- কি হলো? - কি? - হাসছ যে? - বেতন এসেছে একাউন্টে৷ ফোনে মেসেজ এলো। মায়ের মুখেও হাসি। মহামারী শুরু হবার পরে যেভাবে সবকিছু বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো, বাবা একটু চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলো যে বেতন নিয়ে আবার কোনো সমস্যা হয় কিনা। সরকারি শিক্ষকদের অবশ্য ভালোই সুবিধা হয়েছে। কাজের চাপ নেই তেমন, ঘরে বসে বেতন। অবশ্য গিয়ে হাজিরা দিয়ে আসতে হয়। বহুদিন পর বাবাকে আমরা এত ভালো করে পেলাম। সকালে উঠেই একসাথে নাস্তা, তারপর দুপুরের খাবার, সন্ধ্যার চা, রাতের খাবার; সবটাই সবাই মিলে একত্রে। এভাবে কখনোই বাবাকে পাওয়া হয়নি। ছোট বোনটা উচ্চ মাধ্যমিক অটোপাশ করে বসে আছে, আমি মাস্টার্স পরীক্ষার আশায়। বাবার চাকরিটা থাকায় এখনও সংসার নিয়ে আমার ভাবতে হচ্ছেনা। কিন্তু এভাবে কতদিন আর চলা যায়। দুটো টিউশনি ছিলো, স্কুল কলেজ খোলার কোনো নিশ্চয়তা নেই, তাই সে দুটোও গেছে ফসকে। একজনের বাবা স্পষ্ট বলেছে না আসতে, আরেকজনের মা বলেছে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে, ফিরতে দেরী হতে পারে, আপাতত পড়া বন্ধ, দরকার হলে পরে জানাবে। চার মাস হয়ে গেছে, এখনও জানায়নি, জানাবে বলে মনেও হয়না। বাসায় বসে থাকি, ঘুমাই, জেগে উঠি, খাই, টুকটাক বিসিএসের পড়া পড়ি, আবার খাই, আবার ঘুমাই। ছোট বোনটা সুন্দরী, অল্পস্বল্প বিয়ের প্রস্তাব আসা শুরু হয়েছে, বাবা না করে দিচ্ছে। বড়ভাই হিসেবে আমার তাতে পূর্ণ সমর্থন আছে, বোনটা বড় মেধাবী আমার। এই হয়েছে এক ঝামেলা, কোয়ারেন্টাইনের এই বন্ধে চারিদিকের ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে সবচেয়ে যেন বড় বোঝা হয়ে উঠছে মেয়েরা। ঘটকদের ব্যবসাও জমজমাট। সাথে পড়া একটা মেয়েও বোধহয় অবিবাহিত নেই, একমাত্র প্রমা ছাড়া। প্রমার অবশ্য অনেক সাহস, সমাজকে থোড়াই কেয়ার করে, বিষাক্ত মুখগুলোতে ঝামা ঘষে দেয়ায় নাম আছে ওর। সেইতো একবার, ক্লাসে বসে কথার পিঠে জীবন বললো, "নারে ভাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়ে বিয়ে করবোনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের চরিত্র খুব খারাপ হয়। দুনিয়ার ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি।" প্রমা শান্তস্বরে জীবনের মুখের দিকে না তাকিয়ে বেঞ্চের ওপর কলম দিয়ে নিজের নাম লিখতে লিখতে বললো, "বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা তোর মত ছেলেদের বিয়ে করে কিনা, আগে সেটা খোঁজ নে।" আমরা ঠোঁট টিপে হাসি চেপে রেখেছিলাম, অপমানে জীবনের মুখ বেগুনি হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু প্রমাকে কিছু বলার সাহস কারো নেই। এক কারণ প্রমার ব্যক্তিত্ব, গাম্ভীর্য, আরেক কারণ প্রমার বাবা জয়েন্ট সেক্রেটারী, ভবিষ্যতে টুকটাক সাহায্য যদি প্রয়োজন হয়, সেই আশায় ওকে কেউ চটায় না। আর সত্যি বলতে, কার ব্যাপারে ও কি ভাবে কিছুই তেমন বোঝা যায়না, কিন্তু ওর কাছে সাহায্য চেয়ে আজ অব্দি কেউ হতাশ হয়নি। আমার অবশ্য প্রমার সাথে টুকটাক কথা হতো। বড় বড় চোখ, গম্ভীর কণ্ঠ আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। ও তাকালে খুব অস্বস্তি হত, মনে হত চামড়ার ওপর দিয়ে আমার কিডনি দেখা যাচ্ছে। আমি একদিন ওকে এই ব্যাপারটা বলেছিলাম হাসতে হাসতে। ও ঠোঁটটাকে ব্যঙ্গ করার ভঙ্গিতে সামান্য বাঁকিয়ে বলেছিলো, "তাই নাকি? তাও ভালো তোর মনে হয়না যে তোর স্তন দেখা যাচ্ছে।" আমার হাসি থেমে গেছিলো। প্রমার যথারীতি কোনো বিকার নেই। আমি ব্যাপারটা কাউকে বলিনি, কিন্তু তারপর থেকে ওর সাথে কথা বলার সময় আমি একটু সাবধানে কথা বলি। তাও ভালো শুদ্ধভাষায় স্তন বলেছে, দুধ বললে আমি ওখানেই হার্টফেল করে মরে যেতাম হয়ত। যদিও আমরা ছেলেরা মেয়েদের ব্যাপারে কথা বলার ক্ষেত্রে পরের শব্দটাই ব্যবহার করি বেশি, কিন্তু তবুও, কোনো মেয়ের মুখে শব্দটা শুনলে অস্বস্তি হয়, মেয়েটাকে অশালীন মনে হয়। প্রমার মা নেই, এটা আমরা সবাই জানতাম। কারণ প্রমাই একমাত্র যে তার পঁচিশতম জন্মদিনে ক্লাসের সবাইকে বাসায় দাওয়াত করে খাইয়েছে। ক্লাসে আমরা মোট ছাপ্পান্ন জন, পঞ্চাশ টাকা করে চাঁদা তুলে ওকে একটা ভালো উপহার দেয়ার প্ল্যান ছিলো সবার। কিন্তু তারপর মানুষ কমতে লাগলো। কেউ সন্ধ্যার সময় দেখে যাবেনা, কাউকে বাসা থেকে যেতেই দেবেনা, কারো টিউশনি আছে আবার কেউ কেউ এমনিই যাবেনা। কয়েকজন যাবেনা কারণ তাদের মনে হয়েছে প্রমা টাকার অহংকার দেখাচ্ছে। দু চারজন যাবেনা কারণ প্রমা তাদের বিভিন্ন সময়ে অপমান করেছে। শেষে এসে লোক দাঁড়ালো বাইশ জন। কি আর করা! চাঁদার পরিমাণ একটু বাড়িয়ে আমরা একটা ভালো দেখে মনিপুরী তাঁতের শাড়ি নিলাম। অনেক অতিথি থাকা সত্ত্বেও প্রমার বাবা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সবাইকে যত্ন করে খাওয়ালেন। বারবার জিজ্ঞেস করলেন যে আমরা ঠিকঠাক যেতে পারব কিনা। সবচেয়ে ভালো লাগলো, পরেরদিন প্রমা ক্লাসে এলো আমাদের উপহার দেয়া শাড়িটা পরে। গলায় একটা ঝোলা হ্যান্ডপেইন্ট করা মালা, কানে দুটো ছোট টব। প্রমাকে কেউ কোনোদিন প্রেম করতে দেখেনি। কিন্তু একটা ঘটনা ঘটেছিলো, সেন্ট্রাল ফুটবল টিমের ফরওয়ার্ড আসিফ ভাই আর ওকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ফাঁকা ক্লাসরুমে চুমু খেতে দেখা গিয়েছিলো। স্বাভাবিকভাবেই চেয়ারম্যান স্যারের কাছে অভিযোগ আসে। শোনা যায়, চেয়ারম্যান স্যার নাকি প্রমাকে ডেকে বলেছিলো, "ক্লাসরুম কি চুমু খাবার জায়গা?" প্রমা বলেছিলো, "তবে কোথায় চুমু খাবো? ঝোপেঝাড়ে? সেটা কি শোভন হবে?" কাহিনি সামনে আর জানা যায়নি কিছু। তবে আসিফ ভাইকে বেশ ক'দিন ডিপার্ট্মেন্টের সামনে দেখা গিয়েছিলো, প্রমা পাত্তা দেয়নি, পরে আসিফ ভাইও হাল ছেড়ে দেয়। প্রমার কাছে জিজ্ঞেস করার উপায় নেই, তাই আসিফ ভাইকেই সবাই ধরলো। আসিফ ভাই মুচকি হেসে এড়িয়ে যেত, ফলে ঘটনা আজও অজানা। ফোন বাজছে অনেকক্ষণ ধরে। ধরতে ইচ্ছা করছেনা। তবুও ফোন হাতে নিয়ে নাম দেখলাম, রোখসানা ম্যাম। সবুজ বাতি স্পর্শ করে কথা বললাম। উনি চান আমি কাছেপিঠের কোনো গ্রামে গিয়ে একটা সার্ভে করে ওনাকে তথ্য সংগ্রহ করে দেই যে করোনাকালীন সময়ে স্কুল বন্ধ থাকায় প্রান্তিক পর্যায়ের শিশুদের ওপর কেমন প্রভাব পড়ছে। সার্ভের জন্য প্রশ্ন তৈরি করে উনি আমাকে পাঠিয়ে দেবেন, আমি শুধু প্রিন্ট করে তথ্য সংগ্রহ করে ওনাকে কাগজগুলো পাঠিয়ে দেব। ম্যাম আরো বলেছেন, আমি চাইলে সাথে কাউকে নিতে পারি, সব খরচ ম্যাম দেবেন। প্রমা আমার শহরে থাকেনা, নইলে ওকে নিয়ে যাওয়া যেত। অবশ্য প্রমার সাথে আমার যোগাযোগও তেমন নেই। সেটাও ব্যাপার ছিলোনা, আমার শহরে থাকলে ম্যামের নাম দিয়ে নিয়ে যাওয়া যেত। ওর সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগতো, যদিও কাটানোর মত সময় তত পাওয়া যেত কিনা সন্দেহ। মাঝেমধ্যে ইচ্ছা করত ওকে প্রেমের প্রস্তাব দিতে, সাহস হতোনা। প্রমার মত মেয়ের সাথে প্রেম টিকিয়ে রাখতে গেলে অনেক সাহসী হতে হয়। সেইযে একবার সরস্বতী পূজার সময় কোন এক সিনিয়র ব্যাচের নেতাগোছের বড়ভাই প্যান্ডেলে এসে ভিড়ের মধ্যে বাসন্তী শাড়ি পরা এক মেয়ের আঁচল ধরে টান দিয়ে তাকে মাটিতে ফেলে তারপর আহারে উহুরে করে তাকে তুলতে গিয়ে তার বুক টিপে দিয়েছিলো, সেবার প্রমা একটা খেইল দেখিয়েছিলো বলা চলে। মেয়েটা আমাদের একই ব্যাচের, কিন্তু ভিন্ন ডিপার্টমেন্ট, ইতিহাস হয়ত। দৃশ্যটা আমরা সবাই দেখেছিলাম, বিশেষত ছেলেরা বেশ ভালোই বুঝেছিলাম ওই ভাইয়ের উদ্দেশ্য। মেয়েটা উঠে দাঁড়িয়ে ভাইয়ের হাত ছাড়িয়ে চোখ মুছতে মুছতে দৌড়ে প্যান্ডেলের বাইরে চলে গিয়েছিলো। প্রমা সবটাই শান্তভাবে দেখেছিলো প্যান্ডেলের প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে, তারপর হঠাৎ ও উঠে বাইরে চলে যায়। তারপরের ঘটনাগুলো আমি আজও স্পষ্ট দেখতে পাই। বাসন্তী শাড়ি পরা যেই মেয়েটা মাটিতে পড়ে গিয়েছিলো, সে গুনে গুনে পায়ের জুতো খুলে ষোলবার নেতা ভাইটির গালে মেরেছিলো। পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো পুলিশের এক এসপি, দুটো কন্সটেবল আর প্রমা ; পুরো প্যান্ডেল ঘিরে রেখেছিলো পুলিশ। বাসন্তী শাড়ির সাথে পরে আবার আমার হলের সিনিয়র জয় ভাইয়ের প্রেম হয়, তখন জানতে পেরেছিলাম মেয়েটার নাম নাকি লগ্ন, ওদেরও বিয়ে হয়ে গেছে। বিয়ে হয়নি কেবল প্রমার, আমার চেনাজানা মেয়েদের মধ্যে আরকি! আপাতত শিহাবকে ফোন দিলাম। ঠিক হলো শহরের লাগোয়া কোনো গ্রামে ঢুকে যাবো পরশু সকালে রওনা হয়ে, শিহাবের বাইক আছে, এই এক সুবিধা। একে গরম, তার উপর করোনা। এই অবস্থায় বাসভ্রমণ অনিরাপদ তো বটেই, সাথে অস্বস্তিকরও। রুম থেকে বেরিয়ে এলাম, বোনটাকে বলব এক মগ কফি বানিয়ে দিতে। ওর রুমের দরজা একটু ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। উঁকি দিয়ে চলে এলাম। পাশের বাসার রিনিকে পড়াচ্ছে। স্কুল বন্ধ, তাই ছোট্ট রিনির পড়াশোনা লাটে উঠেছে, শুধু শুধু বাসায় মাস্টার রেখে টাকা খরচ করতে চায়না বলে রিনিকে মাঝেমধ্যে ওর কাছে পাঠিয়ে দেয়। রিনি ক্লাস ফোরে পড়ে, দশ বছর বয়স, খুব মিষ্টি দেখতে। ওর মা মেয়েকে পড়তে পাঠিয়েও বোধহয় বিশেষ নিশ্চিন্ত হয়ে থাকতে পারেন না। বাসার মূল দরজা চাপিয়ে রাখতে হয় যাতে উনি যখন তখন আসতে পারেন। ওনাকে দোষ দেইনা, চারিদিকে যা অবস্থা, মেয়ে বাচ্চা, ছেলে বাচ্চা, কিছু নিয়েই শান্তি নেই। আমার এক চাচী খুব অহংকার করে বলত যে তার কোনো চিন্তা নেই, কারণ তার দুই ছেলে। মেয়ে থাকলে নাকি মুখ পোড়ার ভয় থাকে। অবশ্য তার মুখ খুব খারাপভাবেই পুড়েছে, তার ছোট ছেলেটা নেশা করার টাকা না পেয়ে মায়ের মুখ চুল ধরে জ্বলন্ত গ্যাসের চুলায় ঠেসে ধরেছিলো। যদিও বড় ছেলেটা খুবই ভালো, তাই পোড়া মুখ নিয়েও চাচী ভালোই আছেন। পরেরদিন রোখসানা ম্যাম প্রশ্নপত্র পাঠিয়ে দিলেন, সাথে দু'হাজার টাকা। শিহাবের বাইকে যাবো, খরচ বলতে গেলে তেমন কিছুই হবেনা। ভাবছি রাতে এসে একটা জম্পেশ খাওয়া দেব শিহাবকে নিয়ে ভালো কোথাও গিয়ে, লাগলে তেলও ভরে দেব ওর বাইকে। প্রশ্ন প্রিন্ট করিয়ে আনলাম, কিভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে তা মোটামুটি জানি। মাঠকর্মের ক্লাসে সবই শিখিয়েছে রোখসানা ম্যাম। প্রশ্নগুলো পড়ে দেখছিলাম, স্কুল যাওয়া বাচ্চাদের সাথে কথা বলতে হবে, তাদের অভিভাবকদের সাথেও। দরজা ঠেলে মা ঢুকলো। একটা বাটিতে কয়েকটা ডালের বড়া আর মুড়ি। হাতে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো র'চা খাব নাকি দুধ চা। কোনোটাতেই আপত্তি নেই, জানিয়ে দিলাম। ডালের বড়ায় বোধহয় অল্প পুদিনা পাতা দেয়া হয়েছে, ঘ্রাণ পাচ্ছি। খাওয়া শেষ করে বাটি ফেরত দিয়ে চা নিয়ে এসে বসার ঘরে বসলাম। বাবাকে জানালাম কাল একটু শহরের বাইরের দিকে যাচ্ছি, বাবা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব জানলেন, কোথায় যাচ্ছি, কার সাথে যাচ্ছি, কি কাজে যাচ্ছি। আমি চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললাম, "এত বড় হয়েছি, তবু মাফ নেই। সব জানা চাই!" রিমোটে কাজ করছিলোনা, তাই ওটার পাছায় চাপড় মারতে মারতে বাবা বললো, "জানতে হবেনা? পরে তুমি এদিক ওদিক এর ওর সাথে ঘুরে তালেবান হয়ে গেলে তো পুলিশ এসে আমাকে ধরবে!" আমি হেসে ফেললাম। বাবা মাঝেমধ্যে মজার মজার কথা বলে। বললাম, "এক ওয়াক্ত নামাজ পড়িনা, তালেবান হব?" বাবা উদাসভাবে বললো, " নামাজ পড়লে কারো তালেবান হওয়ার প্রয়োজন হয়না, যারা পড়েনা তারাই বেশি হয়।" আমি চুপ করে গেলাম। কথাটা গভীর, এর উপর আর কিছু বলা চলেনা। রাতে মোবাইলে এলার্ম দিয়ে শুয়ে পড়লাম, ৬ টায় উঠবো। কিন্তু ঘুম ভালো হলোনা। এলার্ম দিয়ে ঘুমাতে গেলে এই এক সমস্যা, বারবার ঘুম ভেঙে যায়, মনে হয় যেন এলার্মটা সময়মত বাজবেনা। ছয়টার কিছু আগেই নিজে নিজে ঘুম ভেঙে গেলো, এলার্মটা বন্ধ করে চোখ ডলতে ডলতে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। রোদ উঠে গেছে কিছুটা, গরম লাগছে। গোসল সেরে নিলাম। মা উঠে গেছে ততক্ষণে, নাস্তা বানিয়ে দিলো। ফোন বাজছে, শিহাবের নাম ভেসে আছে স্ক্রিনে। ফোন না ধরেই বারান্দায় গেলাম, বাইকের ওপর থেকে শিহাব হাত নাড়লো। আমি পিঠে ব্যাগ ঝুলিয়ে মানিব্যাগ আর ফোনটা নিয়ে নিচে নেমে যাচ্ছি, মা টেনে ধরে একটা স্যালাইন আর এক বোতল পানি দিয়ে দিলো, ফিআমানিল্লাহ বলে দোয়াদরুদ পড়ে ফু দিয়ে দিলো। আমি ব্যাগে পানির বোতল ঢুকিয়ে মাস্ক পরতে পরতে গেট দিয়ে বাইরে বেরোতেই শিহাব বললো, "এতক্ষণ লাগে রে?" "হ্যা হ্যা, চল এবার," আমি পেছনে বসতে বসতে বললাম। একটানে বাইক চললো, শার্টের ওপরের খোলা বোতামের ফাঁকা দিয়ে হু হু করে বাতাস ঢুকছে। সকালের বাতাস, বেশ ঠান্ডা। শিহাবের পিঠের পেছন থেকে মুখটা একটু বাইরের দিকে সরিয়ে সামনের রাস্তার দিকে তাকালাম। সব যেন উড়ে এসে আমাদের মধ্যে মিলিয়ে যাচ্ছে। মাস্ক পরে থাকায় বাতাসটা ঠিকঠাক মুখে লাগছিলোনা, ঠোঁটের চারপাশ ঘেমে যাচ্ছিলো। তবুও মাস্ক খুললাম না, পুলিশ ধরলে জরিমানা করে দেবে। পরে দেখা গেলো, দুই হাজার যা পেয়েছি, জরিমানা দিয়েই কম্ম কাবার হয়ে গেছে। শহরের শেষ মাথায় বড় সিমেন্টের একটা ফলকে বিদায় লেখা দেখলাম। লেখাটা পার হতেই শিহাবের পিঠে থাবড়া মেরে বললাম, - বাইক থামা। - অ্যা?! - বাইক থামা, বাইক! - অ আচ্ছা আচ্ছা। শিহাব একপাশে বাইকটা দাড় করালো। নেমে গিয়ে বললাম, "কোনদিকে যাবি? শহর তো শেষ।" ও এদিক ওদিক দেখলো। একদম খালি রাস্তা, দোকানপাট নেই, গাছপালা আছে শুধু। মাঝেমধ্যে বাস চলে যাচ্ছে, ট্রাক আর ছোটখাটো অটোরিক্সাও দেখা গেলো, সবই হাতেগোনা। এক সাইকেলওয়ালাকে দেখা গেলো অনেক দূর থেকে চালিয়ে আসছে, বিন্দুর মত। শিহাব চোখের ইশারায় বোঝালো ওই ব্যাটাকে ধরে জিজ্ঞেস করতে। কিছুটা কাছে এলে ওই লোককে হাত তুলে থামালাম। - এদিকে গ্রাম আছে কোনদিকে ভাই? - কুন গেরাম? - যেকোনো গ্রাম, গ্রাম হলেই চলবে। - কত গেরামই তো আছে। সবই তো গেরাম। - আপনার গ্রাম কোনটা? এবার লোকটা একটু সন্দেহের চোখে তাকালো। আমি আর শিহাব দুজনই কালো মাস্ক পরা, ডাকাত ভাবলো নাকি! - হেয়া কওন যাইবোনা। - আচ্ছা, আশেপাশে কোন গ্রাম সবচেয়ে কাছে? - সোজা যাইতে থাহেন, একটা গেরাম আছে, চরপাতানি। ওইডায় যান গিয়া। বলে লোকটা সাইকেল চালিয়ে যেন দৌড়ে পালালো। শিহাব হাসতে হাসতে বললো, - সবচেয়ে কাছের গ্রামটা বোধহয় ওনারই, তাই দূরে ভাগিয়ে দিলো। মাস্কও পরেনি দেখলি! সারাদিন টিভিতে বলছে, ফোন করলেই শোনা যাচ্ছে মাস্ক পরুন, সুস্থ থাকুন। তারপরও পরবেনা! রিডিকুলাস! - আচ্ছা হোক, চল, চরপাতানির খোঁজেই যাই। বাইকে চড়ে বসলাম আবার দুজনে। পথের দু'ধারে গাছের পাতাগুলো বাদামি হয়ে আছে, বড় যানবাহন গেলে ধুলো উড়িয়ে ছড়িয়ে দিয়ে যায়। গাছের গায়ে গোবর লাগানো, দেখতেই বিশ্রী লাগছে, নাক কুঁচকে ফেললাম যদিও গন্ধ পাইনি একটুও। অনেকদূর গিয়ে একটা মুদি ধরনের দোকানের সামনে বাইক থামলো। দোকানটায় সব আছে, মুদি মনোহরি জিনিসপত্র থেকে শুরু করে প্রায় সবই, আবার একপাশে একটা ছোট চায়ের জায়গা। দোকানিটাও সাইকেলওয়ালার মত মাস্ক পরে নেই, কিন্তু এক প্যাকেট ওয়ানটাইম মাস্ক ঝোলানো দেখলাম। - ভাই, চরপাতানি গ্রাম কোনটা? - এইটাই। কোন বাড়ি যাইবেন? - কোনো বাড়ি না। আমরা আসলে একটা জরিপ করতে এসেছি, কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে। দোকানি আমাদের মুখের দিকে তাকালো। তারপর হাত ধুয়ে বললো, "বসেন, চা খান। কুনো সমস্যা নাই, আপনাগো মত আগেও আসছে। চা খান, তারপর চেয়ারম্যান সাইবের বাড়ি যান, দেহা কইরা অনুমতি নেন, উনিই লোক দিয়া দিব লগে আপনাগো বাড়ি বাড়ি লইয়া যাইতে। গেরাম তো, তার উপর আমনেরা ব্যাডা মানুষ, হুটহাট বাড়ি বাড়ি ঢুইকা গেলে সমস্যা হইতে পারে।" শিহাব মাস্ক খুলে বসলো, আমিও বসলাম। বাইকে বসে বাতাসে আন্দাজ করতে পারছিলাম না, বসতেই বুঝলাম বেশ গরম পড়েছে আজও। "সিগারেট খাইবেন?" দোকানি জিজ্ঞেস করলো। দুজনেই মাথা নাড়লাম। সিগারেট আমরা কোনোকালেই খেতাম না এমন নয়, তবে করোনা আসার পর থেকে ফুসফুসের জোর বজায় রাখতে ছেড়ে দিয়েছি। চেইন স্মোকার ছিলাম না, তাই ছাড়তে কষ্ট হয়নি। দুজনের হাতে দুকাপ কনডেন্সড মিল্কের চা ধরিয়ে দিলো দোকানি, শিহাব ঝুলে থাকা পলিথিন প্যাকেট থেকে বের করে নিলো একটা বাটার বন, আমি নিলাম একটা কেক। চা শেষ করে উঠতেই শিহাব পকেটে হাত দিলো, আমি হাত ইশারায় ওকে থামিয়ে দাম মিটিয়ে দিলাম। দোকানি রাস্তা দেখিয়ে দিলে বাইকটা তার দোকানের কাছে তার জিম্মায় রেখে আমরা হাঁটতে শুরু করলাম। আমার একটু অদ্ভুত লাগছিলো। জিজ্ঞেস করলাম, - বাইকটা মেরে দেবেনাতো? - আরে নাহ। এত সহজ নাকি! শিহাব বললো। তবুও আমার কেমন যেন লাগছিলো। চেয়ারম্যানের বাড়ি যেদিকে বলেছিলো দোকানি সেদিকে যেতে একটা বাড়িই পড়লো সামনে। উঠানে আমাদের দিকে পিঠ করে বেশ অনেকগুলো লোক দাঁড়িয়ে আছে। আমরা উঠানে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। ভিড় ঠেলে সামনে যাবো কিনা ভাবছি, তখনই দেখলাম পাশের এক ঘরের সিঁড়ির ওপর তিনজন লোক বসা, আমাদেরই দেখছে। চোখাচোখি হতেই একজন উঠে এলো, "কারে খুঁজেন?" - চেয়ারম্যান সাহেব আছেন? - উনি ব্যস্ত। একটা ছোড মাসলার সমাধান দিতাছেন। আপনেগোর কি কাম? - আমরা একটা জরিপের কাজে এসেছি। - অহ, সার্ভে। খাড়ান হেলে, অল্প সময়, এহনি শ্যাষ হইবো। - কি হয়েছে? - ওই মাডিকাডা কলিমের মাইয়া আনতে লইছিলো রফিক জমাদার, মাইয়া ভাইজ্ঞা গেছে বিয়ার দিন। - মেয়ে কোথায় আনতে নিছিলো? - হের ঘরে, বউ কইরা। মাইয়া কই গেছে বাপ মা কেউ কইতারেনা, কোন লাঙ্গের লগে গ্যাছে কেজানে! আইজকাল ছেম্রিগুলার লাল পানি পড়তারেনা, লাঙ জুডাইয়ালায়। আমার কান গরম হয়ে গেলো। শিহাব দেখলাম পা উঁচু করে ভিড়ের ওপারে দেখার চেষ্টা করছে। - মেয়ের বয়স কত? - বারো তেরো হইব... - এত কম? - ভাত তো কম খায়না, ভাত কি কম খায়? ভাত খাইতারে, লাঙ্গের লগে যাইতারে, খালি ভালোপদে কেউ বিয়া করতে চাইলেই কম বেশি ছোড বড় কচি মাঝারি! শিহাব শুনছিলো, এবার আমার হাতে একটা ছোট্ট করে চাপ দিলো। আমিও চুপ করে গেলাম। বাপরে বাপ! দরকার নেই বাবা, তারপর ধরে মার দিয়ে দিলে! বেশি কিছু না, হয়ত বলে দিলো আমরাই সেই মেয়ের 'লাঙ!' ভিড়ের কাছাকাছি গিয়ে থামলাম। ওই লোকটাও আমাদের পিছন পিছন এলো। একপাশে একটা লোক কাঁদো কাঁদো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ওই মেয়ের বাবা হয়ত, লুঙ্গি পরা, গলায় গামছা। একটা চেয়ারে পাঞ্জাবি পরা একটা মধ্যবয়সী লোক, এই বোধহয় চেয়ারম্যান। আর তার পাশে টুলে বসা আরেকটা লোক, এ কে বোঝা গেলোনা। আমাদের সেই লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম, " উনি কে?" " হেনেই তো রফিক জমাদার," লোকটা বললো। আমি আবার তাকালাম। বয়সী এক লোক, চল্লিশ তো হবেই। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, - ওনার বউ নেই? - ছিলো, তয় মইরা গেছে। পোলা বিয়া দিছে, অন্য ঘরে উডাইছে, হের দেখাশুনা করতে তো লোক লাগে। ওদিকে কলিমের কাম জুটেনা, দুইডা পোলা, তিনডা মাইয়া। একটা মইরা গেছে ছোড থাকতে, আরেকটারে বিয়া দিছে। বাকিগুলায় পড়ত লেখত, করোনায় সব বন্ধ। পোলা দুইডার একটায় রিসকা চালায়, আরেকটায় কাম পাইলে বাপের লগে মাডি কাডে। এতডি মানুষ, খাওন জোডেনা। মাটি কাডনেরও দিন নাই, রিসকায় ওডনেরও দিন নাই। মাইয়াডা ডাঙ্গর হইছে, রফিক জমাদারের ওহানে খাওনের অভাবও হইত না। ছোডঘরের মাইয়া, হেরপরও দয়া কইরা নিতাছিলো রফিক জমাদার, কই শুকুর করব, না, গেছে খানকি কুত্তা চোদাইতে! আমি মনোযোগ সামনের দিকে দিলাম। এই লোকের অশালীন কথাবার্তা অসহ্য লাগছে। চেয়ারম্যান সাহেব বোধহয় এখন সিদ্ধান্ত শোনাবেন। উনি হাত তুলে সবাইকে থামতে বললেন। - দ্যাহেন মেয়ারা, রফিক দয়া কইরা মাইয়াডার খাওন খোরাকের ব্যবস্থা করতে গেছিলো। অরে পাডাইছে স্বয়ং আল্লাহ, অই ছেম্রির রিজিক লইয়া। কিন্তু ছেম্রি আল্লাহর রিজিকে ঠোকর মাইরা গেছেগা। অয় তো এহন রাস্তার খানকি হইলো, হালাল থুইয়া হারামের পথে গেলো। কিন্তু অর চাইতেও বড় দোষ কলিমের। পুরুষ মানুষ হইয়া মাইয়া কনটোরোল করতে পারেনাই। মাইয়াজাত বান্দির জাত, বান্দি রাখতে হয় দাবে, যারা দাবে রাখতে পারেনা, হেরা পুরুষ না, হেরা হিজরা। কলিমের হিজরাগিরির লইজ্ঞা ইজ্জত গেছে রফিকের, বরযাত্রী লইয়া রফিক গিয়া ফির্যা আইছে। এহন আমার বিচার, রফিক সবার সামনে বিশখান জুতার বারি দিয়া কলিমের ইজ্জত লইব। কলিম নামের লোকটা ডুকরে কেঁদে উঠলো। মাথায় বারবার আঘাত করতে লাগলো, "মারেন, আমারে জোতা মারেন। মাইয়া জরমো দিয়া ঠেকছি, জোতা মারেন আমারে, জোতা মারেন।" রফিক জমাদার যেন তৈরি হয়ে ছিলো, জুতা হাতে এগিয়ে গেলো। আমি শিহাবকে ধরে টেনে নিয়ে আসি, বাড়ি ঢোকার পথে একটা পুকুরঘাট দেখেছি। শিহাবের বোধহয় দেখার ইচ্ছা ছিলো, কিন্তু আমার সাথে চলে এলো, দুজনে পুকুরঘাটে বসলাম। আমার খুবই অসুস্থ লাগছিলো, একি আচরণ! একে তো বুড়ো ভাম অন্যায়ভাবে একটা বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করতে গিয়েছে, তার উপর গরীব বাপটাকে এমন হেনস্তা! শিহাব বোধহয় আমার মনের ভাব বুঝছিলো, বললো, "টাকা রে, সবই টাকা। জুতার বারি তো না, টাকার বারি।" লোকজন কমে এলে চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে কাজে নেমে পড়লাম। ওই বদভাষী লোকটা সঙ্গে এলো, আর খুবই বিরক্ত করলো। যাকে যা জিজ্ঞেস করি, অর্ধেক উত্তর সেই দিয়ে দেয়। একটা খালি গায়ের বাচ্চা ছেলেকে একটা চড় কষিয়ে দিলো কারণ বাচ্চাটা তোতলাচ্ছিলো। আমার গা রাগে জ্বলে যাচ্ছিলো, শিহাব আস্তে করে বললো, "চেয়ারম্যানের লোক তো, আমরা নতুন মানুষ দেখে আমাদের সামনে তেজ মারাচ্ছে দ্বিগুণ।" কাজ শেষ, ফেরার সময় হলো। লোকটাকে আর সাথে নেয়ার ইচ্ছা ছিলোনা, তাই চেয়ারম্যানকে বলেই তাড়াতাড়ি চলে এলাম দোকানের সামনে, যেখানে বাইকটা রেখেছিলাম। দুপুর পার হয়ে গেছে, পেটে ক্ষিদে, তাড়াতাড়ি রওনা দিয়ে যেতে পারলেই হয়। দোকানি আমাদের দেখে তাড়াতাড়ি বের হয়ে এলো। শিহাব বাইকটা রাস্তায় তুলছিলো। দোকানি হঠাৎই আমার কাছে চলে এলো। জিজ্ঞেস করলো, "আপনারা কি এনজিওর লোক?" আমি না বললাম। দোকানির মুখটাই শুকিয়ে গেলো। শিহাব বাইক নিয়ে পেছনেই ছিলো, আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। আমি দোকানিকে বললাম যে কোনো প্রয়োজন কিনা। উনি কিছুক্ষণ ইতস্তত করে যা বললেন, তাতে আমাদের চোখ কপালে উঠে গেলো। কলিম মাটিকাটার মেয়ে তার বাড়িতে, তার মেয়ে আর ওই মেয়ে একসাথেই পড়াশোনা করত। বিয়ে ঠিক হলে ওই মেয়ে পালিয়ে চলে আসে আর তার কাছে আশ্রয় নেয়। সবেমাত্র দুইদিন হয়েছে, এখনও কেউ জানেনা, কিন্তু তার পক্ষে এই ছোট্ট গ্রামে বেশিদিন এই মেয়ে লুকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। আর এই মেয়েকে খুঁজে পেলে ওর আর নিস্তার থাকবেনা। মেয়ে পড়াশোনায় ভালো, এখন যদি কোনো এনজিওর সাথে আমাদের যোগাযোগ থাকে যারা মেয়েটাকে পড়াবে আর আশ্রয় দেবে, তাহলে সে মেয়েটাকে তাদের দিয়ে দেবে। আমাদের খোঁজে তেমন কোনো এনজিও ছিলোনা। কিন্তু আমার একজনের কথাই মনে হলো। আমি দোকানি লোকটাকে অভয় দিলাম, বললাম মেয়েটার ব্যবস্থা আমরা করে দেব, কেউ জানতে পারবেনা। এখন আমরা ওনার বাড়ি গিয়ে লুকিয়ে থাকব, রাত হলে বাচ্চাটাকে নিয়ে ফুরুৎ! বাচ্চা একটা মেয়ে পড়াশোনা করবে, এত আনন্দের কথা। দোকানি আমার হাতদুটো চেপে ধরলো, ইশারায় ডেকে তাকে শিহাবের হাতে ধরিয়ে দিয়ে মোবাইল বের করে কাঁপাকাঁপা হাতে প্রমার নাম্বারে ফোন দিলাম, বুকটা ধরাস ধরাস করছিলো। কতদিন পর! কতদিন পর ওই গলা শুনবো! ও আমায় চিনতে পারবে তো! ক্লাসে আরও দুইজন সাব্বির আছে, আমি নিজেকে কিভাবে চেনাবো? এতবড় একটা কাজ করব, একটা বাচ্চাকে উদ্ধার করব, ও কি আমায় মহান ভাববে? তারপর যদি প্রেমের প্রস্তাব দেই? নাকি বিয়ের প্রস্তাব দেব? এতবড় মহান ব্যক্তির সাথে বিয়ে হলে ও বেশ সুখেই থাকবে বলা যায়! দুই তিনবার বাজার পর কেউ একজন ফোনটা ধরলো, একটা মেয়েকণ্ঠ কয়েকবার হ্যালো হ্যালো করলো। প্রচন্ড গমগম শব্দ হচ্ছিলো, আমিও কয়েকবার হ্যালো বলে বললাম, - প্রমা আছে? - হ্যালো? হ্যালো? - হ্যা, প্রমা আছে। - কিচ্ছু শোনা যাচ্ছেনা। হ্যালো? - হ্যা প্রমা.... - হ্যা, হ্যা, আপুর তো বিয়ে আজ! আপনি কি আপুর বন্ধুদের কেউ? হ্যালো? নাম্বারটাও সেইভ না.. কে এটা, হ্যালো? আপু দুলাভাইয়ের সাথে খেতে বসেছে। হ্যা, শোনা যাচ্ছেনা কিছু। আপনি কি দাওয়াতিদের কেউ? তাহলে মিন্টফ্লোরা কনভেনশন সেন্টারে আসুন, মূল রাস্তা থেকে বামে, রুফটপে, কার্ডে লেখা আছে। ধ্যাত্তেরি, কি জ্বালা! ফোনটা কেটে গেলো।
Facebook Comments Box