১. ঘুম ভেঙে বুঝি আজ বৃষ্টি হবে না। আজ কোলাহল, ভিড়ভাট্টা দু:সংবাদ। আজ দিনটার গায়ে অনন্ত ধুলো। আকাশের মুখপেশি শিথিল হতে গিয়ে সামলে নিয়েছে বেশ। কষ্ট ও কান্নার মাঝে বৃষ্টির বারান্দা ছিল। আজ নেই। আজ পরবাস। ২. গ্রীষ্মের বিকেলে ট্রেন চিতার ভিতর দিয়ে ছোটে। শূন্য জলাশয়, খাঁ খাঁ মাঠ। বৃক্ষ সরে গেছে। দূরের গাছের ছায়ে মানুষ ঘুমায় পশুসাথে। মানবের বাহুদুটি গরুটির গলায় জড়ানো। গরুটিরও পাগুলি স্পর্শ করে আছে তার গা। চোখ কচলে দেখি, সত্য কিনা, প্রাচীন বটের মায়া ঘিরেছে তাদের। দৃশ্যরা বৃষ্টি নামায়। ৩. সেই পথ পেরিয়ে এলাম। সে বাজার, সে দোকানপাট। সেই সারমেয় যে অনন্তকাল শুয়ে আছে। এ গাঁয়ে দুচারটে পাকা বাড়ি আগে ছিল না। ও গাঁয়ে বেড়েছে হট্টগোল। এইমাত্র। আর সব এক। ওই দেখ, গাছের আড়ালে প্রাক্তন বিকেল থেমে আছে — শিলা খাঁজে আদরের দাগ। সিঁড়ি বেয়ে ঝর্ণা ছিল যে, সেখানে শ্যাওলা জমেছে । ঝর্ণাকে কোলে তুলে চুমু খাই। আর দেখ, পুরানো বর্ষাও এসে গেল। মেঘ কেটে যাবে তার মানে, পুরানো শৃঙ্গ কাল প্রশান্ত হবে। ঝর্ণার ছিটে আর সময়ের কুচি পড়ে ঘাড়ে। তুমি অনুষঙ্গমাত্র ছিলে মনে হয়। যে পাহাড় আত্মমগ্ন, সেখানেই বৃষ্টি মানায়। ৪. বৃষ্টি এলে… জ্বোরো ট্রেন আশ্চর্য জাহাজ হয়ে যায়; জ্বলা মাঠ, শুখা ঝিল আর বোজা চোখে ওম, জল, বেদনা বা অকারণ বাতুলতা ঝরে। খেজুরের গাছ দেখি ঝড়ের গভীর প্রেমে কাঁটা-মাথা নত করে আছে। অগত্যা ঝড়ও বসে, গাল ছুঁয়ে দ্যাখে। বৃষ্টিদিন বয়ে গেলে অনুচিত হত। ৫. কিছু পাতা উড়ে গেল৷ কিছু প্লাস্টিক৷ বজবজ লাইন। কলপাড় ঝগড়া ভুলে ঠোঙা চেপে রওনা দিল বহুদূর। লুঙ্গি ভাঁজ করে হাঁটুর উপরে তুলে নিল পুরুষ, যেন বৃষ্টি এসেই গেছে৷ ঝুপঝাপ ঝাঁপ পড়ে । কাঠচেরাই দোকান ডাকে, 'দাঁড়িয়ে যান কিছুক্ষণ!' হো হো একটা আওয়াজ উঠছে সমবেত৷ 'এলো, এলো…' ব্যাটসম্যান ছক্কা মারলে স্টেডিয়ামে যেমনটা ওঠে। শনিতলায় একলা ঠাকুর। রোষানলে এই ক্ষণে প্রথম জলের ফোঁটা ঝরে।

গদ্যকার, ছোটগল্পকার ও প্রাবন্ধিক পেশায় শিক্ষক। কলকাতায় বসবাস।
Facebook Comments Box