=========================================================

=========================================================
আমাদের শৈশবে কারো কারো ফুলের নামে নাম আমাদের শৈশবে বন্ধুদের অনেকেরই থাকত ফুলের নামে নাম মফস্বল-বাড়ির বাগানগুলোয় ফুটে থাকত চেনাজানা কাছের ফুল টগর জবা জুঁই বেলি হাসনাহেনা গাঁদা কামিনী অথবা গোলাপ আমাদের মফস্বলের খোয়া বিছানো লাল লাল পথ পথপাশে আমাদের না-বোঝা রাতের শিহরণ মেখে ফুটে থাকা শিউলি বকুল কোনো কোনো ছেলেদের দূর থেকে চিনতাম গোলাপ, টগর বা বকুল ভাই বলে চিনতাম ভারতীয় সাইকেল, লাইন করা মেয়েগুলো কোঁচর ভরে কুড়াতো আর বাকি সব ফুলের নামে ফুটে উঠে সই পাতাতো খুব তাদের কেশ উন্মুক্ত, কাজলপারা চোখ ছোট ছোট টিপ পরে হেসে উঠত যারা ছোট ছোট রেষারেষি সন্ধ্যায় নিয়মিত গলা সাধা খুব বেশিজন নয় তবে কেউ কেউ দেখতে পেত বেশ দূরে পাহাড় ডিঙানো স্বপ্ন নিয়ে মজবুত কলাবেণী বেঁধেছে তারা তখনো জিনিয়া তানিয়া মণিকা নামগুলো পাড়ায় ঢোকেনি আমরা বলতাম টাউন টাউনের মেয়েরা এমন নাম নিয়ে আসত সেকালে সাথে ক’রে রাশিয়ার গল্প, সদ্য পাকাতে শেখা ন্যুডুলস এই তো সেদিন আমাদের শৈশবে ছোট ছোট দীর্ঘশ্বাস, ভীতি নিয়ে প্রেম আর সেনাশাসনের কালে পাড়ার ফাংশন আয়োজনের কালে ঈদ আর পূজায় সমান আনন্দের কালে আমরা ছেলেমেয়েরা কিছু বৈষম্য, কিছু সংহতি নিয়ে বেড়ে উঠছিলাম আমাদের মফস্বলে লাল লাল খোয়া বিছানো পথ পথের দুপাশে বৃক্ষ জলাশয় যখন আমাদের কেশ উন্মুক্ত যখন আমাদের বন্ধুদের কারো কারো হতো ফুলের নামে নাম! ক্রিমসন রোজ পেতে ক্রিমসন রোজ পেতে কেঁদে যাচ্ছে একটা শহর নিকটস্থ প্রেক্ষাগৃহে তখন সবে পর্দা উঠেছে চেনা দুঃখ-সুখ তার যোজন দূরের দর্শক বহু কসরৎ শেষে বিকেল-ভ্রমণে মরা চোখ রাতের খাবার মেপে মুখগুলো মশলাবিহীন কী আছে তাতে, আবর্ত আফসোস বাদে টকটকে লাল আর ঝিম ধরা মাখনের মিল হাসপাতালের মাছি, সাদারঙ, বাধ্য দেয়াল দেহের অসুখ, তাজা মন শুষে নিতে থাকে দেহের অসুখ, মেজাজ তিরিক্ষি করে দেয় মন বেঁধে রেখে অশরীর যেতে পারে দূরে নিয়ন আলোয় এইসব চরিত্র লেখা হয়েছিল নিকটে প্রেক্ষাগৃহ,ক্রমশ দূরত্ব প্রকাশ ক্রিমসন রোজ পেতে কেঁদে যাচ্ছে একটা শহর সূর্য নামায় সংসার বৎসর শেষ হয়, সূর্য নামে আমার ধানক্ষেত, চায়ের দোকান আমার স্কুল-উৎসব শেষে সূর্য নামে সূর্য নামে আর মানুষ হয় বিপুল অন্ধকার পথে পথে সমাবেশ, মধ্যিখানে পুকুরের পার স্কুল-উৎসব শেষে আমি তো ফিরি না আমি তো ফিরিনা ঘরে, সূর্য নামায় সংসার অপেক্ষায় পরিজন, উৎসুক মুখেরা পাড়ার অন্ধকার মানুষের ছয়জোড়া কুৎসিত হাত রাতভর ফালা ফালা, পিশাচের ইন্দুর দাঁত মৃতপ্রায় আমার শরীর, শরীর ভরা ঘোর অনাচার আমি তো ফিরিনা ঘরে, সূর্য নামায় সংসার খোঁজ শোরগোল শেষে তারা কি দেহটিরে পায় আমার দেহটি ছিল নিক্ষিপ্ত নর্দমায় মৃত ভেবে আমি তবে নিক্ষিপ্ত নর্দমায় স্বচ্ছ মানুষ, স্বচ্ছ মাছেরা আমার শরীর পানে চায় বিলাপে দেহখানি স্বরূপে ফিরিবে কি আর ঊষা লগন, চোখ মুছে বাপে যায় মঙ্গলার বাজার মঙ্গলার বাজার, পাশে ধানখেত—আমার নিবাস মৃতপ্রায় ঘরে ফিরি, ফেরেনা ঘরের অভ্যাস চিকিৎসা জারি থাকে, কানাঘুষা আর ফিসফাস খবরের লোক, থানার দালাল, বহুদূর তোমার সুবাস প্রহসন শেষ হলে বারোভাজা কিনে আনে ভাই পরান শক্ত তবু দুর্লভ শুশ্রুষা লুকাই মৃতপ্রায় আমি, মৃত ভাবে মঙ্গলার বাজার সকলের আসে, আসে না উৎসব আমার একলার ধানখেত, চায়ের দোকান, সঙ্গে একরাত বলাৎকার বৎসর শেষ হয়ে আসে, সূর্য তার নামায় সংসার। নৈর্ব্যক্তিক আমার ঘুমগুলো তোমার বিছানায় ঘুমিয়ে নিচ্ছে কে আমার রাত জাগা গান কার শার্শিতে আটকে থাকে দিনভর কেউ তো একজন আছে যে কথার নড়চড় করে নিশ্চয়ই এমনই হবে ভেবে নিলে সকল দায়মুক্তি ঘটে যেতে পারে আমাদের নিঃশ্বাস পরস্পরের প্রতি হতে পারে মুক্ত, উদার একা কোনো ঘরে ফিরতে হবে ভেবে একা একা মরে তিন দিন পড়ে থাকতে হবে ভেবে এখনই যে শঙ্কা বাঘের মত তাড়ায় আমাকে তাকে একটা আঙুল হেলিয়েই চুপসে দেয়া যায় সঙ্গমের পর তোমার শিশ্নের নেতিয়ে পড়ার মতই সে চুপ মেরে যাবে আমি তাকে বলতে পারি কোনো অনুশোচনা রাখতে নেই আমি তো রাখিনি কোনোদিন জেনে গেছি, এ জীবন আমার আর আমি এ জীবনের অধীন কিছুই মুক্ত নয়, ওই আকাশ, এই পাখি শুধু আমার আত্মার নীলচে লাল ডিম তা দিয়ে যেতে পারি তাকে ফুটে উঠতে বলতে পারি তাকে শুনে যাও নৈঃসঙ্গ্য অসীম, কিছু পারি বা না পারি দিন শেষে আমি আমার একলা মৃত্যুর ভার বয়ে নিতে পারি ঠিক। নেমেছে সবুজ কিছু বাতি শহরে নেমেছে আজ সবুজ পোশাক পরা বাতি ঘরে ফিরে যাবে যারা ফিরেছে সহজ সংকেতে বাকি সব বনসাই ইতিউতি চেয়ে দেখে কাকে প্রবেশের দরোজায় লেখা নেই ভাঁড়েরা, স্বাগত কোথায় কে যাবে আজ, সর্বদা বৃষ্টি-পাহারা দুনিয়া দখল করা হুল্লোড় যেন মহামারী নীরবতা চেয়ে চেয়ে ঝুঁকেছি দেহের কাছাকাছি আবছা ছায়াটি বাঁধা কতিপয় মেঘে ও মননে বিদ্যুৎ খেলে যায় অতিলৌকিক রঙে রঙে ধূসরতা যার দান কমলা রোদেই তার প্রেম শীত ঠেলেঠুলে, লাল জামা-মেয়েটি এসেছে ভুলিয়ে ভালিয়ে, করি তাকে মিঠা নদী পার শহর খেলছে বেশ, যাকে আমি বানিয়ে তুলেছি শহর দেখাবে শেষ, নেমেছে সবুজ কিছু বাতি।
Facebook Comments Box