“পৃথিবীতে যা কিছুর অস্তিত্ব রয়েছে, তাদের প্রত্যেকের মধ্যে অন্তর্নিহিত রয়েছে সত্য।”- আল কিন্দি
১.
দোস্তালি –
রায়ে বলা হয়েছে প্রথমেই কাতার হয়ে দাঁড়াতে হবে, আটজনের একটা দল হুড়মুড় করে এসে পড়ল শক্ত মাটির তলপেটের উপর। আটজনই পরস্পরকে দেখছিল কী কারণে তাদের কাতার করে দাঁড় করানো হয়েছে! এটার তো একটা কারণ জানতে হবে! কিন্তু এই প্রশ্নটা করবে কে?
অভাগাদের মধ্য থেকে একজন বলল, পরস্পর ফিসফিস করে কথা না বলে নিজেদের মধ্যেই ঠিক করে নাও প্রশ্নটা কে করবে।
কিন্তু কীভাবে প্রশ্নটা তোলা যায়! হুট করে যদি বলে ফেলি আমাদের কাতারে দাঁড় করানো হয়েছে কেন? তাহলে আরো ঝামেলা বাঁধবে আর আমাদের গ্রাম থেকে আরো কাতার তৈরি করা হবে। কী দরকার গ্রাম থেকে আরো কাতার বন্দি মানুষের দল বের করার।
তাহলে এভাবে মুখ বুজে মরব?
আমাদের তো মেরে ফেলেনি মামু কেবল কাতার বন্দি করে দাঁড় করিয়েছে, ধরে নাও নামাজে দাঁড়িয়েছ। শেষ রাতের প্রার্থনা, তাহাজ্জুদ।
এখন না হয় কাতারে দাঁড়ালাম কিন্তু কিছুক্ষণ বাদে চোখে গামছা বাঁধবে। তারপর হয়তো বলবে হাটু গেড়ে বস শালা।
কয়েকজন বলে বসে আমাদের শালা বলার এখতিয়ার কে দিয়েছে তাদের?
আমরা কি তাদের দাস? আফ্রিকার অধিবাসী নাকি?
তবে এখন নিজেদের দাস ভেবে নাও মামু।
দাস না হলে ইচ্ছেমতো আমাদের ধরে নিয়ে এলো কেন?
কেন যে বর্ডার ক্রস করলাম না।
তুমি কি আফসোস করছ মামু?
আটজন চরিত্র এভাবেই কথা চালাচালি করে। থামে, চলে…
আফসোস করার কিছুই নাই তবে যদি চলে যেতাম, এই মাটিতে সাপের জিহ্বার আবাদ করা হচ্ছে, কীভাবে হাতে ধরে এসব আবাদের ফসল ঘরে তুলি!
কিন্তু মামু হাতে ধরেই তো আবাদ করেছ, জেনেও জমিতে সার ঢেলেছ বস্তার বস্তা।
কিন্তু, কী ভেবেছিলে কুমির চাষের মতো সাপ চাষ করবে?
এত চালাকচতুর হওয়ার কিচ্ছু নাই।
এখন কি হবে মামু?
কী আর হবে মামু পরবর্তী আদেশের অপেক্ষা করতে হবে।
আমরা কি আটজনের বেশি আছি?
শয়তানের মুকুটবাহীরা কি আশেপাশে আছে দেখতে পাচ্ছ?
কই মামু তাদের তো কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা।
২.
ধরো ধনুর্বাণ , সামনে শুয়োর –
ওরা কত হাজার শুয়ার মেরেছে মামু?
সংখ্যাটা জানা নাই তবে ওরা যেভাবে শুয়োর নিধন করছে তাতে শীগ্রই শান্তি নামাতে পারবে, ওদের রক্ষীরা তো শান্তি নামাতে অসভ্যদের দেশে যায়। রক্ষা করতে পারবে তো মহা কচুক্ষেত? তারা কী কচু খায়না! শুয়োরগুলো আর কী কী খায় আর কোন কোন ক্ষেতে তারা বিচরণ করে তার একটা তালিকা করলেই পারে।
একেকটা বুনো শুয়োর মারা পড়লে পত্রিকায় নাম ওঠে ছবিসহ। রক্তাক্ত মুখওলা মরা শুয়োর এবং তার চামড়ার উপর মাছি আর বুটের ছাপ থাকে। সেই সৌন্দর্য দেখার জন্য পত্রিকার চাহিদা বেড়ে গেছে। সমাজে যে হারে শুয়োর বেড়েছে বলে পরিসংখ্যানে বলছে তাতে সম্ভব হলে জগতের অসম্ভব কে সম্ভব করে ফেলবে তারা। তবে কী জানো মামু জীবিত শুয়োরগুলো পত্রিকার দৌলতে ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে। এমন ভাবে যদি খাদ্য, ওষুধ আর শিক্ষাটা পৌঁছে যেত তাহলে শুয়োরের ঘোঁত ঘোঁত শোনা যেত না তারা বনে ফিরে যেত তবে বিপদটা অন্যখানে বাসিভাত আর গুড়াপানি খাওয়া গৃহপালিত স্বাস্থ্যবান শুয়োরগুলাই যত নষ্টের মূল।
অনষ্ট এরাই করছে।
গলায় ঝুনঝুনি ঝুলিয়ে দিব্যি সকাল দশটায় বেরিয়ে সন্ধ্যায় এসে খুল্লায় ঢুকে পড়ছে। সময় সময় খাদ্য পাচ্ছে। হামলার ভয় নাই। বুক উচিয়ে বিচরণ ক্ষেত্রে চলে যাচ্ছে। তাহলে তারা কী জন্যে সাজানো গোছানো ক্ষেত পণ্ড করতে আসবে মামু? তুমিই বল!
জীবনের শেষ মুহূর্তটা নানা জাতের শুয়োর বিষয়ক প্রশ্নের ভেতর আর বিনা উত্তরেই কাটিয়ে দিলাম।
মামু শুনেছি শুয়োর বললে নাকি চল্লিশদিন মুখ নাপাক থাকে! কালোখাসসিও তো বলিনি, যদি মৃত্যুর আগে তারা ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞেস করে, এই শুয়োরের বাচ্চা তোদের শেষ ইচ্ছা কি?
তখন বলব, নাপাক নয় পাক মুখ অথবা পাক জবান নিয়ে দুনিয়া ছাড়তে চাই।
তখন কি তারা আমাদের পাক জবানের জন্য চল্লিশ দিন অপেক্ষা করবে মামু?
এসব ভাববার আগেই অন্ধকার ভেদ করে তির ছুটে আসে। পাক্কা আট -আটটি তির।
Facebook Comments Box