পুজোর সময় এলেই বাঙালির কিছু কিছু প্রসঙ্গ স্মৃতিতে নিজে থেকেই ভেসে ওঠে। অবশ্য নিজে থেকে ভেসে ওঠে না। ট্রিগার করা হয়। যাই হোক, সেদিন এক অফিস কলিগ খুব আকুল হয়ে বলে উঠল, ‘সবার থেকেই এক কথা শুনি, আগে সব কিছু ভাল ছিল, আমাদের সময় এই ছিল, ওই ছিল! খুব বিরক্ত হয়ে গেছি।’ আগে একটা অন্য দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এই প্রসঙ্গে, কিন্তু সেদিন আমি তাকে উত্তরে বললাম, ‘খুব স্বাভাবিক, দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ গেটিং ওয়র্স! মানব সভ্যতা ভোগে যাচ্ছে!’ রাজি হবে নাকি অরাজি, ঠিক বুঝে না উঠতে পেরে একটা ভাবনাময় জগতে ঢুকে গেল। শুধু বাঙালি নয়, আমাদের সময় বা আগে সব ভাল ছিল এইধরনের কথা পৃথিবীর সর্বত্রই শোনা যায়। কিন্তু আমরা আজকে একটু বাঙালির প্রেক্ষিতে এই প্রসঙ্গ নিয়ে অল্প কিছু চিন্তাভাবনা এখানে তুলে ধরব।
একটা প্রচলিত বিষয়, যেটা সাধারণত বাংলার শিল্প-সাহিত্য জগতে লক্ষ্যনীয়, সাধারণ কথায় বলে, অতীতকে ভাঙিয়ে খাওয়া। বাংলার শিল্প-সাহিত্যের অবস্থা এতই খারাপ যে বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ, অবন ঠাকুর, নজরুল, শরৎচন্দ্র, মানিক, সত্যজিৎ, জীবনানন্দ, ঋত্বিক, মৃণাল – এই মোটামুটি গত দেড়শ বছরের আইকনদের সৃষ্টিকে কেন্দ্র করেই আজকেও আমাদের বাণিজ্যিক ও সমান্তরাল ধারার শিল্প-সাহিত্য ঘুরছে। বাঙালির একে-অপরকে আড়চোখে দেখা, অর্থাৎ পারস্পরিক ঈর্ষার দীর্ঘ ইতিহাস একটা জাতিকে পজিটিভ কম্পিটিশন থেকে ধীরে ধীরে সরিয়ে দিয়েছে, আরো সম্ভাব্য কারণ, নিজস্ব সাংস্কৃতিক ধারার বিস্মৃতি, অন্য জাতির কালচারাল ইনভেশন, ভাষার বিপন্নতা, এবং আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। আজকের দিনে একজন বাঙালি স্টলওয়ার্ট নেই আমাদের সামনে, যাকে দেখে অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়, অন্তত কিছু মানুষ তাকে অনুধাবন করলে একটা দিকদর্শন পাবেন। কনজিউমারিজম আর ভোটের রাজনীতি এইদুই প্রভাব যে সংস্কৃতি বিমুখতা তৈরি হয়েছে তার থেকে উদ্ধার পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। ফলে, বাঙালিকে যদি কিছু শৈল্পিক প্যাকেজ বিক্রি করতেই হয়, এই বাজার টিকিয়ে রাখতে হয়, তাহলে পুরোনো ক্যাসেট বাজানোই একটা অন্যতম মার্কেটিং স্ট্রাটেজি। এতে তত্ত্বগতভাবে না হলেও, তথ্যগতভাবে প্রমাণিত হয়, আগেই সব ভাল ছিল। এখানে তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে এত মেলা, এত উৎসব, এত বই বিক্রি, এত সিনেমা, নাটক, এত নতুন সৃষ্টি এগুলো কি কিছুই নয়? অবশ্যই এই সময়কে বিচার করা অত সোজাও নয়। কিছুই যে হচ্ছে না, সেটা বলা ভুল, কিন্তু যা হচ্ছে তার কোন গ্র্যান্ড সাংস্কৃতিক ইমপ্যাক্ট নেই বাঙালির উপরে, পুরোটাই অসামঞ্জস্যপূর্ন ও সম্পর্কবিচ্যুত। সময় বদলায়, সময়ের সাথে একটা জায়গার সাংস্কৃতিক ল্যান্ডস্কেপ বদলে যায়, সেই পরিবর্তনকে অ্যাড্রেস করার দরকার পরে। এটা নয় যে বাঙালি শুধু বাউল গান শুনবে, আজকের সাধারণ বাঙালি ডিস্কোয়, ক্লাবে যাবে সেটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। বিদ্যাসাগরের মত সমাজসংস্কারক, রাজা রামমোহন রায়ের মত ধর্মসংস্কারক, অক্ষয় দত্তের মত চিন্তাসংস্কারক এইধরণের ভূমিকা নেয়ার মত একা মানুষ তো দূরের কথা, কোনো কার্যকরী সংস্থাও নেই। তার্কিকতার ইতিহাস ভুলে বাঙালি বেছে নিয়েছে গড্ডালিকা। এই বেছে নেওয়াকে সে নাম দিয়েছে চয়েস। প্রধান কথা হল বাঙালি নামক জাতি তার সামগ্রিকতাকে হারিয়ে ফেলেছে।
সেদিন সমাজমাধ্যমে সুস্নাত চৌধুরির একটি লেখা পড়তে গিয়ে দেখলাম তিনি বলছেন, বাঙলায় থ্রিলার বই বিক্রির প্রবণতার রমরমা কিছুটা মেনে নেওয়া গেলেও নস্টালজিয়া প্রবণতাকে আর সহ্য করা যাচ্ছে না। চিত্রপরিচালক কিউ-এর ‘ফাক মানিক’ প্রতিক্রিয়া যা কন্ট্রভার্সিয়াল হলেও খুব অস্বাভাবিক নয়। বাঙালির শিল্পের জাবর কাটা আর স্ট্যাগ্ন্যান্সি অসহ্য। নবারুণ বর্তমান বাঙালির উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘অল দোজ গায়েজ আউট দেয়ার মেক সেফ ফিল্মস, সেফ প্লেজ, নট ওয়ান বোল্ড ফেইলিওর!’ কিন্তু বিষয় হল, যদি কিছু নতুন সৃষ্টির প্রতি বাঙালির ইতিবাচক মনোভাব না তৈরি হয়, নতুনের প্রতি সাহস না আসে, আর বাজার তাকে পুরোনো কাসুন্দির রুচিতেই বেঁধে রাখে তাহলে নস্টালজিয়া প্রবণতা থেকে বেরোনো যাবে কি?
নস্টালজিয়া একটি খুব গুরুত্বপূর্ন ইমোশন যাকে দুভাবে ভাবা যায়, ব্যক্তিগত ও সামগ্রিক নস্টালজিয়া। এই সামগ্রিক নস্টালজিয়াকে ব্যাবসাজগতে, বিশেষ করে বিজ্ঞাপন ও মার্কেটিং-এর জগতে প্রচণ্ড ভাবে স্টাডি করা হয়। অর্থাৎ অতীতমুখি করে দিয়ে তাদেরকে ভুলিয়ে রাখা যে আগে সবকিছু সহজ, সরল ও ভাল ছিল। বাংলার এক মহান ইউনিফায়েড অনুভূতি হল পুজোর গন্ধ। পুজো সংক্রান্ত এই যে সবরকম আকুলতাকে সে এক মর্মে, এক আবেগে বেঁধে নাম দিয়েছে পুজোর গন্ধ। কিন্তু এই ধরণের অনুভবকে কাজে লাগায় বাজার, তারপর তৈরি হয় এমন একটা কালেক্টিভ আবেগ যা শুধু কনজিউমার মার্কেটেরই কাজে আসে। এই গন্ধ কোথাও আসার আগে তাই আমরা বিলবোর্ডে-হোর্ডিংয়ে আসতে দেখি। আমি কলকাতার বুকে এমন বাঙালি দেখেছি যে পুজোর আগে কাশফুলের কথা বলছে কিন্তু জীবনে সেই ফুল দেখেনি। মহালয়া বলতে ভোরবেলায় বীরেন্দ্র ভদ্র শোনার জেসচারটাকেই বোঝায়। সত্যজিতের পথের পাঁচালি আমাদের কাছে এতই কাল্ট! যে অনেকে বলেন, পথের পাঁচালি সত্যজিতের লেখা। যত জঘন্যই বানানো হোক, সত্যজিৎ, মৃণাল, ঋত্বিকের বায়োপিক হলে তা দেখতে ছুটবে বাঙালি। উপরে উল্লিখিত তথ্যগুলো জানা খুব ক্রিটিক্যালি প্রয়োজনীয় নয়। কিন্তু লক্ষ্যনীয় এটাই যে, বাঙালি নিজেদের সাংস্কৃতিক এমনকি প্রাকৃতিক পরিসর নিয়ে অজ্ঞাত – তা সে যেমনই হোক। অনেক সময় ভাবি, এক এই দুর্গাপুজো না থাকলে বাঙালির আর কী আছে যা তাকে একটা জাতির সামগ্রিকতায় নিয়ে যেতে পারে! বইমেলা হয়ত দ্বিতীয় ব্যাপার যাতে কিছু মানুষ একত্রিত হন, বাকি আর কোন প্রেক্ষিত নেই। নেই রবীন্দ্রজয়ন্তী, নজরুলজয়ন্তী। আছে সবই ইতিউতি, কিন্তু হয় গলিঘুপচিতে হারিয়ে যাওয়া আর নাহলে সরকারি অনুদান প্ররোচিত। যেগুলোর কোনটাতেই আসল উদ্দেশ্য সম্পন্ন হয় না। কেবলমাত্র প্রতীকী অবস্থান নিয়ে থেকে গেছে। এইটাই প্রধান সমস্যা বলে আমি মনে করি, এই প্রতীকী অবস্থান, একটা কালচারাল হন্টিংকে না ধরতে পারা, না ছাড়তে পাড়া। লোকসংস্কৃতিতে ঈশ্বরের অবস্থান বাঙালি তার নেটিভ দার্শনিকতায় যেভাবে গ্রহণ করেছিল, সেই আন্তরিকতাকে ভুলে সে তামঝাম আর গ্র্যান্ড আস্ফালনে নেমেছে, ফলে আমাদের সমাজে ধীরে ধীরে দুর্গাপুজোও একটি প্রতীকী সমাহারে রূপান্তরিত হচ্ছে অতিদ্রুত এবং গত কয়েক বছরের মধ্যে এসেন্স পালটে একটি রাজনীতি প্রভাবিত সারবত্তাহীন দেখনদারিতে পরিণত হয়েছে। আধুনিক দার্শনিক অবস্থান থেকে যদি আমি এই ফেনোমেনা বিচার করি, আমার কাছে খুব স্বাভাবিক এই দিকপরিবর্তন। এই রকমই কোনদিকে তার যাওয়ার কথা ছিল। দার্শনিক অবনমন মানবিকতার একমাত্র প্রবাহমুখ। হ্যাঁ, আরো অনেক দিকেই তা প্রবাহিত হতে পারত, কিন্তু একটি নিশ্চিত ইতিহাস তাকে এদিকেই নিয়ে যাচ্ছে। ঈশ্বর সংক্রান্ত চিন্তায় আমি কোনোদিনই সেভাবে সংযুক্ত ছিলাম না। কিন্তু আমাদের সামাজিকতার ইতিহাস অবধারিত ভাবে ধর্মীয় রীতি ও ঈশ্বরচেতনাকে অন্তর্ভুক্ত করে। সুতরাং, এর সূত্র থেকে নিজেকে আমি সম্পূর্ন বিচ্যুত করিনি, বরং আমার অতীতকে ভাল করে চিনতে চেষ্টা করেছি। আমি ছোটবেলায় মুর্শিদাবাদের যে গ্রামে বড় হয়েছি, সেখানে আমাদের পাড়ার দুর্গামন্দিরে পুজো দিতে আসত, মুসলিম, বেদে ইত্যাদি অন্যান্য ধর্মসম্প্রদায়। তখন যিনি প্রধান পুরোহিত ছিলেন, তিনিই নিদান দিয়েছিলেন যে মা সবার, তিনি কোন জাতিভেদ করেন না। আমার নিজের দুই মুসলিম ধর্মাবলম্বী বন্ধু প্রতিমা বিসর্জনের সময় মূর্তি কাঁধে নিয়ে এগিয়ে যেত। দু-একজনের খুঁতখুতেমির বাইরে তেমন কিছু লক্ষ্যই করা যেত না। কিন্তু আজকে এই ঘটনা অসম্ভব। কিন্তু কোনো মুসলিম রেওয়াজের মধ্যে অবশ্য হিন্দুদের তেমন অংশগ্রহণ করতে দেখিনি। যদিও এটাও ভাবার যে তেমন সামাজিকভাবে উৎসবমুখর কোনো ইভেন্ট সে ধর্মে দেখিওনি, একমাত্র ব্যাতিক্রম – ঈদের দিনে কয়েকজনকে পাঞ্জাবি পরে কোলাকুলি করতে দেখা। প্রসঙ্গ এই আন্তর্ধমীয় মেলামেশার নয়, প্রশ্ন সহনশীলতার। আজকে চাক্ষুষ লক্ষ্য করতে পারি যে হিন্দু-মুসলিম আজ থেকে দশ বছর আগে যেখানে গলায়-গলায় ঘুরত, যার অন্যতম শক্তি ছিল সাংস্কৃতিক সার্বিকতা, আজ তাদের মধ্যে ধর্মীয় সচেতনতার নামে এতই বিষ ভরে দেওয়া হয়েছে যে তারা দুর্ভাগ্যজনকভাবে, নির্দ্বিধায়, আন্তরিক হতে পারছে না।
অতীত আমাদের টানে কেন? এর উত্তরে যেতে গেলে খুব গুরুত্বপূর্ণ এটাও, যে বর্তমানে আমরা অখুশি কেন। এই দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে আমাদের একই সময়ে শতাধিক সূত্রের ভাবনা নিয়ে একসাথে চলতে হয়। মতামত দিতে হয়, সিদ্ধান্ত নিতে হয়, দায়িত্ব নিতে হয়, অভিনয় করতে হয়, লুকোতে হয়, স্বার্থসিদ্ধির পেছনে নানান উপচার চালাতে হয়, সামাজিক ভার নিতে হয়, সাংস্কৃতিক ভার নিতে হয়, সাথে থাকে পরিবার, কাজ এইসবের সমন্বয়ে আমরা বিরাম পাই না। আমাদের মস্তিষ্ক অবধারিত ভাবে এই বিরাম খোঁজে। এবং স্মৃতিচারণের মধ্যে আমরা একপ্রকার শান্তি পাই কারণ, স্মৃতির সারল্য থাকে, তা এতগুলো সমান্তরাল সূত্র বহন করে না। আমরা সহজের কাছে নিজেদের সমর্পণ করি কারণ সেখানে আমাদের এই অভিনয় ও প্রমাণের বোঝা নিতে হয় না, নিজের অথেনটিক সত্তায় আমরা থাকতে পারি, যা আমাদের প্রকৃতির সাথে অনুরণিত করে, আরামবোধ জন্মায়। আমরা ঠিক একই কারণে গাছের পাতা নড়া, বিড়ালের খেলাধুলো, পাখিদের পোকামাকড় খাওয়া দেখতে আভ্যন্তরীণ প্রফুল্লতা বোধ করি। এই প্রত্যেকটা বৈশিষ্ট্যই আমাদের নস্টালজিয়ায় অবদান রেখে থাকে। নস্টালজিয়া, স্মৃতিচারণ আমাদের বর্তমানের অস্বস্তি ও উদ্বেগ থেকে এক অর্ধসত্য সারল্যের কাছে নিয়ে যায়। এই যেমন পুজোর সময় হলেই মনে পড়ে, শিউলিফুলের গন্ধ, ঘাসের উপর শিশিরের অনুভূতি, ফটকার বারুদের গন্ধ, বছরে একবার পাওয়া নতুন জামার আনন্দ, পড়াশোনাহীন কয়েকটা দিন, ঢাকের আওয়াজ, ভোগের খাবার, বিসর্জনের উদাসীনতা আরো কত কিছু, মনে পড়ে গরিব দুখী মানুষের দরজায় এসে দাঁড়ানো, মণ্ডপের পাশে বসে থাকা সারাদিন। ভাল খারাপ মিলিয়ে এক অদ্ভুত অনুভব। সোনালি দিন বা সময় কোনোদিনই ছিল না। আজও নেই। টেকনোলজির দৌলতে মানুষ অনেক কিছুই অ্যাচিভ করেছে। কিন্তু মানুষ সামগ্রিকতা থেকে ক্রমে সরে যাচ্ছে। তাই মানুষের যাবতীয় ক্রিয়াকলাপ স্বভাবতই প্রতীকী রূপ ধারণ করতে চলেছে। প্রেম, শিল্প, খাদ্য, চর্চা সবই তারা করার জন্য করবে আর মার্কেট তাকে নস্টালজিয়া বিক্রি করবে আর বলবে আগে সব ভাল ছিল – তখন মানুষ মানুষকে ভালবাসত, ঘেন্নাও করত। ভবিষ্যতের মানুষের কাছে যেদিন দ্বিতীয় মানুষ উপলব্ধ থাকবে না সেদিন হয়ত এই সম্পর্কগুলোও হিস্টরিক নস্টালজিয়ায় পরিণত হবে। প্রকারান্তরে বাঙালির সাথে এটাই হয়েছে। মজা করে বললে, হয়ত এটাই যে, যা পৃথিবী কাল করবে তা বাঙালি আজ। এই ঐতিহাসিক নস্টালজিয়া, বলা ভাল নস্টালজিয়ার হিস্টরিসিটি বাঙালি এতটাই অন্তঃকরণে ছড়িয়ে নিয়েছে যে তার ভবিষ্যতের প্রতি অন্ধ হয়ে পড়েছে। ভিসনলেস। যার বর্তমানে কিছু নাই, সেই আগে কী কী ছিল সেই নিয়ে হাত-পা ছোঁড়ে। একথা অস্বীকার যায় না যে পুরাতন প্রসঙ্গ কে চাষাবাদ করে যেতে হবে। কিন্তু পুরাতন সর্বস্ব হয়ে উঠলে সেখানে বিপন্নতা বিদ্যমান। সামগ্রিক বাঙালিই নিজেকে নস্টালজিয়া ট্রিগার করায়। তার উপর খাঁড়ার ঘা মার্কেট-ট্রিগার। এতে অন্ধ হয়ে সে নতুন ভাবনার পথ প্রায় হারিয়ে ফেলেছে।
এখানে আলোচ্য প্রত্যকেটা বিষয়ই বিস্তারের দাবি রাখে। তাছাড়াও দাবি রাখে একটা উত্তরের। অতীতমুখিনতা যদি রোগ হয়, এর প্রতিকার কী? আত্মসমালোচনা ও তার্কিক পরিসর যদি না তৈরি হয়, পজিটিভ প্রতিযোগিতা যদি না তৈরি হয়, যদি বাংলার ল্যান্ডস্কেপ ভোটকেন্দ্রিক অর্থসামাজিকতা ও বাজারদ্বারাই গ্রস্থ থাকে, যদি যুবশক্তিকে শিক্ষা আর জীবিকাহীনতায় অথর্ব করে রাখা হয়, তারা যদি নিজেদের একত্রধারায় না নিয়ে আসতে পারে তাহলে না ফিরবে সোনার বাংলা না তার সোনালি দিন। আদপেই এক খেয়াল নির্মিত ইউটোপিয়া হয়ে থেকে যাবে। এখানে নিরাশার কোনো জায়গা নেই। চরম আশাবাদের সঞ্চার বাঙালির মধ্যে ভীষণ জরুরি, জরুরি জেদ, ঐতিহ্যের চর্বিতচর্বণ নয়, জরুরি তাকে বিনির্মান ও বিবর্তনের এগিয়ে নিয়ে চলার মনন, মেধার বিকাশ ও তার যথাযথ পরিসর নির্মাণ।