তুমি এসো আমি ত্রস্ত ট্র্যাফিকের মতো পথ গোছাই অপেক্ষা ফুরানোর আগে তুমি এসো। আত্মবিস্মৃত হয়ে কত মানুষ ঘরছাড়া হল! অপরিমেয় শুশ্রূষা প্রয়োজন তাদের। তবু আছি এই পথের দিকে তাকিয়ে আমি আত্মবিস্মৃত হবার আগে তুমি এসো। চারদিকে নোনা হাওয়া, মৃত্যু মৃত্যু গন্ধ আমি পথ গোছাই- জলাভূমি থেকে দুর্গম পাহাড় তোমার শ্বাসে আলোড়ন উঠে অরণ্যে অরণ্যের সবুজে ¬¬বিগলিত হও তুমি আমি ঠিক সেতু হয়ে থাকি- তুমি পার হও হঠকারিতা, দ্বিধা, কম্পন প্রতিবার। আমি নিজেকে গোছাই, জেনেও তুমি নিমিষে এলোমেলো করে দিতে পারো। গুছিয়ে রাখি একরোখা পথ অসম্ভবের আড়াল ভেঙ্গে তবু এসো। ভালবাসা এই অসম্পূর্ণ ভালবাসা সম্পূর্ণ জীবন্ত যার হাত ধরে দিন গড়িয়ে রাত উধাও। আয়না জেনে তার সামনে দাঁড়াই পরখ করি নিজের বয়স বেলুনের মতো মৃদু চুপসে যেতে থাকা… এতোসব দুঃস্বপ্নের মধ্যে এই অসম্পূর্ণ ভালবাসা সম্পূর্ণ আলো। নদী আর সম্পর্ক বয়ে যায় সমান্তরালে মহামারী এড়িয়ে ভ্রুক্ষেপহীন স্বতঃস্ফূর্ততা হারালে কেবল সামান্যে জঞ্জাল জমে। দৃশ্যমান আইসোলেশন জানে- পৃথিবী আসলে আইসোলেটেড আর নৈকট্য ভূরাজনীতি এই অক্সিজেন সঙ্কটে জানি অসম্পূর্ণ আয়ুতে ভালবাসা সম্পূর্ণ শ্বাস। ভয় তোমার স্বপ্ন ভাঙার কাঁচ আমার হৃদয়ে গেঁথে যায় আমার স্বপ্নরা দ্বিমুখী তোলপাড়ে গর্জে উঠলে চুপ মেরে বসে থাকি নিজের ভেতর। এ পেন্ডুলাম জীবনে স্থিরতা এক কল্পিত ধারণা তাই ছুটি দেহ থেকে দেহান্তরে। তোমার কষ্ট আমায় শ্বাসরুদ্ধ করে… আমার কষ্ট আমায় শ্বাসরুদ্ধ করে… মনুষ্যস্বভাব কেন ভালবাসাকেই বেশি ভয় পায় কেন ছেড়ে দিয়ে ছাড়ে না কিছুই ভাবতেই তোমার স্বপ্ন ভাঙার কাঁচ আমার মগজ বিচূর্ণ করে। আলো লুকিয়ে রাখি, তাকে ভয় লাগে আমার। স্বপ্ন লুকিয়ে রাখি, তাকে ভয় লাগে আমার। নিজেকে লুকিয়ে রাখি, নিজেকে ভয় লাগে আমার। হে শালিখ প্রতারক হৃদয়ে শুশ্রূষা থাকে না কোন হৃদয়ের ধার-দেনা চুকিয়ে হে শালিখ! তোমার ডানার কাছে তাই পড়ে থাকে বিপন্ন সময়, বাস্পায়িত রঙ। জানে না হারিয়েছে কি জানে নাতো পেয়েছিল কি! নাকি পায়নি অকুণ্ঠ অপেক্ষা ভাণ্ডার চাপা পড়া মায়া, প্রেম-অপ্রেম। পথের কাছে কোন ঘর দাড়ি-বিস্ময় নয় পেরিয়ে যাওয়া তার অনিন্দ্য স্বভাব! হে ভারবাহী শালিখ! উড়াউড়ি নিয়ে হও প্রশ্নহীন থাকো নিরুত্তাপ চির শীতকাল। কুয়াশা আসে-যায়, ধূমায়িত কফির চুমুক এই আয়ু, পৃথিবীর বন্দর ছুঁয়ে ছুঁয়ে নোঙরের দীর্ঘশ্বাস লেখে। হয়তো অধরা থেকে যাবে অনুতাপ যে জানে না হারিয়েছে কী, সে আসলে হারায় নিজেকে। শীত রাজনীতি অপেক্ষার দামে তুমি শীত কিনতে চাও জেনে জরুরী ভিত্তিতে অভিধান থেকে লাফিয়ে পড়ছে চিরকুট উষ্ণতা। বিরহ আর বরফ একই আগুনে ভেজে যারা পরখ করে স্বাদের তারতম্য, তারা জানে, এ শহরে শীত ঢুকবার প্রশস্ত রাস্তাটি এখনো প্রস্তুত নয়। তবে প্রকৃতির হিম রক্তে অন্ধকার গলে যেতে পারে যেকোন দিন যেকোন রাতে জমে উঠতে পারে শীত রাজনীতি। আমি একবাক্যে বর্ষাপ্রবণ, জেনেছি শীত মানেই বিভ্রম। শেষ রাতের স্টেশনে একঝাঁক অপ্রকৃতিস্থ ভাবনা ছুটে চলে কেবল ছোটার নেশায়। বিশ্বাস না হলে মুঠো খুলে আঙুল বাড়াও হাতড়ে দেখো, তোমার শীতার্ত চোখ চেয়ে কারো সনাতন বুকের একপাশে কুয়াশারা বাজে কিনা টুপটাপ… সন্ধ্যার শুরুতেই!
তাহিতি ফারজানা জন্ম ১৯৯৩ সালের ১৬ আগস্ট, মৌলভীবাজার জেলায়। স্কুল জীবন থেকে লেখালেখির শুরু। ১ম কবিতাগ্রন্থ- আদ্যোপান্ত হৃদয় যাপন, প্রকাশ কাল ২০১৫ সাল। ২য় কবিতাগ্রন্থ- ব্যথা ক্ষয়িষ্ণু হও, প্রকাশ কাল ২০২৩ সাল।
Facebook Comments Box