
নীল গোলাপ
স্বপ্নে লেবুফুল লেবুফুল গন্ধ ,
ঝুমকো-লতা আকাশে তুলেছিল মুখ …
প্রগাঢ় আচ্ছন্নতায় চোখবন্ধ হাঁটতে হাঁটতে
কতদূর যে চলে এলাম !
স্বচ্ছ বুকের দিঘিতে দেখা এই মুখ –
অনুযোগ নেই , বাসনাও নেই তো তেমন !
কী এক আকুল ধোঁয়া প্রার্থনার --
জীবন ফুরিয়ে
মিশে যেতে চাইছে বাতাসে …
সড়কগুলো আবার পেতে দেবো
পাশে পাশে ছায়াঘন পন্থশালা-গাছ
রঙিন রঙিন টাঙা ছুটিয়েই দেবো
হৃদয়ে , চিত্রিত জ্যামিতিতে …
সাবলীল হোক যাতায়াত
দুর্ঘটনাকে এড়িয়ে যেন ফিরে যেতে পারি
পাহাড়ের কোলে সেই শান্ত লাল বাড়িটিতে
সাদা বিছানা সাজিয়ে
গাঢ় নীল একটি গোলাপ
ওইখানে
বহুযুগ অপেক্ষায় আছে
কেন ভোরের আকাশ
শেষ রাতের আকাশে
কত কী-ই না দেখা যায় !
টাইমমেশিন-রঙা একটা চেয়ার …
চেয়ার ? না বাংলার শেষ নবাবের
সিংহাসন ভেসে যায় …
পশ্চিম-আকাশ থেকে ছুটে আসে
অনেক ঘোড়ার খুরের
টগবগ ….. টগবগ ….
শোনা যায় বড়লাটের হুঙ্কার
কারা মশাল জ্বালিয়ে
বন্দেমাতরম্-ধ্বনি তোলে ….
জওহরলালের বুকে ফুটন্ত গোলাপ
মাউন্টব্যাটেনের চাপা ক্রোধ
বিদ্যুৎ চমকায়
রাত শেষ হয়ে আসে
দুটো ষাঁড় এখনো , এখনো ,
ভারতবর্ষের আকাশে প্রচন্ড
লড়াই করছে …
ডাক
মুঠো আলগা করে দিচ্ছ
ফিরিয়ে নিচ্ছ জোনাকি আর শিউলির টুপটাপ ...
টের পাচ্ছি জল ...
পায়ের পাতাও ডুবে গেল
নাম মুছে যাচ্ছে
রঙ আর সুর থেকে
স্বাদ থেকে নিভে গেছে এলাচের বন
এ কি সেই ডাক ?
এ চিঠি তোমার ?
জীববিদ্যা
ওড়ে ডাঁশ-মাছি
পাপ-রক্ত-স্বাদ ওর মধু
সভ্যতার ঘা-য়ে ওড়ে
পতঙ্গের চতুর জীবিকা
হরিণ , কোকিল নয়
খরগোশও কেবল নয়
সাপ থেকে হাঙর অবধি
জেনে গেছি , তবু …
পদ্মবনে ঘুর ঘুর করি
ভ্রমর আসবে কবে --
বাঁধা হবে গান
গুন-ভাগ
এক মিনিটকে অযুত বিরহ দিয়ে ভাগ করা হলে
যেটুকু সময় থাকে হাতে
ঠিক ততক্ষণ
এ জীবনে দেখা হলো
পাহাড়ের সানু দেশে অজানা গোলাপি গাছে
শিষ দিলো পাখিরা অচিন
সোনালি কফির রোদ গায়ে পড়া এত !
হ্যাট … হ্যাট … তাড়াতে তাড়াতে
চোখে পড়ে গেল চোখ
দেখা হয়েছিল ... শেষ কবে ?
খোঁপায় দিয়েছে গুঁজে প্রথম কবিতা-ফুল …
সময়ের বিরহকে অযুত সুগন্ধ দিয়ে
গুন করা হলে
সে কোন আষাঢ়মনে ফুটেছে কদম …
শাস্তি
ব্লেড আর পেরেকের নানান স্বভাব ,
মেডুসার পেঁচানো পেঁচানো ফণা --
লোভী ? না পাষন্ড অতি
প্রতিচ্ছবি নিজেকে অবাক দেখে
মেলাতে পারে না …
কি করে দাঁড়াবো তবে তোমার সামনে
নিয়ে বিতিকিচ্ছিরি আর ঘা
পাপে চুপচুপে ভিজে
শীতে একা
কি করে রাখবো ওই চোখে চোখ ?
আমি আমাকে আর চিনতে পারছি না ।

তিলোত্তমা বসু জন্ম তিরিশ নভেম্বর , বাহাত্তর । নব্বই সালের মাঝামাঝি থেকে লেখালিখির শুরু । বাবা কবি সুনীল বসু মা আলো বসু বাবার সান্নিধ্যে কবিতার আলোয়ে আসা । এখন পর্যন্ত প্রকাশিত কবিতার বইয়ের সংখ্যা চারটি গদ্যের বই একটি উত্তর চব্বিশ পরগণার মধ্যমগ্রামে বর্তমান নিবাস ।
Facebook Comments Box
