মাহসা আমিনী একটা পাখি হয়েও উড়াল পর্দায় নিজেকে মুড়িয়ে বেড়াতে এসেছিলাম। কুর্তিস্থান থেকে, ইরান! অনন্য এক আতিথিয়েতায়, গুহা গহব্বরে হারিয়ে গেলাম, প্রভু অসম্ভব সুন্দর পৃথিবীটা মানুষের জন্য বানায় নি? তোমরা দেখবে,তোমরা ছুটবে, এই পৃথিবীটা নারীর জন্যও সভ্যতা কী জানায় নি? আমরা তো চলমান গরাদ, জগত দাপাও,নারীর দেহটারে এত ভয় পাও? এক কাজ করো, নারী দেখলেই লজ্জা হারাও, দেহে কামনার আগুন জ্বালাও, হিজাব বোরখার গরাদ ভেঙে, পাথর উঠাও,নারীহীন এক জগৎ বানাও। ভুলপরা বোরখা তো কোন পুরুষের স্পর্শ পায় নি। আমার দেহের কোন অঙ্গই মাঠে ছড়ায় নি, তাও কেন তোমাদের এত ছটফটানি? তাও কেন তোমারা পাগলা কুকুর? ঘরের মধ্যে তাও আমার প্রেমের জগৎ ছিলো,, ভাই উড়তো সোনাপোকা হয়ে, মা বাবা দিতো ভালোবাসা ওম। চারপাশে ছিল বৃষ্টির ঝুম, তাদের কাছ থেকে ছিটকে নিলে? রক্তমাংস কেটে ফালাফালা করলে? আমার চিৎকার,, আমার দাহ অট্টহাসির তলায় প্রাণ চলে যাওয়া, দেয়ালে দেয়ালে সমুদ্রের স্রোতের মতো ধাক্কা খেয়ে ফিরে ফিরে এল। বাইশ বছরের স্বপ্নাতুর নারী, প্রেতাত্মা হয়ে গেল! আমি মাহসা আমিনি, নারী,তুমি যদি চুপ করে থাকো, সভ্যতা, যদি চুপ করে থাকো, বলির পাঠায় তোমার কন্যা, সহোদরা আর আম্মা তোমার, ধীরে ধীরে তারাও রক্তে ছড়াবে, আগুন হয়ে উড়তে থাকবে,,আমার দাহের যামিনী। মানুষজীবন যখন মানুষের নয় একটা লাশের মতো, যদি পর্দায় ঢেকে যায় জীবন, তেমন নারীর জীবন মানুষের জীবন চাই না। তাই মানুষ জীবন ছেড়ে, মানুষহীন হতে চাই, কুকুর বিড়াল বাঘ হতে চাই, বৃক্ষ নদী পাখি হতে চাই,,কাক অথবা,, তাদের জীবনের নারী হতে চাই, শরীর অথবা শরীর মনে হয় পদ্মাসনে বসে অথবা দাঁড়িয়ে স্বপ্নবাজ কবুতরদের যদি উড়িয়ে দিতে পারতাম? অথবা হেঁটে শ্রাবণ বা শীতের রাতে তোমার প্রচুর ঘনিষ্ঠ হয়ে,দেহে মনে, অথবা পুরো শরীর বলে কিছু নেই? যে দেহরমণে মন চুপ থাকে, তা কেবল রাস্তার ওপর দিয়ে ট্রেনের আসা যাওয়া, গাছটার ডাল নেই পাখি নেই, বাতির নিচে প্রাণীর পতন! ঠোঁট ঢেকে যায় স্বল্পবাকে, চোখ ঢেকে যায় অনর্গলে,, শরীর শরীর পান করছে। অথবা প্রবাহিত হচ্ছি। প্রবাহিত হচ্ছি। অদ্ভুত জীবন গান মনে হয় বলি, অনেক ক্লান্ত আমি ন্যাড়ার শহরে চিরুনি বিক্রি করি,চিরুনি ভেঙে চুরচুর দেখি, ওদের চোখের মণি জেগে যায়, বেগানা রাত্রি এসে ঢেকে দেয় স্তন, ধেয়ে ওঠে নীলগিরি, এ এক অদ্ভুত শীত ভাবতে ভাবতে ঘুম মরে যায় রোজ, পাহাড় পাহাড় ডাকি শব্দহীন প্রতিবিম্ব কান বুজে দেয়, ঘুম কিনবেন ঘুম?ফেরিওয়ালার হাতে ঝাঁপাতেই বেসমাল হয়ে দেখি,সব উড়ে গেছে, বিহবল চোখ তার পুর্ণিমায় স্থির, ভিড় করে আমরাও উড়তে থাকি অদ্ভুত এক প্রভুর দিকে দেখি, যেখানে বিভাজন প্রাণ নেই সেখানে প্রকৃতি সেরা সুন্দর । মন আমাকে ছেড়ে বলে, পরজনমে এরচেয়ে বেশি সুন্দর নেই। পরকাল লোভীদের দেখিনি তো,এ জনমে কোন ছাড় দিতে,?, সব জগতেই আমরা বিড়ালের সামনে প্রতিদিন ইঁদুর। ঢোলকলমি ফণা তোলে আর প্রাণ হোঁচট খায় প্রেম ছুঁতে গিয়ে মন বসে থাকে শৈশবে, তরুণে, দেহ বৃদ্ধ হতে থাকে রোজ, মনে হয়,জড়তার চাইতে মৃত্যুর অধিকার অনেক সবুজ। অপমানের দাহ অথবা অন্ধকারে কবিতা (উৎসর্গ: বীথি রহমান) আমাকে শূন্যে ছিটকে দিয়ে অপমান উঠে এসেছে, তোমার ভেতর থেকে, মনে হচ্ছিল দশতলার ছাদ খুঁজি, অথবা আকাশ থেকে নেমে আসা কঠিন রশি আমার কন্ঠ প্যাচিয়ে টানুক। ভূতল থেকে দাঁড়িয়ে ল্যাংড়ার মতো পানির বালতি নিয়ে হাঁটি, আমি ভেতরে আগুন নিয়ে তোমার ভেতর জল ঢালি,, জলের পরে বরফ ঢালব,, তোমার ভেতর থেকে আসা যে হাওয়া আমাকে ভস্ম করছে,, পুরোটা নিভে যাক। ২, আমাকে শূন্য ছিটকে দিয়ে অপমান উঠে এসেছে, তোমার ভেতর থেকে। কত ভিক্ষা চেয়েছি,আমাকে ভুলে যাওয়া শিখিয়ে দাও, যে কালো দেয়ালে শাদা অক্ষরের সহস্র স্মৃতি আছে,, কত অপমান ভুলতে চেয়ে অপমানিত হয়েছি, চেয়েছি, যেভাবে মুছেছ তুমি, শুধু কায়দাটা বুঝিয়ে যাও,, শতাব্দী কাল ধরে বলে গেছি, আমি সব সহ্য করতে পারি,অপমান নয়, আসলে কেউ কাউকে ছেড়ে গেলে নিজের অবচেতনে বিরহ নয়,অপমান কুড়ে খায়, তাই চাই,স্মৃতি ফিরে পেলে হাওয়া তাড়িত আমার আগের চেনাঘ্রাণে তুমি যেন আকুল হয়ে ঝাপিয়ে পড়ো। নাহ! আর হবে না। বরং স্মৃতিভ্রষ্ট হই। অথবা এই জীবনে অন্য কারো হওয়ার চেয়ে, তোমাকে ভুলে যেতে থাকা আমার সময় অব্দি, তুমি স্মৃতি হারিয়ে থাকো...

কথাসাহিত্যিক
জন্ম: ৫ মার্চ, ১৯৬৪,ময়মনসিংহ
বসবাস: ঢাকা
Facebook Comments Box
