ফিলিস্তিনি কৈশোরের কবিতা
শহরটাকে হত্যাপুরী নামেই চেনে সবাই যখন
তুমি তখন স্বপ্ন কেন দেখাও কবি?
কাব্যে তুমি এতো দারুণ স্বপ্ন আঁকো
ইচ্ছা করে যদি আমার অমন দারুণ জীবন হতো?
কিন্তু দেখ, সকাল বিকাল বোমা বারুদ বুলেট এসে
আমার উঠোন ফুলের বাগান পড়ার টেবিল ছাই কোরে যায়।
এখানে ফুল ফোটেও ভীষণ সতর্কতায়
যদি ওরা বিব্রত হয়
আকাশ থেকে বারুদ ফেলে ঝলসে দেবে,
জন্ম থেকে দেখছি শুধু,
এখানে রোদ তারকাটাকে ডিঙিয়ে তবে আছড়ে পড়ে।
মৃত্যু শুধু মৃত্যু নামে সকাল বিকাল এই মাটিতে
তুমি না হয় ফুল ফসলের স্বপ্ন আঁকা বন্ধ কোরে
আমার করুণ কিশোর বেলার কাব্য লিখো?
দোহাই কবি!
যখন আমি মৃত্যু শুধু মৃত্যু দেখি
রাস্তাঘাটে হেটে বেড়ায়, ডানায় ভেসে উড়ে আসে
তখন আমার পায়ের তলার মাটিকেও পর মনে হয়।
রক্তখেকো মাটি আমার
জন্ম আমার রক্ত দিতে।
আমার শহর ফুলের বাগান নয় তো কবি
হত্যাপুরী বলেই তাকে স্বীকার কোরো?
জন্মে দেখি তারকাটাতে বন্দী আমি, খুনিরা সব নজরবন্দী করে আমায়
হাততালি দেয় যখন তখন আমার জীবন খেলনা নিয়ে ওরা খেলে!
আমার কোন প্রাপ্য অধিকারের খাতা নেই এখানে
আমার তো নেই কিশোর বেলার ছুটে চলার স্বাধীনতা
মৃত্যু শুধু মৃত্যু আমার কানের পাশে, দৃষ্টি জুড়ে
পায়ে পায়ে গুপ্তচরের মতো চুপি হেটে বেড়ায়।
যখন আমি দেখি আমার এক বয়সী
ওদের কোন শিশু কিশোর আকাশ ভরে স্বপ্ন ওড়ায়
পার্কে মাঠে ছড়িয়ে গিয়ে কাটায় বিকেল।
তখন আমি তারকাঁটাতে বন্দী কোন পশুর মতো তৃষ্ণা নিয়ে তাকিয়ে থাকি।
আমি তো চাই আমরা দুজন একই মাঠে খেলবো একই খেলনা নিয়ে।
কিন্তু আমি আঁতকে উঠি যখন তখন
কখন জানি খুনিরা সব আসবে উড়ে চাকায় চড়ে।
মৃত্যু শুধু মৃত্যু আমার ভাগ্যলেখা
আমার যারা বন্ধু তারা পঙ্গু এবং অর্ধমৃত
কিংবা যারা গতবছর খুন হয়েছে,
আমি জানি আমারও ঐ একই মালায় ভাগ্যলেখা।
তাই কি আমি মায়ের কানে বলেছিলাম-
অন্ধ খোদা দেখে না এই নৃশংসতা...?
তার আরসে কাঁপে না কি একটি পাতা...?
নাকি তিনি সিংহাসনের ঠুঁটো রাজা...?’
মৃত্যু শুধু মৃত্যু আমার ভাগ্যলেখা
জন্ম নেওয়ার অপরাধে এখন আমি কুণ্ঠিত হই
যখন দেখি এই পৃথিবী অন্ধ খোদার রাজ্য শুধু।
তুমি কবি আমায় নিয়ে স্বপ্ন আঁকা বন্ধ কোরে
ব্যর্থ আমার...ভীতু আমার...কিশোর বেলার
কিংবা আমার বন্ধু যারা পঙ্গু হয়ে মরছে রোদে
তাদের কথা লিখে যেও?
জন্ম থেকে দেখছি শুধু আমার শহর হত্যাপুরী
জন্ম আমার চিড়িয়াখানায় বন্দী বাঘের
আমার জন্য বরাদ্দ নেই বেঁচে থাকার অবাধ আকাশ
শেকল পায়ে স্বাধীন আমার মাতৃভূমি।
শিস
সময় এখন নীরব থাকার পক্ষে নয়
সময় এখন গুটিয়ে থাকার নয়
সময় এখন কণ্ঠ খুলে বলার
চাই সকলের মিলিত চিৎকার!
আগুন জ্বেলে দেবার এখন দিন
আঙুল তুলে প্রশ্ন করার এখনই ঠিক দিন
মৌনতাকে গুঁড়িয়ে এবার বল-
‘রাষ্ট্র তোমার বিরুদ্ধে আজ আমি,
ঘেন্না করি...ঘেন্না করি তোমার সকল চোখ,
রাষ্ট্র তুমি পিশাচরূপী পাষণ্ড ধর্ষক!
রাষ্ট্র তুমি খাকি পোশাক, এক নায়কের ঘর;
রাষ্ট্র তুমি কণ্ঠ চেপে ধরা,
নষ্ট তুমি
ভ্রষ্ট তুমি
কার্তুজে দাও শিস;
সবাই জানে তুমি এখন তোমার প্রচারণা।
ফ্যাসিবাদ দেখলে আমার গা ঘিনঘিন করে!
ভাঙার সময় এলে তুমি ভাঙো, তাকিয়ে থেকো না।
জ্বালিয়ে দেবার আগুন দিনে তাকিয়ে থেকো না।
নষ্ট সময় খেঁকিয়ে ওঠে যদি, তুমি নিরব থেকো না।
ওঠো,
তুমি আঙুল তুলে তাকাও ওদের চোখে।
বল,
তোমার চিবুক চেরা তীক্ষ্ণ বিরোধিতা।
দেখো,
ওরা কুঁকড়ে যাচ্ছে তোমার মুখোমুখি!
তুমি কণ্ঠ ছাড়, মাতম শ্লোগান তোল;
তুমিই যদি দেখতে থাকো চুপ, লড়াইটা কে লড়বে?
পাল্টা চাবুক ছাড়া তোমার বিজয় অনিশ্চিত।
ভাঙো, এখন ভেঙে ফেলার সময়!

গল্পকার, কবি
বাংলাভাষার বিভিন্ন পত্রিকা এবং ওয়েবজিনে নিয়মিত লিখছেন। গল্পের জন্য পেয়েছেন PEN Bangladesh সাহিত্য পুরস্কার ২০২০। বসবাস: খুলনা, বাংলাদেশ।
Facebook Comments Box
