শ্বাসমূল তারপর আস্তে আস্তে গাছ হয়ে ওঠে সেই গান শিকড় ছড়াল বুকে শ্বাসমূল নোনা মাটি, মাটিতে পায়ের ছাপ দক্ষিণরায়ের মুখোশ। গানটি সেজেছে চাক ভেঙে মধু আনে আনে শ্রিম্প ও শ্রাবণ, ভরাকোটালের রাত চুপিচুপি গান উঠে আসে দাঁত নখ নিয়ে আমিও কোঁচড় খুলে দেখিয়েছি থাবা সবটা শেফালি ঋতুমতী হাওয়া সন্ন্যাস ছোপানো রোদ, উড়ে যায় মেঘেদের খড়কুটো পাখিবাহারের খেলামাটি করলাভ্যালির ঠোঁট ছুঁয়ে ভেসে যাচ্ছে সাইকেল থমথম করে শুধু ঋতুমতী হাওয়া অ্যালয় সাগরে যাব, চেটে খাব ধাতুর সমূহ বরফের ঘোড়া থেকে ঝরে পড়ে গতি পাহাড়ের বেগুনি গহ্বরে খড়েঠাসা ময়ূরের উড়ন্ত পেখম চলকে চলকে পড়ে স্নায়ুতটে ট্যারট কার্ডের থেকে উড়ছে অথই গর্ভিণী ঘাসের রেণু দোতরার ডাং মরুজাহাজের মাঝে বেজে ওঠে ক্যাকটাস সুড়ঙ্গের ইস্তেহার খামারের স্মৃতি নিয়ে তারার শিথানে বসে দাঁড়কাক সৌরকক্ষ থেকে সরে এল একখানি চাঁদ ঝরে গেল দৈববাণীর থেকে জিভ মাইটোসিস ও মিয়োসিস শেষে পাশ ফিরে ঘুমোচ্ছে সময় ফাটা ঠোঁট, ঘামের প্রদাহ থেকে ফুটে ওঠা মেঘত্বকে লোহিত আপেল বসন্তগুটিকা ফেটে নামছে গ্যাঁজলা সুড়ঙ্গের ইস্তেহার উড়ছে বাতাসে শ্লথ ছন্দে নেচে যায় আলোর পুত্তলি উত্তল লেন্সের পিঠে যেন ব্যালেরিনা ধুন্ধুমার বেজে ওঠে রোদের ট্রাম্পেট রবিফসলের খেতে, মাংসের পল্লিতে ট্রেনের রক্তাক্ত চোখ …বাজে হুইসেল একলা ক্যানভাস সে তো এক মৃত কাঠ, তাকে বলি আসবাব বিরতির অন্যপিঠে রোদন-উপত্যকা বিষণ্ণতার পাড়ে জেব্রাক্রসিং তবু আমি পিয়ানো সাজিয়ে রাখি আয়নায় মুখ রেখে বসে থাকি দু’এক ছিলিম স্বপ্নে টান দিই চুপেচাপে উৎসেচক-প্রবণ এই জলাধার হট-স্প্রিং, সুখ-গোলা জল সুখ কাকে বলে হীরামন হাতে তার আগুনের ব্রাশ পুড়ে যায় কুয়াশারঙের দিন জলে ধোওয়া একলা ক্যানভাস অন্ধ পারাবত যোনিপথে পাশাপাশি শুয়ে আছে আলো আর অন্ধকার তবে কী স্পর্শের পরেও কিছু পড়ে থাকে পড়ে থাকে ধাতুদাগ, বীজবাদ্য কেউ যেন ভোজবাজি করে খুলে দিচ্ছে অন্ধ পারাবত একলাই হেঁটে গেল রং যাওয়াটুকু দেখছি বসে বসে তুমিও যেতেই পার বৃষ্টিঅরণ্যের দিকে যেখানে কোয়েলশাবক ভাঙে অনাঘ্রাত ডিম যেখানে নিজেই চকমকি পাথর এক একটি গাছ আচমকা বাজপাখি ছিঁড়ছে আকাশ ফসল পোড়ানোর ঋতু জুমচাষ, শিকার-উৎসবে নাচো হাড়ের পেয়ালায় ঢালো এ-মদিরা মাংস-ইশারা হায়না ও সাপের সঙ্গে আড্ডা চামড়ায় চকমকি রিভার্সাল আলো বিড়ি জ্বালিয়ে নাও কমরেড আগুনের রং নীল হয়ে উঠলে স্টোভ থেকে কেরোসিন-গন্ধ মুছে যায়। মুছে যায় ভ্রূণসংবাদ তবে খুলি, খুলে ফেলি রোদনপোশাক ক্যাটাস্ট্রোফিক ঋতুর গুচ্ছ থেকে বিষদাঁত, মাংস-ইশারা কে কার শামাদানে জ্বালিয়ে রাখছে হৃদয় সাবমেরিনের থেকে উঠে বসছে কঙ্কাল ধুয়ো দিচ্ছ স্রোতে ও শ্রবণে তুমি তো খোলস ছিলে রেটরিক বিদ্যুৎপ্রপাত স্বপ্ন-আবাসিকের ঘুমে ক্যাকটাসের বিলাপ ভ্রমের বাগান প্রচ্ছন্ন শুশুক এক খাবি খাচ্ছে জল-বন্দনার দিন কামড় বসাব হাওয়ায়, দাঁত খুলে যায় এমন দুপুর এলে পেকে ওঠে ফোঁড়া পুরোনো রেকর্ড থেকে বেজে ওঠে আঙুরখেতের গান এ-বৃক্ষ কদম্ব ছিল, আড়বাঁশি, বাথান-বালক দিনে দিনে মাটি খসে দেহ এক ভ্রমের বাগান স্রোতের করাতকলে শিস্ দিতে দিতে উড়ে যাচ্ছে টুপি শিস্ দিতে দিতে উড়ে যাচ্ছে সিগারেট গানের পাশেই ছিল ঘর ঝোলায় কুয়াশা নিয়ে চলে গেল শীতের করলানদী চাঁদ এক অমীমাংসিত ভ্রূণ স্রোতের করাতকলে ভেসে যায় দশমিক থেকে পুরো একঘর সরে বসল সংখ্যা পারদ নাচছে উঠোনে ছড়ানো আছে রবি-ফসলের দানা মালসায় জল ফিঙেপাখি, দুয়েকটা চড়ুইও ঢুকে গেছে কে যেন রাত্তির পুষে রাখে হাতব্যাগে স্বপ্নে বাগার দিই সিপিয়াটোনের পাশে ধুলোমেঘ ছবিগুলি কথা বলে সেলোফেন কাগজে মোড়ানো রুদ্রাক্ষের মালা এই যে এতোটা মেঘ উজিয়ে এলাম তার গায়ে লেগে আছে আঠা ও পিঁচুটি দরজা জানলা নেই, শুয়ে থাকে ঘর সেই ঘরে বসে আমি স্বপ্নে বাগার দিই সম্ভরার ঝাঁজে বসন্তশ্রমিক কাশে বসন্তশ্রমিক কাশে ছায়া পড়ে কুয়োর ভেতরে যা যা কিছু পড়ে ছিল গন্ধকে সোরায় এই ধরো তোমার মুখের মতো কিছু সোনালি বলেরা ওড়ে... কথা নেই বহুদিন, বহু বহু দিন আমার অপারগতা, ছোট ভুল নীচু জলা থেকে উড়ে আসে ভাপ ওই পাড়ে শ্মশানে ঘুমাচ্ছে চিতা আমারও তো আলপিনে গাঁথা এই পা রাত শুধু রিফু-পারাবার যেভাবে বিদ্যুৎ নাচে একটি তামার তারে আমিও তেমন স্পার্কে স্পার্কে ভরে আছি ও সমুদ্র ও অতুল অপেক্ষা হে আমাকে টুকরো করো, খণ্ডে খণ্ডে ভেসে যাক জীবন-সমগ্র থেকে ঝরাপাতা, জানু যোনি অলিন্দ নিলয় হাড় মজ্জা খুঁড়ে খুঁড়ে দ্যাখো এই জোনাকিপ্রপাত ছায়া পড়ে ছায়া পড়ে কুয়োর ভেতরে শুধু ছায়া পড়ে
সৌমনা দাশগুপ্ত
শূন্য দশকের কবি। পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলাশহরে জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই কবি অর্থনীতিতে স্নাতক পরীক্ষা পাশ করার পর প্রথাগত পড়াশুনো থেকে সরে যান। নিয়মিত ভারতবর্ষ, বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালিখি করেন। কৃত্তিবাস, দেশ, কৌরব, বিভাব, বারোমাস, চতুরঙ্গ, পরিচয়, অমৃতলোক, কবিসম্মেলন, প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, কালি ও কলম, দূরের সাইকেল ইত্যাদি পত্রিকায় তাঁর লেখা ছাপা হয়। বিভিন্ন ওয়েব পত্রিকাতেও নিয়মিত লেখেন। লেখা ছাড়া ভালোবাসেন গান গাইতে ও ছবি আঁকতে।
Facebook Comments Box
1Comment
December 2, 2023 at 1:45 pm
খুব ভালো লাগল। মুগ্ধ হলাম পড়ে।