================================================================
================================================================
রাষ্ট্র সর্বশক্তিমান। কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক রাষ্ট্রের শাখাপ্রশাখা বিস্তৃত করে। রাষ্ট্র সর্বদা নাগরিককে বিশ্বাস করাতে চায় সুশাসন চলছে। স্থিতাবস্থা সবচেয়ে কাঙ্খিত। আর্থ-সামাজিক পরিসরে কোথাও কোনও অসুখ নেই। নাগরিক মুখ ফুটে যদি কিছু বলে, তা যেন স্বস্তিবাক্য হয়, তা যেন শাসনের শৃঙ্খলকে বিঘ্নিত না করে! যদি কখনও রাষ্ট্রের অপ্রিয় বাক্য নাগরিক উচ্চারণ করে, যদি কখনও সেই স্বর সমস্বর হয়ে ওঠে, তাহলে তা ‘অশান্তি’, তাহলে তা ‘দ্রোহ’। শাসকের পবিত্র কর্তব্য সে বিরোধকে শমে আনা। অস্বস্তির স্বরকে দমন করা। তথাকথিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেও এহেন রীতিপ্রবাহের বাত্যয় ঘটে না। অস্বস্তির স্বরকে যত বেশি মাত্রায় দমন করা হয়, নাগরিককে চুপ করিয়ে রাখার নীতিকৌশল যত বেশি মাত্রায় প্রযুক্ত হয়, সেই অনুযায়ী রাষ্ট্রের স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠিত হয়। আর, ফ্যাসিস্ত শাসনে সেইসব নীতিকৌশলের দমন প্রবলতর। শাসকশ্রেণির মতাদর্শ অপ্রতিরোধ্য, অবাধ গতিতে দাপিয়ে বেড়ায়। নাগরিকের চেতনাকে গ্রাস করে। কথন, বাচন, আচরণের ওপরে আধিপত্য করে। চুপ থাকাটাই নিয়ম হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে নাগরিকরাও সয়ে যায়। সম্মতিও দেয় তাতে। সর্বজনমান্য, স্বাভাবিক, পালনীয় রীতি হয়ে ওঠে এই চুপ থাকা।
#
ফ্যাসিস্ত শাসন কিছু নৈতিকতার গুরুভার চাপিয়ে দেয় নাগরিকদের ওপর। ধীরে ধীরে গ্রাহ্য হয়ে যায় সেটাই। এই চাপানো-নৈতিকতার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললেই, তা যেমন রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে গণ্য হয়, তেমনই সংখ্যাগুরু গণশত্রু বানিয়ে নেয় তাকে। কেউ কেউ তবু সংকটমুহূর্তে জেগে থাকেন। সংখ্যাগুরুর জনতোষকে তোয়াক্কা না ক’রে সরব হন। দ্রোহমতামত গড়ে তুলতে চান। আইন, অসম্মান, নির্যাতন, নিঃসঙ্গতার সব ঝুঁকি স্বীকার করেও সরবতার আলোকবর্তিকা হাতে নিয়ে এগোন। কিন্তু, সব নাগরিক কি এতটা ঝুঁকি নিতে পারে? প্রবল শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় মতাদর্শগত প্রতিষ্ঠানগুলির বিরুদ্ধে নিরন্তর সক্রিয়তা জিইয়ে রাখার ঝুঁকি নিতে পারে? কখনও বাধ্যতা কখনও ব্যক্তিগত আপস- ফ্যাসিস্ত বা স্বৈরাচারী শাসন সয়ে নেওয়ার প্রহর বেড়ে যায়। হাইনৎস লাইপম্যান অধুনাবিস্মৃত এক চরিত্র- নাজি উত্থানপর্বে জার্মানির কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন। তাঁর লেখা একটি স্মৃতিকাহিনী ‘অগ্নিগর্ভ’ নামে অনূদিত হয়েছিল বাংলায়। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় লিখেছিলেন ফ্যাসিবাদ কীভাবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে, সব বিরোধী স্বরকে কীভাবে চুপ করিয়ে দেয়। নির্যাতন, অসম্মান, মিথ্যা অভিযোগ, বন্দিত্ব সয়েও প্রতিবাদী আলো জ্বালিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। পারেননি। ভগ্নহৃদয়ে লিখেছিলেন যে, তাঁর এক সহযোদ্ধা কারাবাসের পরে বাইরে বেরিয়ে দেখলেন বাইরের পৃথিবী কেমন উদাসীন, নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে হিটলারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিয়েছে। চুপ ছিল নাগরিক সমাজ। চুপ ছিল সিংহভাগ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। চুপ ছিল ‘আচ্ছে দিন’ দেখতে চাওয়া জাত্যাভিমানী বহু মানুষ। লাইপম্যান সেই সব নীরবতার অন্ধকারের উদ্দেশে লিখেছিলেন, “তাই আমরা রক্ত-বিলিপ্ত পদদলিত মুখ তুলে, আমাদের বিচূর্ণ দেহ নিয়ে জিজ্ঞেস করছিঃ ‘এখনও চিৎকার করে উঠছ না কেন? সময় কি আসে নি? আসে নি?’”
স্যাভিয়েলা ডেভিস একটি প্রবন্ধে উল্লেখ করছেন ১৯৪১ সালের ইতালির জনগণের অবস্থান- তারা সিংহভাগ ফ্যাসিস্ত নীতির প্রতি বিশ্বস্ত ছিল এবং বিনাপ্রশ্নে মেনে নিত। ইতালির প্রেক্ষাগৃহগুলিতে সে সময় ‘জিওর্নালে লুচে’ বা বিশেষ নিউজরিল দেখানো হত। দারুণ উত্তেজক, নাটকীয়তায় ভরা নিউজরিলগুলি ফ্যাসিস্ত প্রচারোদ্দেশে বানানো। সমাজের সর্বস্তরের সর্বশ্রেণির মানুষের বিরুদ্ধে বার্তা থাকত তাতে- উৎপাদনে উৎসাহ এবং রাষ্ট্রভক্তিই প্রধান ছিল। আর, প্রতিটি নিউজরিলের শেষে থাকত ফ্যাসিবাদের অমোঘ প্রচারবাক্য- “চুপ! শত্রুর কান খাড়া! এখন একদম চুপ!” যেকোনও অন্তর্ঘাত কিংবা দ্রোহমূলক পরিস্থিতি তৈরি না হতে দেওয়ার জন্যে নীরবতাই শ্রেষ্ঠ অস্ত্র। নাগরিককে চুপ করিয়ে রাখা ফ্যাসিবাদের বিস্তৃতির পথ সহজ করে আরও। কখনও জাতীয়তাবাদের দোহাই, কখনও সুশাসনের, কখনও রাষ্ট্রভক্তির কখনও স্রেফ সামরিক সংকটের দোহাই। নাগরিক যদি শাসনব্যবস্থার বিচ্যুতি নিয়ে মুখ না খোলে, তাহলে শাসক নিরাপদ থাকে। নাগরিকের সম্মতি শাসক কোনও না কোনওভাবে আদায় করে নেয়। যদি নাগরিক শাসনের সব নীতিতে সম্মতি নাও দেয়, অন্ততঃ বিরোধিতা যেন না করে- শাসকের সজাগ দৃষ্টি সে দিকে। ফ্যাসিবাদের বিরোধিতা মানে ওই আরোপিত নৈতিকতা ও মূল্যবোধের বিরোধিতা করা।
আন্তর্জাল ও সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে নাগরিককে চুপ করয়ে দেওয়ার আরেক হাতিয়ার আন্তর্জালিক আদানপ্রদান বন্ধ ক’রে দেওয়া। কোনও অঞ্চল ‘অশান্ত’ হয়ে উঠলে বা কোনও অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক অশান্তি উদ্ভূত হলে বা কোনও অঞ্চলের মানুষ শাসকের জারি করা শৃঙ্খলা না মানলেই আন্তর্জালিক পরিষেবা বিচ্ছিন্ন ক’রে দেওয়া হয়। ‘গুজব ছড়াবে’ অজুহাতে শাসক নাগরিকদের আন্তর্জালিক আদানপ্রদান বন্ধ রাখে। অথচ কে না জানে যে, সবথেকে বেশি গুজব শাসকই তৈরি করে, সবথেকে বেশি ভুয়ো/উড়ো খবর শাসক-মতাদর্শে বিশ্বাসীরাই ছড়িয়ে দেয়। তাতে শাসকস্বার্থ অক্ষুণ্ণ থাকে। শাসক ও সরকার না চাইলে যে দাঙ্গা হয় না, তা ইতিহাসসম্মত সত্য। সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ, উপদ্রুত অঞ্চলে নিপীড়িতের অধিকার সুনিশ্চিত করা, নিপীড়িতের বয়ানকে মান্যতা দেওয়া ইত্যাদি আশু কর্তব্য। সদিচ্ছা জরুরি। কিন্তু তা পালন হয় কি? আন্তর্জালিক যোগাযোগ বন্ধ করার থেকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বন্ধের আন্তরিক উদ্যোগ অনেক বেশি কার্যকরী তা জানা সত্ত্বেও রাষ্ট্র প্রথম পথটিই বেছে নেয়। কারণ, এতে সব দোষ নাগরিকদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া যায়। আর, লোকদেখানো এমন উদ্যোগের আড়ালে শাসক নিজের প্রয়োজনমতো ন্যারেটিভ বানিয়ে নিতে পারে। চুপ করয়ে দেওয়ার এই খেলায় সাম্প্রতিক অতীতে সবচেয়ে বেশি ভুগেছেন কাশ্মীরের মানুষ। রাষ্ট্রের জবরদস্তির বিরুদ্ধে কোনও স্বর যাতে বাইরের দুনিয়ায় পৌঁছতে না পারে, তাই চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। বুলেট-বুট-আফস্পার থেকেও এই যুগে বেশি কার্যকরী বোধহয় আন্তর্জালিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ক’রে দিয়ে টুঁটি টিপে ধরা। টুঁটি টেপার পরের ছটফটানির রুদ্ধস্বরটুকুও যাতে বাইরের কেউ শুনতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করতেই ২০১৯ সালের অগাস্ট মাস থেকে প্রায় বছর দেড়েক ইন্টারনেট কখনও সম্পূর্ণ বন্ধ ক’রে কখনও আদ্দিকালের নামমাত্র ২জি পরিষেবা দিয়ে জম্মু-কাশ্মীরে দমনমূলক আধিপত্য বজায় রেখেছিল রাষ্ট্র। একদিকে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’-র ঢক্কানিনাদ, অন্যদিকে ইন্টারনেট বন্ধের নীতি। বাকি ভারতের অল্প কিছু মানুষ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছিলেন, জনমত সংগ্রহ করেছিলেন এবং জবরদস্তি নীরবতার ভেতরে গুমরে ওঠা প্রকৃত স্বর শুনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রের ‘চুপ করিয়ে দেওয়া’-র নীতির অভিঘাত ছিল প্রবলতর।
#
ভার্চুয়াল আমাদের যতটা সরব করেছে, ততটাই নীরবতার উপায়ান্তর (অপশন) দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে নাগরিকদের মতামত যত বেড়েছে, ঠিক ততটাই প্রয়োজনীয় মতামত হারিয়ে গেছে। সমালোচনার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদের মুখরতা তো তীব্র হয়নি অত। প্রতিরোধের সঙ্ঘবদ্ধতা তো তার পরের ধাপ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্লিক ক’রে দেওয়া রিয়াকশন আর কমেন্ট-শেয়ারে প্রতিফলিত ক্রোধ, শোক, বিরুদ্ধতার আয়ু কতটুকু? বিশ্বায়নি যুগে আন্তর্জাল, সোশ্যাল মিডিয়া ও নিউজপোর্টালের বাড়বাড়ন্তে সংবাদপ্রাপ্তি সহজ। ইস্যুর সংখ্যাও প্রচুর। এক ইস্যু পাল্টে আরেক ইস্যু প্রধান হয়ে উঠতে কয়েক ঘণ্টা মাত্র লাগে। মুহুর্মুহু পাল্টে যাওয়া ইস্যুতে প্রতিবাদের প্রতিক্রিয়া, সঘোষ বিরোধিতা কি একাগ্র হতে পারে? তা কেবলই ছড়িয়ে ঘেঁটে যায়। জনগণের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া থাকে, কিন্তু সেই প্রতিক্রিয়ার লালনে সংগঠিত বিরুদ্ধস্বর কতটা অবয়ব পায়? যে ইস্যুতে সরবতা আশু প্রয়োজনীয় ছিল, তা নিভে যায়। অথবা, ইস্যু থেকে ইস্যুতে ক্লান্ত জনমানস চুপ থাকে। সর্বোপরি, গণমাধ্যম ঠিক ক’রে দিচ্ছে কোন ইস্যু ট্রেন্ডিং হবে আর কোনটা হবে না। নিউজফিডে, ব্রেকিং-এ সেগুলোই ক্রমাগত ভেসে উঠতে থাকে। অন্য প্রয়োজনীয় ইস্যু চাপা পড়ে যায়। চুপ থেকে যায় প্রতিক্রিয়া।
এরই সঙ্গে জুড়ে যায় নির্বাচিত প্রতিবাদধরণ তথা সিলেক্টিভ প্রোটেস্ট পলিসি। শাসকের কোনও নিঘিন্নে কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রে দ্বিধান্বিত মনোভাব। কোন আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা সমীচীন হবে, কোনটার বিরুদ্ধে হবে না। কতটুকু প্রতিবাদ ন্যায্য হবে, কতটুকু হবে না। এরই সঙ্গে থাকে হোয়াটঅ্যাবাউটারি। আগের কোন কোন ঘটনায় প্রতিবাদ করা হলে, তবেই বর্তমান অপশাসনের প্রতিবাদ করা যাবে- ঠিক ক’রে দিতে চায় কিছু সামাজিক ক্ষমতাবান। পূর্বতন শাসকের জনবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে বর্তমান শাসকের জনবিরোধী প্রক্রিয়ার তুল্যমূল্য বিচার ক’রে প্রতিবাদের মাত্রা মেপে দিতে চায় সাংস্কৃতিক পুঁজিওয়ালা কিছু লোক। আগের শাসকের বিরুদ্ধে কারা কারা সরব হয়েছিল, ফলে বর্তমানের প্রতিবাদে তাদের সামিল করা যায় কি না- তাই নিয়ে বিতর্ক। একথা অনস্বীকার্য যে, ইতিহাস ভুলে যেতে নেই। ক্ষমতাকাঠামোর ইতিহাসে চাপা পড়ে যাওয়া বিরুদ্ধতার সামান্য স্বরটুকুও নিরন্তর খুঁজে দেখা প্রয়োজন। পূর্বজমানার সব শাসকই পরবর্তী জমানায় তুলসীপত্রসম পবিত্র দাবি করে নিজেদের- উত্তরসত্য জমানায় নিজেদের কৃতকর্মের ইতিহাস ঘেঁটে দিয়ে সব অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়ার কসুর করে না। বিভিন্ন উপায়ে ইতিহাসের উপাদানগুলিকে মুছে ফেলতে চায় বা বিকৃত করতে চায় বা তথ্যের অপলাপ করে। বিরোধিতা চুপ করিয়ে দেওয়ার বিভিন্ন উপাদানের বিরুদ্ধে সরব থাকা আসলে শাসিতের জেগে থাকার ধর্ম পালন করে। নিশ্চয়ই। কিন্তু, পূর্বতন অপশাসনের সঙ্গে তুলনামূলক বিচারে বর্তমান অপশাসনের মাত্রা মাপা যায় না। বর্তমান অপশাসনের গুরুভার লঘু হয়ে যায় না। বর্তমানের অসহনীয় পরিস্থিতি সঘোষ সরবতার দাবি করে। হোয়াটঅ্যাবাউটারির অজুহাতে চুপ থাকা এবং বিগত শাসনের অন্ধকার মনে পড়িয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া আদতে শাসকশ্রেণির এঁচে দেওয়া পদ্ধতি। শাসকের রঙ যাই হোক, শাসনপদ্ধতির বুননে বহু সাদৃশ্য ও আন্তঃবয়ন থেকে যায়। প্রতিবাদের নির্বাচিত রকমফের বেছে নেওয়া কিংবা শাসিতের মরণপদ্ধতির তুলনা টেনে প্রতিবাদে মুখর হওয়া আসলে শোষকের মতাদর্শকে ন্যায্যতা দেয়। শাসকের প্রতি ভয়ে হোক, ভক্তিতে হোক বা ব্যক্তিগত সুবিধাবাদে হোক, চুপ তারাই থাকতে চায় যারা ‘তবে’, ‘কিন্তু’-র যথেচ্ছ ব্যবহার করে। স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে বিশেষতঃ ফ্যাসিবাদী মতাদর্শের সমালোচনায় উচ্চারিত/লিখিত বাক্যে তবে-কিন্তুর প্রয়োগ শাসকের অপরাধকে লঘু ক’রে দেয় না কি? সমালোচনাবাক্যের পরে জুড়ে নেওয়া ‘কিন্তু সংখ্যালঘুরাও’, ‘তবে, ওই জনজাতি’, ‘কিন্তু লোকেরাও’ ইত্যাদি অংশগুলি বিপজ্জনক। এই প্রবণতা যত বাড়ে, চুপ-শাসনের অবিবেকী রাত তত ঘন হয়।
#
শাসক দখল ক’রে নেয় সংস্কৃতি। যে সংস্কৃতি প্রতিবাদের ভাষাটুকু তৈরি ক’রে দেয়, যে সংস্কৃতি মেনে না-নেওয়ার পাঠটুকু জারি রাখে, সেই সংস্কৃতিটাই গায়েব ক’রে দিলে? গণতন্ত্রে ‘না’-এর পাঠ অত্যাবশ্যক। ডিসেন্ট তথা ভিন্নমত গণতন্ত্রের সুস্থতার লক্ষণ। শাসকের নীতিতে অসম্মতি জানানো গণতন্ত্রে নাগরিকের মৌলিক অধিকার। ডিসেন্ট তৈরি হওয়ার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস রয়েছে। তাৎপর্য রয়েছে। তাকেই হাপিস ক’রে দিলে ডিসেন্ট তৈরি হওয়ার ধারাবাহিকতা নষ্ট ক’রে দেওয়া যাবে। মতানৈক্যকে দাবিয়ে দেওয়ার রাষ্ট্রীয় পদ্ধতি- দেশদ্রোহী/রাষ্ট্রদ্রোহী তকমা এঁটে দেওয়া, ইউএপিএ-র মতো আইনে অভিযুক্ত করা এবং সন্ত্রাসী-অগণতান্ত্রিক-ষড়যন্ত্রকারী ইত্যাদি অভিধা দিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া। শুধু কেন্দ্র সরকার না, প্রত্যেক রাজ্য সরকার কাল ও স্থানবিশেষে এই পদ্ধতিই প্রয়োগ করে। প্রতিবাদ ও বিরুদ্ধ-মতামতকে রাষ্ট্রদ্রোহী দেগে দেওয়ার বিরোধিতা ক’রে বিচারপতি চন্দ্রচূড় সিং বলেছিলেন, “The blanket labelling of dissent as anti-national or anti-democratic strikes at the heart of our commitment to protect constitutional values and the promotion of deliberative democracy”। ডিসেন্ট তৈরি হতে এবং অসম্মতির পাঠ লালন করতে সাংস্কৃতিক পরিসর অতি জরুরি। প্রজন্মান্তরে তা বহমান থাকে। বর্তমানের অভিজ্ঞান হয়ে থাকে। ফ্যাসিবাদী জমানায় এই সংস্কৃতি বিপন্ন হয় সবচেয়ে আগে। মৌনতা হিরণ্ময় না, মৌনতা পঙ্কিল তখন। বীভৎস ভয়ের। ভিন্নমত ব্যক্ত না ক’রে শাসকের হ্যাঁ-তে হ্যাঁ মেলানো দেশের রাজনীতির দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি ক’রে দেয়। সামাজিক ক্ষমতাবানেরা তা জেনেও চুপ-সংস্কৃতি উদ্যাপন ক’রে চলেন।
যে কোনও শাসনকালে শ্রমজীবী, প্রান্তিক, নিম্নবর্গের ওপরে শোষণ সবচেয়ে বেশি হয়। তাঁরা সরব হন। কখনও তাঁদের সরবতা প্রয়োজনীয় বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে, জনমতকে প্রভাবিত করতে পারে। কখনও সেসব স্ফূলিঙ্গ দাবানল হতে পারে না। শাসক হয় গা-জোয়ারি সক্রিয়তায় চুপ করিয়ে দেয় নয়তো তা বৃহত্তর সামাজিক গতিপ্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তবে, এই মানুষগুলির সরবতার একটা বড় প্রভাব সাংস্কৃতিক-সামাজিক পরিসরের তথাকথিত অগ্রণীদের চিন্তাচেতনার সঙ্গে জুড়ে থাকে। সাহিত্যিক, কবি, শিল্পী, গায়ক, শিক্ষাবিদ এঁরা জনমানসের গভীর প্রতিক্রিয়া এবং সরবতার অভিব্যক্তিগুলি ধরতে পারেন। তারপর নিজেদের শিল্পে, গানে, কবিতায়, সাহিত্যে, শিক্ষাদানের মধ্যে দিয়ে সেইসব অভিব্যক্তিগুলিকে নির্দিষ্ট অবয়ব দেন এবং বৃহত্তর জনমানসে চারিয়ে দেন। ডিসেন্ট তৈরি হওয়ার এবং বহমান রাখার এও এক ইতিহাসসিদ্ধ প্রক্রিয়া। কিন্তু, স্বৈরাচারী শাসক এই প্রক্রিয়াটিকে স্তব্ধ ক’রে দিতে চায়। সাংস্কৃতিক ভাষাকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে চায়। ওইসব শিল্পী, কবি, গায়কদের ব্যক্তিগত আপসের দুর্বলতা খুঁজে খুঁজে খরিদ ক’রে নেয়। সরকারি পদ দেয়। বৃত্তি দেয়। পুরষ্কার দেয়। আপস-প্রলোভনের হরেক পথ খুলে দেয়। তাঁরা অধিকাংশ আর ঋজু থাকতে পারেন না। নুয়ে পড়েন শাসকের প্রতিষ্ঠানের সামনে। চুপ ক’রে যান। তাঁদের গান, কবিতা, ছবি, প্রদত্ত-শিক্ষা ইত্যাদি নিপীড়িত জনগণের নাড়ির গতি বুঝতে পারে না বা বুঝতে চায় না আর। চুপ থাকার সংস্কৃতি ক্রমশঃ গেঁড়ে বসে নিরাপদ স্থিতাবস্থায়। আর, যাদের এভাবে খরিদ করা যায় না? তাদের জন্য ইউএপিএ, তাদের জন্য ভীমা কোরেগাঁওর মতো মামলা, তাদের জন্য বুলেট, তাদের নিঃসঙ্গ ক’রে দেওয়ার হাজারো পদ্ধতি। তবু, আশার কথা এই যে, সরবতার বীজ ঠিক টিঁকে থাকার অভিমুখ খুঁজে নেয়। ক্ষমতার বিরুদ্ধে কথা বলার ঋজুতা।
রাষ্ট্র সর্বতোভাবে ময়দানে নামে। একদিকে সমাজের খুড়োর কলে নৈতিকতা আর মূল্যবোধের স্বাদু খাবার ঝুলিয়ে রাখে অন্যদিকে শাসকই সবচেয়ে বেশিবার সেই নৈতিকতা আর মূল্যবোধের রীতিগুলো ভাঙে। জনগণকে দিয়ে অনুশীলন করিয়ে নেওয়ার অনুজ্ঞাসুলভ নির্দেশ রয়েছে। শাসকের কোনও দায় নেই সেইসব নৈতিকতা অনুশীলনের। তাই বিধায়ক কেনা-বেচা, সাংসদ কেনা-বেচা আর সরকার কেনা-বেচা গণতন্ত্রের শ্বাসপ্রশ্বাসে সহজ হয়ে আসে। শাসক মাঝেমাঝেই অর্থ ও ক্ষমতার প্রলোভনের থলি নিয়ে বেরোয়- উচ্ছে-পটল-বেগুন কেনার মতো কিনে নেয় অন্য দলের প্রতিনিধি। এতে শাসকের সংসদীয় সংকট কিছুটা লাঘব হয় এবং বিরোধী প্রতিনিধির সংখ্যা কমে। পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র থেকে অন্যান্য রাজ্য- এই মডেল রমরমিয়ে চলছে। তবে, বিকিয়ে যাওয়াদের দায়ও তো থাকে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি কখন অন্য দলে চলে যাবে তা দেবা না জানন্তি কুতো মনুষ্যা! অথচ জনগণ তাকে ভোট দিয়েছিল কিছু আশু সুরাহা চেয়ে, সেই জনপ্রতিনিধি বা তার দল মন্দের ভাল বলে। গণতন্ত্রে জনপ্রতিনিধি কেনাবেচা বা প্রার্থীদের মুহুর্মুহু দলবদল শোভন নয়। কিন্তু, সংসদীয় রাজনীতিতে এই শোভন-অশোভনের সীমারেখাগুলি ক্রমেই ঝাপসা হয়ে আসছে। গণতন্ত্র কোনও পূতপবিত্র শাসনপ্রণালী না। গণতন্ত্র মহত্ত্ব মহানুভবতার অনুশীলনক্ষেত্র না। গণতন্ত্রে এবং গণতন্ত্রকে কেনা-বেচার বাজারমূল্য রয়েছে। ‘গণতান্ত্রিক’ পদ্ধতিতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির ধার ও ভার অনুযায়ী ক্রয়-বিক্রয় হয়। যে গতকাল বিরোধী চেয়ারে বসে সমালোচক ছিল, সে আজ শাসকদলে গিয়ে চুপ! যে বহুদিন শাসকঘনিষ্ঠ থেকে আখের গুছিয়েছে, সে কিছুদিন বিরোধী দলে গিয়ে প্রয়োজনাতিরিক্ত মুখর। যে সামনে অনমনীয় মতাদর্শের ধ্বজা তুলে ধরছে, সেই ব্যক্তিগত পেশার অজুহাতে ফ্যাসিস্ত দলের প্রতিনিধির হয়ে আদালতে সওয়াল করছে। অথচ এদের নিয়েই রাষ্ট্রের এঁচে দেওয়া নৈতিকতা-মূল্যবোধের দেখনদারি চলে। কখন চুপ থাকতে হবে, কখন সরব হতে হবে, এরাই নির্দেশ দেয়।
#
মানুষকে চুপ করিয়ে দেওয়ার একটা জবরদস্ত আইনি পদ্ধতি ইউএপিএ। অ-বিজেপি শাসকরা মাঝেমাঝেই নাটক ক’রে অমানবিক আইন তথা আফস্পা এবং ইউএপিএ-র বিরুদ্ধে বিবৃতি ঝাড়ে। এলোথেলো নাটকীয় চিঠিতে সই ক’রে ইউএপিএ-র বিরোধিতা করে। সেইসব নাটুকে সংসদীয় দল যে যে রাজ্যে ক্ষমতায় আছে, তাদের পরিসংখ্যানে ইউএপিএ দিয়ে বিরোধীদের চুপ করিয়ে দেওয়ার হার বড্ড বেশি! এতটাই বেশি, যা চোখে লাগে। এবং, ওইসব আপাত-বিজেপিবিরোধী আদতে-গণবিরোধী দলগুলোর সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলেই দেয়। কেরালায় ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ইউএপিএ দেওয়া হয়েছে ১৪৫ জনকে। অতিসম্প্রতি ৯৪ বছর বয়সী আয়িনুর ভাসুকে ইউএপিএ সহ অন্যান্য ধারায় গ্রেপ্তার করেছে কেরালা সরকার। স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে পরবর্তী সময়ে বিপ্লবী কমিউনিস্ট রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। কেরালায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দুই কমিউনিস্টের বিচারবহির্ভূত মৃত্যুর বিরুদ্ধে সরব হতেই পুরনো মামলা জিগিয়ে তুলে আর ইউএপিএ দিয়ে গ্রেপ্তার করা হল তাঁকে। উল্লেখ্য, ভারতে সর্বপ্রথম ইউএপিএ প্রয়োগ ক’রে গ্রেপ্তার ও খুন পশ্চিমবঙ্গেই করা হয়েছিল ২০০৯-১০ সালে। পশ্চিমবঙ্গে ২০১৫ থেকে ২০১৯ অবধি মোট ৩৪টি মামলা রুজু হয়েছে ইউএপিএ-র অধীনে এবং গ্রেপ্তার হয়েছেন ১০০ জন। ওই একই কালপর্বে দিল্লিতে ১৫টি মামলা রুজু হয়েছে এবং গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩২ জন। পাঞ্জাবে ২০১৫-১৯ সময়পর্বে ১০৮ জন ইউএপিএ-তে গ্রেপ্তার হয়েছেন।[i] এই পরিসংখ্যানগুলি ভয়ের। একইসঙ্গে অবিশ্বাসের। বিজেপি-বিরোধিতার ভান ধরা পড়ে যায়। বিরোধিতার স্বর সহ্য করতে পারে না কোনও শাসকই- কেরালায় সিপিয়েম, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল, দিল্লিতে আপ, পাঞ্জাবে কংগ্রেস- ইউএপিএ প্রয়োগ ক’রে জনগণকে চুপ করিয়ে দিতে সব শেয়ালের এক রা। এদেশে নির্বাচনী ইতিহাস ভাল ও মন্দের বাইনারির ভেতরে বেছে নেওয়ার থেকেও কম মন্দ আর বেশি মন্দের ভেতরে বেছে নেওয়ার সাক্ষ্য বহন করে। সম্প্রতি অনেকগুলি সংসদীয় দল এদেশে ফ্যাসিস্ত সরকারের বিরুদ্ধে সংসদীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতে জোট বেঁধেছে। ভারতের আধুনিক রাজনৈতিক সমীকরণ যে দক্ষিণপন্থী দল বা দলের জোট কোনো না কোনো সময় কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ছিল, বহু জনবিরোধী কাজ করেছে। জনবিরোধী আইন প্রণয়ন করেছে। গণতন্ত্র বিপন্ন হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের ইতিহাস ও বর্তমান স্বৈরাচারী মতাদর্শ, শাসিতকে চুপ করিয়ে দেওয়ার নীতি অনুসরণ করেছে কখনো না কখনো। অন্ধকারের গাঢ়ত্ব কম না। কেন্দ্র-রাজ্য বণ্টনের ভিত শুধু আর্থিকই না, রাজনৈতিক শাসনগতও। শাসকশ্রেণির নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকে- তবু, তারা প্রত্যেকেই শাসকশ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। শাসক ও শাসিত বর্গভাগ বজায় রাখা তাদের কর্তব্য। জনগণের ওপরে গুরুদায়িত্ব বর্তায় বিভিন্ন বর্গের শাসকের মধ্য থেকে ‘মন্দের ভাল’ বেছে নেওয়ার। ‘লেসার ইভিল’ ইত্যাদি শব্দবন্ধ সাজিয়ে নিতে হয়। কিন্তু, লেসার ইভিলও আসলে ‘ইভিল’-ই, তা ভুলে যাওয়া যায় না। শাসকের কার্যক্রমই তার ইভিল সত্তাকে জাগরূক রাখে। গ্রেটার ইভিলের বিরুদ্ধে মুখর হতে হতে কখনও ঐ লেসার ইভিলের বিরুদ্ধে চুপ থাকার পথ বেছে নেয় অনেকে। কিন্তু লেসার ইভিলের বিরুদ্ধে চুপ থাকা যে সমস্যার সুরাহা করে না, তা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বুঝিয়ে দিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ। বিগত কয়েক বছরে নজিরবিহীন দুর্নীতিতে শাসকের প্রত্যক্ষ মদত। শিক্ষা, চাকরি, সিন্ডিকেট– দুর্নীতিতে তৃণমূলের যোগ গণমানসে আলোড়ন তুলেছে। সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসা, ভোটচুরি, বুথদখল, নির্বাচকের ওপরে অবৈধ প্রভাব খাটানো ইত্যাদি প্রকাশ্যে রমরমিয়ে চলেছে। সুস্থ গণতন্ত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য অবাধ নির্বাচন। সেই নির্বাচনপ্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে বিগত বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনে হাওয়ায় ভেসেছিল শাসকবয়ান- তাতে সায় জুটিয়েছিল কিছু মোসাহেবি গণসংগঠন- ‘বিজেপিকে আটকাতে তৃণমূল ভরসা এখন’। কিন্তু শাসনের নিজস্ব চরিত্রেই সে ভরসা আদিগঙ্গায় ডুবে গেছে। রাজ্যের ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে স্বৈরাচারের যাবতীয় কৌশল প্রয়োগ করছে তারা। বিহার নির্বাচনে একদা নীতিশ কুমারও ‘লেসার ইভিল’ সেজেছিলেন। তারপর এনডিএ-র হাত ধরেছিলেন। উপনিবেশোত্তর ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস জোট ভাঙা-গড়ার ইতিহাস, সংসদীয় দলগুলির প্রতিশ্রুতিভঙ্গ, বিশ্বাসভঙ্গের দলিল। বিজেপির ফ্যাসিবাদী শাসন সেই ইতিহাস জেনেবুঝেই ফ্যাসিবাদী উপাদানগুলি চাপিয়ে দিচ্ছে এবং আরএসএসতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করছে। মোদী-যোগীদের বিরুদ্ধে বলা যাবে না- এই বার্তা দিয়ে সম্প্রতি এক আরপিএফ জওয়ান ট্রেনে প্রকাশ্যে একজন দলিত ও তিনজন মুসলিমকে হত্যা করেছে। আরএসএসের বিরুদ্ধে কিছু বলা মানেই দেশদ্রোহী- এমন প্রতর্ক সাজিয়ে গুলি করে হত্যার নিদান দিয়েছে একাধিক মন্ত্রী ও নেতা। এই মুহূর্তে তাদের থেকে বড় ‘ইভিল’ ভারতীয় রাজনীতিতে কেউ নেই। আর, একইসঙ্গে অন্য ‘ইভিল’ দলগুলোর বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ-প্রতিরোধ জারি রাখা প্রয়োজন। সেটাই গণতান্ত্রিক পরিসরের অনুশীলন। রাজনীতি মানে শুধু নির্বাচনের একটি নির্ধারিত দিনে পছন্দের প্রার্থী/দলকে ভোট দিয়ে আসা নয়। বাকি ৩৬৪ দিন বাক্স্বাধীনতা, অসম্মতির (ডিসেন্ট) স্বাধীনতার জন্য সরব থাকা। কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসকের অপশাসনের প্রতিক্রিয়ায় জেগে থাকা। দেশের বুকে সাংবিধানিক ব্যথা যখন বাড়ছে, তখন চুপ ক’রে থাকা অবিবেকী পাপ।
***
তথ্যসূত্র: https://www.mha.gov.in/MHA1/Par2017/pdfs/par2021-pdfs/LS-09032021/2486.pdf