================================================================

================================================================
বোবার শত্রু নেই সবাই জানে। তবে সময় বিশেষে কেউ বোবা হলে অনিবার্যভাবেই তার টিটকিরি দাতা থাকে। বোবা কখন কোন পরিস্থিতিতে শেষ কথাটি বলেছিল তারপর কেন আর বলছে না পাঁজি পঞ্জিকা দেখে আবার কবে বলবে এসব ভেবে ভেবে সরব মানুষদের রাতের ঘুম হারাম। সরব মানুষের সেই আত্মবিশ্বাস কোথায় গেল যে চিৎকারটা ঠিকঠাক ডেসিবেলের হলে তার একার কন্ঠস্বরই কাফি ?
এতসব বলাবলির বিষয় অবশ্যই দেশ এবং দেশের মানুষ । তাদের সাথে আমার সম্পর্ক এবং বন্ধন । যা পারস্পরিক নির্ভরশীল। এখন কী দিয়ে জাজ করবেন একটা দেশকে ? দেশের মানুষকে ? হ্যাপিনেস ইনডেক্স? বিশ্ব ক্ষুধা সূচক ? জি ডি পি ? বিদেশী মুদ্রার ভান্ডার ? মারণাস্ত্র ভান্ডার ? যুদ্ধাস্ত্র এবং পারমানবিক বোমা ? চয়েস আপনা আপনা |
তার আগে আসুন আমরা ঠিক করে নিই কোন কোন বিষয়ে কথা বলা আমাদের পক্ষে স্বস্তিজনক আর কোন কোন বিষয়ে মৌন থাকলে ক্ষমতাশীন তুষ্ট থাকবে | আমরা ঠিক করে নিই আমরা কার জন্য বলব ? আমাদের মত সাধারণ মানুষের নাকি নকল করব ক্ষমতার ভাষা ? তার ওপর নির্ভর করবে আমার ভাষ্য | কারণ আমাদের ইন্টারেস্ট আলাদা |
সম্প্রতি এক বাংলাদেশী বন্ধুর সাথে আলোচনা হচ্ছিল। বন্ধু তার পোস্টে জানাচ্ছেন 2014 র পর বহু বাংলাদেশী ভারতে এসেছেন পাকাপাকিভাবে রয়ে গেছেন এবং তারা হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির একনিষ্ঠ ছাত্র হয়ে এদেশের হিন্দুত্ববাদী সরকারের প্রচার যন্ত্রে পরিণত হয়েছেন। পূর্বতন ভারতীয়দের থেকেও এরা উগ্র হিন্দুত্ববাদী হয়ে উঠেছেন। এই প্রবণতা দুটো ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। এদেশে পাকাপাকি ভাবে থাকতে গেলে অনুপ্রবেশকারী বিশাল অংশের একটা মানুষকে অনেক বেশি আনুগত্য প্রদর্শনের প্রয়োজন পড়ে এবং এমন একটা সময় যখন ভারত বিশ্বের জনবহুলতম দেশ। সম্প্রতি চীনকে টেক্কা দিয়েছে জনসংখ্যায়। যখন এ দেশের ৮০ কোটির উপর মানুষ পেট ভরে খেতে পায় না যখন হ্যাপিনেস ইনডেক্স তলানিতে ঠেকেছে যখন বেকারত্ব গত ৪০ বছরের সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়েছে। সেই সময় এই অনুপ্রবেশ ফ্যাসিস্টদের ভোট ব্যাংকে পজিটিভ প্রভাব ফেললেও দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার অন্তরায় যেমন তেমনি এদের উগ্র হিন্দুত্ব এদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে বিপদজনক হয়ে উঠছে।
যে কোন ফ্যাসিস্ট সরকারের হাতে প্রথমেই মানুষের মৌলিক অধিকারগুলি খর্ব হয়। খাদ্য বস্ত্র শিক্ষা শুধু নয় বাসস্থান বা স্বাধীন ধর্মাচরণের অধিকার পর্যন্ত। তখন পেগাসাসের মত স্পাই অ্যাপ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয় মানুষের ভাবনা চিন্তা। আপনি প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রীয় স্ক্যানারের নিচে রয়েছেন। কি খাচ্ছেন পরছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় কি লিখছেন সবকিছু এআই দিয়ে মাপছে। আমাদের জনপ্রিয় সোসাল মাধ্যম গুলি সরকার বিরোধী যে কোন মন্তব্য ছবি প্রকাশের উপর রেস্ট্রিকশন নোটিশ দেয়। ভারতীয় উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মাথায় যাদের বসানো হয় তাদের একমাত্র ক্রাইটেরিয়া তারা সরকার অনুগত কিনা। অধুনা এদেশের ইতিহাস রাষ্ট্রবিজ্ঞান সাহিত্য জীবন বিজ্ঞান পদার্থবিজ্ঞান সবকিছুর সিলেবাসের উপর অযাচিত হস্তক্ষেপ নেমে এসেছে। যে আধুনিক বিজ্ঞান চেতনার প্রসারে একসময় মনীষীরা লড়াই করে গেছেন এখন সরকার ঠিক তার উল্টো পথে হাঁটা শুরু করেছে। ভারতীয় সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার নামে মানুষকে কুসংস্কার অপবিজ্ঞান অন্ধবিশ্বাসের দিকে নিয়ে যাবার একটা চেষ্টা শুরু হয়েছে। এমনকি কোথাও কোথাও দাবী উঠেছে সতীদাহ প্রথা ফিরিয়ে আনার। নারী নির্যাতন হয়ে উঠেছে বিরোধী দমনের প্রধান হাতিয়ার। আজকের মণিপুর হরিয়ানা দিল্লীর দাঙ্গা পূর্বের গুজরাত দাঙ্গার থেকে চরিত্রগত ভাবে পৃথক হলেও এর বলি কিন্ত এক । নারী এবং শিশু । সেদিনের বিলকিস বানো বা আসিফা সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধি । মণিপুরের কুকি মহিলারা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি । বিষয়টা ধর্ম বা জমি দখল যাই হোক সফট টার্গেট এরাই । আরো ভয়াবহ ধর্ষকের সমর্থনে রাজনৈতিক দলের মিছিল। এরাজ্যে আবার ধর্ষণ নাকি “জ্বর জারির মত ঘটনা । শরীর থাকলে নাকি হবেই। ” “ছোট খাট এইসব ঘটনার” জন্য আবার ধর্ষিতার বয়স অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ ধার্য করা আছে ।
সম্প্রতি করা এক সমীক্ষায় ৮২ শতাংশ সাংবাদিক এই অভিমত প্রকাশ করেছেন যে সংবাদপত্রের মালিকরা চান তারা কেবলমাত্র সরকারের পক্ষেই লিখুন। এই কথায় সত্যতা আছে আমরা জানি যখন আরবান নকশাল তকমা দিয়ে একের পর এক সাংবাদিক বা সমাজকর্মীকে অন্তরীণ করে রাখা হয় সামাজিক ন্যায়ের জন্য মুখ খোলার অপরাধে। যখন উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা হত্যা করে একে একে যুক্তিবাদী দাভোলকর পানেসর বা গৌরী লঙ্কেশের মতো ব্যক্তিত্বকে। সংবাদপত্রের কন্ঠরোধে পিছিয়ে নেই এই রাজ্যও | মনে পড়ে সেই ফতোয়া ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল লাইব্রেরিতে কোন সংবাদপত্র রাখা যাবে তার তালিকা? মনে পড়ে বিরোধীদের ১০ বছর মুখে লেলোটেপ লাগিয়ে পাখার হুমকি? বিজ্ঞাপন পেতে হলে সরকার বিরোধীতা মৈব নৈব চ | বন্ধ করিয়ে দেওয়া হয়েছে এক বর্ষীয়ান সাংবাদিকের কলাম উত্তরবঙ্গ থেকে প্রকাশিত একটি সংবাদপত্রে | সেই এক সরকারী বিজ্ঞাপনের গল্পে | তাহলে আমরা সংবাদপত্রে কি পড়ি ? সরকারী ভাষ্য | গণতন্ত্রের চতুর্থস্তম্ভ ভেঙে পড়েছে কবেই | ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় পরিহাস হল এই গণতন্ত্রের সঠিক সংজ্ঞা টাই সিংহভাগ মানুষ মানেন না। নেতারা মানেন না আর জনগণ জানেন না। নির্বাচনী ব্যবস্থা ও দুর্নীতিমুক্ত নয়। কেন্দ্ররাজ্য উভয় ক্ষেত্রেই। ডিসটরশনের নানা অভিযোগ ওঠে। যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে জনসাধারণের হাতে শাসক নির্বাচনের ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়েছিল সংবিধান বলে সেই উদ্দেশ্য ধর্ষিত হয়েছে। তার ওপর আছে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ঘুষের বিনিময়ে প্রলোভনের বিনিময়ে দলবদল। সুতরাং নির্বাচকদের মতামতের কোন মূল্য নেই। করাপশন এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে রাজনীতি এখন অশিক্ষিতের পেশা। যেকোনো ধরনের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে পারলে চৌদ্দ পুরুষের বসে খাওয়ার ব্যবস্থা পাকা করে ফেলতে পারে অনেকেই।
হতাশাগ্রস্থ যুব সমাজ ক্রমশ ড্রাগের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডে। আমাদের রাজ্যে যুবসমাজের সামনে এই মুহূর্তে কোন আলো নেই। শিল্প তাড়ানো দিয়ে ইনিংস শুরু করে যে ভয়াবহ দুর্নীতি গ্রাস করেছে শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানকে ইতিহাসে তা একটা কলঙ্কিত অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। আর কোন রাজ্যে এরকম গোটা শিক্ষা দপ্তর দুর্নীতির দায়ে জেলে চলে গেছে কিনা জানা নেই। এসএসসি পিএসসির মতো কমিশন গুলো দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। ঘুষের বিনিময়ে যেভাবে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়া হয়েছে তা অভূতপূর্ব। সুপ্রিম কোর্টের একটি মন্তব্য এই প্রসঙ্গে প্রণিধানযোগ্য । “একমাত্র ভগবানই এই রাজ্যকে বাঁচাতে পারে। ” চতুর্দিকে দুর্নীতি এবং অবক্ষয় দেখতে দেখতে এটাই এখন নিও নরমাল হয়ে গেছে। আমরা ভুলেই গেছি আদর্শ অবস্থা বলে কিছু হতে পারে। আমাদের ঠগ বাছতে গাঁ উজার হয়ে যায় । আমরা যেন আর বিচলিত হই না নতুন কোন অন্যায়-অবিচার চুরি দুর্নীতি ইত্যাদি দেখলে। কেউ সৎ বা দুর্নীতিমুক্ত হলে সেটাই খবর। একটা কথা আছে যে মানুষ তার যোগ্য শাসক নির্বাচন করে। দোষ আসলে আমাদেরই। আমরা যদি দুর্নীতিগ্রস্ত অসৎ দাঙ্গাবাজ শাসক কে নির্বাচিত না করতাম তাহলেই রাজনীতি কলুষ মুক্ত হতো। কিন্তু তা কখনোই হয় না। ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য আমরা বৃহৎ এর কথা ভাবিনি।
এদেশে নির্বাচনের আগে নিয়মিতভাবে সম্প্রদায়িক দাঙ্গা বা যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়। এর পুরোটাই ম্যান মেড । মানুষের সেন্টিমেন্টে সুড়সুড়ি দিয়ে কখনো জিগির তোলা হয় ধর্মান্ধতার কখনো উগ্র জাতীয়তাবাদ এর। পেছনে চলে যায় একটি জনকল্যাণকামী রাষ্ট্রের যাবতীয় উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য। যে কারণে গণপ্রজাতন্ত্রী ভারতে প্রবর্তন করা হয়েছিল সংসদীয় গণতন্ত্র সেই কারণগুলি চরম অবহেলিত হতে থাকে। মানুষকে ধর্মান্ধতা এবং উগ্র জাতীয়তাবাদের মদে এমন ভাবে জারিত করে রাখা হয় যে তারা কোনদিন প্রশ্নই করে না কেন একটি জনগণের দ্বারা সরকার চেষ্টা করবে না কূটনৈতিকভাবে বৈদেশিক সম্পর্ককে সফলভাবে প্রয়োগ করতে। কেন একটি সরকারের একমাত্র উদ্দেশ্য হবে মন্দির মূর্তিস্হাপন সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ঘৃণা ছড়ানো বেসরকারিকরণ নানা ছুতোয় জনগণকে অর্থনৈতিকভাবে শোষণ বানিয়াদের তোষণ দেশের সম্পদ লুটে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিদেশে পালানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া ? প্রশ্ন করছি না । নিজের কোটরে সম্পৃক্ত থাকতে চাইছি । নিজের শান্তি বিঘ্নিত করতে চাইছিনা। দেশ দশের ভাবনা অপরের জন্য তুলে রাখছি। এই করতে করতে ভালনারেবল করে তুলছি আমাদের ভবিষ্যত। আমাদের সন্তানদের দাঁড় করিয়ে দিচ্ছি ভয়াবহ এক সঙ্কটজনক এবং হতাশাজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি । আমার দেশ একদিকে খাতায় কলমে ধনী হবে কিন্ত সেই সম্পদ জমা হয়েছে ৭ শতাংশ ব্যবসায়ীদের হাতে ।
করোনা পিরিয়ড ভয়ঙ্করভাবে দেখিয়েছে রাষ্ট্রের নৃশংশতা | কয়েক কোটি পরিযায়ী শ্রমিকের এক্সোডাস মনে করিয়ে দিয়েছে প্রবীণদের , দেশভাগ পরবর্তী মানুষের দুর্গতি | তুলনায় নবীনরা কর্মহীন হয়ে ভয়াবহ দিন দেখেছেন | অসুখ নিয়ে ব্যবসা করেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্রের মদতে । ক্যাপিটালিস্ট রাষ্ট্রের কতিপয় মানুষ ফুলেফেঁপে উঠেছে এই পিরিয়ডেই। কারোর পৌষমাস কারোর সর্বনাশ প্রবাদের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে।
বুদ্ধিজীবী কথাটার মধ্যেই একটা গিমিক আছে। কি দিয়ে আপনি ঠিক করবেন একজন বুদ্ধিজীবির বৈশিষ্ট্য। সাধারণভাবে বলা যায় যে বুদ্ধি বেচে খায় অর্থাৎ কিছু পড়াশোনা করে ডিগ্রী অর্জন করে শিল্পসাহিত্য কলা ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করে সেটা ভাঙিয়ে উপার্জন করে। তার সাথে সামাজিক দায়বদ্ধতার কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তাকিয়ে থাকি এই সমস্ত সেলিব্রেটিদের মুখের দিকে কখন তারা কৃপা বর্ষণ করবেন দুই একটি নিন্দা বাক্য নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপিত হবে । আর শাসকও সেটা জানে বলেই বিভিন্ন কমিটির মাথায় তাদের বসিয়ে ভাতা বা পুরস্কার প্রদান করে মাথা কিনে রাখে। আসলে আমরা ধরে নিয়ে এরা প্রভাবশালী। এদের নিন্দা বা প্রশংসায় আরো অনেকে প্রভাবিত হয়। কিন্তু আমরা ভরসা করিনা সাধারণ মানুষের বিচার বোধের ওপর। তার দেখার দৃষ্টির স্বচ্ছতার উপর। এটা মনে হয় আমাদের একটা বড় ভুল। সেই যে কথা আছে না ” যারে তুমি নিচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নিচে / পশ্চাতে রাখিছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।” সুতরাং কোন দেশ জাতি সমাজ সত্যি সত্যি অগ্রগতি করতে চাইলে উন্নয়ন উন্নতি করতে চাইলে সামগ্রিক জনজাতির ভাবনাকে গুরুত্ব দিতে হবে। এবং তার জন্য অবশ্যই আমাদের সর্বাগ্রে জোর দিতে হবে জনশিক্ষার ওপরে । একটি স্বাধীন সার্বভৌম জনগণতান্রিক প্রজাতন্ত্রের সর্বোত্তম সম্পদ এর জনগণই তো ।