
১.
পেখম
অনতিকাল রাঙানো গাল
ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিতেই—
শিহরণের রঙের ছটা
ঝোপের আড়টিতেই !
হে প্ররোচন , এ শুভক্ষণ
আড়াল চাই ওদের,
আদিরঙ্গ, দেহসঙ্গ
ছায়া এবং রোদের !
২.
দীক্ষা
হস্তিনাপুরে কৃষ্ণ এলেই
কৃষ্ণা আত্মহারা !
কত ব্যঞ্জন রান্না করবে
সময় হতচ্ছাড়া...
অথচ কৃষ্ণ বিদূরের ঘরে
শাকান্ন মেখে খেল—
কৃষ্ণা বোঝেনি— অহং ঘোচাতে,
রেগেপুড়ে এলোমেলো !
অপমান করে মিটি মিটি হাসে
এ কেমন সখা, ছাই !
রন্ধনে সেরা এই তবে দোষ ?
কৃষ্ণা কাঁপছে, তাই
বুঝেও বোঝেনি কৃষ্ণা তখন
কর্মে অহং লোপ—
দিতেই শিক্ষা দিলো সে দক্ষা
জ্বালাতনবাজ গোপ !
৩
রাসেল
বিশ্বযুদ্ধ ভাঙে জাগতিক ফ্রেম
প্রজ্ঞাও কাঁপে যদি—
রাসেল জানেন কোলেটের প্রেম
মুক্তি ও বাঁকা নদী !
পুরুষ কেমন— হৃদয়ে, মেধা
পরখ করার জন্য,
রাসেল সাহেব কোলেটের কাছে
কিছুটা শিশু ও বন্য !
ভগ্নস্তূপে, ভালোবাসা ছাড়া
কী-বা থাকে উদ্ধার—
ভেসে ডুবে থাকা— প্রেমে ও মিলনে
লুকোতে সে চিৎকার !
৪.
অস্ত্র
এভাবে মানুষ বাঁচে ?
নিজেই নিজের আঁচে
জ্বলি—
ভাবি না এখন আর
ওসব দিয়েছি নরবলি,
নিজেকে বলেছি হ্যালো
নিজেই নিজেকে জ্বালো
আর
ক্রোধকে রাখো হে বশে
সুচেতনার প্রেমরসে
মধুর টংকার !
৫.
অঘটন
হাড়ে হাড়ে চেনা, কত হাড়ে চিড়
জন্মদিনে বন্ধু দিল
ডেল কার্নেগীর !
২)
যা ছিন্নসূত্রের তারো আছে দায়
ঢুকতে চাইছে পাগলী
বুকাটেরিয়ায় !
৩)
তুমি কে ? তুমি কে ? –-বেলা ?
মেঘের চূড়ায় ও শান্ত ঝর্ণায়
ওট্টাভারিমায়— কাঁদছে, ইজাবেলা !
৪)
নগ্ন পা, না দামী জুতো ?
প্রশ্ন রেখেছেন তো মিকেলেঞ্জেলো—
জুতো চোরেদের স্বপ্ন— তিনি ছুঁতো ?
৬.
পাঠোদ্ধার
এত কেনো ঘুম দিয়ে ঘেরা
প্রশ্ন করল—
মিশরের, কবর চোরেরা…
প্রতিটি পদাঙ্কেই কুজ্ঝটি
জেগে থাকে শূন্য
সমাধিক্ষেত্রটি !
অবলুপ্ত ভাষার কান্নাকে
চোরেরা বোঝেনি—
চলে গেছে, পায়ে দলে, তাকে…
৭.
জিজ্ঞাসা
জীবনকে সে কিভাবে যে তাতায় ?
মানুষটা নেই ইমেজ রয়েছে !
না, তাদের কথা নয়—
বলছি, সেই মানুষ
যে অফফোকাস
ও প্রবহমাণ…
যে ধূসর…
আনন্দবিষণ্ণতায় !
৮.
প্রবর্তনা
কথারা তো নেই আর ! কোলাহলই, বেড়ে গেছে খুব
মুখ নড়ে, শব্দ বাড়ে, কথারূপী অপকর্ম শুধু…
তুমিও ভেবেছ বসে একথাই আরো কত ভাবে
এবার চলো না যাই— কথা বলি: শ্যাম, যদু, মধু…
যত জন আছি আজ প্রাণের মনের কথা কই
যারা বোঝে— কথা হল : মনের গভীরতর রূপ
ইরা পিঙ্গলা এবং মূলাধারে আছে কুন্ডলিনী…
তত্ত্বকথা থাক আজ, তুমি, ফুটে ওঠোনা স্বরূপ !
আত্মা আর বুদ্ধি মিলে মনকে যেই বলবে : কথা বলো—
মননের ঘায়ে জ্বলে সেই অগ্নি যা বায়ুকে ঠেলে
স্পর্শে স্পর্শে তালে ছন্দে… বলেছেন পাণিনি যে মতো
আবারও যে তত্ত্ব আসে! দু-চোখ যেদিকে যায় চলো…
কথক বা কথকিনী সেই সব দিন গেছে ভেসে
অবুঝেরা চিরকাল গাড়লের মতো যায় কেশে—
আর কোনও কথা নয় দু-চোখ যেদিকে যায় চলো...
কে আছ, কে আছ ওগো… দুদণ্ড, কথা তো কিছু বলো !
৯.
সাদা
সাদা-রঙ শান্তির কথা বলে।
ভয় পেলে, শান্তি চেয়েই— সাদা
কবুতর ও পতাকা ওড়ায় মানুষ…
যেই সাদা-শাস্তির বিভীষিকা নিয়ে
কথা উঠে এলো—
মানুষের পো এখন ভাববে কীভাবে ?
বঙ্গে তো প্রশ্ন না, উত্তরই সহজ, সুলভ
নকলনবিশ ঠিক না ভেবেই পটাপট বলে দেবে:
সব সাদা সাদা নয়— কেউ কেউ সাদা !
১০.
তারপর
তারপর আর কোনো কথা নেই
তারপর শুধু বাতাস বইছে
খুলে আর কিছু বলতে পারে না
বুকের ভেতর কেবলই সইছে...
কীভাবে বলবে ভেবেই পায় না
মাল্যমালিকা পড়ে আছে ছিঁড়ে
শোকের পাথরে চাপা শব্দেরা…
কেই বা দেখবে তার বুক চিরে !
তারপর আর কোনো কথা নেই
তারপর শুধু বাতাস বইছে…

অতনু ভট্টাচার্য
পিতা ঁসমরেন্দ্র ভট্টাচার্য , মাতা কৃষ্ণা ভট্টাচার্য
জন্ম (১৯৭৪, ২৬ মার্চ) , জীবনযুদ্ধ , প্রেম, বিরহ, বেদনা এই কোলকাতা শহরকে কেন্দ্র করে।
১২ টি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে।
বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই-য়ের সম্পাদনার কাজ ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে এবং বেশ কিছু কাজ চলছে।
‘কুবোপাখি’ সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক।
ভালোলাগে পছন্দের বই পড়তে , ভাবতে, লিখতে, বন্ধুর সঙ্গে সময় কাটাতে ।
অসম্ভব হলেও ব্রহ্মাণ্ড-কে অনুভব করতে ইচ্ছে করে।
Facebook Comments Box
