আসবো না আসবো না করেও বৃষ্টিটা শেষ অব্দি এলো। এলো তো এলোই যাচ্ছে না আর। বেশ কিছুক্ষণ হলো নাড়ু একটা দোকানে আশ্রয় নিয়েছে বৃষ্টির জলের হাত থেকে বাঁচতে। চায়ের দোকান আর দুপুরবেলা ভাতের হোটেল।ছোট্ট চায়ের দোকান দিয়ে শুরু করেছিল অসীম দা। তারপর যখন থেকে আশেপাশের বাড়িগুলো ভাঙ্গা পড়তে লাগল, আর মুর্শিদাবাদ থেকে আসতে শুরু করল ঠিকার রাজমিস্ত্রির দল ব্যাস! চায়ের দোকান বদলে গেল।সকালে ডিম পাউরুটি ঘুগনি পাউরুটি জেলিটোস্ট বাটার টোস্ট বদলে গেল হাতেগড়া রুটি আর দুপুরে ভাতের হোটেলে।অসীমদা আর বৌদি দুজনে মিলেই লেগে পড়লো। সেই হোটেল কাম চায়ের দোকানেই অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে নাড়ু।
একটা দেশি মুরগি ছাড়ানো হচ্ছে।
নাড়ু জিজ্ঞেস করল -দেশি মুরগি?
উত্তরে অসীমদা পালক ছাড়াতে ছাড়াতে বলল -বাবানদের অর্ডার আছে। কষা মুরগি আর রুটি।
বাবান।বাবান এখন এলাকার প্রসিদ্ধ প্রোমোটার।
বাবা ছিল এলাকার সিপিএমের নেতা। হ্যান্ডলুমের পাঞ্জাবি আর ঢোলা পায়জামা পকেটে বিড়ির বাক্স নিয়ে এলাকায় এলাকায় স্ট্রিট কর্ণার করে বেড়াতো। চায়ের দোকানে কথায় কথায় আওরাতো প্রকাশ কারাত।
পার্টি ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর কোথাও আর তেমন দেখতে পাওয়া যায় না।কিন্তু ছেলে বনে গেছে বড় প্রোমোটার।আগে সিপিএম বাবার ছেলে এখন তৃণমূল দাদার ছেলে।গলায় মোটা সোনার চেন দামি বাইক সানগ্লাস। এই এলাকা পাশের এলাকা জুড়ে যত বাড়িভাঙা হবে সমস্ত সিন্ডিকেটের চালিকাশক্তি হচ্ছে বাবান। মাঝখানে একদিন দেখা হয়েছিল বাজারে। নাড়ু খুঁজছিল লোটে মাছ,আড়চোখে তাকিয়ে দেখে সাদা গেঞ্জি জিন্সের প্যান্ট পায়ে সাদা নর্থস্টার পড়ে বাবান বাজার এসে দুটো জোড়া ইলিশ কাটিয়ে নিয়ে ব্যাগে ভরছে।… হায়রে জন গণতান্ত্রিক বিপ্লব!
তার কেটে যায় নাড়ুর…মাথার মধ্যে পোকা নড়ে ওঠে। একটার পর একটা খিস্তি মুখ ফেটে যেন বেড়োতে চায় ।
ফট করে লোডশেডিং হয়ে গেল। লোডশেডিং নাকি ফেস গেল।বোঝা মুশকিল। মায়ের ওষুধ কিনবে বলে বেরিয়েছে নাড়ু, মা কী মোমবাতিটা খুঁজে পাবে।সুইচগুলো বন্ধ করতে পারবে।নাড়ুর মাথায় চিন্তা ঢুকে যায়। মাকে নিয়ে তার একরাশ চিন্তা। বাবা দুম করে চলে যাওয়ার পর মা-ই একমাত্র ভরসা। নাড়ুর বাবাও সিপিএম করতো, কারখানায় কারখানায় শ্রমিকদের সংগঠিত করার কাজ। দুম করে স্ট্রোকে বাবা চলে গেল। আর জি করে নিয়ে গেলে পাঁচ ছ ঘন্টা পড়ে ছিল শুধু শুধু। অনেক খুঁজে পেতে ডাক্তারকে যখন ধরাধরি করে নিয়ে এলো তখন আর কিছু করার নেই।
কতো ফুল!কতো মালা!কতো লাল সেলাম!
কত বড় মিছিল!ব্যাস ওইটুকু।
আর কেউ খোঁজ নেয়নি। বাবার জায়গায় চাকরির জন্য অ্যাপ্লিকেশন করেছিল,কোম্পানি উত্তর দিয়ে জানালো দশ-কুড়ি হাজার টাকা এক্সট্রা নিয়ে যাও কিন্তু চাকরি হবে না কেননা কোম্পানির অবস্থা খারাপ।এমনিতেই সবাইকে ভি আর এস দেয়া হবে। চাকরিটা হয়নি নাড়ুর।কিন্তু কীকরে যেন সবাই ধরে নিল নাড়ুদের অনেক টাকা। তাই বোধহয় বাবা মারা যাওয়ার পর ফিরেও তাকাইনি কেউ।কোন পার্টির নেতা খোঁজ নেয়নি। কিম্বা বাবার ওপর হয়তো রাগ ছিল, আর সেটা মিটিয়েছে পরিবারের ওপর। যেটাই হোক না কেনো নাড়ুদের চলছে কিভাবে কেউ জানতেও চাইনি।
এসব ভাবলে আবার পোকাগুলো নড়ে ওঠে…খিস্তিগুলো…
মাঝেমধ্যে রেসন থেকে আনা চালের খুদ বাছতে বাছতে মা বলে- যা না একবার পার্টি অফিসে। আশিষদা কে গিয়ে বলনা একবার। যদি ছোটোখাঠো কোথাও একটা…
রেগে যায় নাড়ু, বলে- ওদের চোখ নেই?ওদের মন নেই?বিবেচনা নেই? ওরা খোঁজ নিতে পারে না?
আমি কেন যাব?
চাকরি হয়না নাড়ুর।বাবার কথা মনে রেখে বাজারি হাওয়ার সাথে ভিড়েও যেতে পারে না।বাবানরা যেমন ভিড়ে গেছে তৃণমূলের সাথে।নাড়ু পারে না। ভাবলেই বাবার কথা মনে পড়ে। আগের জামানার এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জে নাম লেখানো ছিল। কোথায় যে গেল এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ কেউ জানে না। এখন শুধু পরীক্ষা। আর ঘুষের রেজাল্ট। রাশি রাশি টাকা। মন্ত্রীদের বাড়িতে কাউন্সিলরদের খাটের তলায় কোটি কোটি টাকা। বাড়ির পর বাড়ি, ঝিনচ্যাক বান্ধবী।
আবার তার কাটছে…পোকা…পোকা কিলবিল…
অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে একটা রিক্সা চলে গেল।প্লাস্টিক পর্দার আড়ালে সুশীলবাবু। সুশীল বাবুকে দেখলেই একটা মজার কথা মনে পড়ে যায় নাড়ুর, আজও ভেবে মাঝেমধ্যে লজ্জা পায়। নাড়ু টিংকু বাবলা পটলা সুব্রত নিখিল সবাই মিলে একটা ক্লাব করেছিল।নাম দিয়েছিল বন্ধুমহল। হঠাৎ পাড়ায় রটে গেল এরা নাকি সবাই মিলে রাত্তিরে ব্লু ফিল্ম দেখে। লেগে গেল হৈচৈ।নাড়ু জানতে পারলে বেশ কিছুক্ষণ পর। সরষের তেল কিনতে বেরিয়ে দেখল মোড়ে একটা বিশাল জটলা। সেখানে বিচারসভা চলছে। বিল্টু পটলা নিখিল তাদের ঘিরে ধরে সুশীলবাবু খুব তরপাচ্ছেন। নাড়ু কাছে যেতেই সুশীল বাবু বলে উঠলেন -এই যে আর এক পালের গোদা।
ব্যাপারটা বুঝতে কিছুক্ষণ সময় লাগার পর নাড়ুর তার কেটে গেল। চিৎকার করে বলল -কী আর করব কাকু? আমরা তো ব্লু ফিল্ম দেখি- আপনার মত তো সোনাগাছি গিয়ে মস্তি করার পয়সা আমাদের নেই।
চারিদিকে বিশাল নিস্তব্ধতা। আস্তে আস্তে সমস্ত ভিড় পাতলা হয়ে যাওয়ার পর নিখিল বিল্টুরা জড়িয়ে ধরেছিল নাড়ুকে। কথাটা মনে পড়তেই আজও মনে মনে হেসে উঠল।অসীম দা দিকে তাকিয়ে বলল এক কাপ চা হবে নাকি অসীম দা? মুরগির মাংস পিস করছিল অসীম।বললো- দাঁড়াও,হাতের কাজটা সেরে নিই,বলতে বলতে নাড়িভুড়ির একটা অংশ ছুড়ে দিল রাস্তার দিকে অন্ধকারে। কেঁউ কেঁউ করতে করতে দুটো কুকুর তা নিয়ে ঝগড়া লাগিয়ে দিল।
আবার যেন পোকাগুলো…
অনেক দিনের পুরনো একটা কথা -তখন সবে হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা দিয়েছে নাড়ু। হাত খরছ চালানোর জন্য দু-একটা টিউশনিও শুরু করেছে। বেশ কিছু টিউশনির মধ্যে একটা ছিল ঝুমাকে পড়ানো। হাকিমপাড়ায় রোজ সন্ধ্যেবেলা ঝুমাকে পড়াতে যেত। ক্লাস সেভেন অল সাবজেক্ট। ম্যানে পেয়ার কিয়া সাইকেল নিয়ে পড়াতে যেতে হঠাৎ একদিন দেখল ঝুমার দিদি রুপাকে। ক্লাস ইলেভেনে পড়তো। এত সুন্দর ফিগার ঠিক যেন শ্রীদেবী।মাথা ঘুরে গিয়েছিল নাড়ুর। জীবনে প্রথমবার। একদিন রুপা চা নিয়ে ঘরে ঢুকতেই সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে ছিল নাড়ু -ব্যাস ফিদা।একদম শাহজাহান হয়ে গেল।সাড়াটা দুদিক থেকেই ছিল।আর কী… লুকিয়ে লুকিয়ে চিঠি। তারপর গঙ্গার পাড়ে দেখা কথা নানা স্বপ্ন আকাশে উড়ছিল। প্রতিদিন নিয়ম করে রুপার কলেজের সামনে দাঁড়ানো, একসাথে ফেরা গল্প করতে করতে। রুপা একটা কোচিং ক্লাসে পড়তো। রাত্রিবেলা সেই কোচিং এর পাশের গলিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করত নাড়ু। তারপর অনেকটা পথ দুজনে মিলে হাঁটতে হাঁটতে ফিরত। কতদিন হাতে হাত ঠেকে গেছে…খুব ইচ্ছে হতো রুপাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে। কিন্তু লজ্জার আড় ভাঙেনি। সাহসও হয়নি।
হঠাৎ একদিন ঝুমার বাবা বললেন তোমাকে আর আসতে হবে না। আমরা ঠিক করেছি ঝুমাকে কোচিংয়ে দেবো। সঙ্কা একটা ছিলই এবার সেটাই সত্যি হলো। কিন্তু সবথেকে বড় ব্যাপার হলো বহু চেষ্টা করেও রুপার সাথে যোগাযোগ করা গেলনা।সবসময় মনে হল যে রুপাকে বন্দী করে রেখেছে ওর বাবা।বন্ধুদের সাথে একদিন রুপাকে নিয়ে পালিয়ে যাবার প্ল্যান করছিল নাড়ু। হঠাৎ একদিন কানাঘুষো খবর এলো রূপার নাকি বিয়ে হয়ে গেছে। ওর বাবা-মা মাসির বাড়ি থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। সেই দিন দীপকদের ছাদে বন্ধুরা বসেছিল সবাই। প্রথম ম্যাকডুয়েল নাম্বার ওয়ান অনেকটা খেয়ে ফেলেছিল। রুপার দুঃখ ভোলার চেষ্টা করেছিল নাড়ু। মদ খেয়ে বমি করে সারারাত পড়েছিল দীপকদের ছাদে।নিখিল পারেনি। বাড়ি গিয়ে বিষ খেয়েছিল। লিখে গেছিল একটা বারো পাতার চিঠি।নিখিলের বাবা কাকারা ওই চিঠি পুলিশের হাতে দেন নি। কিন্তু কেন নিখিল যে গেল সুইসাইড করতে গেল, তা তখন কেউ জানতে পারিনি।
নীলরতনের পোস্টমর্টেম ঘরের সামনে নিখিলের কাটাছেঁড়া বডিটা নিতে গিয়ে অপেক্ষা করতে করতে এই ভাবেই কুকুরের কেঁউ কেঁউ… মাংস নিয়ে কাড়াকাড়ি দেখেছিল নাড়ু… মানুষের নাড়িভুরি কীনা জানে না। কিন্তু তারপর থেকেই নাড়িভুরি দেখলেই গা টা গুলিয়ে ওঠে। আজও তেমনি গুলিয়ে গেল।অনেকদিন পর নিখিলের মুখটাও মনে পড়ল।
নিখিল আত্মহত্যা করেছিল কেন জানা গেছিল বেশ কিছুদিন পরে।সেই চিঠি নিখিলের দিদি জেরক্স করে দিয়েছিল পল্টুর হাতে। পল্টুর মারফত সব বন্ধুরা সেই দীপকের ছাতেই বসেছিল চিঠি পড়তে। অবাক হয়ে তারা শুনেছিল নিখিলও ভালবাসত রুপাকে এবং রীতিমতো রূপাও ভালোবাসতো নিখিলকে! সবাই অবাক হয়ে গেছিল…রুপার সাথে নাড়ুর প্রেম কিন্তু অন্যদিকে নিখিলের সাথে প্রেম ছিল!এটা কেউ আন্দাজ করতে পারেনি। সবাই একেবারে থ! তারপর থেকে রুপার মুখটা মনে করলেই গা ঘিন ঘিন করে ওঠে, ওই কেঁউ কেঁউ করা কুকুর গুলোর মত।
আজ অনেকদিন পর মনে পড়ে গেল সেই সব কথা। অসীম দার দেওয়া চা টা চুমুক দিয়ে বুঝল মিষ্টিটা বড্ড বেশি তাকিয়ে বলল চিনির দাম কি কমে গেছে?
অসীমদা মুচকি হেসে বলল একটু বেশি পড়ে গেছে ভাই চা টা শেষ করে ভাঁড়টা ফেলে দিয়ে উঁকি মেরে দেখল বৃষ্টি কমেছে কিনা। যাওয়া যাবে কিন্তু সেখান থেকে ওষুধের দোকান বেশ কিছুটা দূর। যেতে যেতে ভিজেই যাবে। আরেকটু দাঁড়িয়ে যাওয়া যাক। পা দিয়ে হাওয়াই চটিটা মাটিতে ঠুকছিল নাড়ু। যেকোনো সময় স্ট্র্যাপটা ছিঁড়ে যাবে। অনেকদিন গেছে যখন খেলার মাঠে হাওয়াই চটির স্ট্র্যাপ ছিড়ে গেছে।সেফটিপিন লাগিয়ে খেলার মাঠ থেকে বাড়ি ফিরেছে। একদিন গলি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ফটাস করে হাওয়াই চটির স্ট্র্যাপটা ছিড়ে গেল। দুপুর রোদ্দুরে কেউ কোথাও নেই।ততদিনে পাড়ায় নাড়ুর তার কেটে যাওয়াটি বেশ ছড়িয়ে গেছে।ভালোই প্রচার হয়ে গেছে তার মাঝে মাঝেই রেগে গালাগাল করার ঘটনা।বাচ্চারা তাকিয়ে মাঝেমধ্যে পিছনে লাগে…হাসে। এপাড়ার বৌদি ও পাড়ার বৌদিকে ইশারা করে। কাকিমা জেঠিমারা আপশোস করে মা এর কাছে।
নাড়ু দেখল সামনের বাড়ির জানলায় দাঁড়িয়ে আছে সরমাদি।বিয়ে হয়েছিল তবে শশুর ঘর সহ্য হয়নি।
এখন ভাই বৌয়ের সংসারে বিনে পয়সার ঝি।
নাড়ু সাহস করে বলল -সরমাদি একটা সেফটিপিন হবে? মুচকি হেসে সরমাদি বলল -কেন হবে না? আয় ভেতরে আয়
নাড়ু দরজা ঠেলে সরমাদিদের উঠোনে গিয়ে দাঁড়াতেই সরমাদি বলল আয় ভেতরে আয় না
নাড়ু সরল মনে ঢুকে গেল ঢুকে গেছিল সরমাদির ঘরে। ঘরের এককোনে দাঁড়িয়ে সরমাদি বলল- সেফটিপিন নিবি?নিয়ে নে -বলে বুকের আচলটা সরিয়ে দিল।
নাড়ু দেখলো চোখের সামনে দুটো উধ্যত স্তন ব্লাউজ ফেটে বেরিয়ে আসবে।কোথাও সেফটিপিন নেই। গলাটা কেমন শুকিয়ে যাচ্ছিল । সরমাদি এগিয়ে এসেবুকের মধ্যে চেপে ধরল নারুর মুখটাকে।কিছুতেই ছাড়তে পারছিল না। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে…পাগলের মত সরমাদি সারা গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল কিন্তু নাড়ু কোন প্রতিক্রিয়া না দিয়ে কোনোরকমে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এক ছুট্টে হাওয়াই চটি ফেলে দৌড় দে দৌড়।
কোনোদিন সেই চটি আনতেও ওমুখো হয়নি।তারপর থেকে সরমাদি কোনদিনই নাড়ুর মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারেনি। নাড়ুও কাউকে রসিয়ে বসিয়ে এই ঘটনার গল্প করেনি। আজ সেফটিপিনের কথা মনে পড়াতে ভেসে উঠল সব।
বৃষ্টিটা ধরে এসছে। নাড়ু ভাবলো এবার বেড়িয়ে পড়ব হঠাৎ অন্ধকার থেকে রিঙ্কুদের দল একটা হ্যান্ডবিল অসীমদা বিস্কুটের বয়ামের রেখে আর চাঁদার বিল লিখে ফস করে বাড়িয়ে দিলে অসীম দার দিকে। অসীমদা বিল দেখে বললো- পাঁচ হাজার টাকা! মরে যাবো।
রিঙ্কু বললো বললো কোন দিকে না তাকিয়ে -আরে বাবা তোমার এখন তো বিশাল ব্যাপার।সকালে ভাত ডাল তরকারি রাতে রুটি। ফিস্টের মাল যাচ্ছে। এটা তুমি দিতে পারবে না… কথা হল
তার কেটে গেল নাড়ুর।
রিঙ্কুর দিকে তাকিয়ে- বলল ষাট হাজার টাকাতো পাবি। আবার এই গরিব লোক গুলোর উপর কেন এসব চাপাচ্ছিস?
পাশথেকে বালি-বিজন বলল- চুপ কর। তোকে কে কথা বলতে বলেছে? পাশ থেকে রানা বলল শালার তার কাটা আছে। রিঙ্কু অল্প হেসে বললো তুই বুঝবিনা। এবার হাজার লোককে বস্ত্র বিতরণ.. এমপি,এম এল এ,সব কাউন্সিলররা আসবে।কে উদ্বোধন করবে জানিস? ম্যাস্ত ম্যাস্ত রবীনা ট্যান্ডন। তারপর তো কার্ণিভাল আছেই। কেন হোর্ডিং ব্যানার দেখিসনি?
চলে যেতেই অসীম দা বলল- তোমার কী দরকার, জানো সামনের ইস্ত্রি ওয়ালা তপন… ভিক্টোরিয়ার মিটিংয়ে যায়নি বলে সাত দিন দোকান বন্ধ করে দিয়েছিল।তোমার জন্য ঝামেলায় পড়ব। কখন এসে বলবে সাত দিন দোকান বন্ধ। তাহলেই হলো। চিন্তা করো না।আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেব।
আবার তারকাটে নাড়ুর। মাথার ভেতর গিজগিজ করে… লেসার এভিল…গ্রেটার এভিল। কাঠপিঁপড়ে না কেউটে সাপ?
শালা তত্ত্ব মাড়িয়ে মাড়িয়েই এই বাঙালিরা একদিন শেষ হয়ে যাবে। রাগ হয়। কিছু বলতে পারে না। সবাই এখন প্রতিবাদের বদলে ম্যানেজ করে চলছে। টপ টু বটম ম্যানেজ। দোকান ছেড়ে অল্প বৃষ্টিতেই ভিজতে ভিজতে নাড়ু হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যায়।হঠাৎ যেন কোথা থেকে শোরগোল শুনতে পায় কিছু ছেলে মেয়ের ছোট্টো একটা মিছিল আসছে। স্লোগান দিচ্ছে -চোর ধরো জেল ভরো। চোর ধরো জেল ভরো।
মনে মনে আবার হেসে ওঠে নাড়ু। ভাবে ভাগ্যিস মনের কথাগুলো কেউ শুনতে পায় না।তা নাহলে কেলিয়ে পোঁদের ছাল তুলে দিত। নিজের মনে হাসতে হাসতে ওষুধের দোকানের দিকে এগিয়ে যায় নাড়ু…

কবি
সরকারি স্বাস্থ্য দফতরে কর্মরত