
ঈশ্বর ঈশ্বর এখন খুব ভীত, তিনি তাঁর ভূগর্ভস্থ ভান্ডারের ভেতর এতোটাই ভীতসন্ত্রস্ত যে তা কেউ কখনো কল্পনাও করতে পারবে না। খুবই বৃদ্ধ তিনি, সময়ের দ্বারা অস্পর্শিত স্মৃতির ক্লান্ত কাঁধে তিনি ঝুকে থাকতে অক্ষম। কোনো রূপকের মাধ্যমেই তাঁর প্রমাণ করার দরকার পড়ে না যে কতটা থরথর করে তিনি কাঁপছেন। তিনি পুনর্বার কোনো কথা বলেন না। তিনি প্রাচীন দুর্গের নির্যাসের ভেতর ডুবে থাকেন যা ঘটে গেছে এবং যা কখনো ঘটেনি তার সঙ্কীর্ণ মুহূর্তগুলোর মধ্যে তিনি জুবুথুবু হয়ে থাকেন ঈশ্বর! যার সবকিছুতেই শেকলের ভেতর জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকে শুধুই ভয়। সেতু একটি উঁচু সেতুর উপর আমি দাঁড়াই না , যারা নিজেদেরকে হত্যা করার জন্য এখান থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তাঁদের জন্য দুঃখবোধ করার জন্য নয়, অথবা তাঁদের অন্ধকারচ্ছন্ন জীবনের জন্য দীর্ঘশ্বাস ফেলি না কালো গভীর জলের ভেতর আমি দাঁড়াই, তাঁদের শেষ শ্বাসপ্রশ্বাসের সাথে রেখে যাওয়া অবশিষ্ট স্বরকম্পের বুদবুদগুলো সংগ্রহ করার জন্য তাঁদের রেণু থেকে যত বেশিটুকু পারি আমি জড় করে নেই তাঁদের নিঃশ্বাস যা তখনো বাতাসের ভেতর গড়িমসি করছে যাতে আমি সেতুটি পার হতে পারি। স্বাধীনতা এক অদ্ভুত নিবিড় আনন্দ উচ্ছ্বাসের মধ্যে আমরা স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলছিলাম আমার মা ছোটভাইয়ের মোজাগুলো রিফু করছিলেন হঠাৎ যুদ্ধ শুরু হোলো আর সবকিছু ধ্বংসস্তূপে পরিণত হোলো শুধুমাত্র আমার ভাইয়ের মোজাগুলো ছাড়া কাপড় শুকানোর দড়ির উপর ওগুলো তখনো দুলছিল একটি পতাকার মতন। বাবার ইতিহাস লম্বা আঙুলগুলো আয়নার মতো সহিষ্ণু পিয়ানো বাজানোর জন্য দারুণ, সেইসব বাচ্চাদের কান টানার জন্যেও যারা বড় হওয়ার জন্য গোঁ ধরে বসে আছে; লম্বা লম্বা আঙুলগুলোও ভেঙে যায় কারণ তারা বাবার ইতিহাসের দাড়ি ছুঁয়ে দেখতে চায়। কী আর অবশিষ্ট আছে একজন জিপসির জন্য কী আর অবশিষ্ট থাকে যখন তারা তাঁকে একটি শহরের মধ্যে অবরুদ্ধ রাখে, তারা তাঁর ঘোড়াকে হত্যা করে তাঁর ছুরি এবং তাঁর নারীকে চুরি করে নিয়ে যায় শুধুমাত্র বাকী থাকে সৌভাগ্যের বুলি কপচানো এবং নোংরাপচা বাতাসের মুত্রথলি তাঁর নতুন বোধবুদ্ধির জন্য। ঘরের ভেতর অতিথি আমি সারারাত ধরে সুখ লুকানোর জন্য জলের কল ছেঁড়ে রাখি, ঘরের ভেতর ছিঁচকে চোর হয়ে গোপনে লুকিয়ে থাকি, এবং এর ফলে আমার বাবা মনে করে যে ঘরের ভেতর কোনো অতিথি নেই। নিজের পিছনে লুকাই সেই বালকটির মতো যে অ্যানিমেটেড ফিল্ম থেকে উঠে এসেছে সে মায়ের রান্নঘরে বসে সে চামচগুলো ছুরির সাথে মেশায় সে তাঁর কপালে ঝুলে থাকা চুলগুলো উড়িয়ে দেয় এবং তারপর সে বিদায় নেয়। আমিও তাঁর মতো কিন্তু পুরোপুরি নই আমি কবিতার মধ্যে ঢুঁকে যাই মৃত্যু নিয়ে খেলা করি শব্দ থেকে অপ্রীতিকর কষ্টগুলো ফোঁটায় ফোঁটায় পড়ে এবং একজন কম্পিত সৈনিকের মতো আমি নিজের পিছনে লুকাই। ভিন্ন খাদ সে চায় না যে তাঁর কবিতারা কলেজে যাক সে চায় কবিতাগুলো জাহাজে চরুক, মিথ্যুক নাবিকেরা ওগুলোকে পুনর্গঠন করুক সে চায় কবিতারা প্রকৃতির ছন্দ থেকেও কিছুটা পিছিয়ে থাকুক মূর্খ প্রেমিকেরদল তাদের ভুল অর্থ করুক সে চায় কবিতাগুলো শুঁড়িখানায় চূর্ণবিচূর্ণ হোক মদ্যপানের দুটি গ্লাসের মধ্যে টোস্টিংয়ের সময় বাতাসের ক্ষুদ্র বুদ্বুদের মতো সে কবিতাগুলোকে আতঙ্কিত ও বিহ্বল দেখতে চায়, যেন স্মৃতি ও বিস্মৃতির দুই খাদের প্রান্তে বিভাজিত হয়ে যায় সে চায় তারা ভিন্ন খাদে বয়ে যাক। লানত আমার উপর লানত সেই আনন্দকে যা আমাকে উন্মাদ করে তোলে, সঙ্গীতের মূর্ছনা থেকে জমা করে উৎকট ঝঙ্কার; লানত সেই ডাক্তারকে যিনি আমার বিষণ্ণতা নিশ্চিত করেছেন; লানত আমার উপর! আমি ঘৃণা করি বসার ঘরে থেকে তীব্র শোকের নষ্টামির প্রদর্শনকে এবং এটিকে বাদামের খোসার ভেতর ভরাকে। আমার চোখদুটো বিস্ময়কর এবং আমার হাতগুলো বেসিনের ভেতর ঠকঠক করে কাঁপছে। আমি আমার প্রয়াত অতিথি আমি নিজেকে নিয়ে ভাববো আমি আমার অন্ধ প্রহরী, একজন বৃদ্ধ লোক; আমি নিজেকে মনে রাখবো আমি আমার বন্ধু যে আমার প্রশংসা করার সময় নিজের নাম ভুলে যায় আমি নিজেকে ভালবাসবো অন্য কোনো মহাদেশে আমিই আমার মা জানতে চাইছি আমার রোগা ছেলেটা এখন কী খাচ্ছে এবং কেন কাঁদছে আমি নিজের উপর ভরসা রাখবো আমিই আমার শিক্ষানবিশ যে কিছুই শিখে না আমি আমাকে নিয়েই হাস্যরস করবো আমি আমার প্রয়াত অতিথি যে কিছুই মিস করবে না আমি নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হবো আমি আমার শত্রু যে হেরে যাচ্ছে আমি নিজেকে মেরে ফেলবো আমি নিজেকে নিয়ে এতোটাই অভূতপূর্ব বিস্ময়কর এবং বাস্তব স্বপ্ন দেখবো যা কখনো ঘটেনি।
ফিরোজ সুলাইমান ফিরোজ সুলাইমান সিরিয়ার বর্তমান সময়ের একজন প্রখ্যাত কবি। আরবি ভাষায় তাঁর একাধিক প্রকাশনা রয়েছে যার মধ্যে ছয় খণ্ডের কবিতা সংগ্রহ যা ইংরেজিতে প্রকাশিত হতে চলেছে, বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও তিনি ছোটগল্পের সংকলন, পরীক্ষামূলক কথাসাহিত্য, নীতিবচনের একটি বই, অসংখ্য পত্রিকায় প্রবন্ধনিবন্ধ এবং বেশ কয়েকটি সাহিত্য সংকলন প্রকাশ করেছেন। তাঁর সাহিত্যকর্ম বানিপাল (একটি স্বাধীন সাহিত্য পত্রিকা যা ইংরেজিতে অনুবাদের মাধ্যমে সমসাময়িক আরব সাহিত্যের প্রচারে নিবেদিত) , দ্য উলফ, ম্যানহাটন রিভিউ, ২২ ম্যাগাজিন এবং ওয়াশিংটন স্কয়ারে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও তাঁর কাজ ফরাসি, রোমানিয়ান, স্প্যানিশ, সুইডিশ, এবং ক্রয়েশিয়ান ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বর্তমানে তিনি তাঁর স্ত্রীর সাথে অ্যামেরিকার নিউইয়র্ক শহরে বসবাস করছেন।

ফারহানা রহমান মূলত কবি। তবে তিনি কবিতার পাশাপাশি গল্প, অনুবাদ, প্রবন্ধ লিখেন। এছাড়াও তিনি নানা বিষয়ে গদ্যও লিখে থাকেন। চলচ্চিত্র সমালোচনাতেও আগ্রহ অনিঃশেষ। ১৯৭২ সালের ১৩ আগস্টে ঢাকায় জন্ম। বেড়েও উঠেছেন ঢাকায়। ইডেন কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। মাঝে কয়েক বছর শিক্ষকতা এবং একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করার পর এখন পারিবারিক ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ অপরাহ্ণের চিঠি (২০১৬), অপেরার দিনলিপি (২০১৭) ও লুকিয়ে রেখেছি গোপন হাহাকার (২০১৯), শ্রেণীশত্রু (গল্পগ্রন্থ) ২০২০, বিশ্বসেরা সিনামা কথা (চলচ্চিত্রের উপর লেখা গদ্যের বই) ২০২০, বিশ্ব সাহিত্যের কয়েকটি সেরা গল্প (অনূদিত গল্পগ্রন্থ) ২০২২ । শেষ কার্নিভ্যাল (গল্প গ্রন্থ)২০২৩, অসীমের ঘোর লাগা ঠোঁটে (কাব্যগ্রন্থ) ২০২৩। এছাড়া, দিপাঞ্জলি (যৌথ) ২০১৭ ও মনোরথ (যৌথ) ২০১৮। তিনি বই পড়তে, বাগান করতে মুভি দেখতে ও ভ্রমণ ভালোবাসেন। পুরস্কারঃ ১. কবিতা করিডোর (২০২০) ২. চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি পুরষ্কার (২০২১)
Facebook Comments Box
