মোদি লিপি এবং এখন আমরা আঘাতপ্রাপ্ত এমন এক সময়ের দ্বারা যার ছোট্ট, তীব্র লাথি খুব শীঘ্রই উপলব্ধি করবে সকল ভাষার কবিরা। সম্ভবত একমাত্র সন্তুষ্টি হবে এটা দেখে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়া এই নৃশংস অগ্নিকাণ্ডে কারা আঁকড়ে থাকতে পারে তাদের নিজস্ব ভাষা এক কাব্যিক জালের ভিতর। স্পর্শ উন্মাদ, আমি ভেতরে গিয়েছি উন্মত্ত হয়ে তোমার স্পর্শ আটকে রেখেছে আমার জীবনদায়ী শ্বাস তোমার লোভী স্পর্শ দ্রুত কেটে করছে আমার দেহ-কণ্ঠ ফালা ফালা আর যন্ত্রণায় যেই আমি চাবুক মারি স্বপ্নের হাতগুলিকে একটার পর একটা প্রত্যেকটা ক্ষত রক্ত ঝরায় আমার শরীর থেকে এগুলিই হল মৃত্যু-যন্ত্রণা আমার স্বপ্নগুলোর যাদের নখগুলো, বেশি বেড়ে গেছে, নখ ঢুকিয়ে দিচ্ছে আমার উন্মত্ত কামনার গভীরে আর উন্মাদ হয়ে আমি দৌড়াতে শুরু করি তোমার শরীরের মধ্যে দিয়ে কৌমার্য আমি দেখি নিজেকে ঝুলন্ত উলটো হয়ে একটা দড়িতে আর এমনকি সেই অবস্থায়ও আমার শরীর দুলে যাচ্ছে তোমার নগ্ন শরীরের দিকে এক ধরনের বুকে হেঁটে চলা শরীরের মৃদু অন্ধকার থেকে অন্ধকারাচ্ছন্নতার দিকে তুমি ঠেকাতে চেষ্টা করছ সেই কৌমার্যকে যা তোমাকে পিষে দিতে চাইছে আর অন্ধকারের ছাল প্রসারিত হচ্ছে তুমি থেকে আমার দিকে শব্দ হচ্ছে চড়চড় ছবি আমি সেই শিল্পীকে খুঁজছি যে এই ছবিটিকে অসম্পূর্ণ রেখেছে সম্ভবত সে দেখেছে রঙ এখানে যথেষ্ট নয় অথবা সে হয়তো এই ক্যানভাসটিকে নিয়েই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল তার অন্তত নির্দিষ্ট করা উচিত ছিল এই ছবির প্রান্তিক লাইনগুলো যাতে একটা স্বপ্নের মধ্যে ছবিটি একটি নির্দিষ্ট সীমার বাইরে শুরু হতে পারত ছবিটি যাপন করতে পারত তার পূর্ণ জীবন এখন এই সীমাচিহ্নহীন পঙ্গুতা একেবারেই অসহ্য এই ছবির প্রত্যেকটি রেখা পঙ্গু এবং শুধু স্পর্শ করা মাত্রই এই ছবিটি তৈরি করে ফাটল ছবিটির মধ্যে এবং যে একে স্পর্শ করেছে তার মধ্যে তাই প্রত্যেকেই ভীত এমনকি ছবিটির কাছে যেতেও ছবিটি বহু বছর ধরে অপেক্ষা করছে শিল্পীর জন্য এখন এমনকি এই অপেক্ষাও হয়ে উঠেছে এক ধরনের পঙ্গুত্ব মাঝে মাঝে এটি ভাবে যেন সে আসবে শেষ করবে ছবিটি আর চলে যাবেই সম্ভবত সেও খোঁজ করছে ছবিটি আর তা খুঁজে না পেয়ে আমার আশঙ্কা ছবিটি অসম্পূর্ণ থেকে গেছে তারই মতো নাভিহীন একটি মানুষ অস্বীকার একধরনের উত্থান ও পতনময় উপশম যা নিজের ঢাক বাজিয়ে চলেছে এবং স্মৃতির ভ্রূণ অনন্তকাল ধরে বেড়ে উঠছে তোমার জন্য আমি কত অপেক্ষা করব? আমার হাতের ফুলগুলি নিমজ্জিত হয়েছে আমার চোখে এখন আমি যখন ব্যথাদীর্ণ অনুপস্থিতির জানালা খুলি ভেতরে দেখার জন্য, আমি কী দেখব নিষ্ফল, শীর্ণ শব্দগুলোর চলৎশক্তিহীন দেহ ছাড়া কোন হাসপাতালে আমি যাব? হারামজাদা এই গোটা পৃথিবীটাই হারিয়ে ফেলেছে তার নাভি এখন আমি অনুভব করি না কাউকে আমি আর ভালোবাসি আমি তাদের ঘৃণাও করতে পারি না আর সেইজন্যই আমি ঝেড়ে ফেলি তার স্পর্শগ্রাহ্য লিপি স্তন থেকে নাভি পর্যন্ত বাধাহীন উচ্ছ্বাসে মর্মরিত কবিতা এখন আমাকে আরেকটু দূরে হেঁটে যেতে হবে সেই শহরে পৌঁছোতে হবে যা তার নয় সেখানে আমি আমার মনের এইডস সারাব আমার চিন্তার মধ্যে গর্ত করা হবে আর সেইসব গর্তগুলোতে লাগিয়ে দেওয়া হবে স্ক্রু কিন্তু এখন আমি প্রতিজ্ঞা করছি আর কাউকে একেবারেই মনে না রাখার এখন চাঁদকে কাপড়ে মুড়িয়ে একটা নিমগাছের নীচে পুঁতে ফেলা দরকার যেমনভাবে আমরা সদ্যোজাত শিশুর নাড়ি মাটিতে পুঁতে দিই
কবি পরিচিতি : মারাঠি কবি হেমন্ত দিভতে একইসঙ্গে সম্পাদক, প্রকাশক এবং অনুবাদক। দীর্ঘ পনের বছর ধরে সম্পাদনা করেছেন 'অভিধানান্তর' নামে কবিতার কাগজ যা নব্বই পরবর্তী কবিদের একটি জোরালো প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছিল। তাঁর ছয়টি কবিতার বই আছে। তাঁর কবিতা অনূদিত হয়েছে ফরাসি,ইতালীয়,স্লোভাক,জাপানি,ফার্সি,মালতিজ, সার্বিয়ান,স্লোভেনিয়ান,গ্রিক এবং হিন্দিসহ বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায়। স্প্যানিশ, আইরিশ,আরবি,জার্মান এবং এস্তোনিয়ান ভাষায় তাঁর একটি করে কবিতার বই আছে। ইংরেজিতে অনূদিত কবিতার বইয়ের সংখ্যা চার। সারা পৃথিবী জুড়ে বহু আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসবে তিনি যোগ দিয়েছেন। তাঁর 'পোয়েট্রিওয়ালা' সংস্থা থেকে একশোরও বেশি কবিতার বই প্রকাশ করেছেন। বর্তমানে তিনি মুম্বইতে বসবাস করেন।
অনুবাদক পরিচিতি সায়ন রায়ের জন্ম ১৯৭৭-এ। পেশা শিক্ষকতা।বিষয় ইংরেজি। প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'মহামানবের পোশাক' প্রকাশিত হয় ২০০০ সালে 'কবিতাপাক্ষিক' থেকে।এখনও পর্যন্ত কবিতার বইয়ের সংখ্যা সাত। পেয়েছেন 'শব্দসিঁড়ি' পত্রিকা প্রদত্ত 'সুভাষ মুখোপাধ্যায় স্মারক সম্মান'। মৌলিক লেখার পাশাপাশি অনুবাদ করেন নিয়মিত। সম্পাদনা করেন 'গুহালিপি' নামের একটি কবিতা বিষয়ক পত্রিকা।একমাত্র গদ্যের বই An Endless Journey : Revisiting Goutam Ghose Cinema । অনুবাদ করেছেন নাসিম শাফায় সহ অন্যান্য কাশ্মীরি কবিদের কবিতা। আমির খসরুর কবিতা, ইবনে আল আরাবির কবিতা, তুরস্কের কবি বেজান মাতুর, সিরিয়ার কবি রাশা ওমরান-এর কবিতা।
Facebook Comments Box