তুমি, মায়ার স্রোতস্বিনী বিজলি প্রভায় ডুবে থাকা মানুষেরা সর্বভুক, পান করে শস্যসুরা ঘুমের ভিতর ভুলে যায় আরাধনা মনে মনে গড়ে নিজস্ব পরমা এইসব মানুষের প্রাণে আছ তুমি যেন সৃষ্টি তরঙ্গের যোনি যেন ডালিমাভার মায়ার স্রেতস্বিনী বাজিহারা মানুষের চোখ দেয়ালে গেঁথে রাখা অজস্র বাজিহারা মানুষের চোখ, এসব চোখ এখন আর কোনো প্রাণের গভীরেই যেতে পারে না। বাজিহারা মানুষ ঘুমিয়ে থাকে একাকী তারার শোকে। তাকে দেখা যায় কোঁকড়ানো ফুলের মাঝে, প্রণত তৃণমগ্ন ধ্যানে, বিলীন হয় নক্ষত্রের রঙে। এই দৃশ্য দেখে, আমাদের দেখার সীমানা ভাঙে, সূর্যাস্ত মেশে কসমিক রোদে, সমস্ত আলোর ধারণা মুছে অসংখ্য রক্ত জবায় জ্বলে ওঠে বাজিহারা মানুষের চোখ। সফলতা কোনো সফলতা নেই। তবু কুলহারা ডোরাকাটা সাদা পাতা ওড়ে। হাওয়া খোলে হরেক নকশার দ্বার। নাই এপার ওপার। ব্রক্ষ্মাণ্ডের ছায়া ঘিরে নেচে ওঠে চন্দ্রালোর ঘনিষ্ঠ স্বজন, তারা যেন আমাদের মন। প্রাণের গভীরে বয়ে যায় নদী উন্মাদনা, পড়ে থাকে মুখোশ আর আমাদের হাড়ের কণা। স্বপ্নের ভিতর ঘুমে-জাগরণে স্বপ্নের ভিতর বয়ে যাচ্ছে নদী। অর্থহীন জীবনের মতো চারিদিকে শুধু জলের উল্লাস। কোনো শোক চিহ্ন নেই। একে একে মুছে যাচ্ছে পুরনো পথের বাঁক। কেউ যেন নীরবে সরিয়ে নিচ্ছে বৃষ্টি ভেজা হাত। আমরা দেখছি নক্ষত্রলোকের দেহে ছড়িয়ে পড়ছে ময়ূর পাখার রং। মন-জোনাকির ঝাঁক চন্দ্রালোকে এসে স্তব্ধ সব চিহ্ন যায় মুছে। ক্ষতভরা দাগে দূর থেকে আলো এসে মেশে। কত কথা মরে যায়, নিঃস্ব মানুষের ঢলে, কিছু কথা ফিরে আসে ঘুমন্ত বল্কলে। বিজলি ঝলকে স্মৃতিশূন্য রাতে শয়নভঙ্গি তলে ফিরে যেতে পারো প্রণত বৈভবে, মৌন তারার ছলে। একাই দেখো নিজেকে, সূর্যাস্তের নিচে দেখো বয়ে গেছে অসামান্য উঁচুনিচু বাঁক, যেখানে সবাই নিঃস্ব ডুবন্ত পাহাড়ে, নাচে শুধু বৃক্ষ আর মন-জোনাকির ঝাঁক। আলিঙ্গন স্মৃতি আলিঙ্গন স্মৃতি ডুবে গেছে যার অন্ধকার জলে, উড়ন্ত শুভ্র ডানায় তাকে পাঠাও ফুলের ঘ্রাণ, তার ব্যথার সেলাই কথা বলুক ধূধূ বল্মীকে। ফেরত এসেছ তুমি, পড়ে আছে সুরের মোকাম, দেখো বজ্র ইশারায় হাসছে রোদ শস্যের ভূমি। জলের শরীরে ফুঠে উঠছে মেঘের মনস্কাম, আমরা বুঝি না তার ভাষা, কে তার ঈশ্বরী! তারও কি আছে দূরে সরে যাওয়া শূন্য মোহনা! সরে গেছে হয়তো বা দীর্ঘতর অসুরের ছায়া, আঁধার চিরে ভাসছে আজ ডুবন্ত আলোর কণা।
মুক্তি মণ্ডল জন্ম ২২ জুলাই ১৯৭৬। সমাজ বিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পেশা : গবেষণা। বই- ঘড়ির কাঁটায় ম্যাটিনি শো (কৌরব ২০০৮), পুষ্পপটে ব্রাত্য মিনতি (জোনাকরোড ২০০৯), উন্মাদ খুলির পৃষ্ঠাগুলি (আবহমান ২০১১), ভেল্কিবাজের আনন্দধাম (এন্টিভাইরাস ২০১৫) এবং যাচনার বাঞ্ছাধ্বনি (ছোট কবিতা, ২০১৮)।
Facebook Comments Box