গণতন্ত্র বিপন্ন— কত সরল এই ছোট্ট বাক্যবন্ধ! বলতে বলতে যেন ক্লিশে হয়ে গেছে। কিন্তু এর বহুমাত্রিকতা, এর গভীরতা এবং ভবিষ্যত প্রভাবের সুদূরপ্রসারতা— এসব আলোচিত হয়ে ওঠার পরিসরগুলোও সংকুচিত হয়ে আসছে। বিপন্নতার এ-ও এক প্রামাণ্য ক্ষতচিহ্ন।
আমাদের সহজপাচ্যতার পরিপাকতন্ত্রে গণতন্ত্র তেমন হজম হ’বার বিষয়ই নয়। ইতিহাসের কালপঞ্জি ধরে পিছিয়ে গেলে দেখতে পাই স্বৈরাচার, একনায়কতন্ত্র… দাপট, বীরত্ব, ব্যক্তিমহিমা…
সাধারণ মানুষ, অর্থাৎ প্রজামাত্রেই এই মহিম ক্ষমতাকে স্বীকার করে তার ভালোমন্দের ছায়ায় কালাতিপাত করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো। সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিপরীত চিন্তার মানুষ জন্মাননি, তা নয়। কিন্তু সেইসব স্বর বেশিরভাগ উচ্চে ওঠার আগেই তাঁদের স্বরযন্ত্রসহ মাথাটি দেহ থেকে আলাদা হয়ে গেছে। সেইসব অলীক হতাশ্বাসের বাতাস কালের ইতিহাসের পাতায় প্রচ্ছন্ন রয়েছে। এবং এরপরও কিছু শুদ্ধ স্বর পৌঁছে গেছে স্থানমতো, নাড়িয়ে দিয়েছে নিয়তিবাধ্য সাধারণ মানুষকে। দলবদ্ধ করেছে, প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছে, লড়াই করতে প্রাণিত করেছে। একনায়কতন্ত্রের মরভূমিতে সাময়িক মরুদ্যানের মতো আমরা তাদের এখনও খুঁজে নিয়ে শান্তি পাই।
গণতন্ত্রের সঙ্গে সঙ্গে মতের বহুত্ব ও ধর্মীয় নিরপেক্ষতা বা সহনশীলতা বলে যে দুটি আপাত সামাজিক সুলক্ষণ আমাদের অতি কাঙ্খিত, সে দু’টিও তাদের নিজস্ব স্থিতিশীল বৈশিষ্ট্য হারিয়ে নিজেদের অস্তিত্বই সংকটাপন্ন করে ফেলেছে। গণতন্ত্র নামক যে কাঠামোটি বর্তমানে রাজনীতি নামক এ দেশজনপদে পচে যাওয়া একটি ‘সিস্টেম’ দ্বারা আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে নিয়ন্ত্রিত হয়, তা যে ‘গণ’-দের, গণের জন্য এবং গণের দ্বারা আর অনেকাংশেই হয় না, তা নির্দ্বিধায় এখনও বলা যাচ্ছে।
এর মানে এই নয় যে, গণতন্ত্রের ভিত গড়ে ওঠার পদ্ধতিগুলোকে পাল্টে ফেলা হয়েছে— যার মধ্যে রয়েছে বাক স্বাধীনতা, ভোটাধিকার, সমালোচনার অধিকার প্রভৃতি। আসলে এগুলোকে তথাকথিতভাবে অক্ষুণ্ন রেখেও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অতি সাধারণ যাপনের স্রোতে প্রবেশ করে তাদের মনোগতি, রুচি, বোধ, সামাজিকতা, বিচার ও বিবেচনাবোধ, নীতিবোধ, ন্যায়-অন্যায়ের ধারণাকে পরিকল্পিতভাবে পরিবর্তন ঘটানো হচ্ছে। ফলত, গণতন্ত্রের প্রধান উপাদান হিসাবে তাদেরকে নিজেদের পছন্দের মানুষ বেছে নেওয়ার মানসিক অবস্থাটিই তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে— দেওয়া হচ্ছে রাজনীতি নামক সেই সর্বগ্রাসী সিস্টেমের বিভিন্নহ আচারের মধ্যে দিয়ে। হ্যাঁ, ‘আচার’, ঠিক যেমন ধর্মীয় আচার। প্রচলিত, নিয়ম… এইসব বলে বলে যেমন ধর্মীয় আচারগুলিকে বিনা প্রশ্নে মান্যতা দেওয়ার রীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, ঠিক তেমনি রাজনীতিতে ধুরন্ধর কৌটিল্যগণ কিছু নিয়ন্ত্রক, ভীতিকর রীতিকে এমনভাবে মান্য করে তুলছেন যা সাধারণ মানুষকে বর্তমান ‘গণতন্ত্র’-এর কাঠামো গঠন করতে বাধ্য করছে।
এর মধ্যে অনেক, অনেককিছু রয়ে যায়। সাধারণ ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের নিজ-যাপন নিয়ে সবসময় যে অনিশ্চয়তা কাজ করে, তার সুযোগ লাগানোর কিছু পন্থা বের করেছেন কৌটিল্যগণ। সবার উপরে থাকবে ভয় দেখানো। বিভিন্ন কৌশলে, সামনে-পিছনে, গোপনে, পরোক্ষে… যে আমাদের কথা শুনে চলো— সে ভাল হোক মন্দ হোক। ভালো করলেও আমরা করবো, খারাপ করলেও আমরা… তোমাদের যাওয়ার দ্বিতীয় জায়গাটি নেই।
তাই অবলীলায় কেউ বলে দিতে পারে, বোম মারো, পুড়িয়ে দাও, উড়িয়ে দাও। তখন তিনিই জগদীশ্বর-ঈশ্বর, পুরুষোত্তম সত্য! তাঁকে বিনা গতি নেই। শক্তের পূজারী স্বভাবভীতু মানুষজনের বেশিরভাগই তক্ষুনি ঢলে পড়ে তেনার পূজামণ্ডপে। নিজ নিজ অবদানে তুষ্ট করতে চায় ঈশ্বরকে।
এ আচার নয় তো কী?
দ্বিতীয় আরেকটি তরিকা হলো, জনগণকে একটা উপভোক্তা শ্রেণিতে পরিণত করা। বিন-আয়াসে কিছু পাইয়ে দেওয়া আমাদের এ ভুখা পেটে ঈশ্বরদর্শনপ্রাপ্তির মর্যাদা পেয়ে থাকে। জনগণকে আস্তে আস্তে ‘বিলিভার’ বানিয়ে ফেলা হয় যে, ‘আমি ছাড়া গতি নাই। আমি আছি, সাধ্যমতো তোমার সকল বিপদে। তবে জানোইতো, আমাকেও তো তোমাদের রাখতে হবে। মন্দির মসজিদ পূজাস্থানটি তো অক্ষত রাখবে বাবা-মায়েরা, নইলে আমিই বা যাই কোথায়!’ বিশ্বাসী নিবেদিত মানুষ ভেবে নেয়, সাধালক্ষ্মী ছেড়ে কেনই বা অধরাকে নতুন করে খুঁজি! চলে তো যাচ্ছে। তাঁরা তাঁদের যাপনের সাম্য ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হোক— তা চান না।
মোটের উপর কথা হলো, গাছকে ছেঁটেছুটে আমার জায়গার মাপ অনুযায়ী বানিয়ে নেওয়া— যেন সে কখনও জলমাটি নিয়ে অভাবের অভিযোগ না করে।
নিজ পছন্দের গণতন্ত্রের কাঠ, রঙ পালিশ পছন্দমতো প্রস্তুত রাখা, মিস্ত্রীর মগজধোলাই করে তাঁর নিজস্ব নান্দনিকবোধের জায়গায় আমার মোটা দাগের পছন্দটি বসিয়ে রাখা।
তারপর ফল তো আমার মনের মতো হবেই।
গণতন্ত্রের সবলতম ও দূর্বলতম খুঁটি হলো ভোটাধিকার— যেখানে নাকি একজন স্বাধীন মানুষের স্বাধীন মত প্রকাশ করার ক্ষেত্র, যা ব্যক্তির ও ব্যষ্টির জীবনকে সর্বার্থে নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু সেই শেষ ধাপটিতে নিজের পছন্দের ছাপ ফেলতে এই বহুত্ববাদের দেশে জনপদে জনপদে বহু তরিকা ইতোমধ্যে চালু হয়ে গেছে। কোনও একটি জায়গায় নির্বিঘ্ন, রক্তপাতহীন, চমকানো-শব্দহীন ভোটপর্ব হয়েছে মানেই সেখানে গণতন্ত্র স্বমহিমায় প্রোজ্জ্বল হয়ে উঠেছে ও উঠবে— এমনটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নয়।
এইসব ক্ষেত্রে মানুষের মগজদখল চলে আরও কিছু ওই রীতির সাহায্যে। কোথাও জীবনধারার মাঝ থেকে খুঁটে তুলে দেখানো হয় তাঁদের ধর্মবিশ্বাসের নিরাপত্তাকে, অথবা জাতিগত নিরাপত্তার ট্রাম্প তাসকে। যাপনাবর্তে আবদ্ধ সাধারণ উচ্চাকাঙ্ক্ষাহীন বা কম উচ্চাকাঙ্ক্ষী মানুষজন তাঁদের জীবনের দৈনন্দিন স্থিতিশীলতা থেকে সহজে বেরোতে চান না। মূলত স্নায়বিক অলসতার কারণেই বৈচিত্রের প্রতি অনীহা, নতুনকে গ্রহণ ও পুরোনোকে বর্জনের সদিচ্ছা ও উদ্যমকে তাঁরা আয়ত্ত চান না। এই প্রবৃত্তির যে উৎস, তা স্থান ও কালভেদে ধর্মীয়, জাতিগত, বর্ণগত, স্থানীয় চাহিদাগত… এবং কিছু ক্ষেত্রে অভ্যাসগত। এই বিশাল দেশের প্রদেশে প্রদেশে রাজনীতি সেইসব প্রবৃত্তির ইচ্ছামূল খুঁজে বের করে ফেলেছে। তারপর তাঁদের জীবনধারার সারল্যে ভেসে যে দল যেখানে বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছে, সে দলই সেখানে শিকড় বিস্তার করতে পেরেছে। তাদের হঠাতে পারছে তারাই, যারা ওই মূর্খ আবর্তে নিজেদের মূর্খতর প্রমাণ করে ‘পাবলিক’কে বোঝাতে পেরেছে, আমরা তোমাদের বোকামি ও ন্যাকামির আরও কাছাকাছি।
যেখানে মানুষ তুলনামূলক ‘চালাক’, সেখানে কাজটি আরও কঠিন। যেমন যে ভাষায় এই লেখা, সেটা যাঁরা বোঝেন, চিরকালই মস্তিষ্ক নিয়ে তাঁদের গর্বের অন্ত নেই। মেধা ও মননের উত্তরাধিকার নিয়ে জন্মানো বর্তমান প্রজন্ম সে স্নায়বিক ক্ষমতার নেহাতই অব্যবহার ও অপব্যবহার করছে। কেবল নিজ ও নিজ পরিজনের স্বার্থটুকু সহজতম পন্থায় সিদ্ধ করার কাজেই সে তার সমস্ত মেধাকে চালাকিতে পর্যবসিত করছে। অবশ্যই এ সামগ্রিক চিত্র নয়, কিন্তু গণতন্ত্রের রক্ষক যে পামর পর্যন্ত মানুষজন, তার দুই তৃতীয়াংশের বেশি এ দলে পড়বে। ফলে তারাই এখন ‘টার্গেট’। এ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তাদের বিভিন্নভাবে ‘ট্রিট’ করা হয়। যেথায় যেমন, যখন যেমন। কোথাও ধর্মীয় নিরাপত্তার নামে তোষণ, কোথাও জাতিগত বিরোধকে মর্যাদা দেওয়ার নামে বিবাদ জিইয়ে রেখে বড়তর অংশের সমর্থন আদায়, কোথাও দারিদ্র্যকে বুঝে নিয়ে চুপচাপ মানুষের খিদেকে কাজে লাগানো। অতএব এই চালাকি-গর্বোন্নত আমজনতা নীতির এইসব বৈচিত্র দেখে অবাক হয়ে ভাবে— আয়োজন মন্দ নয়! দেখো, আমাদের অত সহজে ঠকানো সম্ভব! ঠিক ধরে ফেলেছি। তাই এতো আয়োজন আমাদের জন্য।
কিন্তু কখন যে তারা তাদের ঘাড় পিঠ লেজ সব এই নিয়ন্তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে, সে অনুভূতিটুকু আর তাদের থাকছেই না। তারা নেমে আসছে পথেঘাটের রণাঙ্গনে, বাজারের কুৎসায়, হেটো গণ্ডোগোলে, মোড়ের তর্কে… সে টের পায় না, দলীয় প্রভূগণ কখন তেনাদের লড়াইকে ব্যক্তির নিজস্ব লড়াই বানিয়ে দিয়েছেন! সে লড়ে চলে নিজেকে আর তার দলকে টিকিয়ে রাখতে। তার রক্তেমজ্জায় ঢুকে গেছে দল টিকলে তবেই তার এই অনায়াস জীবনযাপন টিকবে। সে তখন জম্বি, দ্য ব্রেইনলেস ডেড! প্রতিবেশির মাংস ছিঁড়ে খেতেও তার কোনও মানবীয় প্রতিক্রিয়া জন্মাবে না।
তাই গণতন্ত্র বিপন্ন। নাঃ, অত সহজে নয়… একেবারে চেতনার স্তর থেকে বিপন্ন। সামান্য এক দশমাংশ মতো মানুষের চেতনাপটে এই অবক্ষয় ঠিক ধরা পড়ে। কিন্তু তাঁদের কথা শোনে কে, আর বলতেই বা দেয় কে! এইখানেই এসে পড়ছো বাকস্বাধীনতা হরণের প্রসঙ্গটি। এখানেও চাতুরতা! কোথাও বলা হয় না, বাক স্বাধীনতা নেই। যেমন গোপন কুমির ভরা জংলী পুকুরের পাড়ে স্নান নিষিদ্ধ পোস্টার লাগানো থাকে না। বুঝে নিতে হয়। তেমনি জনপদের এই গভীর অরণ্যরাজত্বের প্রাচীন প্রবাদের মতো বাতাসে বাতাসে ফিসফিসানি ভাসে, ‘চুপ থাকো, কথা বোলো না, চেপে যাও, এভাবে বলতে নেই, কী দরকার তোমার, হতে দাও, যেতে দাও…’
এবং এরপরেও কেউ জলে নেমে পড়লে পোষ্য কুমির হাতপা খুবলে নেবে, আর মালিক এসে শেষবেলা উদ্ধার করে বলবে, আহা, অমন করতে আছে! একটু বুঝেশুনে চলতে হয় না বুঝি!
হরমোন ও তার ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণের মতো জনগণ নামক গণতন্ত্রের ধারক কাঠামোটির অঙ্গে -প্রত্যঙ্গে রাজনীতির হরেক কৌশলী বিদ্যুততরঙ্গ প্রবাহিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। স্থায়ীভাবে তাদের সমস্ত ক্রিয়াকলাপে এই তথাকথিত রাজনীতিকে অপরিহার্য করে তোলা গেছে। অতএব তারা এই অদৃশ্য তরঙ্গের আজ্ঞাবহমাত্র। একটা যন্ত্রের মতো তারা কারখানা মালিকের কাঙ্খিত ফল প্রদানের জন্য শয়নে-স্বপনে-জাগরণে নিবেদিতপ্রাণ।
অগনন জনগণের এ সমুদ্র ও তার বেলাভূমিতে ছড়িয়ে আছে সংস্কৃতি, রুচি, সংস্কারের বহুধা ধারা। সেই বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য কেবল নবম শ্রেণির প্রবন্ধ রচনার মধ্যেই বিদ্যমান। আসলে নেই। একসঙ্গে এই বৈচিত্র্যময় জনপদসমূহকে ধরে রাখা হয়েছে কেবল দেশ নাম একটি আইনানুগ সাংগঠনিক বেড়া দিয়ে।
আসলে ঐক্য নেই। ভাষা, জাতি, আচার, রুচি, সংস্কৃতি— এসব নিয়ে পারস্পরিক সম্মান ও মর্যাদা টিকে আছে ভগ্নাংশসম। তাই সারা দেশে এক রাজনীতির শাসন এ দেশ স্বাধীনতা পরবর্তীতে দেখেনি। তাই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ‘অভিন্ন’ বিধি লাগু করার চেষ্টা হচ্ছে। তার বিভিন্ন ভালো দিক থাকলেও ধুরন্ধর রাজনৈতিক কৌটিল্যদের উদ্দেশ্য হলো সেই অভিন্নতার স্রোতে নিজেদের রাজনৈতিক আচারটাকেও গুলে খাইয়ে দেওয়া।
বহুত্ববাদের ভূমিতে রয়েছে মূলত তথাকথিত ধর্ম। প্রধান দু’টি ধর্মের মানুষ সহনশীলতার মুখে নুড়ো জ্বেলে দিয়ে কেবল নিজ শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে উঠে পড়ে লেগেছে! এমনকি নিজের ও পরিজনের প্রাণ বিপন্ন করেও তাঁরা তাঁর নিজ ধর্মীয় রীতি ও আচারের শ্রেষ্ঠত্ব এবং কখনও কখনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি প্রমাণের জন্য স্বনিযুক্ত হয়ে পড়ছেন। এই উদ্যোগ ও উদ্যমের পিছনে যে মদমত্ততা, তা জীবনের যেকোনো অন্য ক্ষেত্রে অভাবনীয়। নিজ ধর্ম ও তার রক্ষার প্রতি এই প্রাণাধিক টানের উৎস কী, তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। বিভিন্ন সময়ে তাঁদের আচরণ ও সংঘটিত কার্যক্রম থেকে মনে হয়েছে, তাঁর ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে তিনি সফল হলে তাঁর সমস্ত স্বধর্মীয় মানুষ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সেই শ্রেষ্ঠত্বের সুফল ভোগ করবে… এবং এই কৃতিত্বের অংশীদার হিসাবে তাঁকে কোনও অবতাররূপে সম্মান দেওয়া হবে।
এও এক লোভের উন্মাদনা।
এইখানেও রাজনীতিকরা ফসল তুলছেন। জনগণের এই ধর্মীয় উন্মত্ততাকে আদর্শ মানব কর্তব্য হিসাবে চিহ্নিত করে কৌটিল্যরা কলকাঠি নাড়ছেন বসে বসে, অম্লানবদনে। আর জম্বি হয়ে ওঠা মানুষটি ততক্ষণে বুঝে নেবে, ধর্মরক্ষার এই কালান্তক কুরুক্ষেত্রে ওই কৌটিল্যই তাঁর শ্রীকৃষ্ণ-মধুসূদন!
সব মিলেমিশে এক আপাত শান্ত ভয়াবহ অবস্থা। শুদ্ধিকরণের পথ অবরুদ্ধ, শিক্ষা প্রবেশের পথ ঘিরে ফেলা হয়েছে ধর্ম-রাজনীতির বেড়ায়। সিলেবাসে কাটাকুটি করে করে শিক্ষাকে ক্রমাগত দুর্বল করার কাজ চলছে সুচারুভাবে। মানুষের মনের গোড়ায় না পৌঁছাতে পারলে না তাদের নিস্তার আছে, না সীমিত মননশীল মানুষের। তাই রাজনীতিকরাও মননশীল মানুষদের থেকে অপূর্ব সব কৌশলে জম্বি জনগণকে দূরে রাখছে। বুদ্ধিধর, মননশীল, বিবেচনাবোধসম্পন্ন মানুষদের ক্ষেত্রেও রাজনীতিকগণ ব্যক্তির প্রবৃত্তি, ভীতি ও সামাজিক সাংসারিক স্থিতিশীলতার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে যথাযথ ওষুধ প্রয়োগ করছে। কাউকে লোভ, কাউকে ভয়, কাউকে নিশ্চিন্তির থলে ধরিয়ে তাঁদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে নিরাপদ নির্বিঘ্ন গোলঘরে।
চলছে, এভাবেই চলবে আপাতত। কোনও সুরাহার পথ এখনই আসবে না। সময়ের হাতে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া এই মুহূর্তা এইসব লেখা পাঠ করা বিবেচক মানুষদের আর কিছু করার নেই।