
জানুয়ারি
ঠোঁটের বিপ্লব হল, রক্তস্বাক্ষী
চামড়ার বিপ্লব জানে উত্তুরে রসিকা
কোল্ডক্রিম সুরভিত মুখের আদলে
রোদ্দুর এতই গ্রাহ্য মৃন্ময় মধুর।
অন্ন গন্ধ হু হু করে, ভোজবাজি,
সার্কাস, বিষন্ন জোকারের কাছে ঋণ
এ জন্মে মকুব না হলে
অনাদায়ে জন্মাবে আবার কখনও
ফেব্রুয়ারি
কুচ যুগ শোভিত পদ্য আমি
লিখেছি দৈবাৎ, ফাগুনে অশোক জ্বলে
হিমেল পমেটম, বৈকালিক প্রসাধনে
জরির ফিতেটির মতো পড়ে আছে
দুপুরের খেলা, আয়না শৃঙ্গার।
হাসপাতালে রাস্তায় দিশাহীন ধুলো
আরোগ্যের বার্তা যায়
কুসুমকুমারীর নামে, শুশ্রূষার বিজ্ঞাপন
দিয়ে রাখি সুলভে, স্থানীয় দৈনিকে
মার্চ
যে দিন এসেছে সেই ঘ্রানপত্র
নিমন্ত্রণ, রংয়ের গুঁড়োর ঝরন্তী
প্রপাত গৌরবে, রাধা আসে
ছোট চুল বিরহ টপের রং
পলাশে সতর্ক পদচ্ছাপ পড়ে,
সে এলে বন্ধ হবে বাহনের কথা
বিধুর সমীরণ অন্তঃপুরে শোনা
মিঠে নুপূরের ধ্বনি, সঙ্গে এসেছে যে
তাকে অবয়ব বলে চিনি
এপ্রিল
দাগ লেগে গাছের কথায়
বদলে যাচ্ছে ঘাস পত্র
রেশনের নতুন নিয়ম।
খরবায়ু বয় বেগে
ফুটবল মাঠ জেগে ওঠে
আমূল চৈতন্যে আমার
অলীক স্টপার তুমি
দক্ষিণ দিক জানো,
গ্যালারি বিপর্যয় কথাও..
মে
স্মৃতিচ্ছন্ন মাছি ওড়ে ঘ্রানের সুযোগে,
তোমার কখা মনে হয় কাঁঠাল দেবতা
বাগান থেকে উড়ে এলে সম্মতিসূচক
রহস্য রোমাঞ্চ গল্পের মতো
বৃষ্টিভাঙা আলো অভিজাত আলিপুরে
সুতির আরাম, তোমাকে দিয়েছিল
মুখোমুখি বসিবার ছায়ার আড়াল
জুন
প্রথম ফোঁটায় আসে ঠাকুমার ভিটে
রূপোর কাঠিটি এল, আরও এটা সেটা
তাদের গ্রামের ভিটে মায়ায় এঁটেল,
অনাদায়ে দেশ গেল খরার সংবাদ,
তোমাকেও নিয়ে যাব হাইওয়ে জানে
সঙ্গে যাবে মেঘধন সবে নীলমণি
পথ জুড়ে নুড়ি চলে, প্রণয় দুহিতা
জুলাই
পুরনো বর্ষাবিন্দু, তুমি এই চুম্বনরাত
অগ্রাহ্য করে ডুবেছ হেলায়,
নৌকার দুঃখ চলে জলস্তর স্থির,
ডুবে যায় যুগলমুহুর্ত বিবাহতিথি,
মিইয়ে যাওয়া ডালিয়া বাসরে
সর্বনাশ হয়ে ঝরে গেলে বর্যাবিন্দু
শুকনো নে্ই আমাদের স্থানীয় পোশাক
অগস্ট
পিছনে দীর্ঘ দিন, শ্বাসকষ্ট বিহ্বল
সামনে নতুন গান, আরোগ্য মধুর
কিছুদূরে কেঁপে গেল মৌসুমি বায়ু
জাতীয় সঙ্গীত বাজে স্কুলের গলিতে
অপাপবিদ্ধ মন তবু মানচিত্রপ্রাণ
পতাকার জয় হয়, মিষ্টির প্যাকেট
স্বাধীনতা তুমি যেন মায়ের স্বদেশ
সেপ্টেম্বর
আকাশকে দেখে নেবে এই ভেবে কাল
আলোপাখি উড়ে এসে বিকেলের ঘোর
গর্বিত অশ্বথ তার ফাটলে কার্ণিশ,
পুরনো বাড়িতে আছে প্রিয় বন্দিশ।
ফাঁকা ঘরে বেজে গেছে আখতারি বাঈ
ছাদ থেকে ছাদে চলে ঘুড়ির লড়াই
অক্টোবর
বন্ধু নামের সড়ক ধরেছে
এমনই একটি ফ্রেম
নিত্য বছর নতুন জন্মে
ফেরে বারোয়ারি পাড়া,
ভিন্ন সময় ফিরে ফিরে আসে
অষ্টমী রাতে স্মৃতির আকাশে
পিৎজা ক্লাবের জানালার থেকে
মরিচ উড়তে থাকে
নভেম্বর
পশমের স্বপ্ন বোনো, স্বল্প হচ্ছে দিন
খেলা শেষ হওয়ার আগেই
মিলিয়ে যাচ্ছে জন্মজীবন
এক পাড়ায় ম্যাচ খেলে ফিরেই
অন্য পাড়ার ছায়া এসে পড়ে বারান্দায়
তোমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে যদি
বাউন্ডারি উড়িয়ে না দিতে পারি
যথাসম্বল রেখে চলে যাব, বলা রইল
ডিসেম্বর
অভিজাত রৌদ্র বিনিময় পিকনিক গোপন,
এসেছে অতিথি পাখি পরিযায়ী নিয়মে
বিষন্ন জিরাফের গ্রীবা জেনেছিলে আর
চিড়িয়াখানার ধুলো ছিল শাদা কালো ছবি,
জ্বরের ওষুধ হয়ে আজ জেগে গেল মাঠ
কুয়াশায় কমে যায় চোখের সন্ত্রাস,
ভিতরে কী যে বেড়ে চলে কখনও বুঝিনি

অগ্নি রায়
জন্ম ১৯৭০। কবি ও অনুবাদক। কাব্যগ্রন্থ, পাঁচটি। অনুবাদ, আফ্রিকার ছোট গল্প সংকলন, সাহিত্যে নোবেল বক্তৃতার সংকলন, সোহি আলি খানের জীবন ও পরিবার কথা গ্রন্থ। সম্পাদনা, সেলিনা হোসেনের মুক্তিযুদ্ধের গল্প। সাহিত্য আকাদেমির জার্নাল ‘ইন্ডিয়ান লিটারেচার’-এ প্রকাশিত তাঁর কবিতার অনুবাদ। পেয়েছেন বিজন ভট্টাচার্য স্মৃতি সম্মান।
Facebook Comments Box
