জেঠিমাকে একবার কড়া করে চা করতে বলায় কড়াইয়ে চা চাপিয়ে দিয়েছিল। ‘বোকা’ শব্দটা শুনলে সবার আগে সেই ঘটনাটাই মনে পড়ে। আমার জেঠিমা কি বোকা ছিল?
ডাইনোসরের অবলুপ্তির সঙ্গে বোকাদের পৃথিবীও শেষ হয়ে গেছে। এ আমার বিশ্বাস। তাই ভাবনা অমূলক। এ পৃথিবীতে কেউ আর বোকা নেই। সকলেই বুদ্ধিমান। সকলেই মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া। সকলেই দিনে চার ঘণ্টা পড়ে প্রেমে সফল। এবং বিচ্ছেদে অবিশ্বাসী। তাই সকলকে দেখতেও এক। পক্ষ আর বিপক্ষ যখন এক হয়ে যায়, তখন কাউকেই আর বোকা নয়, মৃত ভাবতে ইচ্ছে করে। ফলত আমার সব লেখাই মৃতদের জন্য এক মৃতের লেখা। এবং অবশ্যই রাষ্ট্রের জন্য লেখা। আবারও বলে নেয়া প্রয়োজন যে আপনি যথেষ্ট বুদ্ধিমান। আশা করি এই রাষ্ট্রকে দেশের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না। অবশ্য দেশ মানে তো আর রাষ্ট্র নয়!
যেমন অনেক কিছুর মানেই অনেক কিছু নয়। মাঝে মাঝে ভাবি জীবন থাকতে কত কিছুই বোঝা হলো না।
যেমন বোঝা হলো না মৃত মানুষ নিজের পোস্টেই নিজে লাইক কেন দেয়? কেন একই অ্যাঙ্গেল থেকে নেওয়া নিজের মুখের ছবি পঁচিশটা করে একসঙ্গে পোস্ট করে কোনও মৃত ব্যক্তি? এতে জাতির কী উপকার হয়?
প্রথম প্রশ্নটা রাষ্ট্রকে করেছিলাম। তার পুরো নাম ধৃতরাষ্ট্র। পাড়ার পুজো উদ্যোক্তা। উত্তর দিল, নিজের পোস্ট যদি নিজেরই ভালো না লাগে তাহলে অন্যের লাগবে কী করে? সেই জন্যই নিজের লাইক। রাষ্ট্র, মানে ধৃতরাষ্ট্র চিরকালই এমন। ছোটবেলা থেকে দেখছি, অন্যের ভালো লাগার তোয়াক্কা সে করে না। আমি রাষ্ট্র, আমি লাইক মেরেছি, মানে তোমাকেও মারতে হবে। কারণ তোমারও ভালো লেগেছে এবং লাগতে বাধ্য, এই হল তার ভাবনা।
আর ছবি নিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম এক উঠতি প্রকাশক কাম কবিকে। সেও ছোটখাট রাষ্ট্র। আরে এই রাষ্ট্র ওই রাষ্ট্র নয়। এ হল পররাষ্ট্র। পরের ঘরের কথা রাষ্ট্র করে বেড়ানোই তার কাজ।
বললাম দশটা বদনের ছবি একসঙ্গে পোস্টাও, ইহাতে কাহার সুখ? আজব উত্তর তার। প্রথমটা যদি ভুল করে চোখ এড়িয়ে যায়, দ্বিতীয়টা দেখবে লোকে। দ্বিতীয়টাও যদি চোখ এড়িয়ে যায় তৃতীয়টা। তৃতীয়টা এড়িয়ে গেলে চতুর্থটা…
মনে পড়ল কৈশোরে একবার মঞ্চে কবিতা পড়তে গিয়ে প্রথম লাইনটা তিনবার বলেছিলাম। অ্যাটেনশন প্লিজ অ্যাটেনশন প্লিজ অ্যাটেনশন প্লিজ ব্যাপার আর কি!
পড়া শেষ হওয়ার পর কানমোলা খেলাম। আমি নাকি শ্রোতাদের বোকা ভাবছি, আন্ডার এস্টিমেট করছি!
মোক্ষম সেই কানমোলাটি রাষ্ট্র দিয়েছিল, নাকি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্যার, আজ আর মনে নেই। বড় হয়ে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পে পড়লাম সেই অমোঘ লাইন-পুনরুক্তিতে কথার দাম কমিয়া যায়।
সেই থেকে যা বলি, একবার। যা ভাবি, একবার। যা গ্রহণ করি, একবার। যা বর্জন করি, একবার।
জীবনে বোকামিও একবারই করেছি। মরে গিয়েও লিখতে এসে…
সেদিক থেকে আমার ভাবনার সঙ্গে রাষ্ট্রের ভাবনার অনেকটা মিলমিশ আছে। রাষ্ট্র চাইছে-এক দেশ, এক আত্মপরিচয়।
তাই তো হওয়া উচিত! কারণ আমরা সবাই মৃত আমাদের এই মৃতের রাজত্বে…অতএব অদ্য হইতে এক দেশ, এক পোস্ট। সেই পোস্টে আধার লিঙ্ক করিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব আপনার। না করলে ফাইন দেওয়ার দায়িত্বও আপনারই।