গত কয়েকদিন ধরে একই চেষ্টা করে যাচ্ছে সে। সে মানে যার কথা বলছি সে হলো মুনিয়া। বাথরুমে যেয়ে কমোডটিকে জলে পরিপূর্ণ করে তার দিকে নির্নিমেষ চেয়ে থাকে সে। একা একা ঘুম ঘুম শরীরে, তছনছ হয়ে যাওয়া মন নিয়ে, চোখের ভিতরের সবটুকু অন্ধকার নিয়ে সে জলভর্তি কমোডের দিকে তাকিয়ে থাকে। জলগুলো কাঁপতে কাঁপতে একসময় স্থির হয়। স্থির হয়ে যেন অদ্ভুত অন্ধকার আয়না হয়ে ওঠে। আর তখনি তাতে সে তার মুখটি দেখার চেষ্টা করে। হাত দিয়ে স্পর্শ করে করে দেখে তার চোখ, যে চোখে সে সহস্রবার নিজের মৃত্যু দেখেছে। তার ঠোঁট যা জমাট রক্তচিহ্ন নিয়ে আকৃতি হারিয়েছে, তবু সে সেই ফোলা ঠোঁটকে একবার পরম আদরে স্পর্শ করে। ঘেন্না, ক্ষোভ, তীব্রবিষ সবকিছু মিলে যে দাবদাহ, তা হঠাৎ ঝিলিক দিয়ে ওঠে তার ক্লান্ত শরীরে। শ্বাসরুদ্ধ করে সে তার মুখটিকে দেখার চেষ্টা করে। ঝাপসা ভাবে তার মুখের ছায়া খেলা করে কমোডের জলের ভেতর। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর সে ক্লান্ত হয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। যে মুনিয়াকে সে জলের আয়নায় দেখতে চায়, আজও তার মুখটি সে দেখতে ব্যর্থ হয় ।
নিজেকে সে ভুলে গেছে অনেকদিন হলো। প্রায় সাত মাস। তার নামটিও আজকাল আর মনে পড়ে না। তবুও যখনই সে বাথরুমে আসে তখন অনেকটা সময় নিয়ে সে কেবলি ভাবতে থাকে। তার ভেতর থেকে অনেকগুলো চোখ জেগে ওঠে আনারসের হাজার চোখের মতো। উপর-নিচ নিকট-দূর সবকিছু একেএকে স্পষ্ট হতে থাকে এই গুমোট বাথরুমে। তার মাথার ভেতর থেকে হঠাৎ জেগে ওঠে তার হারিয়ে যাওয়া নাম। আর তখনই সে নামটি নিয়ে অস্থির হয়ে নিজের গায়েই তর্জনী দিয়ে নামটি লিখতে থাকে। প্রতিবার লেখার পর সে তার শরীরে এক অদ্ভুত কাঁপুনি টের পায়। অ›ধকার বিষণœ ঘরে যখন সে মরার মতো পড়ে থাকে, তখন পাশের ঘর থেকে এ বাড়ির মালকিন তাকে জোরে জোরে ডাকতে থাকে। ‘এই হারামজাদি ওঠ। কাস্টমার আইতাছে। ফোন করছিল। শিগগির আইসা পইরব।’ তালাবদ্ধ এই ঘরটিতে কোনো জানালা নেই । সাথে অ্যাটাচড্ বাথরুম। তাতেও নেই কোনো জানালা। আলো আসার মতো ছোট্ট জায়গাটুকুও সিমেন্ট দিয়ে প্ল¬াস্টার করে দেয়া হয়েছে। রুমে সুন্দর করে বিছানা পাতা একটি সুন্দর খাট। সুন্দর সব চাদর পাতা হয় । তাতে নানা রঙের বিন্যাস। অন্ধকার বিষণœ ঘরে সে ছটফট করতে করতে সেসব চাদরে ছড়িয়ে থাকা রঙের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে। ছোট ড্রেসিং টেবিলটির গায়ের আয়নাটিকে খুলে রাখা হয়েছে, সেই প্রথম দিন থেকেই। একটি চিরুনি, একটি বডিলোশন আর একটি এরোসোল ছাড়া এই ঘরটিতে আর কিছুই নেই। কোনোকিছু না পেয়ে এই এরোসোলটিকে একদিন সে ঠেঁসে ধরেছিল নিজের মুখে, সা সা শব্দে বায়বীয় এরোসোল তার ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল জেপলিন যুদ্ধবিমানের মতো। কিন্তু পার পায়নি সে। শব্দ পেয়ে তারা ছুটে এসে তার মুখে মলের শরবত ঢেলে দেয় আর বমি করায়। এরপর নিত্য বর্তমান হয়ে যায় তার জীবন। যখন খদ্দের আসে তখন পাশের ঘর থেকে দুটো মেয়ে এসে তাকে সুন্দর নতুন জামা পড়িয়ে দেয়। গায়ে লাগিয়ে দেয় বডিলোশন, আর নানা ধরনের পারফিউম। গত সাত মাসে মাত্র তিন দিন তাকে ভাত দেয়া হয়েছে। একধরনের লেবুর শরবত আর কিছু ঘুমের ওষুধ আর নিয়মিত নেশার ইনজেকশন তাকে দেয়া হচ্ছে। সেক্স বাড়ানোর জন্যও একটি ট্যাবলেট তাকে নিয়মিত গেলানো হয়। ভাতের জন্য বেশ কিছুদিন সে হাহাকার করেছিল । ওরা দেয়নি। তার বদলে দিয়েছে দু পিস পাউরুটি আর একটি আপেল। শরীরটা তখন এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে, সে আর দাঁড়াতেই পারছিল না। একদিন বড়ো থালায় ভাত দেয়া হলো। প্রথমে সে খেতেই পারছিল না,অনেকদিন পরে এত ভাত! চোয়ালটা ব্যথা করতে লাগল ।
অনেকদিন ধরে সে আর কিছুই অনুভব করে না। তার স্নায়ুতে কে যেন বেঁধে দিয়েছে মৃত্যু। মেরুদন্ড কি বেঁকে গেছে না কি ছিল কখনও? তবে প্রতিদিনের ওষুধগুলি না পেলে তার শরীরে তীব্র যন্ত্রণা হতে থাকে। আজও মনে হচ্ছে একটা তীব্র কালোবিষ শরীরের নানা জায়গায় ছোবল দিচ্ছে। শরীরের হাড়মাংসগুলো কাপড় নিংড়ানোর মতো নিজে থেকেই মোচড়াতে থাকে। তার চুল, নখগুলো নিয়মিত ছেটে দেয়া হয়। পাশের ঘরে থাকা দুটো মেয়ে আকলিমা আর কোহিনুর এইকাজগুলো নিয়মিত করে থাকে। গত সাত মাসের একটি দিনও সে এই বিপর্যস্ত সময়ের সাথে মানিয়ে নিতে পারেনি। অথচ আকলিমা আর কোহিনুর খুব সহজেই মেনে নিয়েছে এই জীবন। ওকে ড্রেস পরাতে পরাতে ওরা বলে, ‘বাড়ির পথ ভুইল্যা গেছি। তুমিও ভুইল্যা যাও। তুমি কি মনে কর, ইহান থেইক্যা বাড়াইয়া তুমি শান্তিতে থাকতা পারবা? সমাজ তোমারে মানব? ঘুইরা ফিরা আবার এই কামেই আওন লাগব। তোমার কোনদিন স্বামী হইব না, সংসার হইব না। ’
এসব কথা শুনতে শুনতে সে একবার পেছনের দিকে ফিরে যেতে চায়। সবকিছু স্পষ্ট মনে আসে না। তবু সে তার মায়ের মুখটি দেখতে পায় মনের চোখে। ভীষণ চঞ্চল আর স্ন্দুরী ছিল বলে মায়ের দুশ্চিন্তা ছিল তাকে নিয়ে। বাড়ির কোন কাজে মন ছিল না। স্কুল থেকে ফেরার পথে শিমুল গাছের নীচে বাদামি রঙের গমক্ষেতের দিকে তাকিয়ে সে মাঝে মাঝে থেমে পড়ত। বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে যেত সবসময়। চৈত্র মাসের ঝড়ে কখন কাঁচা আমগুলো পড়বে! তার জন্য বার বার পর্যবেক্ষণ করত আমগাছগুলোকে মনোযোগ দিয়ে। ডুমুর গাছের নীচে বসে কান পেতে রাখত চলে যাওয়া ট্রেনের শব্দ শুনার জন্য। কলেজে উঠতে না উঠতেই সে হঠাৎ বড় হয়ে গেল। সে বছরই তার বড়ভাই ফিরেছিল দীর্ঘদিন পর, জর্ডান থেকে। তার জন্য নিয়ে আসা অনেক উপহারের মধ্যে ছিল একটি মোবাইল ফোন। মোবাইল ফোনটির মধ্যে দিয়ে সে নানারকম দুঃসাহসিক ডিগবাজির সুযোগ খুঁজে পেল। একদিন তাদের বাগানের সজনে গাছ থেকে সজনে ফুল পেড়ে আনবার সময় যার ফোনটি বেজে উঠেছিল তার নাম এনামুল । তাদের গ্রামেরই ছেলে। ভদ্র ও মার্জিত। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে বলে তার সুনাম আছে । সে ভালোভাবে কলেজ পাশ করে বিএ ক্লাশে পড়ছে। বিদেশে পড়তে যাবার বড় ইচ্ছে তার। কিন্তু এত টাকা নেই যে সে পড়ার খরচ জোগাতে পারে। তবু সে প্রায়ই আসে মুনিয়ার ভাইয়ের সাথে দেখা করতে, আর বিদেশের গল্প শুনতে। মুনিয়ার সাথেও দেখা হয়, মিষ্টি মুখ, মিষ্টি হাসি, দু-একবার হাত ছোঁয়াছুঁয়ি। তার ফোনের জন্য মুনিয়ার সময় অপেক্ষায় কেটে যায় । কোনো এক বিকেলে মুনিয়ার বড়ভাইয়ের প্রবাসে ফিরে যাবার সময় ঘনিয়ে আসে। তাকে এগিয়ে দিতে ঢাকায় যায় এনামুল। সে ক্রমেই মুনিয়ার পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। মুনিয়ার আইএ পরীক্ষার সময়ও এগিয়ে আসে । বড় ভাই মুনিয়ার বিয়ের জন্য অনেক গয়না গড়িয়ে দেয়, আর মায়ের উপর নির্দেশ থাকে যেন পরীক্ষা শেষ হলেই ওর বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। মুনিয়া ইতিমধ্যে সমস্ত হৃদয় দিয়ে জেনে যায়, সে এনামুলকে ভালোবাসে। তাই বিপজ্জনক সময়টিকে ধীরে-সুস্থে পার করে। তার পরীক্ষাটিও ভালো হয়। এনামুলকে জীবনে খুঁজে পেয়ে সে পরিকল্পিতভাবে এগোবার চেষ্টা করে ।
সে বুঝে নিতে থাকে, তাকে এখান থেকে পালাতে হবে। তা না হলে অন্য কোনো অপছন্দের পাত্রের হাতে তাকে তুলে দেওয়া হবে। একদিন রাত নয়টায়, জোছনায় যখন রূপকথার মতো রহস্যময় হয়ে উঠেছিল গ্রামের পথঘাট, এনামুলের কোল ঘেঁষে ট্রেনে চেপে বসল সে। তাঁর কাঁপা কাঁপা হাতে বাড়ি হতে চুরি করে আনা গয়নার পুটলিটা অবলীলায় তুলে দিল এনামুলের হাতে। গয়নাটা সিন্দুক থেকে খুলে আনতে গিয়ে ভীষণ বুক ধকধক করছিল। একটা পুটলিতেই বাঁধা ছিল বাড়ির সব গহনা। গভীর সুখে সে এনামুলের ধূসর পাঞ্জাবি পরা বুকে মাথা রেখেছিল । ধোঁয়া ওঠা ট্রেনটি তাদের বাড়ির কাছের স্টেশনটিতে থেমেছিল খানিকক্ষণ, জোছনায় ভেজা ধানক্ষেতগুলো সরে যাচ্ছিল ট্রেনটি ছেড়ে যেতেই। ট্রেনের সেই দীর্ঘ হুইসেলের শব্দের সাথে মিলে গিয়েছিল একটি ভয়ংকর আর্তনাদের স্বর। অথচ ঠিক তখনি এনামুলের ধূসর পাঞ্জাবির বুকে সে খুঁজেছিল সর্ম্পকের অভিলাষ।
দীর্ঘদিন পর ঢাকায় এল মুনিয়া। এনামুলের হাত ধরে। সেই ছোটবেলায় একবার এসেছিল সে আব্বুর সাথে। আব্বু অসুস্থ ছিল, সময়টা তাকে কাটাতে হয়েছিল হাসপাতালে ঘুরেঘুরে। তাই ট্রেন থেকে নামার পরই সেই হাসপাতালের গন্ধটিই তার নাকে এল । এনামুলকে সে হাসতে হাসতে বলেও ফেলল সেই কথা। ভেতরে ভেতরে সে বুনে যাচ্ছিল নানা স্বপ্ন অন্যমনে। সিএনজিতে উঠে সে জানতে পারল তারা এই ভরদুপুরে উত্তরায় যাচ্ছে। এনামুলের এক ভাবির বাসায়। ওখানেই আজ বিকেলের পর তাদের বিয়ে পড়ানো হবে। মুনিয়ার চোখে আনন্দ, বিষ্ময় মাখামাখি করে। তার চুলের দুই বেনী, টিপ, সেফটিপিন সবকিছুই খুশির সাজে নেচে ওঠে। সে শক্ত করে এনামুলের হাতটি ধরে রাখে গভীর বিশ্বাসে।
সিএনজি থেকে নেমে তারা একটি একতলা বাড়িতে আসে। একটা লম্বা গলির মাঝামাঝিতে সেই বাড়িটা। চারপাশে অন্যকোনো বাড়ি নেই। মুনিয়া রোদজ্বলা দুপুর, তপ্তরোদ, ক্লান্তি, জীবনের পিপাসা সবকিছু নিয়েই সেই বাড়িটির ভিতর প্রবেশ করে। ভাবিটি তাকে শরবত দিয়ে আপ্যায়ন করে, তার বসার ঘরে তাকে বিশ্রাম নিতে বলে। মুনিয়ার কেবলি ঘুম জড়িয়ে আসছিল। কেন ঘুম পাচ্ছে সে বুঝতে পারল না। ভাবল, রাতের ট্রেনে ভাল ঘুম হয়নি। তাই ঘুম নেমে আসছে চোখে । সে এনামুলকে ডেকে বলল, তার শরীর ভালো লাগছে না। ভাবি এসে তাকে কোনার দিকের একটি ঘরে ঘুমিয়ে নিতে বলল । ঘন হয়ে ঘুম নামল চোখে। সন্ধ্যার কিছু পরে সেই ঘুম ভেঙে গেলে পরে জানল, এ বাড়িতে এনামুল নামে কেউ কখনও আসেনি। যার সাথে সে বাড়ি ছেড়ে এসেছে তার নাম ইলিয়াস। মুনিয়াকে এখানে দু লাখ টাকায় বিক্রি করে সে সবকিছু নিয়ে সে রাতেই গ্রিসে চলে যাচ্ছে।
মুনিয়া সেইসব শুনে উন্মাদিনীর মতো চিৎকার করে ওঠে। কেউ তার দিকে ফিরেও তাকায় না । তার আর্তস্বরের উপর টুৃটি চেপে ধরে ভাবি নামের মহিলাটি। ভীষণ জোরে মুনিয়ার গালের উপর বসে যায় মহিলাটির পাথর ওজনের চড়। ঘেন্না, ক্ষোভ আর তীব্র তেজ নিয়ে মুনিয়া দৌড়ে পালাতে চায় । হঠাৎ তার লম্বা চুলের গোছাটি মুঠিতে ভরে তাকে ঘরের দিকে হিড় হিড় করে টেনে আনে অন্য দুটি মেয়ে। তারপর দেয়ালের সাথে তার মাথাটিকে প্রচন্ড শক্তিতে ছুঁড়ে দেয়া হয় । তাৎক্ষনিক আঘাতে সে অনেকক্ষণ জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে থাকে ।
যখন রাত নেমে এল, অন্ধকার ঘরে সীমাহীন মাথার যন্ত্রণার মাঝে, অর্ধেক চেতনার মাঝে সে ঝাপসা চোখে দেখল চারটি অপরিচিত মুখ। উঠে বসার চেষ্টা করল সে। হঠাৎ শরীরের নীচের অংশে হাত দিয়ে দেখে তার সেলোয়ারটি নেই। আতঙ্কে জোরে চিৎকার করে উঠতে কোনো একটি হাতের জোর ধাক্কায় আবার বিছানায় পড়ে গেল সে। অন্য একটি হাত ততক্ষণে তার মুখে সজোরে ঢুকিয়ে দিচ্ছিল অনেকগুলো টিস্যু পেপার। কসটেপ দিয়ে মুড়ে দেওয়া হলো তার ঠোঁটের চারপাশ। আরেকজন তার ছটফটানো পা দুটো চেপে ধরল। তার জামাটি ছিঁড়ে তারা ছিন্নভিন্ন করল। আছড়ে-পরা শরীর-মনে আর কোনো শক্তি অবশিষ্ট নেই। ইতস্তত ভেসে আসে তাদের বিচ্ছিন্ন কথা। তারা সবাই শিক্ষিত লোক। একজন নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার বলল। দুজন ব্যবসায়ী। অন্যজন তাদের তিনজনের সাথে তর্কে লিপ্ত হলো। তর্কের বিষয় কে প্রথম তাকে ভোগ করবে! ভার্জিনিটি শব্দটি তারা হাসতে হাসতে বলছিল। তার মনে হলো সমুদ্রের ফুঁসে ওঠা ঢেউয়ের ভেতর মৃত লাশ দেখে যেন হাঙরেরা খলখলিয়ে হাসছে। প্রত্যেকের হাতে ছিল মদের গ¬াস। তারপর তারা টচ্ করে সিদ্ধান্তে এল। যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে, নিজের মৃত্যু দেখতে দেখতে কখন যেন ছোট্ট মুঠিতে সে মহাঅন্ধকারকে আঁকড়ে ধরে থাকে। দিকহীন, তলহীন, শেষহীন এক নিরূদ্দেশ জীবন চোখ বুঁজে ফেলে ।
বাথরুমের কমোডের জলে নিজের অস্পষ্ট মুখ দেখতে দেখতে তার অনুভবগুলো ফিরে আসতে চায়। সে এখান থেকে পালাবার কথা ভাবে। নিজের নামটিকে ফিরে পাবার কথা ভাবে। তাই সে আঙুলের মাথায় জল নিয়ে টাইলসের গায়ে লিখে রাখে তার নাম অসংখ্যবার। রুমের টেবিল ফ্যানের হালকা বাতাসে জল দিয়ে লেখা নামটি একবার স্পষ্ট আরেকবার অস্পষ্ট হতে থাকে ক্ষণে ক্ষণে।