
‘দাদা, মাকে একবার সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানোর ব্যবস্থা কর’। মিলির মুখটা থমথম করছে। বাবার শ্রাদ্ধ মিটেছে মাসচারেক হলো। তখন মিলি একবার এসেছিল। তার পর এই আবার আসা। মেয়েটাকেও নিয়ে এসেছে, সামার ভ্যাকেশনটা এখানেই কাটাবে বলে। সে অবশ্য প্রতিবারই আসে। তবে এবারের দায়টা অনেক বেশি। বাবা মারা যাবার পর মা যে একা হয়ে পড়বে, সেটাই তো স্বাভাবিক। দাদার অফিস আছে, ছেলেমেয়ের পড়াশুনো আছে। আজকালকার পড়াশুনো মানে তো বাপমায়ের দুবেলা নেচে বেড়ানো। ছোড়দারও পোস্টিং সেই জামসেদপুর। দাদাই বা একা সামলায় কী করে? মিলি তাই ভেবেছিল মাকে কিছুদিন নাগপুরেই নিয়ে যাবে। কিন্তু একটা রাত কাটিয়েই ভুত ভেগে যাবার যোগাড়।
‘ও মামনি জানো, কাল সারাটা রাত দিম্মা বকবক করে গেল। পাশের ঘরে শুয়েও ঘুমোতে পারিনি’, নিনি হাঁই তুলতে তুলতে বলল। কথাটা শুনেই শ্রাবন্তী চোখ পাকিয়ে উঠল, ‘তোকে তো কাল বলেইছিলাম দিদিভাইয়ের সঙ্গে শো’। কথাটা শুনেই মিলিও ফোঁড়ন কাটল, ‘ঠিক বলেছ বৌদি। আদিখ্যেতা করে নিচে শুতে গেল’। তারপরই মেয়ের দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে ধমক দিল, ‘দয়া করে এখন একটু ঘুম লাগিয়ে নাও। নইলে তো বাপ ফোন করলে আবার সাতকাহন করে লাগাবে’।
পুলক এতক্ষণ চুপচাপ খবরের কাগজে চোখ বোলাচ্ছিল। ঘরের পরিবেশটা একটু গুমোট হয়ে যাচ্ছে দেখে হাত বাড়িয়ে নিনিকে টেনে আনল কাছে। তারপর হেসে জিজ্ঞাসা করল, ‘সত্যি করে বলতো, একটুও ঘুমোসনি?’
নিনি ফিক করে হেসে ফেলল। ‘না গো বম্মামা, একটু ঘুমিয়েছি। ঐ দিম্মা ঘুমোনোর পর’।
নিনির কথার ধাঁচে শ্রাবন্তীও হেসে ফেলল। বলল, ‘আর কায়দা না করে দিদিভাইয়ের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়’।
‘উম! দাদাভাই বলেছে, আমাকে নিয়ে কোথায় যেন যাবে’, নিনি ঠোঁট ফুলিয়ে জবাব দিল।
‘ছাড়ো তো বৌদি’, মিলি মাঝখানে বলে উঠল, ‘ওকে পাত্তা দিতে গেলে তোমারই নাওয়াখাওয়া মাথায় উঠবে। যা দ্যাখ, দাদাভাই উঠল কিনা’।
নিনি ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই মিলি গম্ভীরমুখে বলল, ‘হ্যাঁগো বৌদি, তোমাদের অসুবিধে হয় না?’
দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে উত্তর দিল শ্রাবন্তী, ‘আশপাশের সবাই বলে। কী করব! তোমার দাদাকে তো কতবার বলেছি ডাক্তার দেখাও। পমিকেও বলেছি, কয়েকদিনের জন্য আয়, ডাক্তার দেখা। আমার কথা আর শোনে কে?’
পমির কথা উঠতেই মিলির মুখটা আরো গম্ভীর হয়ে গেল। “ওদের কথা ছাড়ো। জামসেদপুর কি এমন দূর বলো তো হ্যাঁ? ছোটবৌদি পারে না, মাসে অন্তত একবার আসতে?’
এই মেয়েলি আলোচনাগুলো পুলক হজম করতে পারে না। আসতে না পারার দোষ শুধু হলো পমির। অথচ নিলয়ও তো আসে না। সময়ই নাকি পায় না। আসলে এলেই দায় নেবার ব্যাপার থাকে। আর সবাই জানে, পুলক থাকতে অন্য কারো দায় নেবার প্রশ্নই ওঠে না। মানে পুলকই তুলতে দেবে না। বাকিরা সেটারই সুযোগ নেয়। তাই ও ধমকের সুরে বলল, ‘বৌদির নামে বলার আগে তোর ছোড়দার কথা বল’।
বয়সে যত ছোটই হোক, বিয়ে হয়ে গেলে মেয়েরা একটা বাড়তি ওজন নিয়ে ফেলে। তাই মিলিও পালটা বলে উঠল, ‘বাজে কথা বলিস না তো। তোদের জামাই কতবার আসে? আমিই তো ঘুরে ঘুরে সব জায়গায় যাই’। সেটা অবশ্য সত্যি। গরমের ছুটিতে মিলি এসে এখানেই ওঠে ঠিকই। তবে সেই দিনপনেরোর মধ্যেই প্রান্তিকদের বাড়ির তরফে যতজন আত্মীয় আছে, সব জায়গাতেই ও ঘুরে আসে। কোনোকোনো সময় শ্রাবন্তীই ওর সঙ্গী হয়। সেটা নিয়ে মিলিরও যে একটা হামবড়াই ভাব আছে, সেটা সবাই জানে।
‘প্রান্তিক যদি আসতে না দিত, তুই পারতি?’, পুলক না বলে পারে না। সকালেই আবার একটা ঘোঁট পাকাবে বুঝেই বোধহয় শ্রাবন্তী তড়িঘড়ি বলে উঠল, ‘তুমি বাজার যাবে না?’
‘একটু চা দাও, খেয়েই যাচ্ছি’, বলে পুলক খবরের কাগজটা ভাঁজ করে টেবিলের উপর রেখে দিল। মিলি বসেছিল মেঝেতে, একটু দূরে। সেখান থেকে সামান্য এগিয়ে এল পুলকের দিকে। তারপর করুণ সুরে জিজ্ঞাসা করল, ‘হ্যাঁরে দাদা, মায়ের কি শেষকালে মাথার গণ্ডগোল হলো?’
এই কথাগুলো পুলক একদম হজম করতে পারে না। শ্রাবন্তীর সঙ্গেও দুয়েকবার কথাকাটাকাটি হয়েছে এই নিয়ে। সোফা থেকে উঠে পড়ল পুলক। বেডরুমের ঢুকতে গিয়েও দাঁড়িয়ে গেল। দরজার মুখে দাঁড়িয়েই বলে উঠল, ‘মা তো চিরকালই কথাটা একটু বেশিই বলে। এখন আরেকটু বেড়েছে, এই যা’।
‘বাজে কথা বলো না,’ ফোঁস করে উঠল শ্রাবন্তী। ‘মালতীদি পর্যন্ত মাঝেমধ্যে বলে কাজ ছেড়ে দেবে। সত্যিই তো। রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে পারে কিকরে?’
পুলক কোনও উত্তর দিল না। কথাটা তো সত্যিই। দিনরাত বিছানায় বসে মা বকবক করে যাচ্ছে। কী যে বলছে, সবসময় বোঝাও যায় না। রাস্তা থেকেও শোনা যায়। পাশের বাড়ির প্রবীরদাও কয়েকবার বলেছে, ‘মাসিমাকে একবার সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাও পুলক। বলো তো, আমিই ব্যবস্থা করে দিচ্ছি’। পুলক তানাবানা করে পাশ কাটিয়েছে। আর কত সামলাবে ও? বাবাকে নিয়ে এমনিতেই ঝামেলা ছিল। আজ হার্ট তো কাল সুগার। যদিও যাবার সময় ভোগায়নি। টুপ করে চলে গেল। ঘুমের মধ্যেই। কেউ টেরই পায়নি। মায়ের অবশ্য এমনিতে তেমন কোনও সমস্যা নেই। একটা চোখে ছানি অপারেশন করানো আছে। আরেকটা করাতে হবে। বছরে বারদুয়েক চেক আপ করিয়ে আনলেই হয়। সেসব শ্রাবন্তীই সামলায়। পুলক তো অফিস নিয়েই জেরবার। মাঝেমধ্যে নিজেরই মনে হয় শুয়ে পড়বে। ভাই পড়ে আছে সেই জামসেদপুর। কালেভদ্রে আসে, ফোন করলে তবে খবর নেয়। এলে নাহয় ওকেই বলা যেত দেখিয়ে আনতে। শ্রাবন্তী এসব পারে নাকি? সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাওয়া কি মুখের কথা!
তার থেকেও বড় কথা, সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো। শুনলেই লোকে বলবে পাগল। হ্যাঁ, অনেক লেকচার পুলকও দিতে পারে, পেটের রোগ আর মনের রোগ একই জিনিষ। কিন্তু সেটা মেনে নেওয়া অন্য ব্যাপার। তাছাড়া মা কি আদৌ পাগল নাকি? প্রত্যেক মাসে শ্রাবন্তীর সঙ্গে ব্যাঙ্কে যাচ্ছে পেনশন তুলতে, দিব্যি চেকে সই করছে মিনতি দাশগুপ্ত। কেউ বুঝবে দেখলে? দিব্যি চেক সই করছে, পরিচিতদের সঙ্গে গল্প করছে। এছাড়াও বাড়িতে লোকজন কেউ এলে মায়ের সঙ্গেও তো দেখা করে। তখন কি সুন্দর কথা বলে, খোঁজখবর নেয়। কখনো কখনো মনে হয়, হয়তো ঢং করছে মনোযোগ কাড়ার জন্য। বাবা মারা যাবার পর পুকুন কিছুদিন পাশের ঘরে শুত, রাত্রে। কিন্তু ওর তো রাত জেগে পড়ার স্টাইল। মা নাকি মাঝেমধ্যেই ঘরে ঢুকে বলতো, ‘ভাই, এখন শুয়ে পড়ো; শরীর খারাপ হবে’। বাধ্য হয়ে সপ্তাহখানেক পরেই পুকুন আবার উপরে উঠে এল। সেই থেকেই মা থাকে মালতীদির ভরসায়।
নাঃ, এবার বাজার যেতে হবে। ও যে চা চেয়েছিল, শ্রাবন্তী বোধহয় খেয়ালই করেনি। নেহাত রোববার বলেই এতটা দেরি। অন্য দিন হলে তো পুলক এতক্ষণে বেরিয়েই পড়েছে অফিসের রাস্তায়। গলা তুলে পুলক বলল, ‘নিনি, কী খাবি বল’। নিনি সাড়া দেবার আগেই মিলি বলল, ‘মাংস আনিস না; খেয়ে খেয়ে মুখে চড়া পড়ে গেছে। ছোট মাছ আনিস তো। কতদিন খাওয়া হয় না’।
‘সেকি! মেয়েটা খেতে পারবে?’ শ্রাবন্তী অবাক হয়ে বলল।
‘ঠিক পারবে। তাড়াতাড়ি খেয়ে বিকেলে আমি আবার তোমাকে নিয়ে একটু ভাসুরের বাড়ি যাব’, মিলি চটজলদি সমাধান করে দিল। অতএব পুলক পাঞ্জাবীর পকেটে পার্সটা ভরে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল। আর তখনই চোখে পড়ল, মা উঠে আসছে একতলা থেকে।
‘তুমি আবার উঠছ কেন?’ পুলক প্রায় চেঁচিয়েই জিজ্ঞাসা করল। মায়ের এটাও একটা সমস্যা, কানে একটু কম শোনে। অনেক বছর আগে একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়েছিল; রিক্সা উলটে পড়ে যায়। পুলকের তখন বোধহয় বছরবারো বয়েস। তখনই নাকি কানের নার্ভ চোট খেয়েছিল। মা হেসে বলল, ‘তোদের গলা পেয়েই উঠে এলাম। আজকাল তো এ বাড়িতে আর কথাই শোনা যায় না।
শ্রাবন্তী সঙ্গে সঙ্গেই জিজ্ঞাসা করল, ‘মা, চা খাবেন?’
‘দাও’, বলে সোফায় বসল মা। তারপরই মিলির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বোনু কই?’
‘সে তার দাদাভাইকে ঘুম থেকে তোলার জন্য লড়ে যাচ্ছে বোধহয়’, জবাব দিল মিলি।
‘ভাই এত রাত জেগে পড়ে। নিচে থাকতে বারণ করতাম। তাই রাগ করে আবার উপরে চলে এল। এতে তো শরীর খারাপ হয়’।
‘তোমার আবার সব ব্যাপারে মাথা লাগানোর দরকার কী?’ মিলি একটু ঝাঁঝের সঙ্গেই বলে উঠল। ‘আজকালকার ছেলেমেয়ে কি আমাদের মতো? ওদের ভালমন্দ ওরা ঠিক বুঝে নেয়’।
মিনতি যেন একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল। একটা বিষণ্ণ হাসি ভেসে উঠল ঠোঁটে, ‘এখনই যদি রাত জাগে, তাহলে আমার মতো বয়েসে কী করবে?’
কথা ঘোরানোর জন্য পুলক বলে উঠল, ‘একবার চেক আপে যাবে নাকি? তাহলে কাল-পরশু মিলিই তোমাকে নিয়ে যেতে পারবে’।
‘এই তো সেদিন ঘুরে এলাম। আর মিলি গিয়ে কী করবে? বেড়াতে এসেছে; দুদিন আনন্দ করুক। ও আবার আমাকে নিয়ে দৌড়োবে কেন?
মিলি গলায় একটা অভিমানের সুর তুলে বলল, ‘ও তোমার বৌমা নিয়ে গেলে চলবে; আর মেয়ের বেলা বাদ!’
হাসতে হাসতে উত্তর দিল মিনতি, ‘তা বললে হবে? সারাদিন আমার খোঁজ রাখে কে? বৌমাই তো। পুলুর সময় কই? তুই আর তোর ছোড়দার তো খবর পেয়ে আসতে আসতে একদিন কাবার। তোর বাবার যেবার প্রথম হার্ট অ্যাটাক হলো, বৌমা না থাকলে তো বাড়িতেই মরে থাকত। ঐ তো পাড়ার ছেলেদের ডেকে নার্সিং হোমে নিয়ে গেল’।
‘ওসব কথা রাখুন মা’, শ্রাবন্তী চায়ের কাপ নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বলল। ‘তাও তো শেষবেলায় কিছু করতে পারলাম না। কাউকে কিছু জানতে না দিয়েই বাবা চলে গেলেন’।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল মিনতি। পুলক পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে মায়ের হাতে ধরা চায়ের কাপটা অল্প অল্প কাঁপছে। সামলাতে পারছে না। ওর নিজেরও বিরক্ত লাগে। এই সকালবেলা এইসব কথা কি না তুললেই নয়! তাই হাল্কা ধমক লাগাল ও, ‘ফালতু কথা বন্ধ করো তো’।
ইতিমধ্যে যে মিমিও এসে পড়েছে পুলক টের পায়নি। ঠাকুমার কাঁধে হাত রেখে ও আদুরে গলায় জিজ্ঞাসা করল, ‘কী হয়েছে ঠামি? বাবা তোমাকে বকছে কেন?’
একগাল হেসে বলে উঠল মিনতি, ‘না না, বকছে কোথায়? আমরা একটু জোরে কথা বলছি তো, তাই বারণ করছে। তা দিদি, তোমার রেজাল্ট বেরোচ্ছে কবে?’
‘ওহ ঠামি! সক্কালবেলাই মনে করিয়ে দিলে?’
‘তোমার দাদা কিন্তু রোজ বলতো, দিদির রেজাল্টে সবাই চমকে যাবে। আমাদের মুখ উজ্জ্বল করবে ও। তোমার দাদার খুব শখ ছিল, মেডিকেল কলেজে ভর্তির দিন তোমার সঙ্গে যাবে’।
‘হ্যাঁ, যা বলেছ মা’, মিলি সুর ধরল, ‘বাড়িতে একটা ডাক্তার থাকা খুব দরকার আজকাল। পুকুনটার মাথায় যে কী ভুত চাপল! তোমাদের জামাই তো এখনো আক্ষেপ করে’।
মুচকি হেসে বলে উঠল মিনতি, ‘ডাক্তার থাকলে ভালো। তবে তাকে বাড়িতে থাকতে হবে তো। সে যদি দিনরাত রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়, তাহলে সেই বা জানবে কী করে? বাড়িতে তো আগে মানুষ থাকা চাই। নইলে ডাক্তারই বা কী করবে? সময়মতো ডাক্তারকে খবরটাই বা দেবে কে?’
কথাটা খট করে পুলকের কানে লেগে গেল। মানুষ থাকা চাই মানে? মা কি কিছু ইঙ্গিত দিতে চাইছে? কী বলতে চাইছে মা? এই বাড়িতে মানুষ থাকে না? তাহলে কারা থাকে? কিন্তু কথা বাড়াতে গেলেই কথা বাড়বে। তাই শ্রাবন্তীর দিকে তাকিয়ে শুধু বলল, ‘আমি তো চা চেয়েছিলাম। দিলে না তো?’
শ্রাবন্তী কোনও উত্তর না দিয়ে আবার রান্নাঘরের দিকে চলে গেল। সোফায় বসে পড়ল পুলক, ঠিক মায়ের পাশে।
‘মা’, মিলির গলাটা হঠাৎ কেমন যেন একটা অস্বাভাবিক সুরে বেজে উঠল।
‘কিরে?’
‘কাল সারারাত তোমার বকবকের চোটে নিনি ঘুমোতে পারেনি। কী হয় তোমার?’
মায়ের মুখটা ফ্যাঁকাসে হয়ে গেল। বোধহয় লজ্জা পেয়ে গেছে। মিলি মায়ের পায়ের কাছে বসে আবার জিজ্ঞাসা করল, ‘সারাদিন তুমি এমন বকবক করো কেন? কী হয়েছে তোমার? শরীর খারাপ লাগে? তাহলে তো বৌদিকে বললেই ডাক্তার দেখিয়ে আনে’।
কোনও উত্তর দিল না মিনতি। চায়ের কাপটা দুহাতে ধরে যেন নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে। দেখে পুলকের খারাপ লাগে। বাবা চলে গেছে পাঁচ মাসও হয়নি। একটা হ্যাঙ ওভার তো থাকতেই পারে। মিলির সব ব্যাপারে বাড়াবাড়ি। তাই ও ধমক দিল, ‘আহ মিলি, ছাড়’।
না, মিলি কোনোদিনই ছাড়বার পাত্রী নয়। তাই আবার বলে বসল, ‘ও মা, বলো না, তোমার কি মন খারাপ লাগে বাবার জন্য? এত কথা তুমি কার সঙ্গে বলো?’
মুখ তুলে তাকাল মা। ডান চোখটা যে ঘোলাটে হয়ে গেছে, পুলক পরিস্কার টের পেল। না, মিমির ভর্তির ঝামেলা মিটলেই আই স্পেশালিস্ট দেখাতে হবে। বই পড়তে পারলেই আবার সব ঠিক হয়ে যাবে। বইয়ের মধ্যে থাকলে বকবকানিটা নিশ্চিত কমবে।
‘কী হলো?’ মিলি যেন অধৈর্য হয়ে উঠেছে।
‘তোর বাবার সঙ্গে’, মা কোনোরকমে উত্তর দিল।
‘কী বলছ ঠামি!’, মিমি প্রায় চিৎকার করে উঠল। ‘দাদা তোমার কাছে আসে? আমাদের বাড়িটা তাহলে হন্টেড হাউস? দাদাভাই…’।
‘চুপ কর’, পুলকের চায়ের কাপ নিয়ে ঢুকতে ঢুকতেই শ্রাবন্তী জোরে ধমক লাগাল। পুলকের হাতে কাপটা দিয়েই বোধহয় কথা ঘোরানোর জন্যই ও জিজ্ঞাসা করল, ‘মা, আপনি কি জলখাবার এখানেই খাবেন? নাকি নিচেই পাঠাব?’
মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর সোফা থেকে উঠতে উঠতে বলল, ‘নিচেই দাও। এতদিনের অভ্যেস তো’।
সিঁড়ি দিয়ে শরীরটা আস্তে আস্তে নেমে গেল। কারুর মুখে একটাও কথা নেই। বেশ খানিকক্ষণ পরে মিলি ধীরে ধীরে বলল, ‘দাদা, ইমিডিয়েটলি ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট কর। যা ভেবেছিলাম, তাই। মায়ের মাথাটা একদম গেছে’।
সেটা পুলকও বুঝতে পেরেছিল। নাহলে কেউ মরা মানুষের সঙ্গে গল্প করার কথা বলে? মাকে যারা চেনে, তারা জানে খুব শক্ত ধাঁচের মহিলা। স্কুলেও সবাই খুব সমীহ করতো। বাবা ছিলেন ভোলেভালা গোছের মানুষ। পুরো রাশটাই ছিল মায়ের হাতে। মা না থাকলে এই বাড়িটাও বোধহয় হতো না। সেই মানুষটার মাথা খারাপ হয়ে গেল! নাকি সারাটা জীবন চাপ নিতে নিতে নার্ভ এখন আর নিতে পারছে না? পুলকও তো অসম্ভব চাপ নিয়ে চলেছে। যতদিন যাচ্ছে অফিসটা যেন সবকিছু খেয়ে নিতে চাইছে। সেই চাপ নিতে না পেরেই রঞ্জিতদার তো অফিসেই হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেল। আজকাল বাস থেকে অফিসের সামনে নামলেই বুকের মধ্যে যেন ধক করে ওঠে। তাহলে কি একদিন ওর নার্ভও মায়ের মতোই জবাব দিয়ে দেবে? না, যা করার আজই করতে হবে।
কিন্তু কাকে দেখাবে? খুব যাতে জানাজানি না হয়, সেটাও তো খেয়াল রাখতে হবে। কলকাতাতেই ব্যবস্থা করতে হবে। এখানে দেখালেই লোকে জানবে। আর সহানুভূতি দেখানোর নামে জনেজনে প্রশ্ন শুরু করে দেবে। কোনও কোনও সময় সামাজিকতা একটা অভিশাপও হয়ে ওঠে। একটা ঘটনা এড়াতে চাইছ, আর গোটা সমাজ এসে কানের কাছে ভ্যানভ্যান করে বারবার মনে করিয়ে দেবে একটা কিছু ঘটেছে বটে। বাবা ঘুমের মধ্যেই মারা গিয়েছিল বলে আড়ালে অনেকেই নানা কথা বলেছে, পুলক জানে। এবারে হয়তো বলবে, ছেলেরা বাবার চিকিৎসা করায়নি; সেই দুঃখেই ভদ্রমহিলার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। নাহ, বাজারটা সেরে এসেই প্রবীরদার সঙ্গেই কথা বলতে হবে।
লাইনঘাট প্রবীরদার খুব ভালই জানা। বলামাত্র টেলিফোনে সব ঠিক করে দিল। আজই, লেক টাউনে। ডাক্তার প্রবীরদার পরিচিত। প্রয়োজনে প্রবীরদা পরে কথা বলে নেবে। সমস্যা একটাই। মাকে আজেবাজে কথা বলে বোঝানো যাবে না। যতই হোক, একটা স্কুলের হেড মিস্ট্রেস ছিল। বোধবুদ্ধি তো এখনো টনটনে। এখান থেকে নাহয় বেরোনো গেল। কিন্তু ডাক্তারের চেম্বারে গেলেই তো মা সব বুঝে যাবে। তখন? এতো আর উন্মাদ নয় যে জোর করে ধরে নিয়ে যাবে। তাহলে উপায়?
দুপুরে খেতে বসে পুলক ওর আশঙ্কার কথাটা বলল। মিলি সঙ্গে সঙ্গেই বলে উঠল, ‘সেটা আমার উপর ছাড়। আমি খেয়ে উঠে মাকে বলে দিচ্ছি, সন্ধেবেলা বেরোব সবাই মিলে। মায়ের চেক আপ হবে, আমার সামনে; তারপর সবাই মিলে বাইরে খাব’।
‘তোর সামনে মানে?’ পুলক অবাক হয়ে গেল।
‘আহ! এটাও বুঝিস না? তোরা ঠিকঠাক ডাক্তার দেখাস কিনা, সেটা কি আমি জানি?’ মিলি চোখ কুঁচকে উত্তর দিল।
শ্রাবন্তী হাসতে হাসতে বলল, ‘তোমার মাথাতেও আসে’।
‘আসে কি আর সাধে বৌদি! রোজরোজ এই কায়দাবাজি দেখেই তো শিখে ফেলেছি’। মুখটা নামিয়ে নিল মিলি। মিলির এই যন্ত্রণার কথাটা এ বাড়িতে সবাই জানে। বিয়ের পর মিলিকে ওর শ্বশুর-শাশুড়ি প্রান্তিকের কাছে পাঠাতেও চায়নি। শেষে প্রান্তিকই জোর করে নিয়ে যায়। তার দাম এখনো দিতে হয় ওদের। পৃথিবীতে একটা লোকও কি সামান্য ভালো থাকতে চায় না? কই, পুলক তো নিজে দাঁড়িয়ে টুকুর বিয়ে দিয়েছিল; বিয়ের পরপরই জামসেদপুরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিল। হ্যাঁ, শ্রাবন্তী সেই নিয়ে যে একেবারে খোঁচা দেয়নি, এমন নয়। তবে বাড়ির বড় বৌ হিসাবে সব মানিয়ে নিতেও কসুর করেনি।
মিলি বলার পর মা একটু আপত্তি করেছিল। করবেই যে সেটা পুলকও জানতো। বিকেলে চা খেতে খেতে মিলি হাসছিল। ‘জানিস, মা বলে কি, তুই কি এসে আমার সংসারে অশান্তি বাঁধাতে চাস? তোর সামনে চেক আপ করে হাতিঘোড়া কী হবে? যা করার তো পুলু আর বৌমাই করে। তোরা থাকিস তখন? আমি দিলাম তখন ব্রহ্মাস্ত্র ঝেড়ে। বললাম, দাদা আর বৌদির ভালোর জন্যই বলছি। ছোড়দা আর আমি কেউ এখানে থাকি না। তোমার যদি কিছু একটা হয়ে যায়, তখন তো আমরা ওদের কথা শোনাতে পারি। এই যে বাবা এইভাবে চলে গেল। ভাগ্যিস তুমি ছিলে। নইলে আমরা তো বলতেই পারতাম বাবা বিনা চিকিৎসায় চলে গেছে। তখন রাজি হলো’।
ক্যারিকেচারটা মিলি ছোটোবেলা থেকেই ভালো করে। ওর মুখচোখের ভাব দেখে পুলক হাসছিল। বলতে বলতেই আচমকা মিলি কেঁদে ফেলল। শ্রাবন্তী ভয়ার্ত গলায় বলে উঠল, ‘কী হলো তোমার?’ পুলকও আস্তে করে বলল, ‘মিলি!’ মিলি শ্রাবন্তীর হাতদুটো ধরে কাঁদতে কাদতেই বললো, ‘বৌদি, মা আমার পাগল হয়ে গেল! আমার বুকের মধ্যে কী যে হচ্ছে…’। কথাটা ও শেষ করতে পারল না। কান্নার জোয়ারে শব্দগুলো ভেসে গেল। শেষে পুলকই জোর দিয়ে বলল, ‘মিলি, মা কিন্তু শুনতে পাবে’। কথাটা কানে যেতেই মিলি নিজেকে সামলে নিয়ে বাথরুমের দিকে চলে গেল।
অনেকদিন পর এই বাড়ি থেকে গাড়িটা এমন হৈহৈ করতে করতে বেরোল। পুকুন প্রথমে যেতে চায়নি। ওর নাকি কী একটা জরুরী কাজ আছে। শেষে মিলিই ওকে সব খুলে বলতে রাজি হয়ে গেল। পুলকই চালাবে। পাশের সিটে পুকুন। মা, মিলি আর শ্রাবন্তী মাঝের রোয়ে। মিমি আর নিনি পিছনে। গাড়িতে উঠেই ওদের সেলফির প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। মিনিট চল্লিশের রাস্তা। খুব একট জ্যামও নেই। স্টিয়ারিং সামলাতে সামলাতে পুলক রিয়ার ভিউ গ্লাসে মাঝেমধ্যে মায়ের মুখটা দেখে যাচ্ছিল। বোঝার কোনও উপায় নেই। ওর মনটা ক্রমশঃ যেন গুটিয়ে আসতে শুরু করল। কী বলবে ডাক্তার? মা কি সত্যি সত্যিই…
লেক টাউনের মোড় থেকে বাঁদিকে ঘুরতেই মা বলে উঠল, ‘এদিকে কোথায় যাচ্ছিস?’ ‘তোমাকে অন্য একজন ডাক্তার দেখানো হবে, মা’, মিলি জবাব দিল।
‘কী দরকার ছিল বলতো? ছেলেটার একটা দিনই ছুটি। সেটাও একটু রেস্ট নিতে পারলো না’, মা গজগজ করতে শুরু করলো।
‘ঠাম্মি, আমরা তো খেতেই যাব’, পুকুন বোঝানোর চেষ্টা করল, ‘তার আগে এখান থেকে একটু ঘুরে গেলে অসুবিধে কী?’
‘কী জানি বাপু, তোদের মাথায় যে কী বুদ্ধি খেলছে। ডাক্তার যদি দেখাতেই হয়, তাহলে তো চৌধুরীর কাছেই যেতে পারতি। এতদূর দৌড় করালি কেন?’
‘আরে ছাড়ো তো,’ বাধ্য হয়ে পুলক বাধা দেয়। ‘এতদূর যখন আসবই, একটা ভালো ডাক্তার দেখিয়ে নিলে অসুবিধে কী? এতো আর রোজ রোজ আসা যায় না’। পুলক জানে, ওর কথার উপর মা আর কিছু বলবে না। হলোও তাই। মা চুপ করে গেল।
লেক টাউনের রাস্তা দিয়ে গাড়িটা এগোচ্ছে। দ্বিতীয় ক্রসিংটাও এসে গেল। এবার বাঁহাতে ঘুরতে হবে। প্রবীরদা বলে দিয়েছে, বাঁদিকে ঘুরলেই একদম সোজা সাইন বোর্ড দেখা যায়, মাইন্ডস্কেপ। গলিটার একদম শেষ মাথায়। ঐ তো, দেখা যাচ্ছে, সাদা গ্লো সাইন বোর্ডের উপর লাল হরফগুলো জ্বলজ্বল করছে, নিচে নীল আলোয় ফুটে উঠছে মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্র লেখাগুলো। পুলক টের পেল শরীরটা একটু একটু করে শক্ত হয়ে আসছে। কী হবে এরপর? মা কী রিঅ্যাকশন দেখাবে? লোক হাসাহাসি হবে না তো?
মাইন্ডস্কেপের খানিকটা দূরে পার্কিং স্লট। গাড়িটা সেখানেই থামাল পুলক। পুকুনই সবার আগে দরজা খুলে নামল। তারপর বলল, ‘ঠামি, এবারে নামতে হবে’।
লুকিং গ্লাসের ভিতর দিয়েই পুলক দেখতে থাকে মায়ের মুখটা কেমন যেন হতভম্ব হয়ে গেছে। মাইন্ডস্কেপের সাইনবোর্ডটার দিকে তাকিয়ে আছে। বুকটা যেন ভেঙে গুড়োগুড়ো হয়ে যাচ্ছে পুলকের। মাকে যে এখানে নিয়ে আসতে হবে, এমন তো কোনোদিন ভাবেনি।
মা কোনও সাড়া দিল না। একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে সাইন বোর্ডটার দিকে। মায়ের দিকে সরাসরি তাকানোর সাহস যেন আর পুলকের নেই। লুকিং গ্লাসেই ও দেখতে থাকে, মায়ের চোখের পাতা পড়ছে না। পুরো মুখটা দেখার সুযোগ নেই। চোখদুটোই জানান দিচ্ছে, এই পরিণতি মা যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত পুকুন আবার খুব নরম গলায় বলল, ‘ঠামি!’
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল মা। তারপর নিস্তেজ গলায় বলল, ‘তোরা কি ভেবেছিস, আমি পাগল হয়ে গেছি?’ মিলি প্রায় কেঁদেই ফেলবে যেন। মায়ের হাতটা ধরে কোনোরকমে বলল, ‘মা, বাবা চলে যাওয়ার চাপ তুমি নিতে পারছ না। তাই যাতে দুশ্চিন্তা কমে, একটু যাতে ঘুম হয়, তার জন্যই আসা’।
কেমন একটা নির্বাক হাসি ফুটে উঠল মায়ের মুখে। পুলক যেন আর সহ্য করতে পারছে না। অথচ, আজ সকালেই মা যা বলেছে, তাতে তো সুস্থও বলা যাচ্ছে না। না, এই সময় শক্ত হতে হবে, মায়ের জন্যই। তাই ও চাপা গলায় বলল, ‘মা, তোমার বকবকানি কেমন বেড়েছে, নিজেই তো টের পাও। সেটা কি এমনি এমনিই হচ্ছে? ডাক্তার একবার দেখুক। নাহলে আমাদের দুশ্চিন্তা তো কমছে না’।
মা ওর মুখের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর কেমন একটা বোকার মতো হাসি দিয়ে বলল, ‘হ্যাঁরে পুলু, এতটা রাস্তা যে এলাম; আমি কি একটুও বকবক করেছি?’
কথাটা শোনামাত্র পুলক সত্যি সত্যি অবাক হয়ে গেল। সত্যিই তো; গোটা রাস্তা মা তো খুব একটা কথা বলেনি। তাহলে?
মিলি আর সামলাতে পারলো না। উত্তেজিতভাবে বলে উঠল, ‘তাহলে বাড়িতে তুমি এত বকরবকর করো কেন? কী হয় তোমার?’
মা ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। আচমকা পুলক খেয়াল করল, চশমার কাচের পিছনে একটা-দুটো মুক্তোর দানা যেন ঝিকমিক করে ঊঠল। মা কাঁদছে! ও অস্ফুটে বলে উঠল, ‘মা!’
চশমাটা খুলে আঁচল দিয়ে মা চোখদুটো মুছল। তারপর ভাঙা ভাঙা গলায় বলল, ‘তোর বাবা কেমন না বলেই চলে গেল। পাশে থেকেও টের পেলাম না। সেই থেকে আমার খুব ভয় হয় রে। যদি অমন একাএকা মরে যাই! তোরা কেউ টের না পাস! তাই রাতদিন বকবক করি ভয়টাকে কাটানোর জন্য। ভাবি, তোরা অন্তত টের পাচ্ছিস, বুড়িটা আছে। বকবকানি বন্ধ হলেই দৌড়ে আসবি, চলে গেল বুঝি’। আর শেষ করতে পারল না মা। মুখে আঁচলচাপা দিয়ে হাউহাউ করে কেঁদে উঠল।
কান্না বিষয়টাই খুব ছোঁয়াচে। মাকে ধরে শ্রাবন্তী আর মিলি কাঁদছে। পিছনের সিটে বসা মেয়েদুটোও। পুকুন গাড়ির বাইরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। পুলকেরও চোখদুটোও কেমন যেন জ্বালা করে উঠল। পকেট থেকে রুমালটা বের করবে কি করবে না ভাবতে ভাবতেই দুম করে লোড শেডিং। রাস্তাটা নিশ্ছিদ্র অন্ধকার। তার মধ্যেই মাইন্ড স্কেপের বোর্ডটা সামান্য কেঁপে গেল। তারপর যেন আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠল। ওটা নিশ্চয়ই ইনভার্টারের সঙ্গে যোগ করা। অন্ধকারের মধ্য দিয়ে লাল লাল অক্ষরগুলো যেন ওদের দিকে হাত বাড়িয়ে ছুটে আসছে। কেমন একটা ভয় দেখানো ভাব। পুলকের চোখদুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে লাল অক্ষরগুলো যেন চারদিকে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো উঠছে আর নামছে। আর তার নীচ থেকে বিদ্যুৎঝলকের মতো নীল একটা মৃত্যুবাণ ছুটে আসছে ওর দিকে – মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্র।
‘একটা ইনভার্টার চাই’, বিড়বিড় করে উঠল পুলক। ফ্যামিলির মধ্যে, সমস্ত সম্পর্কের মধ্যে যখন লোড শেডিং হবে, তখনো যাতে কেউ একা না হয়ে যায়।
পিছনে ফিরে পুলক আচমকাই মায়ের হাতটা ধরে ফেলল। তারপর জড়ানো গলায় বলে উঠল, ‘চলো মা, আমরা একটা ইনভার্টার কিনে আনি, ফ্যামিলি ইনভার্টার’।
