আস্ত একটা গাধা যে মস্ত একটা শপিংমলে ঢুকে পড়বে কোনোদিন, গাধাটা নিজেও কি জানত! শপিংমলও জানত না। সত্যি বলতে, নিরাপত্তারক্ষীরা কখনও স্বপ্নেও ভাবেননি। গাধাটা যখন গুটিগুটি পায়ে গেটের সামনে এসে দাঁড়াল, তখন তাঁরা রীতিমতো ত্রস্ত হলেন। শপিংমলের সংবিধান মনে মনে নেড়েচেড়ে ভাল করে ভাবতে শুরু করলেন যে, একটা গাধাকে আদৌ ঢুকতে দেওয়া যায় কি-না! দায়িত্বে ছিলেন দুজন পুরুষ, একজন মহিলা। তাদের হাতে একটা করে যন্ত্র, যে-যন্ত্রটা সারা শরীরে বুলিয়ে দেখে নেওয়া হয়, মানুষ মানব হওয়ার বদলে মানববোমা হয়ে উঠেছে কি-না। গাধা এই যন্ত্র সম্পর্কে কিছুই জানে না। তবু যন্ত্রটা দেখে তার মনে হল, এসব জিনিস তো মাঠেঘাটেজঙ্গলে পাওয়া যায় না। এই জন্য মাঠ-ঘাট-জঙ্গলের কোনও দাম নেই। মানুষ, মানব, মানবেতর, মানববোমা সবারই চারণভূমি। এটা কোনও কাজের কথা হল! সভ্যতার একটা ছাঁকনি থাকা উচিত। গাধার মনে হল, এটাই সে-ই জিনিস। যার ভিতর দিয়ে গলতে না-পারলে বড় সভ্য জায়গায় প্রবেশ করা যায় না।
গাধা যখন এইসব চিন্তায় মশগুল, নিরাপত্তাকর্মীরা তখনও ভাবছেন গাধাকে প্রবেশের ছাড়পত্র বিষয়ে। এ ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে তারা একটা বিন্দুতে একমত হল, তাদের কখনও এটা বলা হয়নি যে, গাধাকে শপিংমলে ঢুকতে দিয়ো না। তা ছাড়া তাদের কাজ হচ্ছে, যারা ঢুকছে তাদের থেকে কোনও বিপদের সম্ভাবনা আছে কি-না তা পরখ করে নেওয়া। গাধার ক্ষেত্রে যখন তা পাওয়া যাচ্ছে না, তখন গাধার নৈতিক অধিকার আছে শপিংমলে ঢোকার। অতএব তাঁরা গাধাকে ঢুকতে দিলেন।
গাধা ঢুকে দেখল, এ তো দারুণ আরামের একটা জায়গা। রোদ-জল নেই, গরম নেই; কিন্নর-কিন্নরীগণ ঘুরিয়া বেড়াইতেছেন। তাহাদের হাস্য-লাস্য কলরবে মুখরিত অথচ শান্ত সমাহিত একটা ঠান্ডা পৃথিবী। গাধার মনে হল, এই বুঝি স্বর্গ! গাধার স্বর্গের ধারণা খুবই ভাসা-ভাসা। সে গাধা বলেই এ বিষয়ে কেউ তাকে বুঝিয়ে কিছু বলেনি কখনও। শুধু বলেছে, সেখানে নাকি দীর্ঘশ্বাস পড়ে না। বাকিটা গাধার কল্পনা। গাধা একা কল্পনা করেছে বলা ভুল। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে গাধাদের সমষ্টিগত কল্পনার ভিতর একটা স্বর্গের ধারণা গড়ে উঠেছে, যার দেখা জীবনে কোনও গাধাই পায়নি। অতএব এই ভীষণ নতুন একটা জায়গায় এসে গাধার মনে হল, এ স্বর্গ না হয়ে যায় না! তা ছাড়া স্বর্গের সিঁড়িটাও দেখা যাচ্ছে সামনেই।
আশেপাশের সকলেই এদিকে গাধাকে দেখে বিস্মিত, হতচকিত। এই কারণে নয় যে, গাধা শপিংমলে ঢোকার অধিকার পেয়েছে। বরং এই অধিকারের দরুন যে তাঁদেরও অনেকটা নীচে নামতে হল বা হবে, এই ভেবে তাঁদের যারপরনাই আপশোস হল। আজকাল কী যে হচ্ছে! পৃথিবীতে নেই কোনও বিশুদ্ধ কৌলীন্য- এই ভেবে কেউ কেউ দ্রুত গাধার কাছ থেকে সরে গেলেন। কেউ কেউ আবার দাঁড়িয়ে ছবি-ভিডিও তুলতে লাগলেন। এর মধ্যে এক যুগল আর-এক শঙ্কার সম্ভাবনায় প্রায় আড়ষ্ট হয়ে গেল। তাদের ভয় হল, গাধাটা যদি আচমকা পায়খানা করে ফেলে, তখন কী হবে! এহ্ ম্যা গো! গাধা কি আর টয়লেট ব্যবহার করতে জানে, তা-ও আবার ওয়েস্টার্ন স্টাইল! গাধার তো নিদেন জল-টল ঢালারও অভ্যেস নেই। খোলা জায়গায় শৌচ নিয়ে যা সব সচেতনতা ছড়ানো হয়েছিল, এই যুগল নিশ্চিত যে, গাধা তার মর্ম বোঝেনি! এমনকী গাধা যে এই সংক্রান্ত অক্ষয় কুমারের সিনেমাটিও দেখেনি, সে ব্যাপারেও তারা নিশ্চিত। কেন-না তারা জানে, গাধার রুচি অত্যন্ত নিম্নমানের, চড়া দাগের। গাধার সংস্কৃতির সঙ্গে কিছুতেই একাত্ম বোধ করা যায় না বলেই, তারা বহুবার চেষ্টা করেও গাধাকে আপন ভাবতে পারেনি। নইলে গাধার এই যে উত্তরণ, এতে তাদের খুশি হওয়ারই কথা ছিল। কেননা বন্ধুমহলে তারা এই বিষয়টি নিয়েই সবথেকে সোচ্চার। তারা বলতে ভালবাসে যে, একদিন গাধার হাতে চলে যাবে এই পৃথিবীর রাশ। বহুদিনের সংগ্রামে গাধারা অনেকটা এগিয়েওছে। রাশটা পুরোপুরি না পেলেও, রাশ নির্ধারণে গাধার কিছু ভূমিকা আছে বলে গাধা মনে করে থাকে। তবে সমস্যা এটাই যে, গাধার এই জাগরণের কথা লিখতে-পড়তে-বলতে যত ভাল লাগে, গাধার পাশে বসতে ততটাই অস্বস্তি লাগে। আর তাই কিছুতেই নিজেদেরকে গাধা করে তোলা যায় না বলেই মানুষ শপিংমলে খানিক ঘুরে বেড়ায়। আর সেখানেই নাকি গাধা এসে হাজির! আদর্শগত এই সংকটটার মোকাবিলা যে ঠিক কীভাবে করা সম্ভব, তা এই যুগল বুঝতে পারল না।
তবে কাছাকাছি একটা সংকট থেকে খুব সহজেই নিষ্কৃতি পেয়ে গেল দুই যুবক। তারা রাজনীতি করে। আপাতত একটি দলে কর্মরত। দলে থেকে কাজ না-করতে পারলে অন্য দলে চলে যাবে। এ বিষয়ে তাদের কোনও দ্বিধা নেই। তাদের বন্ধুরা কর্পোরেট কোম্পানিগুলোতে এই কাজই করে থাকে। বন্ধুদের তা-ও মুনলাইটিং-এর সমস্যা আছে, এই দুই যুবকের তা-ও নেই। এদেরই একজন বলল, আচ্ছা গাধা তো কিছু কেনাকাটা করতে পারবে না, সে ক্ষমতা ওর নেই; তাহলে কি গাধার এই শপিংমলে ঢোকা উচিত? অন্যজন বলল, কিনতে পারবে না, সেটা ঠিক। তবে চাহিদা ঠিক রাখার জন্য গাধার হাত পর্যন্ত টাকা পৌঁছানো উচিত ছিল। সেই টাকা মাঝপথে ইঁদুরে খেয়ে নিলে, গাধার আর কী দোষ! কিন্তু শুধু কিনতে পারবে না বলেই গাধাকে নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে, এটা সংবিধানবিরোধী কাজ। প্রথমজন সংবিধানে কী লেখা আছে তা জানে না বটে, তবে যে প্রশ্ন তার মনে ঘাই দিয়েছে, তা না বলে পারল না,- গাধাকে কি আদৌ নাগরিক বলা যায়? উত্তর, কেনই বা বলা যাবে না! কথার পিঠে প্রশ্ন, গাধা কি ভোট দেয়? অন্যজন তখন হেসে বলল, এ আর এমন বড় কথা কী! গাধার নামে একটা ভোটার কার্ড করে দিলেই হবে। ধরা যাক, ওর নাম দেওয়া হল- গাধা সরকার। পিতা- গাধা সরকার। গাধা যেহেতু চরে বেড়ায় ঠিকানাটা শূন্যস্থান হিসাবে রাখা হবে, ভোটের সময় যেমন দরকার তেমন একটা ওয়ার্ড কি মৌজার নাম বসিয়ে দিলেই হবে। আর, গাধাকে যে ভোট দিতেই হবে, তার কি মানে আছে! ভোটার কার্ড থাকলেই হবে, ভোট নয় তারাই দিয়ে দেবে! এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে দুজনেই খুব খুশি হল। এবং মনে হল, গাধাকে চরিবার এই যে অধিকার তারা দিয়ে দিল, এর মধ্যে দিয়েই একটা মস্ত সম্ভাবনার দরজা খুলে গেল। সম্ভাবনাটা যে ঠিক কী, তা এখনই স্পষ্ট না হলেও, সম্ভাবনা আছে। এই সম্ভাবনার কথা ফ্লেক্স করে শহরে প্রচার করা দরকার। এমত সিদ্ধান্তে তারা গাধার পাশে দাঁড়িয়ে ঝটপট দুটো ভাল ছবি তুলে নিল। ছবিদুটো দেখতে দেখতে ভাবল, ফ্লেক্সে লিখে দেবে, মানুষ আমাদের ভিত্তি, গাধা আমাদের ভবিষ্যৎ।
গাধা ততক্ষণে মল-টি ঘুরে দেখছে। এমন আজব জায়গায় সে যে কখনও আসবে, তা তো ভাবেনি। সে দেখছে গাছের পাতার মতো জামার পর জামা সাজানো আছে। জিনিসের পর জিনিস। দামি থেকে আরও দামি। প্রথমে তার অবাক লাগছিল। মনে হচ্ছিল, এসবের দরকার কী! একটু পরে বুঝতে পারল, কেন মানুষ আসলে শ্রেষ্ঠ জীব। গাধাদের মতো সকলেই এক খাবার খাবে, এক জিনিস পরবে (লেখক কতখানি গাধা ভাবুন! গাধা কি পোশাক পরতে পারে! লেখকের অপরিণত বোধ তুলে ধরে ফেসবুকে আচ্ছা করে বকে দেওয়া উচিত), একভাবে চলবে- এ-টা একটা জীবন হল! উলটে মানুষ কী করেছে? একটা মনোরম জায়গা তৈরি করে সকলকে করেছে উদার আহ্বান। তারপর একে অন্যকে দেখিয়ে জানান দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে যে, কে কত দামি মানুষ! কার ক্রয়ক্ষমতা কতখানি! কার ক্রেডিট কার্ডের আপার লিমিট কতদূর! হাতের প্যাকেটগুলোয় ব্র্যান্ডের নাম লেখা, সেদিকে সকলেই আড়চোখে তাকাবে! বোঝা যাবে, কোটির কাছে লাখ গরিব, লাখের কাছে হাজার। অঙ্কই ঠিক করে দেবে বর্ণ ও বিভাজন। তবু সকলেই এক সিঁড়ি দিয়ে উঠবে এবং নামবে। এই অভুতপূর্ব সাম্য ও অসাম্যের যুগলবন্দি মানুষ ছাড়া আর কেউ ভাবতে পারে না! গাধা সেইসব দেখে আর মানুষের তারিফ করে! এক জায়গায় দেখে, অনেক বই বিক্রি হচ্ছে। এদিকে গাধার তো অক্ষরজ্ঞান হয়নি। সে ছবি দেখে চিনতে পারে, এর মধ্যে অনেকগুলো ধর্মীয় বইপত্র আছে। আর তখনই গাধার মনে সেই পুরনো প্রশ্নটা জেগে ওঠে। একজন পরম ধার্মিক গাধার কি সমাজে গ্রহণযোগ্যতা বেশি হতে পারে! নাকি বকধার্মিক অথচ ধনী গাধা সেই জায়গা দখল করবে! গাধা এই নিয়ে অনেক ভেবেছে, এবং সেইহেতু ধর্মাচরণের যৌক্তিকতা নিয়ে সে অনেকবার প্রশ্নও তুলতে চেয়েছে। কিন্তু গাধা এটা খেয়াল করেনি যে, ধর্মকে উৎখাত করা নয়, যে পরিস্থিতি গাধাকে ধর্মের কাছে যেতে বাধ্য করে, সেই পরিস্থিতিটা দূর করা জরুরি ছিল। ফলত গাধার নিজের প্রশ্ন আর ধর্মই নেশার সাবধানবাণী মিলেমিশে এমন এক দ্বন্দ্বময় জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয় যে, গাধা মনে মনে বইয়ের প্রচ্ছদে দেখা সেই ছবিগুলিকে প্রণাম করে এগিয়ে যেতে থাকে।
গাধার খবরটা ততক্ষণে রাষ্ট্র হয়ে গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ, ভিডিও, রিলের ছড়াছড়ি। সকলেই গাধায় এমন আক্রান্ত হয়ে পড়ল যে, নিউজ চ্যানেলের কর্তা-কর্ত্রীরা সাংবাদিকদের ধমক দিয়ে বললেন, এতবড় খবরটা এখনও ধরানো হয়নি কেন! সারাদিন নেতারা কাকে নিয়ে কী কু-কথা বলেছে, আর কোন নায়িকার ক্লিভেজ দেখা গেছে এই নিয়ে খবর করতে করতে কর্মীরা নাকি নিউজ সেন্স হারিয়ে গাধা হয়ে পড়েছে। অতএব কর্তাব্যক্তিরা নিজেরাই ভরদুপুরে কোট পরে ক্যামেরার সামনে চলে এলেন গাধা বিষয়ে বিস্তারিত বলতে। সংবাদপত্র ঠিক করে নিল, মোট চারটে দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি ধরা হবে,- এক, সাধারণ একটা খবর। দুই, গাধার দিক থেকে মুড কপি, তিন, মানুষের দিক থেকে মুড কপি, চার, গণতন্ত্রের দিক থেকে বিশ্লেষণ। অর্থাৎ, চলতি কাঠামোয় গাধাকে কতটা অ্যাকোমডেট করে নেওয়া সম্ভব হল, ‘গণ’-এর ধারনা এই ঘটনার পর আরও প্রসারিত হল কি-না, এ বিষয়ে ডিটেইলে আলোচনা হবে সম্পাদকীয় পাতায়। সেই সঙ্গে ঠিক হল, নৃত্যশিল্পী, অভিনেত্রী, শিক্ষাবিদ আর জনপ্রিয় ইউটিউবারদেরও মতামত নিয়ে নেওয়া হবে এই বিষয়ে। এদিকে টিভিতে খবর দেখে শপিংমলের গাধা দেখতে তখন মলের বাইরে বহু লোক। যেন মেলা বসেছে! মুড়ি-চপ, জল, সিগারেট, কেক-বিস্কুট-চা ফেরি করেন যাঁরা, তাঁরাও চলে এসেছেন। বেচাকেনা ভালই হচ্ছে। প্রশাসন ভাবছে, ভিড় বেশি হলে শেষে না বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে খবর দিতে হয়! গাধা নিজে কিছু কেনাকাটা করতে না পারলেও, একটা গোটা দিনের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে দারুণ ভূমিকা নিল। গাধা বলেই অবশ্য সে নিজের এই কৃতিত্বটা বুঝতে পারল না।
বেশ ঘোরাঘুরির পর গাধাটার মনে হল, ঢের হয়েছে। এবার বেরিয়ে পড়া যাক। গাধা এবার নামতে শুরু করে। তারপর যে পথ দিয়ে এসেছিল, সে পথ দিয়ে ধীরে ধীরে বাইরে বেরিয়ে আসে। তাকে বাইরে দেখেই জনতা সোল্লাসে চেঁচিয়ে ওঠে, ওই যে গাধা! যেন এর আগে গাধা দেখেনি কেউ! অথবা দেখেছে। কিন্তু এ-গাধা বিশেষ গাধা। এ-গাধা প্রমাণ করে দিয়েছে, শপিংমল গাধাদেরও। এ-গাধা জাগরণ আর উত্তরণের। এ-গাধা আবহমানের হয়েও আধুনিক। ফলত এই গাধাকে দেখার মাহাত্ম্য আলাদা হবেই। এদিকে গাধাটা এত ভিড় দেখে একটু হকচকিয়ে যায়। ভিড়টা যেন তাকে চারদিক থেকে ঘিরে আছে। কোন পথে যে সে এই চক্র থেকে বেরোবে, ভাবতে থাকে। আর ঠিক তখনই ভিড়ের ভিতর থেকে একটা লোক বেরিয়ে আসে। গাধাটাকে সে ‘শুয়ারের বাচ্চা’ বলে গাল দেয়। তারপর একটা দড়ি তার গলায় পরিয়ে দিয়ে হাতের বাড়িটা গাধার পাছায় সপাটে কষিয়ে দেয়। গাধাটা চিনতে পারে, এ-ই তার মালিক। যার চোখে ধুলো দিয়ে আজ সে সারাদিন ফুর্তি করেছে। একটু আগে নিজেকে তার বেশ উন্নত একটা জানোয়ার বলে মনে হচ্ছিল, পাছায় বাড়ি পড়া মাত্র সে টের পেল, তার খুব খিদে পেয়েছে। কেন-না সারাদিন তার কিছু খাওয়া হয়নি। অনেকে তার ছবি তুলেছে বটে, কিন্তু কেউ তাকে খেতে দেয়নি। যন্ত্রণা আর খিদেতে গাধার তখন প্রাণ যাই যাই দশা। গাধার মালিকের রুদ্রমূর্তি দেখে খোরাক-দেখা ভিড়ও ততক্ষণে সরতে শুরু করেছে। মালিক গাধাকে নিয়ে পথ করে বেরিয়ে যাচ্ছে। রাগে আরও একবার কষিয়ে বাড়ি মেরেছে গাধার পিঠে। গাধার আশা ছিল, মিডিয়া, নেতা, সমাজসচেতন যুবক-যুবতী যারা এতক্ষণ তাকে নিয়ে মেতে ছিল, কেউ একজন এগিয়ে এসে এর প্রতিবাদ করবে। গাধার আশা গাধার মনেই রয়ে গেল। যারা মজা দেখতে এসেছিল, তারা চলে গেল। অল্প কয়েকজন যারা দাঁড়িয়ে ছিল, তারা বলল, গাধাটার প্রতিবাদ করা উচিত ছিল। একবার যদি ওই দড়িটা ছিঁড়ে ফেলতে পারত, তাহলে আজ নতুন একটা কিছু ঘটত। কিন্তু নতুন কিছু ঘটিয়ে তোলার মতো ক্ষমতা গাধার আর তখন ছিল না। কেননা শরীরে যন্ত্রণা আর খিদে। তার উপর মালিক বলে দিয়েছে, আগামী বারো ঘণ্টা তার খাওয়া বন্ধ। টানা কাজ করলে তবে খাবার মিলবে। এই পরিস্থিতিতে নতুন কিছু আর ঘটিয়ে তোলা যায় না। সে মুখ বুঝে ওই চত্বর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে থাকে। আর তার এই নীরবতায় বিরক্ত হয়ে জনাকয় তরুণ হতাশ হয়ে বলে, গাধার দ্বারা আসলে শেষমেশ কিস্যু হয়ে ওঠে না। বলে তারা শপিংমলের দিকেই পা বাড়ায়। গাধাটার প্রতি বিন্দুমাত্র মনোযোগ দেওয়ার দরকার আছে বলে আর তারা মনে করে না। করলে জানত, খিদেপেটে মার খেয়ে চলে যেতে যেতে গাধা শুধু অস্ফুটে বলেছিল, বোকার মরণ!