
বাড়িটিকে
একটা ছোট্ট কাঠের জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখে নিতে চাইছো
স্কোয়াশ গাছের লতায় ঢেকে-থাকা তোমার সবুজ কাঠের বাড়িটি। তার
বাইরে উঠোনে এক শিল্প সমালোচক মেরুন ক্যামেলিয়ার দিকে তাকিয়ে রবীন্দ্র-কথা বলে গেলেন। তাঁর গানের ভঙ্গিটি এখনও মনে রেখেছো তুমি। মনে আছে,তুমি একটা পাইন গাছে হেলান দিয়ে কোডাক ক্যামেরায় বেঁচে থাকার ছবি তুলেছিলে। বাঁচার আর্জি জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলে অবিনাশ ঘোষ লেনে। তোমার তখন ঘুম পেত খুব। প্রতি সন্ধ্যায় সিঁড়ির ৬২নম্বর ধাপ পেরিয়েই মনে হতো হাল্কা ওম পেতে শুরু করেছো তুমি। কাঠের ঘরে তখন জ্বলন্ত অগ্নি-আধার দেখতে পেতে। তেমনই এক তপ্ত রাতে আপনা আপনি হারমোনিয়াম বেজে উঠেছিল তোমার ঘরে। তুমি শাল জড়িয়ে সুরের গমক ছুঁতে চেষ্টা করেছিলে বারবার। হঠাৎই একদিন পাশের বাড়ির কাচের জানলা ভেঙে পড়েছিল ঝনঝন করে। সেই বাড়ি থেকে রাত্রিকালীন কান্না ভেসে আসার পর তুমিও বুঝতে পারলে দুর্যোগ ঘনিয়ে আসছে। যেন আরও কাছে দৈব-অনুগত দুর্যোগ।
রূপবতী
কুয়াশায় তার রূপ আজও আলোছায়াময় মনে হতে থাকে
আজও সেই রূপবতী - দৃশ্যত ডাকাতি করে নিতে
প্রেম ভরা কৌটো হাতে মাত্র একবার তুমি গিয়েছিলে কাছে
তার চোখে ছিল পোড়া বাগান-বিষাদ
হাতে কাচ-গুঁড়ো।
আহরণ হল না তেমন -
অন্তহীন কুয়াশায় ধুর্ত শেয়ালেরা আর নজরে পড়েনি
দুটো তারা সহযাত্রী হবে বলেছিল
একটি তারাও জেগে দিকচিহ্নহীন
ঘোর নীরবতা ছুঁয়ে থাকে আজীবন।
বিজড়িত
আজ যাবে পরমআত্মীয়া
একা যাবে- কার্নিশের ধার ঘেঁষে নয়নতারারা
কিছুটা গোলাপি-সাদা ধু ধু বারান্দায়
গোলাকার এঁদো ডোবা ভর্তি।
ভ্রমণার্থীদের খুশি রিলছেঁড়া ছুটছে অবাধ
আজ উড়ে যাবে সব কাক
হুস তুলে হাহাকার উড়িয়ে দিয়েছো হাঁড়িমুখে
বুড়ো আঙুলের ফাঁক দিয়ে দেখেছিলে যাকে- মনে পড়ে সব
আজই যাবে সে- আত্মীয়া পরমের কাছে
বাঁধন শিথিল হলে দিকে দিকে রাত্রি জমে যায়-
একথা জানার পরও একা যেয়ো ফের
সমবেত লোকনৃত্যে অসুখী বাঁশি-বাদক ঘুমিয়ে পড়ুক
তুমি যেয়ো আত্মীয়ার মতো।
তিনি কফিনে আছেন
দু- চারদিন পর তিনি একা একা বসে
চিঠি লিখছিলেন কোনো এক দেবতাকে
স্বচ্ছন্দে আকাশ
নেমে এসেছিল সেখানে তখন
চতুর্দিকে ছোটো ছোটো ভাসমান আলো মেঘ সাজিয়ে রেখেছে
সবই যে পাখির মতো তা বহুক্ষণ তাকিয়ে বোঝা যায় যেন
তিনি মুখ নীচু করে প্রথমেই বসন্তের রাত এঁকে নিয়েছেন ভুসো কালি দিয়ে
দুপাশে তাঁতের শাড়ি তৈরি হচ্ছে খুটখুট শব্দে,
তাঁর দুশ্চিন্তা পীড়িত মুখ
ফটোগ্রাফ হয়ে ঝুলে দেয়ালে নতুন রং দিয়ে
দেবতাকে লিখেছেন - অসংখ্য কফিন হোক বাড়ির ভিতরে
পুরনো দিনের লম্বা দুপুরগুলো কখনো উঁকি দিয়ে দেখে যাক এসে
ভূলুণ্ঠিত ইচ্ছে সব কেমন অবাক হয়ে কফিনে ঘুমোয়
অথবা ভোরের আগে কোনো এক নিমগ্ন মানুষ
চুপচাপ চিঠি লিখে খাম ভর্তি রং
ধ্বংসস্তূপের খয়েরি ডাকবাক্সে রেখে ফিরে গেলেন কফিনে
Facebook Comments Box
