ধোবি ঘাট গানে ভেজা শহরে লন্ড্রি থেকে শুকনো কাপড়গুলো আসে। দেখে নিও ভালো করে, উদ্বৃত্ত স্মৃতিগুলো ময়লার মতোই মুছে গেছে কিনা! ইন দ্য মুড ফর লাভ আমরা শেষ হয়ে যাই তারও আগে শেষ হয় প্রেম অশেষ-অমর যাকে বলি সে তো ০১টা রাস্তা; আমাদের সেইসব দিন আর রাতের রিমঝিমে মোড়া। এখন কে কোথায় চলে গেছি! নিঃসঙ্গ-বিষণ্ন রাস্তার হৃদয়ে পৃথিবীর কোনও দু’জনের দু’দিকে চলে যাওয়ার গান লেগে আছে! চাংকিং এক্সপ্রেস ডেট এক্সপায়ার হলে ফেলে দিতে হয় প্রেম ও জুসের ক্যান। আমাদের সব বাদামি ও ধূসর নিয়ে চলে যেতে যেতে তুমি আজ রঙিন ক্যালিফোর্নিয়া। তোমার গমনপথে ঝুপ ঝুপ বৃষ্টিতে লঘু হতে থাকে আমার চোখচাপা কান্না। ডেইজ অব বিয়িং ওয়াইল্ড আজকের ব্যবহৃত জীবন নিয়ে কালকেও বেঁচে থাকতে হবে? ফর শিওর, মরে যাব মরে যাওয়ার আগে তোমার কাছে যাব, কাছাকাছি হলে নিশ্বাস আর নিশ্বাসের ভেঙে যায় পেয়ার। আমাদের প্রেম ফুরালে তুমি পরি আর আমি দেবতা হয়ে যাই; পরি আর দেবতার মনে মনে স্মৃতির শয়তানি বেঁচে থাকে! নস্টালজিয়া কুয়াশায় পুড়ে যাওয়া মায়ের গর্ভ মেঘে ঘেরা বাবার ঔরস শ্বাসে শ্বাসে নোংরা করা গ্রহের রুহের বাগান যে আয়ু এখনও হাতে এলো না এ জীবন তাকেই যাপনের স্মৃতি! বেঁচে থাকায় নেশা ধরে গেল... ওয়াইল্ড নাইটস উউথ এমিলি এত স্বপ্নের জুলুম চললে ঘুমাই কেমনে? রাতের কবিতাহীন কোলে গিয়ে বসি মুভিতে চোখ রাখি দেখি ভাই আর ভাতারকে খুন করে কী তীব্র কবিতা লিখতে থাকল এমিলি ডিকিনসন আর সুসান গিলবার্ট! শুভ পৃথিবী কোনো কোনো কুয়াশাচাপা শীতের সকাল এমন হয় কিম কি-দুকের গ্রীষ্ম এসে ভর করে। গাছের পাতা গরমে তার পোষাক খুলে ফেলে। তুষারতীব্র শীতের সকাল কিম কি-দুকের হেমন্তে ছেয়ে যায় হায় হেমন্ত! গাছের গহনা হালকা হাওয়ায় উড়ে-পড়ে মাটির পলি বাড়ায়। এই ভয়ঙ্কর-সুন্দর শীতের সকাল অনন্তের শীতঘুমের ভেতর কিম কি-দুকের বসন্ত বসন্ত এবং বারংবার বসন্তের জানালায় চোখ মেলে দেখে তার রিক্ত পৃথিবী কত রঙিন হিমের কারবার। সামিরার সহিত সন্ধ্যা সামিরার সহিত দেখা হয় নাই কোনোদিন তবু ইরানি সামিরারে গভীর চিনি। সামিরার সিনামা দেখবার পর আপেলের বোবা-কালা বডিতে কামড় দিলে খালি মনে হয় চিবাইয়া খাইতেছি দুনিয়ার তাবত মূক-বধির বিদ্যালয়! সামিরা দেখায়, ব্ল্যাকবোর্ডের শরীর বাইয়া ঝইরা পড়া যাবতীয় রূপালি ময়লা; যাহা কবুল তাহাই তালাক। বাঁইচা থাকবার বর্ডারে পরিদের ডাস্টারেও না-মোছা মাথাপিছু মৃত্যুর হিসাব! বিকাল ৫টার পায়ে ২টা পা গছাইয়া বাকি ২টা নিজের পা লইয়া ১টা ঘোড়া পোকায় খাওয়া ১০ দিগন্তে কেমনে দেয় মানুষের মতো হিংস্র উড়াল; সে-ই জাদু ডানা-ছাঁটা আমাদের পঙ্গু চোখেদের দেখায় সামিরা; মাখমালবাফের মাইয়া। কিয়ারোস্তামির বার্থডে নোট এখন অতিসকাল ঘরে গুমোট, বাইরে বৃষ্টি। তেহরানের কোনো কবরের ছায়া এসে দোল খায় নবোদয় হাউজিং-এর বিছানায়। আসন্ন আস্ত দিনের সবজেটে-রক্তমাংসল দেহের স্যুপ, কিমা, কারির স্বাদ চেখে দেখা হয় ঘুমঘুম রসনায়। ছেলেটা দৌঁড়ায় মেয়েটা পালায় অলিভের ছায়ায় মহাকালের লুকপলান্তি খেলায় বারবার এই বান্দার পা হড়কায়। খালি রাস্তায় আরোহীশূন্য গাড়িটা ছুটে যায় বন্ধ মিউজিয়ামের দরোজায়; আজ কত নম্বর বিপদসংকেত? সব মাছধরা ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করতে বলা হয়েছে। বৃষ্টি জোর বেগে না তবে আকাশে কালো মেঘ মাটিতে কাদার ক্লোজআপ! কিয়োরোস্তামির কবর থেকে ০৩টা ফুল ০৫ টা প্রজাপতি ০১টা হাওয়া এসে সকালটা বুড়ো হওয়ার আগেই আমাকে গোধূলির মায়ার মতো ঝরিয়ে দিয়ে যায়। মুভি আওয়ার! দূর দেশের মুভি দেখতে গিয়ে সাবটাইটেলে সতর্ক চোখ রাখি। যেন ফস্কে না যায় কোনো সংলাপ বা বর্ণনা! অবশ্য ফস্কে তো যায় কোনো কোনো জরুরি দৃশ্য, আবার পরবর্তী দৃশ্য দ্রুত ধরতে গিয়ে চোখের সঙ্গে চোরপুলিশ খেলে সংলাপ ও বর্ণনা। যাহোক, ১৯৬২-এর যে মেয়েটাকে, গদারের মুভিতে দু’দিকের গুলিতে বেঘোরে মরে পড়ে থাকতে দেখলাম ফ্রান্সের রাস্তায়; তাকে ঘিরে ঘনীভূত দৃশ্যগুলো চোখের কৌটায় জড়ো করে রাতের বেলা শাহবাগ টু বছিলার বাসে ওঠে ৬০ বছর পরেকার আমার দু’চোখ। বাস একসময় থামে, চোখ থামে না, ১৯৬২ সালের একজোড়া মরা মেয়েচোখ তার রক্তদৃশ্যের ২০২২ সালের নিষ্ক্রিয় দর্শক-চোখের কাছে ন্যায়বিচার নাকি ক্ল্যাপস দাবি করে?
পিয়াস মজিদ জন্ম: ২১ ডিসেম্বর ১৯৮৪, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে বাংলা একাডেমি, ঢাকা’য় কর্মরত। কবিতাই তার পটভূমি, বর্তমান আর অনিশ্চিত আগামী। উল্লেখযোগ্য কবিতার বই: নাচপ্রতিমার লাশ মারবেল ফলের মওসুম কুয়াশা ক্যাফে নিঝুম মল্লার গোলাপের নহবত ক্ষুধা ও রেস্তোরার প্রতিবেশী মুহুর্মুহু মিউ মিউ মির্জা গালিব স্ট্রিট অফ টপিক এইসব মকারি এ সকাল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ভুলে যাওয়া স্কার্টের সিঁড়ি
Facebook Comments Box