বর্ষামঙ্গল তুমি নাই, এমন নিভৃতি আজো বিফলে হারাই অঝোর বৃষ্টির দিন পৃথিবীতে এসেছে আবার বাঁশপাতা জবুথবু, গাছের সবুজ অবতার গলিত মেঘের প্রেমে স্নান সারে, তুমিও কি তাই স্মৃতির বাদল দিনে ভিজে গেছো আমাকে ছাড়াই? গুড়ুম গুড়ুম ওই আকাশের জলো বেদনার উতল প্রান্তরে জমা দূরাগত বিরহ আমার কড়ই পাতার তলে দেহপাখি, একা জল খাই। এখনো তৃষিত আমি কি জানি কি তুমুল বর্ষায় খুঁজে ফিরি; অনন্ত হৃদয়পুরে যত গান আছে নিহিত বন্যার জলে বেমালুম ডুবে যেতে চায় তবুও খরায় রেখে কে আমাকে টানে এত কাছে? আষাঢ়-শ্রাবণ ঘিরে ব্যাঙডাকা বর্ষার প্রেমিক শ্রবণ বধির করে চেয়ে থাকি, ছুঁয়ে তুলে নিক। তৃষ্ণাকলি পাহাড় ঘিরেছে পানি, জলছোঁয়া এই পাদদেশ আমরা মেতেছি জলযানে যেন মেঘের আদেশ আচ্ছন্ন সকাল মানবে না কিছু। বিষণ্ন প্রকৃতি তাপিত যৌবন দেখে হাসছে। দয়াল, মগ্ন স্মৃতি বোধের দেয়ালে জমা হলে আমি কেন প্রীতিময় সকল হৃদয় বুকে নিয়ে জীবনের সবটুকু ক্ষয় এইখানে ফেলে যেতে পারি? কোন বিবিধ ব্যঞ্জন ভোরের কাপ্তাই লেকে শুভলং ঝর্না প্রাণপণ রেখেছে মজুদ? দূরে মহাবুদ্ধ পাথরে জমাট চরাচর জেগে আছে, জাগ্রত প্রাণের রাজ্যপাট। পাথর সরিয়ে আজ পানিপথে ভেসে আসে প্রেম। যাপন-দুয়ার খোলে বিকেলের সবুজ হারেম। তৃষ্ণাকলি হাঁসফাঁস, কাছে দূরে কেউ তবু নেই। ভ্রমণ-জাদুর সখা, যা দেখি, দেখছি তোমাকেই। সাম্প্রতিক সনেটগুচ্ছ ১ বাকির খাতায় তুমি দেহলীন যৌন প্রতিশ্রুতি এঁকে দিয়ে গেছো। আমি ধর্ষিতার রঙের তুলিতে ওইসব মুছে দিয়ে ভাবি, যদি প্রতিদিন নিতে আসি সেই স্বভাব-সৌরভ, প্রীত জীবনের স্তুতি, নিন্দিত হারাম গলা টিপে দিবে; প্রবল বিচ্যুতি শাসন-শঙ্কিত নয়। বিছানায় নতুন সঙ্গীতে এখন তোমাকে পায় অন্য কেউ। তবু পৃথিবীতে মৃত বোন নখরের দাগ নিয়ে ছড়িয়েছে দ্যূতি। পুলিশের নাকের ডগায় ক্রিমিনাল প্রজাপতি রঙিন শুশ্রূষা শুধু পকেটেই ভারি হয়ে আছে। থানায় ঘুমিয়ে আছো জীবনের দুধভাত মাছে প্রলোভিত মাংসেও নাক ডাকে প্রেমের দুর্গতি। তোমার মুঠোর চাপে হাঁসফাঁস স্খলিত বিচার আদালতে কাঁদে নদী, মরা বুকে চর জাগে কার? ২ নদীর প্রসঙ্গে তীর ধরে হাঁটি। গজানো শহর যেন উঁচু উঁচু পাথরের ঘাস। পাড়ে জমে আছে। পার্কের বর্ণালী ছায়াতলে কত গরু চড়ে: পাছে ভয় হয়, তোমার শরীর জুড়ে গাভীর তৎপর আলামত; সেখানে দোহন করে কালের শূকর। মানুষ হারিয়ে গেছে। পৃথিবীর মৃত বটগাছে নীতির সুবর্ণ লতা দোল খায়। যেন এত কাছে! তুমি ছাড়া পাবো না কোথাও সাদা সাদা সর। দালানের নতুন শকট ভেঙে তোমাকে খোঁজাই আদর্শ আমার। যেন জীবন একটা বাঁধাকপি। পরতে লুকিয়ে থেকে বারবার তোমাকেই জপি হৃদয়ের লঞ্চডুবি চেয়ে দেখে তোমার বড়াই। অনন্ত মৃত্যুর দিকে জলরঙে উড়িয়ে রুমাল তুমিও পদেই থাকো। মিছা প্রেম আর কতকাল! ৩ পদের শিখর বেয়ে ছেলেগুলো লকলকে সাপ দারুণ প্যাঁচিয়ে ওঠে ক্ষমতার সকল পিলার; তুমি বলো, 'সব ঠিক। ওরা সব মেঘের কিলার। ঠেকিয়ে রাখবে ঝড়, বজ্রপাত। ওপরের চাপ আছে খুব; আদরের বিষভরা অনেক আলাপ।' লাশ পড়ে, রোদ ওঠে। লাঞ্ছিত মেয়েরা কতবার তোমার আঁচলে ঢাকা কলেজের সব অনাচার দেখে দেখে বুঝে নিলো বিপন্ন বিদ্যার খরতাপ। আড্ডার বাতাস ভারী, উড়ে যায় কলেজ কেন্টিন তোমার সম্মুখে, প্রিয়, উচ্চতর সোনালি শিক্ষার বোমা ফাটে; অদূরে চতুর সেবা কত প্রতিকার বয়ে আনে ক্রুর হাসি ভারত অথবা নয়া চীন। তোমার প্রেমের মূলে রস ঢালে বিদেশী নজির মুক্তির মহান মুখে ছাই ঢেলে বুকে ছুড়ো তীর। ৪ মুক্তির ধারণা ভালো লাগে, তবু ইহজাগতিক স্বপ্ন ছেড়ে পরলোকে চলে যায় সকল বিপ্লব। চাঁদের দোলনাভরা জোছনার কত কলরব! তবুও বধির, অন্ধ সমকাল ভীষণ নির্ভীক তলোয়ার; ইতিহাস দ্রুত পায়ে ভীরু পদাতিক। গলা-কাটা রেসকোর্স ময়দানে সাহসের শব স্মৃতির খাটিয়া থেকে নামে না এখন; এ বাস্তব অভিমান ভারাক্রান্ত স্বদেশের নিজের মালিক। অতীত আয়না হলে কেউ কেউ কাঁচ ভেঙে ফেলে; তুমিও নিজেকে ভেঙে হতে চাও দূরের অতীত। হেঁটে আসে ঘনঘোর, বুকে তার স্তুতির সঙ্গীত; ভবিষ্যৎ পুড়ে যায় কেরোসিনে সোনামুখ জ্বেলে। হৃদয়জ শাসনেও রাজনীতি কচু-পাতা-জল টুপ করে ঝরে পড়ে ভবিষ্যৎ যখনই বিফল। ৫ বিফলতা ঘরহীন। কিছুকাল দুষ্ট ভবঘুরে। পরিচর্যা দিলে সেও গৃহমুখী, সফলতাময়। অকালে পাকে না কিছু, পাকলেও সমাদৃত নয় সহজ প্রাপ্তির ফলাফল। মৌনতার অন্ত:পুরে আমাকেও ভাবো কাঁচা স্বাধীনতা, বিনষ্ট অঙ্কুরে। স্বৈর স্রোতে চাঁদাবাজি, জলাবদ্ধ হৃদয়ের ক্ষয়; প্রণয়-ভিরুতা নিয়ে চেয়ে দেখি, তোমার অভয় নগর-বেদনা গায়, ডুবে যায় রুগ্ন সুরে সুরে? নেতার ব্যাবসা-গাছে জাদুপাখি-- কত কালো টাকা ডানায় বদলে গিয়ে লালিত ব্যাংকের সাদা বক। আমাদের উড়ো প্রেম নর্দমার কটূ গন্ধে ঢাকা; জল-কাদা মেখে আছে জোড়া প্রাণে সকল সড়ক। জীবনের কড়া নেড়ে টুংটাং চাবির গোছায় কতোকাল বেঁধে রেখে হাসি দিয়ে তালা খোলা যায়?
কাজী নাসির মামুন জন্ম: ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ খ্রি:। শৈশব থেকে বসবাস করছেন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায়। পেশা: সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজ মুক্তাগাছা, ময়মননিংহ। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: লখিন্দরের গান (একুশে বইমেলা ২০০৬) প্রকাশক: লোক অশ্রুপার্বণ (একুশে বইমেলা ২০১১) প্রকাশক: আবিষ্কার কাক তার ভোরের কোকিল (একুশে বইমেলা ২০১৭) প্রকাশক: প্লাটফর্ম রোহিঙ্গাপুস্তকে আত্মহত্যা লেখা নেই (একুশে বইমেলা ২০১৮) প্রকাশক: ঋজু মুহূর্তগুলো তরবারি উজান প্রকাশনা, ডিসেম্বর ২০২২ 'লখিন্দরের গান' কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ Song of Lokhindar Translated by Ahmed S. Kaderi ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় এ্যান্টিভাইরাস প্রকাশনি থেকে। স্বীকৃতি: কবিতাসংক্রান্তি সম্মাননা ২০০৭ লোক লেখক সম্মাননা ২০২০ এক সময় সম্পাদনা করতেন লিটলম্যাগ 'মেইনরোড'। গ্রামের পথে ভ্যানরিক্সায় চড়ে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। খাঁখাঁ রোদ্দুরের উদাসী সময়টা তার খুব ভালো লাগে।
Facebook Comments Box