১ আঁচলে ঝাপট ওই, বঙ্গোপসাগর ফুলে ফেঁপে ওঠে সেখানে কে বাজাবে যমুনার বাঁশি, আছে ঢেউ মাথার উপরে হু হু করা শ্বাস, আর তত লবণাক্ত রৌদ্র ভ্রুকুটি মিত কথোপকথন হবে, না-ক্রেতারা থাকবে না আর আমাদের ঘরের ভিতরে বহুদিন বালি-দানা, মিহি এবারে ডালে-ঝোলে শাকসব্জি ডুবে আছে জেনো মৎসবন্দর ওই প্রত্যক্ষ্য করেছে বরফের চাপান-উতোর আমি পাশ ফিরে শুয়ে পড়ব আর দেয়ালের নৃত্যরতা ভোর এনে দেবে ২ মাংসের দোকানে আসি, অস্ত্রের যত্ন-ক্রিয়া চোখে পড়ে ভিতরে ভিতরে কোথাও কি কেঁপে ওঠা থাকে আমাদের পেট্রোম্যাক্স শিশুবেলা, তার রামযাত্রা, কাঠের তরবারি ঘিরে জগঝম্প বেজে ওঠা --- সূর্য ডোবার পরে মনে পড়ে তেঁতুল গাছের ওই ঝাঁকরা শরীরও দৃশ্যত হাত-পা কাঁপাত যেকোনো ফ্রেমের ভেতরে সেইমতো ঢুকে আসা আমাদের সঙ্গে অন্ন সন্ধান, আমিও তো গৃহস্থ তেমন মুঠো খুলতে ভয় পাই, যদি শূন্যতা আমাকে তীব্র তাকায় ... ৩ কে যে কাকে প্ররোচিত করে! পোয়াতি গাভীর ওই দৃষ্টিখানি গোয়ালের কোণে সরে যায়, স্খলিত বেশভূষা নিয়ে আধুনিকা শপিং-মলের কাছে যথার্থ দূরত্ব চেয়েছে, সেই সব বালক আকাশ আজও আছে তার কাছে, গোপনে দেখার ফড়িং সকাল আছে সে শুধু কোনো কোণে যেতে চায় নিজেকে দেখার এই যে চতুর বয়স, নিয়মকানুনহীন ভুল-ভ্রান্তি, পা-মাড়িয়ে ফেলতে পারি ভেবে ক্রমে পা টেনে আনা নিজের বৃত্তের ভেতর, জটিলতা বাড়ায় কেবল অমাবশ্যা ও পূর্ণিমা মিশিয়ে আমি আধাআধি করি, আর ঐ শীর্ণ রেখার উপরে তিরতির কিছুটা দাঁড়াই ৪ মাথায় গামছা বাঁধা গোয়ালারা ফিরে গেছে কবে --- তাদের বালতির ভেতর সাদা ঢেউ দেখে মুগ্ধ হওয়াও নেই, আমের কুশির ঘ্রাণঅলা গ্রীষ্মের বাতাস মনে পড়তে পারে, আর ছিল আচার-চুরির কর্মশালা ... প্রতিদিন বোঝাপড়া শেষে চোখে পড়ে নিজের ছায়াটি ক্রমে হ্রস্ব হয়ে আসে হেরে যাচ্ছে যাক, তাকে বলি, লোকাল ট্রেনের খবর হয়েছে হাঁস নামিয়ে দিই জলে, সে যে খুব সন্তরণপটু --- চোখে নিতে হয় জন্ম সূত্র করে আমি শেষ-বেঞ্চার পড়াশুনো করি,কাল রবিবার সমীরের মা লকার নিঃস্ব করে গয়না এনে রোদে দেবে ওদের উঠোনে আমার নেমন্তন্ন আছে সেসব দেখার ৫ ঘোরাফেরা সম্বল ওই সূর্যালোক ছাতের কিনারে ডেকে আনে কিশোরীকে দুপুর ফেরত স্ট্রেচার টানটান শুয়ে আছে একটু নীচেই, লাফাও, লাফ দাও আমি তো সংলাপ জানি না, কীকরে আটকে রাখব ওই মরীচিকা, রেলকলোনির মাঠ কিশানগঞ্জে এসে মাথা নিচু করে বসে আছে মহানন্দা নদী, তার ভোরের ধোপানীরা সাদা উরুর উপরে কাল ফের সূর্যালোক পিছলে যেতে দেবে .... যাত্রী নেই। খাটাখাটনি নেই। লালজামার কুলিরা ঘুমোতে পারে না, স্বপ্নেরা অজুহাত জানে রেলের ঘন্টিটিকে কীটদ্বষ্ট হতে দিয়ে সবুজ পতাকারা ফিরে গেছে ঘরে এই গ্রীষ্মের ভেতরে আমি মাদুরের জং খুঁটে খুঁটে তুলি, দু-একটা মাছি ওড়ে ৬ আমাদের মেঘেদের বেঁধে রাখে পেরেক ও সুতোয়, এরওপর কীভাবে যে গর্ভবতী হয় আর সমস্ত বাঁধন সে একা একা কেটে মুক্তি নেয়, যতই বলো না কেন রূপহীন সে তখন , সে তখন নিচু গালাগাল, সতর্কতাহীন খোলামেলা জামার বোতাম এক একটা অতীত এরকম সময়ে কুড়োতে গিয়েছি কাগজের নৌকোর গায়ে হাওয়া চাই সেই যেন চাঁদবেনের সাম্পান,গার্হস্থ অতিক্রম করে নেবে দ্রুতবেগে সাথে মসলিন, সাথে মশলার কৌটো রয়েছে নতুন দেশ চাই, বন্ধু চাই --- কাগজের নৌকো নড়েচড়ে এক একদিন কত কি ইচ্ছেরা ভিজতে যায়, বারণ শোনে না, তারপর জ্বর আসে ৭ বাঁশের ঝোপের ভেতর শেয়ালের হাহাকার আমরা কুড়োতে গিয়েছি ঘাসফুল, ব্যাঙের ছাতা আর কিছু ছোঁয়াছুঁয়ি --- মনে পড়ে সাঁতারের জল সেজে আছে, তে-চোখা মাছেরা আছে তখন তো প্রত্যেকের পায়ে নাচ ... এই যে ভণিতা করছি আজকাল, যেন কত কাজ, যেন মুহূর্ত নষ্ট হলে রসাতলে চলে যাবে ভোরবেলা, যেন খবরের কাগজ থেকে সমস্ত অক্ষরেরা আমার দিকেই সতৃষ্ণ চেয়ে আছে ভেবে আঁচলের উড়ে যাওয়া লক্ষ্য করি না আর অবিরল মিথ্যের ভেতরে ঢুকে দোর দিই ওই সব তির্যক রোদের সময়ে আমাদের বাক্স-প্যাটরা খুলে যায় হাতে হাতে উঠে আসে ক্ষুদে ন্যাপথলিন ৮ এই যে কিছুই বলছি না, রাস্তা ফুরিয়ে দেব, আর অঞ্জলির শিউলি ফুলেরা অপেক্ষা করতে থাকবে, ছুটে উঠতে পারবে না, মজা হবে সমবেত স্তোত্র ভেসে যাচ্ছে গ্রামে ও শহরে তোমার ঘুম পাবে, আমিও পিট পিট করে তাকাব তোমার ঘাম ফোটা সহজ মুখের উপরে --- মুঠিতে রয়েছে তখনও ফুলেরা সিংহের হিংস্র তাকানো তুমি সইতে পারো না তারপর অত অস্ত্র-শস্ত্র, মারামারি, কোলাহল, যেন মাথা ঘুরে যাবে অষ্টমীর হাওয়ায় উদ্বেগ, নতুন শাড়ির ভার তারও বেশি গোয়েন্দা চোখের কাকা ও কাকিমারা ছড়িয়ে রয়েছে সাজানো উপাচারের দিকে একটা পিঁপড়ের তীব্র ছুটে যাওয়া নজরে পড়বে তখন শিউলি ফুলেরা ঝাঁপাতে পারছে না, ধুনোর ধোঁয়ায় শুধু চোখ জ্বলে ৯ সে তুমি বলতে পারো হেমন্তের গায়ে এক সিসিফাস কান্না জড়ানো মিহি জ্যোৎস্না ও শিশিরের মুখোমুখি বসবার কাল, ক্রমে অনায়াস হবে কাঁথার ওফোঁড়, ছেঁড়া ও বাতিল জুড়ে তুমিও ঈশ্বর দেখে নেবে ওম হলো কি না! কোনো এক অলীকতা ঘুরে যায় --- কী হবে তখন, কার গাছে তুমি মুকুল ফলাবে পিয়ানোর রিডের সাদা কালো যেভাবে তেড়ে আসে বাদকের দিকে আরো সাদা করে বলি, যেভাবে সাপ ফণাহীন হয় ঘুম ভাঙে অথবা ভাঙে না --- কোনো নিঃঝুম প্রান্তরের মতো শুয়ে থাকা আসে ১০ স্তনের দু-ডানা, তার বাতাস কাটার শব্দে কান পাতে নক্ষত্রলোক কত নীচ থেকে চোখে পড়ে আমাদের, আকাশের কলাকুশলীরা সাজিয়ে নিচ্ছে চেয়ার ও টেবিল, ক্লাস বসবে পুনরায় শীতের রোঁয়া গজাবে ছেলেদের গায়ে ঘন ঘন কেঁপে উঠবে তারা এই যে দীর্ঘশ্বাস ঠেলা দিনগুলি, মনে করি মাঠের দু’ধারে দর্শকের পোশাকে আমোদ সংগ্রহরত যে যখন নখ-দাঁত বের করবে করুক, আপাতত আমাদের দখলে রয়েছে ডাহুক পাখির সাজানো দু’চোখ আর কোয়া কোয়া কমলালেবুগুলি ১১ বুলবুলির লড়াই দেখে হাততালি দিচ্ছে ঠাকুর্দারা, আমরা কিছুই করিনি ফড়িং ধরার কথা মনে করতে পারছি না আর, আমাদের বাইপাস থেকে শীতের সবজিরা এসে দ্রুত ঢেকে দিয়ে যায় ভোরবেলা, প্ল্যাটফর্মের বড় ঘড়িটিকে অনেকে চিনি না প্রত্যেকের বাড়ি যেন সংশোধনাগার, দু’খানি জানালা যথেষ্ঠ লাগে হাতে ও পায়ে ক্রমে কুণ্ঠা ধরে, মনে হবে আমরা শীতকাল ফুরোতে পারিনি যেসব হাওয়ারা এসে এসময় দরোজায় নক্ করত, তারা কি জানি কোথায়! আহারের দূরত্বে শুধু দিন-রাত্রি হয় যমের অরুচি মতো দেখি গানগুলি যথেষ্ট ধূর্ত, তারা ট্রাফিক পোস্টে শুধু বাজে ১২ ধুনুরির ছিলার ধ্বনি ফিরে গেছে, হিংস্রতারহিত আজ শিমুলেরা ভালোবাসা এভাবে ফুটিয়েছে যেন নেচে আছে অজস্র হৃদয় গাছে গাছে কী যে আসঙ্গতা হাওয়াও শান্ত খুব, অতীত মাধুরী যেন মুখরিত সমস্ত অস্ত্রের দোকান থেকে এসময় উপাসনা বিলি হবে আমার অরণ্যঝোঁক ইতিউতি বেড়াতে বেরোবে কোনো কোনো দিন অবিক্রিত বাদামের ঠোঙা এনে ময়দানের কোণে বসে সেসব ভাঙার কাজ সানন্দে যাপন করি ব্যালকণির রকিং চেয়ার এসময় একা একা দোল খায়, হাসে

কথাসাহিত্যিক
লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী
Facebook Comments Box