টেক ওয়ান
হেল্লো গাইজ! গুডমর্নিং সুপ্রভাত নমস্কার আদাব। আপনাদের ভালোবাসায় আগের ভিডিওয় পত্থমবার ভিউয়ারশিপ লাখ ছুঁয়েছে। ধন্যবাদ থ্যাঙ্কিউ শুক্রিয়া। এভাবে চলতে থাকলে মাক্কালী পরের বছর গোল্ডেন প্লে-বাটন-টাটন পেয়ে যাব।
তো সকলের আশীব্বাদে আজ আমার মোটো-ভ্লগিংয়ের একশ সাতাশতম এপিসোড। এখনও যদি কেউ সাবস্ক্রাইব না করে থাকেন তবে নিচের বোতাম চেপে অবশ্যই সাবস্ক্রাইব করুন আর বেল আইকন টিপে নোটিফিকেশন অন করতে ভুলবেন না যেন! আপনার একান্ত প্রিয় চ্যানেল, @দ্যবিহ্বলগাই!
পিছনে আজ বসেছে বন্ধুবর বেকুব বিশ্বাস। এক সেকেন্ডের জন্য ক্যামেরাটা রাস্তা থেকে ফেরালাম — অ্যা অ্যা অ্যাই— গাইজ, বিশ্বাস ‘হাই’ বলবে। হাআআই!
অ্যাজ ইউ নো, লকডাউন থেকে অনেক কিছু ট্রাই করার পর মোটোভ্লগিং-এ থিতু হলাম। মোটরসাইকেল চড়ে ভিডিও ব্লগ। সাবস্ক্রাইবরা জানেন, মাক্কালী, যা যা করেছি— প্রাইভেট ফার্ম, জ্যোতিষ, দালালি, ম্যাজিক, র্যাপিডো— সঅঅব নিয়ে ভ্লগ আছে আমার৷ ওয়ান স্টপ কেরিয়ার গাইড ভাবলে তা-ই৷ এন্টারটেইনমেন্ট ভাবলেও তা-ই। শুধু সাফ কথা। বাইককে ভালবাসলে র্যাপিডোটা করবেন না। বাইকের ইজ্জত চুদে যায় (এইখানে এডিটিং-এ বিপ্ মারতে হবে)।
যা বলছিলাম। যে কোনো কেরিয়ার বা পার্সোনাল জিজ্ঞাসা…সলিউশন আমার ভ্লগে। বিহ্বল এই হাটে বিলকুল খোলামেলা। দেখুন। শিখুন। প্রয়োজন মতো গ্রহণ-বর্জন। সাবস্ক্রাইব করতে ভুলবেন না। নোটিফিকেশনের জন্য প্রেস করুন বেল আইকন। টিং।
তো র্যাপিডো ছাড়ার পর ভ্লগিংই করছি মন দিয়ে। আজ শোভাবাজারের দিকে ছুটেছে বাইক। আপনাদের শুভেচ্চায় কনটেন্ট খুঁজতে যেন সান্তিয়াগোও যেতে পারি একদিন। চাকার তলায় বিশ্ব বাংলা সরণী সরে যায়৷ এদিকটা ভ্লগযোগ্য। হাইরাইজ আর মলগুলো পিছনে ছিটকে যাওয়ার যে ধরন…
পিছনে বিশ্বাস। ওর হাতে চাঁদনির ক্যামেরা। চাঁদনি মার্কেট নিয়ে আরেকটা ভ্লগ হয়ে যাবে। আপাতত বিশ্ববাংলা। আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাবোওও (এ জায়গায় লাইট মিউজিক যাবে).… উ-প্-স্! রেড লাইট।
টেক টু
আজকের কন্টেন্ট বহুত ঝিনচ্যাক! কবি বলেছেন, ঝিনচ্যাক ছাড়া কিছু থাকবে না৷ কিন্তু এক মিনিট৷ কোথাও ঢাক বাজে। দিল গার্ডেন গার্ডেন। রিয়াল না রেকর্ড কে জানে! পুজোর সময় পথে-ঘাটে কন্টেন্ট। শেয়ালদা স্টেশন চত্বরে ঢাকের বোল শোনা যেত। যেতে আসতে। কখনও হুল্লাট বাজায়, কখনও বায়নার আশায় ঢোলে৷ ঢাকিগুলো। ছেলেমেয়েরাও আসে। ঢাকিদের। মাছি তাড়ায়। শহর মাপে। ঘুগনি খায়। ফিরে যায়৷ ছেলেমেয়েগুলো। আবার আসে পরদিন। আমিও আসতুম৷ এনআরএস। শোনা যায়? ঢাকের আওয়াজ? গোল্ডেন প্লেবাটন যদি হয়ে যায়, সব ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড খিঁচে নেবে এমন ডিভাইজ কিনব, প্রমিস৷ আপাতত লাইট দেখুন। আমিও দেখতুম। ওইটে কী বলুন তো? ট্রেন অ্যাক্সিডেন্ট। জ্বলছে। নিভছে। কন্টেন্ট। প্যালেস্তাইন। জ্বলছে। নিবছে। কন্টেন্ট। উড়িষ্যা বা গাজায় যাওয়ার রেস্ত নেই৷ কোনোদিন আপনাদের ভালোবাসায় ডায়মণ্ড প্লে-বাটন পেয়ে গেলে অবশ্য….
ঠাকুদ্দার আলসারের অপারেশন হয়েছিল। ভর্তি ছিল। এন আর এস। হাসপাতাল, এখন ভাবি, দারুন কন্টেন্ট৷ ধরা যাক বসে আছেন। হঠাৎ ঘোষণা করল নাম। ডেস্কে গেলেন৷ ফুঁপিয়ে কান্না। কান্না বাড়ছে৷ শরীর ফুলে ফুলে উঠছে। পুরোটাই যদি ক্যাপচার করা যায়। যাইহোক, ঠাকুদ্দাকে দেখতে রোজ আসি, বাচ্চা মানুষ। আসলে তো আলো আর ঢাক। বড় টান। হাসপাতালের ঘ্রাণ মরে যেত। ঠাকুদ্দা ফেরেনি৷ আটানব্বুই না নিরানব্বুই সালে। মনে নেই। ঢাক আর আলো মনে আছে।
এই দেখুন। কথায় কথায় শোভাবাজার এল। ভাবছেন বুঝি ব্রেন ফ্রাই? নাহ্, বন্ধুগণ। কাফে-কেবিনে ‘ভ্লগিং নট অ্যালাউড’ লিখে দেয়৷ গোলবাড়িতে যে ক্যাঁচাল হয়েছিল, সেটা চুয়াত্তর নম্বর ভিডিওতে পাবেন৷ ন্যাহ্, রাজবাড়িও নয়। ওসব যে কেউ পারে৷ কম্পিটিশন বস্! বিশ্বাস বলছে ঝেড়ে কাশতে৷ পুজোর সারপ্রাইজ। জিপিএস বলছে ডাঁয়ে। তারপর বাঁয়ে। তারপর দুম্ করে ঝিনচ্যাক দেশ। এশিয়ার সবচেয়ে মস্ত যৌনপল্লী মোবাইল ইস্ক্রিনে! পুজোস্পেশাল রঙ ঢঙ। ভাবছেন আসবেন, কিন্তু রেস্ত নেই? ছুঁকছুঁক আছে, কিন্তু হাঁটু ঠকঠক? মোবাইলে মক্সো করে নিন। ইউটিউবে বেশ্যাপাড়া ভ্লগ। তবে…
ওদের তো জানেনই। এই আমার বাইকের হ্যান্ডেলে ক্লাম্প। ক্লাম্পে কী বলেন তো? চুক্কি। খুদে ক্যাম। বড় ক্যামেরা বিশ্বাসের হাতে। আমার পিঠ আর ওর পেটের মধ্যে সিটের যে অংশ, হালকা করে সেইখানে বসিয়ে রাখবে, মুখটা ঘুরিয়ে। গলিতে ঢুকে বাইক স্লো করব। পঁচিশ থেকে ত্রিশের মধ্যে কাঁটা। আস্তে আস্তে এদিক-ওদিক ট্যুর করিয়ে সটকে যাব। যেন শর্টকাট। নইলে বাওয়াল বেধে যাবে। ওদের তো চেনেনই। টাকাপয়সার খাঁই… পুজোর সময় আরও বেশি। বাঙালির নিরামিষ পুজো, তা হয়? গোলবাড়ির চেয়ে স্বাদু৷ মাংস পশরা। অতএব ঝটপট সাবস্ক্রাইব করুন আর বেল আইকন…
টেক থ্রি
ঢুকে পড়েছি। ফিসফিসিয়ে বলি মাইক্রো-মাইকে। এই যে সামনে সিগারেটের দোকান, চিপ্সের মালা— বেশ্যাপল্লীর৷ বেশ্যাপট্টির গরু চলে গেল বিডন স্ট্রিট পানে। দুধওয়ালা বড় বড় ডাব্বা নিয়ে ঠেলা ঠেলছে— মিল্কম্যান ফ্রম বেশ্যাপাড়া। ওরা দুধও খায়! নাকি ওদের বাচ্চারা? ওই দেখুন, জটলা পাকাচ্ছে ওদের ছেলেমেয়ে। কী দেখছে কে জানে! আইব্বাস, কারা যেন দেওয়াল রঙ করে! সুন্দর, না? এগুলো ওদের বাড়ি। এগারো হাজার ‘ওরা’ থাকে এইখানে।
হ্যাঁ দাদা, কী হচ্ছে ওখানে?
এনজিও ওদের কটা বাড়ি রঙ করে দিচ্ছে। পুরোনো বাড়িগুলো। দেওয়ালে ভারা বেঁধে মুর্যাল আঁকছে। ঘাড় উঁচু চেয়ে আছে খানকির ছেলেমেয়েগুলো (এডিটিং-এ বিপ্ মেরে দেব)। মেয়েদের বিরাট মুখ। লতাপাতা। গাছ। পাখিও এঁকেছে। এই এই, এক মিনিট, ওইখানে কে? ছোট লাল জামা, জিন্সের উপর। হোল্ড ইওর ব্রিদ। আজকের প্রথম জিনিস। (এইখানে এডিট লাগবে। ‘শেপ বক্স’-এ গিয়ে একটা লাল বর্ডারের সার্কল নামিয়ে নেব। তা দিয়ে মেয়েটার মুণ্ডু ঘিরে দেব। গোল করে হাইলাইট। একটা অ্যানিমেটেড তীর সার্কলকে ধাক্কা মারবে। সঙ্গে সাউন্ড। ট্র্যাং ট্র্যাং। টেক্সট ব্লিঙ্ক করে যাবে: ”ওরা”।)
গাইজ, স্পিড কুড়িতে নামালাম। দেখে নিন। কুড়ি-বাইশ বয়স, নাকি? বিশ্বাস বলছে, আঠারো৷ তেরছা দেখছে আমাদের। বুঝতে চাইছে, চাই কিনা? কিন্তু বন্ধুরা, আপনাদের দিন। আপনাদের খিদমতে ভ্লগ। গোল্ডেন প্লে-বাটন পেলে নয় একদিন…
রঙচঙ আরও আছে দেখি। মই বেয়ে চাঁদমালা ঝোলায়। শোলা ওড়ে পতপত। বেগনি আর হলুদ মিশিয়ে প্যান্ডেল বেঁধেছে। মূর্তির জন্য মাটি দেওয়া-টেওয়া কই! এ যে দেখি আস্ত নিজেদের পুজো! বিশ্বাস জিজ্ঞাসা করছে পুজোর দিন সার্ভিস বন্ধ থাকে কীনা! কবে থেকে ঝাঁপ ফ্যালে? ষষ্ঠী-সপ্তমী? নাকি আমাদের মতো দ্বিতীয়া থেকে ঠাকুর দেখার হুল্লোড়? আরও দুটো দোকান পেরিয়ে, এইবার ঝাঁক ঝাঁক! এক, দুই, তিন, চার…ওইদিকে পাঁচ, ছয়… গুনতি রাখা দায়৷ ঢাকার বদলে উন্মুক্ত করেছে নীল শাড়ি— সে আসলে পড়তি বয়স৷ ওই যে হলুদ স্কার্ট। বেঞ্চিতে বসে পার্পল মাখল ঠোঁটে। কমলা সালোয়ারের ভ্রুভঙ্গ দেখুন। গোলাপি ম্যাক্সির কটিদেশের কেত। সবুজ ঘাগরাওয়ালি ঠোঁট কামড়াল। আসমানি, ম্যাজেন্টা, ফিরোজা, পিচ, খেই থাকছে না…
দেখে-বুঝে-বেছে-বুছে নিন। শেয়ার কমেন্ট লাইক সাবস্ক্রাইব বেল আইকন…
টেক ফোর
বন্ধুরা, গলির শেষ মাথায় এসে গেছি৷ এইবার বেরিয়ে যেতে হবে৷ চুপচাপ। নিখরচ। কিন্তু একি, ওয়ান-ওয়ে নাকি?
ওয়ান-ওয়ে, দাদা?
ট্রাফিক পুলিশের ইশারা। ওয়ান-ওয়ে হয়ে গেছে। ফেরত যেতে হবে৷ আবার গলি পেরিয়ে। সে অবশ্য মন্দ নয়, নাকি? ফিরতি পথের ঝাঁক৷ কমলা পরীর হাত ধরে কেউ ঘরে নিয়ে গেল। ঘরে যায় পার্পল ঠোঁট। সবুজ চোলি৷ ঘরে কী আছে? উঁকিঝুঁকি মারি। অন্ধকার ছাড়া কিছু ঠাহর হয় না পথ থেকে। হয়ত পালঙ্ক আছে। নাকি শুধু খাট? অন্ধকার ঘরে মূর্ত অবশ্যম্ভাবী বিছানা। বিছনা চাদরের কী রং? ম্যাটার করে না। বেশ্যাবাড়িতে গিয়ে চাদরের রং কে দেখে? কালো সব রঙ শুষে নেয়। বিজ্ঞানের প্রাথমিক পাঠ।
বে-নি-আ-স-হ-ক ফেলে লা-এ আটকাই। সেই মেয়ে। লাল ক্রপ টপ। জিন্সের উপর। একুশ, না আঠারো? কুড়িতে বাইকের কাঁটা…মেপে নিন বুক। কী একটা বলছে! এইরে, হ্যান্ডেল খামচে ধরেছে। কী চায় কে জানে! ঘরে যেতে বলবে বোধহয়।
উঁহু। কৈফিয়ত চায়। কেন আপ-ডাউন করছি পাড়ায়? ইইইই, মাইক্রো মাইক খুলে নিল। বেগুনি, ফিরোজা, পিচ একে একে জমা হল মস্তি নিতে৷ পায়ের তলায় দলে ভেঙে দিল ছোট মাইক্রোফোন। ক্যামেরা ভাঙবে নাকি? মরে যাব, দিদি। আমি আজিবপুর, নদীয়া জেলা। আপনার বাড়ি কোথা? র্যাপিডোর দুমাসের আয় দিয়ে কেনা— ক্যামেরাটা ছেড়ে দিন। বলছে, মুছতে হবে। সব। সব৷ মাগনায় এপাড়ার শরীর তো দূর, কেটে ফেলা নখ-চুলও পাওয়া যাবে না।
গোলবাড়ির চেয়ে বড় বাওয়াল হয়ত বা। এক চড় এসে পড়ল বিশ্বাসের গালে। হেলমেট রাস্তায়। উদোম লাথাচ্ছে শিশুরা। ঢাকির মেয়ে ছুটে আসে মজা দেখবে বলে। আমায় মাপে। খদ্দের পেলো না যারা, বিনোদন দ্বিপ্রাহরিক পেল। ভিডিও মুছছে ওরা। চুক্কি ক্যামেরায় এক-আধটা ক্লিপও যদি ঝেড়ে দিতে পারি! বাওয়ালও বেচে দেওয়া যায়।
চোখ হতে গিয়ে, সহসা বস্তু হয়ে গেছি। গোল করে দেখছে আমায়। হেসে গড়িয়ে পড়ে। রেগে দাম চায়। একজন বলে গেল, ইউনিয়নে কথা তুলবে, টিকিট কেটে ভ্লগিং করতে দেওয়া যায় কিনা। সে যা পারো করো। ক্যামেরা ভেঙো না দিদি। হাতে-পায়ে ধরি। হঠাৎ ঢাকের বোল। ঢুলন্ত ঢাকি উঠে দাঁড়িয়েছে প্যান্ডেলে। ‘ঠাকুর এসেছে, মাগী!’ কে কার গায়ে ঢলে পড়ে, হেসে! আমায় ছেড়ে দেয়। বাইক স্টার্ট দিই। ভারার চিক ঠেলে মুর্যাল মেয়ে মিচকে হাসে৷