
ভেঙে -পড়া সেতু পাঁচটা লোকের সঙ্গে কথা বলতে বলতে তুমি আগুনের আঁচ পাও,যখন পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ডাইনিদের। পাঁচটা লোকের সঙ্গে কথা বলতে বলতে তুমি চিকিৎসার দীর্ঘসূত্রিতা, হাসপাতাল ভাঙচুর আর মৃত্যু টের পাও। পাঁচটা লোক তোমার পিঠ চুলকে দিচ্ছে। পাঁচটা লোক তোমার পিঠে থুতু দিচ্ছে। পাঁচটা লোকের সঙ্গে কথা বলতে বলতে তুমি দিব্যি মেয়েদের দোষ ধরতে শিখে গেছ। পাঁচটা লোকের সঙ্গে কথা বলতে বলতে তুমি শুনতেও পেয়ে যাও,খোদ কোলকাতার বুকেই শিশুবলি হচ্ছে। পাঁচটা লোকের সঙ্গে কথা বলতে বলতে তুমিও কেমন হাত উল্টে, বলবে,'আমি বাপু রাজনীতি বুঝি না –' পাঁচটা লোকের সঙ্গে কথা বলে বলে তোমার ঘেন্না পিত্তি সব ঘেঁটে গেল। পাঁচটা লোকের সঙ্গে... পাঁচটা লোকের সঙ্গে কথা বলবে না বলে, তুমি আজ,পর্দা টেনে ঘুমিয়ে পড়লে বাল্যপ্রেমে অভিশাপ আছে এখন ছোটবেলার গায়ে অজস্র ফুটো দেখতে পাই। চোখ পেতে রাখি আর ভিতরে উজ্জ্বল সমাহার.. দেখো,আমি কি বলিনি, খুব নিষ্ঠুর দিন আসছে। উলকাঁটা বোনার মতো,ঘর পড়ে যাওয়ার মতো,ক্রমাগত,যুদ্ধ হবে। তোমরা কোথায় ছিলে তবে! চ্যাপেল,সফেদাগাছ, সিস্টার ডেভিড! প্রার্থনাসঙ্গীতের নীচে? আমিও তো ছোটবেলা ছিল বলে খুব বেঁচে গেছি! সেও ছিল। আমার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে উঠছিল। নিষ্পাপ যৌনতা নিয়ে! পাপাচার নিয়ে! নামোল্লেখে দোষ হবে,সে বলেছিল দেবীপক্ষে... যেকোনো মেয়ের মাংস তার নিজেরই বৈরি হয়ে যায়। প্রতিমার গায়ে কাদা ছিটিয়ে দিলে, কিছুটা অ্যাসফল্টে পড়ে,কিছুটা-বা শাড়ির সাদায়। এগুলো প্রমানিত সত্য। তারপরও, মেয়েরা বিবাহযোগ্যা হলে, পরীক্ষা দিতে বসলে, মুখচোখ লাল,তবু হাসিমুখ, বসে। উৎস কী, আমরা এড়িয়ে চলি। সামাজিক লেখা লিখি। কফি খাই।বুকশপে যাই। সেমিনারে বলি, আলো নানাবিধ স্তরে এসে পৌঁছেছে। খানিক দারিদ্র্যে আর নারীমুক্তিতে খানিক! তখন গ্রামে ও গঞ্জে যুবতীশরীরে প্রদীপ নিভিয়ে দেবে মাতব্বরেরা বিজয়া লিখে দি' দুর্গানাম তোমার ও হাতের পাতায়... অন্যরা থাকুক গাঢ় প্রীতি শুভেচ্ছায়... ঘিরে দি নস্যিরং চাদরের তাপ, আমাদের যত পাপ হেমন্ত ঈশ্বরীর মতো মুছে নেবে! আর,বসন্ত আবার ভরে দেবে একেএকে, সম্বচ্ছরের ভ্রান্তি! চোখের নীচের ক্লান্তি! বদরক্তের মতো পলাশের লাল! রাস্তায় হাঁটছি, আর,স্ট্রিটলাইটের তলা থেকে ময়লা কাগজ, কুড়িয়ে নিচ্ছি মুখে ঘষব বলে, যাতে লোকে বলে, 'এত কাটাকুটি নিয়ে থাকে?' নখ ডুবছে পাঁকে, পরের আশ্বিনে পদ্ম হবে, ফের দুর্গানাম লিখবে তোমার ও হাতের পাতায়! চোখ ভেসে যাবে জলে, যতদূর যায়... অনিদ্রা একদিন দুপুরবেলা তোমার বাড়ি যাব। দীর্ঘ আলোচনা করব আমরা। চন্দ্রায়নের কথা উঠতে পারে। না-ও উঠতে পারে! ইজরায়েলের যুদ্ধ,গাজা,মৃত বাচ্চাদের কথা উঠতে পারে, না-ও উঠতে পারে! রাত গিলে খেতে আসছে,এমন খ্যাপাটে কথাবার্তা হতে পারে, না-ও হতে পারে! ইদানিং তুমি কী কী মেডিসিন নিচ্ছ, সেসব কথা আসতে পারে, না-ও আসতে পারে। এবার তোমার বাড়ি যাব দুপুরে। চুপচাপ। বেড়ালডিঙোনো ভাত খাব। আর সাদা মদ। তুমি গান করবে।আমি কবিতা পড়ব। পাঁচটা,ছটা। তারপর লম্বা আলোচনা হবে আমাদের। ভাবি,হাই উঠবে নেতা ধোপানির ঘাট ভেসে যেতে যেতে,চেয়েচিন্তে আয়ু নিতে নিতে, দেখি পাড়ে গোছা গোছা মস্তান ফুটে উঠেছে! একে মারছে ওকে টানছে কাপড় সরাচ্ছে কারো বুক থেকে,হা-হা চিৎকার! চলতে চলতে ফের ফিরে দেখি,বিকেলবেলার পথ আগের মতোই চুপচাপ। কোথাও রক্ত পড়ে নেই। গরম তেলেভাজা কিনে ঘরে ফিরছে ঠাণ্ডা রোবটেরা

চৈতালী চট্টোপাধ্যায়ের বিষয় পদার্থবিদ্যা হলেও বিষয়ান্তর, সাহিত্য। আর, পেশা ছিল প্রখ্যাত বিজ্ঞাপন সংস্থায় কপিরাইটিং। বহুল প্রচারিত সব সংবাদপত্রে একের পর এক লিখে চলেছেন নানাকিছু। কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধবই প্রকাশ পেয়েছে অভিজাত প্রকাশনা থেকে। পেয়েছেন সরকারি (কেন্দ্রীয় ও পশ্চিমবঙ্গের), বেসরকারি বিভিন্ন সম্মাননা। ২০২০সালে ১১ জানুয়ারি চৈতালী চট্টোপাধ্যায়কে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রবর্তিত বিভা চট্টোপাধ্যায় স্মারক সম্মান অর্পণ করা হয়েছিল বাংলা কবিতায় তাঁর সামগ্রিক অবদান স্মরণে রেখে।
Facebook Comments Box
