জীবনসংগীত গাছ দেখলে মনে হয়౼ তার শিকড়সমুদ্র যেন আমার ভিতরেই জেগে আছে౼ তার গভীরতা কেন্দ্র ধরে আছে, গোপনে গোপনে; ফুল পাতা আর মঞ্জরিরা যেন আমার প্রাণের গান, আমারই অন্তরের বাগান। গাছেরা কি আমার ভাই, যে সকল সবুজ উপস্থিতি দিয়ে আমাকে রক্ষা করে চলে, আর আমি কি তাদের হারানো বোন! ভাইবোনের এ জগতে বাতাসেরা বাজায় সুর আমরা ভাইবোন সেই পথের ধ্বনিতে নাচি আর গাই , এবং প্রবুদ্ধ হতে হতে একটি জীবনসংগীত হয়ে যাই! নদী ও সমুদ্র নদীটির নিকটে হারানো স্তব্ধতা রয়েছে মৃত্যুর পর আমি এই নদীটির ধারে এসে দাঁড়াতে চাই, তার নিস্তব্ধ ধ্বনির ভিতর আমি পেতে চাই মরজগতের ভাষা। নদীর কাছে গেলে মনের ভিতর সমুদ্রসম্ভব ব্যাপকতা আসে সমুদ্র আমাকে ডাকে, অনুস্বরে, গভীর পরশে। এ জীবনে নদী আছে, সমুদ্রও আছে, জীবনের ভিতর তাদের আমি বয়ে বেড়াই౼ তাদের কলরোলে মুখরিত হয় আমার জলবোধ, গান গায় সময় ও শূন্যতা౼ নড়ে ওঠে জীবনের বিন্দু আর বৃত্তের মহাল; নদী ও সমুদ্র আমাকে এক হারানো পৃথিবীর কথা বলে, বলে, এ জগৎ স্বপ্নের আধার শ্বাসমূল জীবন যা কিছুই পল্লবিত তাকে শূন্যে রেখে অস্তিত্বকে মাটির গভীরে পুঁতে দিই, এভাবেই আকাশবোধ, মহাশূন্যতার খেলা চলে অহরহ, আমার জীবনে। হাওয়াঘর আর দেহের দূরত্বে বাসা বাঁধে অজানা চড়ুই। একদিন তারা উড়ে চলে যাবে জীবন পেরিয়ে কোনো নির্জন মৃত্তিকার আশ্রয়ে যেখানে শ্বাসমূল আকাশের দিকে মুখ করে অবশেষে নিখিলকে ডেকে বলে: আয় আয় আয় জীবন মাটির গান, সুরগুলো গুল্ম হয়ে, ঝোপ হয়ে, পাতা হয়ে, মর্মরের দিকে উড়ে চলে যায় পাখিরা এসব বোঝে না, তারা শুধু শূন্য থেকে উড়ে এসে পুনরায় শূন্য হয়ে শূন্যে চলে যায় বিস্ময়চিহ্নিত একটি অনুদিত পথে হাঁটতে হাঁটতেই এসে পড়লাম গুপ্ত কোনো জগৎবিন্দুতে, অব্যক্তের এই ক্ষণ, গূঢ় কোনো বেদনার-পাখি অস্ফুট জীবন নিয়ে এইখানে লীলাময়, এইখানে বেলাশেষে, এইখানে... লাস্য করে ওঠে! জীবনের পথগুলো অজানাস্তম্ভিত, একদিন এই বোধে চলাচল অনন্তধাবিত, স্তব্ধ, অধরাও হয়ে পড়ে চিন্তামণি তার, এইসব ভাবনার তরুণিমা, এইসব ভাবালু অস্তিত্ব শুধু আকাশের দিকে চেয়ে অবশেষে, দূরে যেতে চায় এ জীবন, বাক্হীন বিস্ময়চিহ্নিত, দূরবেলা স্মৃতি হয়ে যায়।
Facebook Comments Box