
১ রটে গেল— জোৎস্না চিবিয়ে খেয়ে মারা গেছে মেয়েটি ময়দাতদন্ত হল ভিতরে কোথাও একটুও আলো নেই এত এত নাড়িভুঁড়ি প্যাঁচানো বাইরে থেকে একটুও বোঝা যায়নি... ২ মেয়েটি এত রোদ খেল— জন্ম দিল আগুন তার স্বামী ছিল জল রোদে খাওয়া মেয়েটিকে দিতে পারিনি শীতলতা তার সন্তান তার সংস্পর্শে এলে নিভে যাবে কী আরও জ্বলতে থাকে দাউ দাউ ৩ বৃষ্টি শুরু হলে— বাবা-মা-মেয়ে ত্রিপল টাঙিয়ে শুয়ে পড়ে মেঘ ডাকে ত্রিপলের ফাঁক দিয়ে জল ঢোকে ওরা ভিজে যায় ওদের গায়ে সোঁদা সোঁদা গন্ধ করে ৪ ছেলেটি নুন বেচে খাবার কিনত যেদিন বৃষ্টি হয় সেদিনও সে নুন বিক্রি করে নুনের এতই চাহিদা... ফেরার পর প্রতিরাতে দেখে— তার পিঠে নুনের দাগ দগদগ করছে ৫ বাতাসই ছিল ভরসা কিন্তু গাছ নেই পরিবারে একটিও গাছ নেই বাপ-মা মরা মেয়ে গতবারে যখন খুব ঝড় হল সে সারারাত কুড়িয়েছিল পাতা ভিজে পাতা ৬ এক হাত অক্ষম আরেক হাতে সে বেড়ে দেয় ছেলেমেয়ের ভাত বাপ ছেড়ে গেছে দুই সন্তান কোলে রেখে বাপ, মায়ের হাতে হাত রেখে বলেছিল— আমাদের তিন হাতের সংসার উনুনের তিন মাথা রান্নার সময় এই কথা মনে পড়ে মায়ের আর কাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বার করে তীব্র আগুন ৭ লক্ষ্মীর ভাঁড় পূর্ণ হলে কেনা হবে নতুন জিনিস এটুকুই সঞ্চয় মাটির ভাঁড়, কখন যে টুক করে ভেঙে যায়! কিছুই কেনা হয় না... সঞ্চয় বলতে শুধু সংসারে— ঝুনঝুন ঝুনঝুন ঝুনঝুন ৮ পাশে থাকবে বলে ভিড় হয় চারিদিকে এত ভিড়— আলো ঢোকে না, বাতাস ঢোকে না পাশ ফিরলে সেই তুমি একা চারিপাশ সুনসান দূরে কিছু কুকুর কুঁই কুঁই করে পথিকের তাড়া থাকে বাড়ি ফেরার ৯ ভালো থাকতে চেয়ে মেয়েটি পরেছিল সিঁদুর ছেলেটি একদা হাত কেটে লিখেছিল নাম বৃষ্টিতে সিঁদুর গেল ধুয়ে সংসারে ফুটেছিল ছোট্ট এক কুঁড়ি পাড়ার লোকে তাকে বলত— মেঘের সন্তান ১০ একে একে ধুয়ে দেওয়া হয় সমস্ত চিনি কালো পিঁপড়ের ঝাঁক খোঁজে আবার নতুন গন্তব্য মেঝেতে লেগে থাকে গৃহস্থের অযাচিত শ্রম

সেলিম মণ্ডল থাকেন নদিয়ার চাপড়াতে। কবিতার পাশাপাশি গদ্য ও গল্প লেখেন। পছন্দের বিষয় লোকসংস্কৃতি। সম্পাদিত পত্রিকা ‘তবুও প্রয়াস' ও ‘ফারেনহাইট'। তাঁর প্রকাশিত বই চারটি— ‘মায়াজন্ম', ‘লবণ খেতের জোনাকি', ‘কাঁচা মাংসের বাড়ি' ও ‘এই পথ পরিকল্পিত'। সম্পাদিত গ্রন্থ ‘ছাদ পেটানোর গান'।
Facebook Comments Box
