বুকে মার সাফা-মারওয়া ঋতু স্রাবের পর খুলে গেল মায়ের ঘরের নবম দরজা! হাজরে আসওয়াদ হাতে নিয়ে- সেজদায় পড়ে ছিলেন আদমের জাত দশম দরজায় বসে ছিল মানব সভ্যতার পাহারা, বুকে মার সাফা-মারওয়া, ধুলির ভেতর দিন আর লাইলাতুল দৌড়! ইসমাইলের ডান গোড়ালিতে যমযম ফোয়ারা তৃষ্ণা মেখে রেখেছে আলিফের চোখ শুধু- আমি মিম রূপের গন্ধে হেঁটেছি মক্কা থেকে মদিনার শহরে শহরে। আদমের তপজপে হাওয়ায় আসওয়াদ সৌরভ এক দরজা,দুই দরজা! দুই-তিন-পাঁচ দরজা করে করে দশম দরজায় আমরা মানুষ। পৃথিবীর সমস্ত পুরুষ আদম! সব নারী হাওয়া; কারো ঈশ্বর আর বিধাতা,কারো ভগবান আমি শুধু জানি- আমি আদমের ঔরশে হাওয়ার সন্তান। বিথী একটা শুক্রবার মিথ্যে হয়ে গেল তিন মাত্রার একটি বার চাইবার ছিলো আমার একটা ঈরা,পিঙ্গলা, সুষমা! পাতানো রঙের বেলা-শুধু-শুধু মরে একটা উচ্ছ্বাস রয়ে গেছে উদরে-জরায়ুতে জলের কোরাস "রঙধনু" বিকেলের মাধুরী পিঙ্গলার ভেতরে হাত-পা ছুড়ে ছুড়ে খেলেছে আমি শুনলাম-সে শুনেছে প্রতিবেশী গল্প একটা সুষমা চিৎকার প্রয়োজন ছিলো, কুঁকড়ে উঠা ওঁর-মতন কত শখে বেজেছিল ধ্বনি ! আবেশে ভেসে উঠা জল-থৈ থৈ থৈ ,বেয়ে নেচে পড়েছে, বিথীর জরায়ুতে স্থির ছিলো সে-লাল রঙের ভোর। একটা শুক্রবার সব বৃহস্পতিবার মিথ্যে করে দিলো । কান্নাটা উদরের ভেতরে গুমড়ে ছিলো-পৃথিবী দেখেনি। ছোঁয়নি মায়ের তিলোত্তমা সিন্ধুবিহার আমি শুধু নতশিরে চুম্বন করছি বিথীর আসোয়াদ পাথর। পুরুষ হাতি মা কিন্তু বলতেন- 'মরলে হাতির তলে পড়িস! কুত্তা বিলাইয়ে কামড় খাইস না' সোমবার মরতে গেছিলাম হাতির নিচে পড়ে যাচ্ছিলাম! পিষ্ট হতে হতে বাঁচলাম। এমন নয় যে আপ্রাণ চেষ্টা ছিলো হাতির দয়ার শরীর, মায়া হয়েছে হয়তো। নয়তো তীক্ষ্ণ চাইনিতে কেমন দেখছিলো লম্বা সুরের আগায় চোখা ঠোঁট গাল বেয়ে নিশ্বাস ছেড়ে দিলো এক মুখ ভরে! কাঁধেও ঠোঁট বোলাল - ঘ্রাণ নিলো শরীরের খুব কাছে এসেই ঘেঁষে থামলো, ধুঁক ধুঁক শিহরণে ছেয়ে ছিলাম ভারী হচ্ছিল নিশ্বাস; কেঁপে কেঁপে উঠছিলো গো গা! শিরশির করছিলো পায়ের পাতা পাশ ফিরে দাঁড়িয়ে ছিলাম চোখের কোণে ভেজা জলে পিঠের ঘর্ষণে জানলাম সেও পুরুষ হাতি! বৃষ্টি শহরে ঝুম বৃষ্টি হলে কে যে বেশি আনন্দ পায় বলোতো? আমি মাটির মতো বেশি পিপাসা নিয়ে থাকি! মাটির শরীরে বৃষ্টি যতটা বীর্যপাত ঘটাতে পারে౼ আমি ভাবি সবটা সুখ আমার তেমনি অবারিত হতে পারে। বলোতো তুমি কার বেশি তৃপ্তির সুখ প্রকাশ পেলো, কে বেশি ভিজলো রাতের গহীনে- তপ্ত শরীর নিয়ে? কাল রাতে শহর জুড়ে বৃষ্টি হয়েছে খুব গোপনে গোপনে। ইচ্ছে আগুন সে পুড়তে এসেছিল ! পুড়ে যেতে চাইতো মনে প্রাণে- বলতো শিখা জ্বালিয়ে দাও তাপের কুণ্ডলী ছড়িয়ে পড়ুক সবখানেই লেলিহান আগুনের জিহ্বা বেয়ে ছেয়ে যাবে শরীরের বন্দর প্রতিটি উপপথ--শাখাপথ; উজানের অলিগলি-পাঠের প্রতি পৃষ্ঠা । কোথায় থাকবে না,অযাচিত খরস্রোতা নদীর জলরাশি সমস্ত পুড়ে তপ্ত তাপে উজাড় হয়ে যাক, অন্তর-প্রান্তর সমস্ত দুঃখ-বিরহ হয়ে যাক ছাই। অথচ চেয়ে দেখছি তার-জলনৃত্য ! বরফগলা মন-যৌবন, শরীরের আগাগোড়া জমে আছে পাথুরে পাথুরে বরফ শ্বেতাঙ্গ পাহরচূনা মেঘের বললম ! সাইবেরিয়ার তুষার প্রান্তের যেন আমি এক আবাবিল পাখি উড়ে উড়ে চাতক তৃষা নিয়ে নিত্য ভিজিয়ে যাই౼ ডানার ভাজে প্রতিটি পাখনার শাখা প্রশাখার সুখ।
সাফিনা আক্তার জন্ম: ৩০ শে অক্টোবর ১৯৮৫ সালে ঢাকার মিরপুরে । দ্বিতীয় দশকে সাফিনা লেখালেখি শুরু করেন। স্রোতে না চলে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন একজন ব্যতিক্রম কবি হিসেবে। সম্পাদনা করেছেন একাধিক লিটলম্যাগ। যৌথ সম্পাদনা- ঢোল। একক সম্পাদনা- কবিকথন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: স্বপ্নমুখর বসবাস (২০১১) জলমহল (২০১৭) পরবাসী পাখি (২০১৯) বৈষয়িক জলপূরণ (২০২১) ভুলে থাকা পাপ (২০২২)
Facebook Comments Box