১. বুকের জায়গায় সুখটুকু সরিয়ে মিশর লিখল মুছে দিল নেভারোদ ধ্বনি হারানো হলুদ ব্রিজ পেরিয়ে খ'সে পড়া রেশমের সঙ্গে ক্রমাগত গুটিপোকার সঙ্গে আসার সময় ফুটল যে পেট্রোল পাম্প ছাই হয়ে গেল গায়ে আগুন দেওয়ার গল্প মুছে দিল মিশর লিখল পাড়ার মেঘ সামান্য বৃষ্টিও হল বুকের জায়গায় এমনই এক মিয়োনতফাৎ শব্দ হল পিন মিশরে পা দেওয়ার আগেই যারা সব যারা যারা শব ২. কথা ঘুরে বসেই দিওয়ানা নদী উঠেই সোঁতা চোখ মেলল বিয়াস বিপাশা হয়ে গেল নদী আর নামের ভেতরে বসে আছে মুখ,হাত,পা,শরীর আর কথায় কথায় যে রাত কেটে গেল রাতের সেই নিছক আলোহারা একটা ছোপ গলতে গলতে টিপের সামান্য হয়ে ঠিক মাঝখানে কী কপাল কী যে ব্যবহারোজ্জ্বল অসম্ভবা নদী তুমি বললাম না নদী কিন্তু তোমাকে নিয়েই চাপা ভয়ের কারণে ফুঁসছে বিয়াস হোক বা বিপাশা জলে থাকে জলে ভাসে পানের পাতায় লং আর চমনবাহার ফেলে নেমে আসে খুব ঘণ কাজলা একটা বিকেল এই যে অমান্য কোনও সংবিধানে নেই সব ধারা নিচোড় হয়ে যা হল আমি দরজাটা সত্যিই খুলে ফেললাম ৩. বাড়ি ফেরেনি বাড়ি ফিরিনি দুজনের আলাদা আপেল বাগান আলাদা গন্ধ তবু ডানা ভাঙার শব্দ লেগে আছে কোথায় কোথায় রক্তের ছিটে আপেল বাগানেরও নদী আছে আমরা ধুয়ে ফেলি রক্তের স্বাদ পেয়ে নদীর গর্জন হয় ডোরা ডোরা চাঁদের আলো আর আপেলের ডাল বাড়িগুলো চমকে ওঠে ফেরা বা না-ফেরা হল ছড় টানার ভঙ্গী বেহালা হলে বেহালা বা স্রেফ কুলকুচির আওয়াজ ৪. বারিরা পাতানো বাড়ির কাছে সিল্ক পেলে মনে হয়,ওহ গন্ধটা কিছুদিনের ঘটনাপ্রবাহ মেশানো খুন হতে পারে বা দুর্ঘটনায় মৃত মানুষের শরীর থেকে গয়না খুলে নেওয়ার সময় যে চাপা আনন্দ লেগে থাকে গন্ধটা আকাশে রাখা বাতাসে আঁকা বারিপাত বারি এই শব্দটাকে মুছে দিতে দিতে দেখি কেমন একটা বৃষ্টি সিল্ক সিল্কেন বারিরা গন্ধও ধুয়ে দেয়, ঘটনারা বাড়ির ভেতরে ভিজতে থাকে ভিজতেই থাকে ৫. একটা নালেখা, লেখায় হল নদী। জল, চিকিৎসাপ্রণালী। তাতে ছায়া পড়ে মেঘলাজবাব চিঠির আর চিঠি যে ঘুমিয়ে পড়া শাঁপলায় অক্ষরের ভাসা ভাসান মিলিয়ে দেয় আমরা চায়ের কাপ খুঁজি বা সেই বোতলটা, যেখানে চা বা মদ উমম, আহ, উফফ এইসব মেলামেশা লিখতে লিখতে ‘এবর্ট’ করা হল চাঁদ আর ওয়ালপাসের মাঝামাঝি একটা হোম একটা দুটো তিনটে চিৎকার একটাই নালেখা সেই যে চিঠি মানে চিঠি মানে চিঠি উত্তরই যে ওষুধ, জানল না… ৬. আপেল পড়ছিল কী যেন দেখেছিল নিউটন পার্ক সার্কাস দেখেনি আপেল আপে আ রেপ রে সত্যজিৎ একটা লম্বা শটের পরে কফির কাপে মুখ নিউটন কিন্তু সুবিধের ছিল না আপেলটা না পড়লে দুটো চশমা অভিকর্ষমূলক কাকেই বা দেখত কাশ্মীরে কাশ্মীরেও আপেল আপে আ আরে ওই তো ক্যামেরাছোঁড়া ‘রে’ কে বলল কিছু একটা বলল কেন বলল নিউটন রে একটা দ্বিধাবিভক্ত সমাজের কাছে আপেল আর ক্যামেরার কাছে একটা গাছ সেই পুকুরটাও,ইন্দির ঠাকরুণের আপেল আর পড়বে কি না ভাবছে
স্বপন রায় জন্ম ১৯৫৬। ইস্পাতনগরী জামশেদপুর এবং রাউরকেল্লা জড়িয়ে আছে তার অস্তিত্বের সঙ্গে। জড়িয়ে আছে খড়গপুরও। প্রথমটি জন্মসূত্রে। দ্বিতীয়টি বড় হয়ে ওঠার সূত্রে। তৃতীয়টি পরবর্তী বসবাসজনিত। কবিতা লেখার সূচনা আগে হলেও,নব্বই দশকের শুরুতেই 'নতুন কবিতা'র ভাবনায় সক্রিয় হয়ে ওঠেন। পুরনো, প্রতিষ্ঠিত আবহমান ধারাকবিতাকে ত্যাগ করে কবিতাকে নানাভাবে নতুন করার কথা ভাবতে শুরু করেন। সমমনস্ক বন্ধুদের সাথে প্রথমে কবিতা ক্যাম্পাস ও পরে ২০০২ সাল থেকে 'নতুন কবিতা' পত্রিকা ও প্রকাশনায় হাত দেন কবিবন্ধু রঞ্জন মৈত্র'র সংগে। লিজেন্ডারি কৌরব পত্রিকার অন্যতম স্থপতি বারীন ঘোষালের স্নেহ- আশ্রয় ও রঞ্জন-স্বপনের সমবেত উদ্যোগে অচিরেই নতুন কবিতা আন্দোলনে এসে যোগ দেন বহু তরুণ কবি। এক কথায় বাংলা কবিতার চিরাচরিত ক্যানভাসে নতুন কবিতা আন্দোলন সফল ভাবেই বিপ্লবের বাতাস বয়ে নিয়ে আসে। স্বপন শুধুমাত্র কবি বা সম্পাদক নন,একজন সার্থক গদ্যকার,নিবন্ধকার এবং অনুবাদকও।
Facebook Comments Box