‘the ability or capacity to do something or act in a particular way’ – ক্ষমতা। ল্যাটিন শব্দ ‘Potere’ থেকেই জন্ম হয়েছিল ‘Power’ এর। অর্থ,To be able. আর তারপর গুরুঠাকুর এরিস্টটল বলেছিলেন, man is political animal.তা সে চাক বা না চাক। কারণ সে একজন সমাজবদ্ধ হুঁশ সম্পন জীব। তারপর গঙ্গা আর টাইবার নদী দিয়ে জল বয়েছে অনেক। প্রদীপ জ্বালানোর আগে অবশ্য সলতে পাকানোর সময় কাল আসে। সে ধরা যাক খ্রীষ্টপূর্ব ৬২৫। পত্তন হচ্ছে এক হাতে-গরম ইতিহাস প্রসিদ্ধ সাম্রাজ্যের,পত্তনকারী দুই যমজ সন্তান রোমুলাস আর রেমুলাস। মিথ বলে তারা দুজন ছিলেন,দেবতা মার্সের সন্তান। এবং যুদ্ধের দেবতা হিসেবেই খ্যাত ছিলেন তারা। খেয়াল করুন পাঠক,সাম্রাজ্য শব্দের সাথেই যুদ্ধের অনুপ্রবেশ ঘটছে একই সাথে। ল্য
বাকিটা মিথ,মিথস্ক্রিয়া আর উচ্চকিত ক্ষমতার জয়গাঁথায় ভরা আখ্যানমালা!
তারপর,তার ও অনেক পর যখন বাতাসে বিষ ঘনালো,শ্বাসরুদ্ধ হয়ে এলো,পাখি দেখা যায় বটে,ডাক আর শোনা যায় না প্রায়, সেই সময়,আজ থেকে প্রায় শতবর্ষ আগের এক ২৫ আগস্ট বেনিতো মুসোলিনি নামক এক ব্যক্তি,রওয়ানা দিলেন রোমের দিকে…তারও সাত বছর আগে এই ব্যক্তিটিই জন্ম দিয়েছিলেন ফ্যাসিজম শব্দের। ১৮৭২এর ফ্যাসিসিও শব্দটি তার পছন্দ হয়েছিল,যা প্রকৃতপক্ষে শ্রমিক খেটে খাওয়া মানুষদের সংঘবদ্ধতা বোঝাতেই ব্যবহৃত হয়েছিল। তিনি তা গ্রহণ করলেন। শব্দেরও বলিহারি সক্ষমতা! যা ছিল শ্রমিকদের একতার প্রতীক কালক্রমে তা বোঝালো,a governmental system led by a dictator having complete power, forcibly suppressing opposition and criticism, regimenting all industry, commerce, etc., and emphasizing an aggressive nationalism and often racism.
সুন্দরের প্রবাহমানতা অবরুদ্ধ হয় ক্রমে। ক্রমে আলো নিভিতেছে, যে দর্শনের জানলা দরজা সব বন্ধ,অ-পর কে পরায়িত করে যা নিজের শেকড় পোক্ত করে,সে বিষবৃক্ষের গায়ে পোকামাকড় বসাটাই তো স্বাভাবিক। এবং তার পরাগায়ণেই তো বিষক্রিয়ার সূচনা এবং বিস্তৃতি,
১৯১৯ বেনিটো মুসোলিনি গড়লেন তার দল। আর ২০১৯এ ঠিক ১০০বছর পর,এক বিশ্ব মনীষা নোয়াম চমস্কি বললেন বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র সমন্বিত দেশ আর তার সাম্প্রতিক প্রবণতা প্রসঙ্গে,’ভারত-সহ পৃথিবী জুড়েই অতি দক্ষিণপন্থার বাড়বাড়ন্ত দেখা যাচ্ছে। প্রত্যেক দেশের নিজস্ব ইতিহাস যেমন তার জন্য দায়ী, তেমনই, চমস্কির মতে, অর্থনীতির অসাম্য একটা বড় কারণ। যত বেশি করে সম্পদ কুক্ষিগত হচ্ছে অল্প কয়েক জনের হাতে, জনসংখ্যার বিরাট বঞ্চিত অংশের মধ্যে জমছে রাগ আর হতাশা। আমেরিকায় ট্রাম্প, ব্রাজিলে বলসোনারো, ভারতে মোদীর মতো নেতারা সেটা কাজে লাগাচ্ছেন। শরণার্থী, সংখ্যালঘুদের শত্রু বলে দাগিয়ে দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে চমস্কি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ফ্যাসিবাদী লক্ষণ আর ফ্যাসিবাদ কিন্তু এক নয়। ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র মহাশক্তিধর হয়ে থাকে, ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণও তার হাতে থাকে। ভারতে মোদীর কিন্তু সে ক্ষমতা নেই। আমেরিকায় ট্রাম্পেরও নেই।’
অতঃপর যা বলার তা কবেই বলেছিলেন নন্দিনকে, তার রক্তকরবীর অধ্যাপকের মুখ দিয়ে,
‘বানিয়ে-তোলাই তো। উলঙ্গের কোনো পরিচয় নেই, বানিয়ে-তোলা কাপড়েই কেউ-বা রাজা, কেউ-বা ভিখিরি।’ আর গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বন করে জিতে আসা রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে যেতে শুরু করলেন রাজা(পড়ুন রাজা সাজা), গরীব দেশবাসীর শত্রু তো তাদের দারিদ্র,অশিক্ষা। মুসোলিনি মারা যান ২৮এপ্রিল,১৯৪৫। আসলে মুসোলিনির দেহত্যাগ হয়েছিল বটে তবে আত্মা সে কবেই সাত সমুদ্দুর তের নদী পার করে এসে পৌঁছেছিল এই প্রাচ্যের দেশগুলিতেও। নইলে সংখ্যালঘু কী করে শত্রু হয়? শুধুমাত্র ধর্মীয় উসকানি দিয়ে ক্ষমতায় টিঁকে থাকা যায় বছরের পর বছর? কি করে সংবিধানকে দেশের আত্মা না ভেবে,ধর্মনিরপেক্ষতার ছদ্মবেশ খুলে ফের উলঙ্গ হওয়া যায়?
মৃত্যুতে সাড়ে তিন হাত জমি,আর জীবৎকালে সামান্য খাদ্য বস্ত্র পেলেই তো বর্তে যেত রামা কৈর্বত্য আর রহিম শেখ,হল কই? হয় না কেন?
আলো আর আঁধারের দাম্পত্য ভেঙেছিল আগেই। মেকি ফ্রিল দেওয়া জোছনার নাতিদীর্ঘ বাগান পার হতেই অন্ধকার জমাট বাঁধলো ফের। তারপর আগুন আর জলের কথা। ভালকান থেকে প্রমিথিউস আনবাউণ্ড। নইলে সৃষ্টি হবে কীভাবে?
ফেরা যাক রক্তকরবীতে আবার,
‘সকালে ফুলের বনে যে আলো আসে তাতে বিস্ময় নেই, কিন্তু পাকা দেয়ালের ফাটল দিয়ে যে আলো আসে সে আর-এক কথা।’
এই মুহুর্তে এই রাজ্য,এই দেশ,পড়শি দেশ সমস্ত দুনিয়া জুড়েই ফ্যাসিজমের ঘর বাড়ি পোক্ত হচ্ছে ক্রমশ,তবে ফাটল তো থাকেই…উই থিংক দেয়ারফোর উই আর…আর তাই ওই সামান্য ফাটলকে আরও বৃহৎ করতে,প্রতিবাদ প্রতিরোধ ও মুক্তচিন্তার আলো চলাচল আরও প্রসারিত করতে এবার ঐহিক অনলাইন ,’নিভন্ত এই চুল্লিতে মা একটু আগুন দে’ প্রকাশিত হল। সাধ্য কম হলেই বা কি, এই অচলায়তন ভাঙতে পরশুরামের কুঠার তো কাউকে বহন করতেই হত। না হয় এই শেষের শুরু এবার ঐহিকের হাত ধরেই,হে পাঠক সাথে থাকুন…