আমাদের বনিবনা হোক যে গাছটার ছায়ায় আমাদের বনবাস হতে পারত, সেখানে ভিড় রে আবার যে রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটি, তার কাছে পড়ে থাকে দুটো ঘড়ি; সময় কাউকে কব্জিতে বেঁধে রাখে, কাউকে সেলফোনে। নদীটার পাশে তুমি যে কোনো সকাল বা সন্ধ্যায় খালি পায়ে হাঁটতে পারতে ওখানে তোমারই মতো লোকজন থাকছে, সন্তান নিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে তুমি দেখতে পাও না আমাদের নদীটা মিশে যাচ্ছে ছবির মতো। যে ট্রেনটায় তুমি ঝিকঝিক করতে, জানালা দিয়ে মুখ বের করে বৃষ্টির ছাট নিতে দেখবার পলকে রাজত্ব না বিছাতেই মিলিয়ে যাচ্ছে কাবেরী নদী, বাউল করিমের মতো জনপদ। ভেসে যেতে পারতাম, আমরা দুজন মিলে একটা সংসার নাটক হতে পারত, কত মানুষ কত কত অভিনয় করে, গান গায়, পর্দা টানে সমাপ্তির; আমরা দুজনে আকাশের সাথে একটা সন্ধি করতে পারতাম যে চলো, সূর্যের রোদে এসে ডিম ভেজে খাই। কে যেন সারাক্ষণ বাঁশি ফুঁকে চলে, আমাদের মতো কত মানুষ হুম হুম করে হাঁটে। কেউ কেউ খেতে পায় না, কেউ কেউ দমবন্ধ গাড়িতে বসে থাকে আমরা তখন বসেও থাকতে পারি। বসে থাকার একটা অলস কাজ লগ্নি করা আছে। এসো, নদীটার সাথে বনিবনা হোক। বেদনা বেদনার দুটো হাত আছে, দুটো পা বেদনা বৃষ্টিতে ছাতা মাথায় হাঁটে, কাশি পেলে মুখে হাত দিয়ে খুক খুক করে বেদনা শব্দ করে চা খায় না, খাবার সময় মাছের কাঁটা বেছে খায় সন্তর্পণে মানে হলো সে ভদ্রতা জানে। তাকে আবার ঠিক ততটা ছাপোষা ভাবা ঠিক হবে না সে ৮টা ৫টা অফিস করে না সব্জিঅলার সাথে দামাদামি করে না তাকে বিয়ের দাওয়াত দিলে মন দিয়ে খাবে, অল্প করে মাখবে ঝোলের বাটিটা কই বলে টেবিল চাপড়াবে না। সে কোমল নবীন, সে উপমা ছাড়াই ট্রেনে ওঠে, ব্যাংকে গেলে লাইনে দাঁড়ায়। টাকার গন্ধ বেদনার অপছন্দ, বেদনা শিশু দেখলে আলগোছে দূরে সরে যায়। বেদনার অল্প কয়েকজন বন্ধু আছে, বন্ধুরা মিলে ডাউন টাউনে ফেস্টিভ্যালে উল্লাস করে। বেদনা পরচর্চা করে না, পকেটে টাকা না থাকলে সুহাসিনীকে বলে; : সুহা টাকা নেই, খাবার নেই, শুধু নেই। সুহা হেসে বলে দাঁড়াও তোমাকে বেঁচে থাকার জন্য জরুরি ত্রাণ পাঠাচ্ছি, বেদনা আবার পেট ভরে খায়, মনের হরষে চুমুক চুমুক করে চায়ে.. বেদনার কাজিন কেউকেটা, বেদনা তাকে টেক্সট করে, কাজিন ওকে নিয়ে কুড়িগ্রাম যায় বা চৌদ্দগ্রাম বা সীতাকুন্ড ওরা প্লাটফর্মে বসে ধর্মনিরপেক্ষ বিসকুট খায়, সবরি কলা বা পরিস্কার কাপে গরম কফি। আবার কোনো বস্তির সামনে খামোকা ডাক দেবে; ও আনাজপাতি খেয়ে থাকা বন্ধুসভা... কি আশায় বাইন্ধাছো ঘর? কিংবা পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা সংসদ ভবনের সামনে এসে মেঘের স্বরে হাঁক দেবে; কোন রঙে বান্ধিয়াছো ঘর মিছা দুনিয়ার মাঝে গোসাঁইজি! সব ধর্মগ্রন্থ পড়ো দুলাল ভাই আমার গ্রামসি পড়ো আমার দেউড়িতে ঢোকো, আদি ধ্বনি করো, তোমাকে গ্রামিক নিয়োগ করি, এসো। পন্থে পন্থে তুলতুল নালায়েক নাথ। তুমি বিচার করো, তুমি দণ্ড দাও হে। শীতলক্ষ্যায় শীত বাস করে না, দুর্মর লাশ ভেসে চলে জলের প্যারালাল ভেসে ওঠা ফুলে ওঠা মায়ের সন্তান। শোনো ভাই দুলাল কানে কম শোনো, চুপ করে আলিফ লাম মিম পড়ো। যে নাটমহলে তুমি নাট করো,নাগেশ্বর সাজাও। তোমাকে প্রতিম করে অলৌকিক জাহাপনার মতো সাজাই এক জীবন। বিয়ান দাও বিলান, বিলয় ঘটে যায় মসনদে। ত্রিপিটক পড়ো। পাশা খেলা আর থামে না লো। তৌল অসমান তোমার, ও দুলাল। ফজিলত নিয়ে তবু লোক-রাষ্ট্র লিখে যায় চিত্রগুপ্তের খাতা, বরেণ্য হয়ে থাকো সেজদায়। ওঠো দুলাল। বেদ পড়ো। ঘনশ্যাম, তোমার গ্রেফতার হওয়া উচিৎ। গৌতম তুমিও। প্রচ্ছদ পাল্টে গেল, ও পৌরাণিক। ক্ষমতা কমছে তোমার। এসো বাইবেল পড়ি। দুলাল ও দুলাল, হকিন্সের পাশের হুইল-চেয়ারে বসে থাকো তো নড়বে না। কথা শোনো ও ভাই দুলাল আমার।

গল্পকার, কবি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি ও কানাডায় প্রোগ্রামিং নিয়ে পড়াশোনা। কানাডার মন্ট্রিয়ল শহরে বসবাস। লেখালেখির বাইরে আবৃত্তি, অভিনয়, টেলি-জার্নাল, বড়দের-ছোটদের নিয়ে নানা রকম সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সমান আগ্রহ।
Facebook Comments Box