঁটে খুঁটে পড়ছে। দাগিয়ে দাগিয়ে লিখছে। আমি শুধু শুনি , যেন সেই টার্কিশ মেয়ে ,এখন গান বাঁধতে জানি। তুমি নিশ্চিন্তে ট্রানজিটে ফেলে যাও রাবার পাতা। পড়ো আমার দুরত্ব , তোমার লুকানো প্রশ্রয়ে একটানা গল্পের গদ্য কিম্বা গদ্যের গল্প। ৩ আত্মহননের সময়ে একমাত্র নেশা মৃত্যুকে সফল করা। যে আত্মকে বিনাশ করছে বলে ভাবছে সে মূলত দেহকে বিচ্ছিন্ন করছে, পৃথিবীর সংযোগ থেকে পরিচিতদের সংযোগ থেকে সর্বোপরি নিজের সংযোগ থেকে। এখন সিলিং এর শান্তপাখার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ সে মনে মনে মাপজোক করে নিলো দ্রুত স্লিপিংপিল গিলে নিলো নিশ্চিন্তে তারপর খুব প্রিয় কটকটে রঙের ওড়নাটা নিজের গলায় ঘুরিয়ে ঝুলে পড়লো। সে যখন ঝুলছে তখন তার শেষ ইচ্ছে ছিলো ঘুমন্ত সন্তানদের মুখ একটিবার দেখে , সন্তানদের মাঝখান থেকেই সে উঠে তাদের কপালে চুমো খায় শেষ বার। অবলীলায় নিজেকে ধাতবের হাতে ছেড়ে দিলো এবং হাওয়ায় ঝুলতে লাগলো তার কটকটে ওড়না, এতকালের অপমানে কুচকুচে হয়ে যাওয়া মুখ এবং আপাত স্থবির প্রাণটি।

কবি, গল্পকার
জন্ম: ১৬ ফেব্রুয়ারি, ঢাকা
বসবাস: ঢাকা
Facebook Comments Box